Thursday, November 12, 2015

ভ্রমণ কাহিনি (২)

'আমাদের ছুটি'-র ফেসবুক গ্রুপে আমার ‘ভ্রমণ কাহিনি’ লেখাটির কমেন্টে বাপ্পাদার একটি খুব সুন্দর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখা -

বাংলা এবং পশ্চিমী ভ্রমণ কাহিনির ইতিহাস পড়তে পড়তে একটা বিষয় মনে হয়েছে, তা হল ভ্রমণ কাহিনি লেখার ধরণ এবং পাঠকের আগ্রহ এবং চাহিদা নির্ভর করে সমকালীন পরিস্থিতির ওপর। ঊনবিংশ শতকে যখন বাংলা ভ্রমণ কাহিনি লেখার চল শুরু হল তা মূলতঃ সাহিত্য নির্ভর ছিল। বাংলা সাহিত্যেরই একটা শাখা হিসেবে এর জন্ম। রবীন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারীরা যখন লিখছেন তখন তা পড়ে কেউ সেই জায়গায় বেড়াতে যাবেন সেটা ভাবছেন না, কারণ তখনও বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার চল তেমন নেই, যতটা পড়ার আনন্দ আছে। বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে খুব আধুনিক ধারণা। ব্যতিক্রম কৃষভাবিনী দাস এবং গিরিশচন্দ্র বসু। এঁরা কিন্তু তাঁদের ধারণায় কাজে লাগবে এমন তথ্যের ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ সেইসময় বাঙালির মধ্যে বিলেত যাওয়ার একটা হিড়িক উঠেছিল। এইসময়ে ভারত ভ্রমণ মূলক তীর্থকেন্দ্রিক লেখাগুলোও কিন্তু তুলনায় তথ্যবহুল, কারণ বাঙালির দেশের মধ্যে বেড়ানো মূলতঃ তীর্থভ্রমণ ছিল। ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে প্রথম ঠিকঠাক তথ্যমূলক ভ্রমণ কাহিনি, তাও খানিক কাহিনির আঙ্গিকে লিখলেন পদ্মনাভ ঘোষাল – রেলপথে ভারত ভ্রমণ। গল্পের আঙ্গিকে লেখা দুর্গাচরণ রায়ের – দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন একটি অসাধারণ তথ্যমূলক লেখা। বাঙালি যত বেরোতে থুড়ি বেড়াতে শুরু করল তথ্যমূলক লেখার চাহিদা তত বাড়তে থাকলেও তখনও পড়ার অভ্যেস কমেনি, ভ্রমণ সাহিত্যই মূলতঃ খবর দিত নতুন জায়গার। প্রায় একশ বছর পরে বিংশ শতকের শেষের দিকে ভ্রমণ যখন ক্রমশঃ সাধারণের সহজলভ্য হয়ে উঠছে এবং পড়ার অভ্যেস কমছে, চটজলদি তথ্যের প্রয়োজন বাড়ছে, তখন বাংলা ভ্রমণ পত্রিকাগুলির ধারণা এবং জন্ম হল। এটা মোটামুটি সত্তর-আশির দশকে। কিন্তু গত দশবছরে আন্তর্জালের কল্যাণে তথ্য এখন হাতের মুঠোয়। তাহলে ভ্রমণ কাহিনি পড়ে খেটেখুটে তথ্য জানতে যাব কেন? অথচ ভ্রমণ কাহিনি পড়ার একটা চল ছিল, থাকবেও চিরকাল মানস ভ্রমণের। ফলে খুব সম্ভাবনা রয়েছে ভ্রমণ সাহিত্য মূলক লেখার আবার ফিরে আসার। অন্ততঃ ইতিহাসের নিয়ম আমার মতে তাই তো বলে। ভালো লেখা পড়ার একটা চাহিদা বাড়ছে সেটা 'আমাদের ছুটি' করতে গিয়েই লক্ষ্য করেছি। শুধু উমাপ্রসাদ বা পুরোনো সাহিত্যমূলক লেখাই নয়, নতুনদেরও এরকম লেখা লিখতে হবে। কারণ চাহিদা তারই বেশি। তথ্য থাকবে সে লেখায়, কিন্তু তা কখনও সাহিত্যকে বিঘ্নিত করবে না। আমার এটাই মনে হয়েছে।


ইউরোপীয় ভ্রমণ কাহিনির পুরোনো ইতিহাসটাও একই। প্রথমে সাহিত্যমূলক এবং অনেক পরে তথ্যের আগমন।

No comments:

Post a Comment