Saturday, November 28, 2015

বিশ্বাস

আমাদের বাড়িতে বার দুয়েক বড় রকমের চুরি হয়েছে। মানে সেটাকে ডাকাতি বললে ডাকাতদের অপমান করা হয় আর কী। প্রথমবারেরটা মায়ের মুখে শোনা। সেটা দাদার অন্নপ্রাশনের ঠিক পরপর। ফলে অন্নপ্রাশনে যা সামান্যকিছু দাদা পেয়েছিল সেসবই গিয়েছিল। খালি গায়ে ভীষণ তেল মাখা চোরটা যখন হাতের বালা খোলার চেষ্টা করছিল, তখন মায়ের ঘুম ভেঙে যায়।

এই চোরকে মা চিনতে পেরেছিল। যদিও চুরির কোনো কিনারা বা চোরাই মাল পাওয়া যায় নি। আমাদের বাড়িতে তখন এক মাঝবয়সী মহিলা কাজ করত। তার নাম ছিল নেহারির মা। এই নেহারির মা দীর্ঘসময় কাজ করেছিল, আমার ছোটবেলাতেও বেশ কিছুদিন দেখেছি বলে আবছা একটা স্মৃতি আছে। সেদিনের চোরের দলে নেহারি না তার বাপ ছিল তা আমার মনে নেই, মা হয়ত এখনও বলতে পারবে। কিন্তু তারপরেও মা সেই নেহারির মাকে কাজ থেকে ছাড়ায়নি, এমন কী তার হাত টান আছে জেনেও। মা বলত অজানা চোরের চেয়ে জানা চোর ঢের ভালো।

মানুষকে প্রায় অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে আমি ছোট থেকে দেখেছি বাবাকে। মা কিন্তু ভীষণ বিশ্বাস করলেও ভালোমন্দ বুঝেই বিশ্বাস করত। আমি নিজেও দেখেছি বিশ্বাস করে জেনেবুঝে ঠকা ভালো, মানুষকে অবিশ্বাস করার থেকে। আসলে মানুষকে অবিশ্বাস করতেই শিখিনি বা পারি না। আর বিশ্বাস করতে খুব ভালোও লাগে। মাঝে মধ্যে দুঃখ পাই ঠিকই, কিন্তু নিজের মনে আনন্দ পাই অনেক বেশি। তাই সহজেই বিশ্বাস করি, কিন্তু পারলে কিছুতেই তা ভাঙি না। নাহয় ঠকালোই বা কেউ, কী বা যায় আসে তাতে।


ওই যে, অজানা চোরের চেয়ে জানা চোর ঢের ভালো।

No comments:

Post a Comment