Friday, November 27, 2015

কিছু ফেলতে পারি না

কলেজ জীবনে হস্টেলে থাকার সময় আমার একটা কালো রঙের ছোট ট্রাঙ্ক ছিল। ছিল বলা অবশ্য উচিত নয়, কারণ ট্রাঙ্কটা এখনও আছে। তখন হয়ত ট্রাঙ্কটার নাম ছিল – সব পেয়েছির দেশ। গোটাকতক জামাকাপড়, বইখাতা, মায়ের দেওয়া চিঁড়েমুড়ি মোয়ানাড়ু সবেরই কলকাতায় আসার ঠিকানা ছিল ওটাই। ট্রাঙ্কটা আমার খুব প্রিয়। তাই পরবর্তীকালে আমার যাবতীয় চিঠিপত্র-ডায়েরি, কার্ড মানে যা যা খুব নিজের বলে মনে হত তাই রাখতাম, এখনও রাখি। অপুর মতো পাখির বাসা না থাকলেও আমার অনেক স্মৃতি, ভালোলাগা-মন্দলাগা, হাসি- কান্না রয়েছে ওই ট্রাঙ্কের অন্দরে। আমার অল্পবয়সের গন্ধ কিম্বা অভিমান, অথবা বেশি বয়সের রাগ তাও থাকতে পারে। তাই তো ওর আজকাল নাম রেখেছি – কিছু ফেলতে পারি না।


ছেলেবেলায় মা যখন ট্রাঙ্ক গোছাতে বসত, তখন সেই পুরোনো জামাকাপড় কিম্বা মায়ের ডায়েরি, চিঠির সেই পুরোনো গন্ধ ভারী রহস্যময় লাগত। কৌতূহলী হয়ে বসে থাকতাম কখনো যদি সাত রাজার ধন এক মানিক বেরোয়। একটু বড় হলে মাঝে মধ্যে মা এটা ওটা পড়তেও দিত। এখন আমার ট্রাঙ্কের ওপর মেয়ের ততোটা কৌতূহল নেই, যদিও আমার ছোটবেলায় খাতায় লেখা সব গল্প আর হাতে লেখা পত্রিকা সবই ওর পড়া হয়ে গেছে কখনো ট্রাঙ্ক খোলায়। আমার নিজের কিন্তু ট্রাঙ্কটা খুলে অল্পবয়সটা উলটে দেখতে বেশ লাগে, যদিও এখন অনেকদিনই আর সময় পাই না। তবু ট্রাঙ্কটা খুললে এখনো যেন ছোটবেলার মতো রহস্যময়ই লাগে, হোক না নিজেরই ট্রাঙ্ক, পুরোনো ট্রাঙ্ক তো বটেই।

No comments:

Post a Comment