Monday, November 9, 2015

এবং বাঙালি

ভারতবর্ষে বাঙালি একটি আন্তর্জাতিক জাতি। সমস্ত জাতির ভালোমন্দ সে আপন বলে টেনে নেয় এবং নিজের যা কিছু তা ভাবে সেকেলে অতএব অচল। বাঙালি বলে আলাদা করে আমার বিশেষ কোনো অনুভূতি নেই, তবে এই মিষ্টি ভাষা যাতে আমি লিখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি তা আমার খুব প্রিয়। আমাদের মুশকিল আমরা অন্য জাতির সংস্কৃতি আত্মস্ম্যাৎ করি বটে কিন্তু মানুষগুলোকে বেজায় সন্দেহের চোখে দেখি। তাই বিহারী ‘খোট্টা’ বা পাগড়ি পরা পাঞ্জাবীরা আমাদের ঠাট্টার বিষয়। দক্ষিণীরাও আপন সংস্কৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট বলে বিরক্তি প্রকাশ করি একঘেয়ে ধোসা-ইডলির ওপর।

আমরা আজকাল দিওয়ালিতে ধনতেরাসে মাতি। বিয়ের সময় ভাঙরা স্টাইলে নাচি। পশ্চিমী উন্মুক্ত পোশাক পরি। খ্রিস্টমাসে উদ্বেলিত হই। বারো মাসে এখন তেত্রিশ পার্বন আমাদের। আর ক্রমশঃ নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি থেকে দূরে, আরও দূরে সরে যাই। ক্রমশঃ কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গ দখল করে অবাঙালি এবং তার বাজার। আমরা যখন বেড়াতে যাই দেশের অন্য কোথাও, হিন্দি বা ইংরেজিতে কথা বলি। আবার নিজের রাজ্যেও দোকানে, হাটে, বাজারে বাংলাটা আমাদের ঠিক আসে না। আমরা এই অবিমিশ্র সংস্কৃতিতে গর্ব বোধ করি। আর ওদিকে অবাঙালিরা তাদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি বজায় রেখে ক্রমশঃ দখল করে বাঙালির সংস্কৃতি তথা বাজার। ওরা মুখে সম্মান করে আর মনে ভাবে বোকা। আসলে সেইটাই সত্যি কথা।

আত্মসমালোচনা করা সুস্থতার লক্ষণ, কিন্তু নিজেকে ক্রমাগত ঘৃণা করে অন্যের সবটাই ভালো বলে আফশোস করা আর নকল করা এটা ঠিক স্বাভাবিকতা নয়। মুশকিল হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বলতে যে জগাখিচুড়ি জাতিকে আমরা বুঝে থাকি তারা এটাই। ভাগ্যিস বাংলাদেশ বলে বাঙালির একটা আলাদা অস্তিত্ব আছে যা একে ক্রমবিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যদিও এখনও বাঙাল অথবা ঢাকাইয়াকে বাঙালি বলে ভাবতে আমাদের ঠিক পছন্দ হয় না।

তারপরে আমাদের কিস্যু হলনা বলে ফেসবুকে কবিতা লিখি অথবা বিহারে মোদী হেরেছে এই আনন্দে বাজি ফাটাই।

ভাগ্যিস স্বাধীনতা আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ, এমন কী সত্তরের দশকেও বাঙালি আন্তর্জাতিক হয়নি, তাহলে ইতিহাস বদলে যেত।

ঐতিহ্য গেছে, শিক্ষা-সংস্কৃতিও গেছে, ইতিহাসই ভরসা এখন। মানে ওই আমি কী করেছিলুম আর কী। কী করব জানি না যখন।


No comments:

Post a Comment