Wednesday, August 31, 2016

রইল গাঁথা মোর জীবনের হারে

অনেকদিনপর একটা সকাল কুড়িয়ে পেলাম। একেবারে যে ঘুম পাচ্ছে না তা নয়। কিন্তু বসে আছি, কাজ করছি, আর জানলা-দরজা উপচে সকালটা আমার ঘর ভরে আছে। ইদানীংকালে বেড়াতে গিয়েও ভোর দেখিনি মন ভরে। অথচ বাড়িতে ঘুম কাতুরে হলেও বেড়াতে গিয়ে চিরকাল আমার ভোরে ওঠা অভ্যেস।

পাহাড়ের ঠান্ডা ভোর অদ্ভুত একটা শান্ত রকমের হয়। আবার সমুদ্রের গন্ধ মেখে যে ভোর হয় তার স্বাদটা একটু নোনা। জঙ্গলের ভোর একটু ভেজা ভেজা বুনো গন্ধ আর পাখির ডাকে মিস্টি। কত জায়গার ভোর যে কতরকম! বেনারসকা সুবা ঔর লখনৌ কা সাম বলে তো কথাই আছে। কাশীর ঘাটের সকাল যেন অনন্তকাল ধরে একইরকম রয়েছে। কেউ স্নান করছে, কেউ মন্ত্রপাঠ, কেউবা পায়রাকে খাওয়াতে ব্যস্ত, পেল্লাই সাইজের ষাঁড়েরা ফুল-মালার সন্ধানে এদিক-ওদিক মাথা ঘোরাচ্ছে, পাথরের মালা কী ফুল-প্রদীপের পসরা নিয়ে বসে আছে বা ঘুরে বেড়াচ্ছে হেঁকে হেঁকে দোকানিরা, মাঝিরা নৌকো থেকে ডাকাডাকি করছে গঙ্গায় ভেসে পড়ার জন্য, বিদেশি পুরুষ-নারী ভারতীয় পোষাকে ঝোলা কাঁধে গল্প করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর দূরে পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে মগনলালের সাজানো বজরা। এমন আরও কত চিত্র! আর ওই যে কুয়াশামাখা আগ্রার ভোর কুয়াশায় মুখ মুছে একটু একটু করে জাগছে শ্বেতপাথরের তাজমহল। তার মাথার ওপর এসে পড়ছে সূর্যের প্রথম আলোর মুগ্ধতা।

বেড়াতে গিয়ে শেষ ভোর দেখেছিলাম দার্জিলিং-এ। কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরে যখন একটু একটু করে লালের ছোঁয়া লাগছিল। লাদাখে রোজ ভাবতাম আগামীকাল ঠিক ভোর দেখবই। পরেরদিন যখন ঘুম ভাঙতো ঘরজোড়া দেওয়াল দিয়ে তখন সকাল ঢুকে এসেছে। তা সকালই সই। এবার পুরীতেও তাই। চোখ মেলতেই রোদ্দুর।

এখন তো রোজ সকালে হয় খুব ব্যথা থাকে নড়তে পারিনা অথবা খুব ঘুম পায় হয়ত ওষুধের জন্য, তাকাতেই পারিনা। তাই ভোর না হোক, আজকের এই সকালটুকু হঠাৎ পেয়ে রেখে দিলাম আঁজলা ভরে।


কখন আসে একটি সকাল, সে যেন মোর চিরদিনের চাওয়া। সেইটুকুতেই জাগায় দখিন হাওয়া...

নাহ্‌, দখিন হাওয়ার সময় তো আসেনি, বৃষ্টি এলো ঝেঁপে।

Saturday, August 27, 2016

ইচ্ছে নামক আত্মা

তীব্র ব্যথাটা নামছিল একটু একটু করে পরপর কতগুলো ব্যথানাশক ওষুধেব্যথার জায়গা তখনও শক্ত হয়ে আছেব্যথা নেই অনুভূতিটা ছড়িয়ে যাচ্ছিল সর্বত্র মনে হল, হয় ঘুমিয়ে পড়ছি অথবা গতবারের মতো মস্তিষ্কের সঙ্গে দেহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছেতখন অবশ্য ব্যথার ব্যাপারটা ছিলনাসম্ভবত দুইয়ের মধ্যে কোনও যোগসূত্রও নেই

গ্লুকোজে মুখ, চোখ আর ঘাড় পর্যন্ত সাড় ফিরল (তার থেকে বেশি কিছু হওয়ার ছিলনা কারণ ঘটনাটা সুগার ফল নয়) আর তখন একটা আশ্চর্য অনুভূতি হল এমনটা আগে হয়নি কখনও। মনে হল ঘাড়ের নীচ থেকে বাকিটা একটা মৃতদেহ (যদিও নাড়াতে না পারলেও অনুভূতি ছিল কিন্তু পাথরের মতো ভারী লাগছিল অবশ্য যা ওজন আমার, বেচারা দেহের আর দোষ কি?)। আর তার ভেতরে আমার বেঁচে থাকা আত্মাটা শরীরের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য যেন ছটফট করছিল বাইরে স্থির অথচ ভেতরে তখন কুরুক্ষেত্র একবার মনে হচ্ছে এই বোধহয় হাতের আঙুলের ডগাটা একটু নড়ল নড়ল...ওই যাহ, হোলোনা এবারও এই বোধহয় পাটা একটু নড়বে নাহ, তাও না একটুখানি কি পাশে নড়ব? ভিতরে ভিতরে কী সোরগোল কী নিরন্তর ছুটোছুটি - অথচ বাইরে তার কোনও মৃদু কম্পনও নেই!

যাইহোক, এ যাত্রা ঘন্টা দুই-আড়াই পরে আবার আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে এল গতবারের মতো সারাদিন ভোগায়নি কিন্তু সেটা লেখার জন্য বিশেষ কিছু নয় এই যে আমার ভেতর আর বাহিরের কাণ্ডকারখানা সেইটা লিখে রাখার মতো বলে মনে হল

Monday, August 22, 2016

হিরাপুরের যোগিনীরা

যোগিনী পুজো বা যোগিনী মন্দির সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা ছিল না। ওড়িষার হিরাপুরের যোগিনী মন্দির দেখে অবাক হলাম, জানলামও অনেককিছু। তারই কিছু ভাগ করে নেওয়া পাঠকদের সঙ্গে।
ভারতবর্ষের যোগিনী মন্দির সম্বন্ধে বাংলায় কোনও ভ্রমণকাহিনি বা ভ্রমণ-তথ্যমূলক লেখা চোখে পড়েনি।


http://amaderchhuti.com/mag20/story_hirapur.php

টানা বৃষ্টির প্রথম রাতে

এমন অনেক বাড়িতে অথবা ঘরে একসময় থেকেছি যার ছাদের কোনা থেকে চুঁইয়ে নামত জলধারা অথবা স্যাঁতসেঁতে দেওয়ালে ফুটে উঠত বিভিন্ন মানচিত্র আর ঠান্ডায় কুঁকড়ে যেতাম আমি।
এখন ঘর পেরিয়ে বারান্দা পেরিয়ে বৃষ্টিরা শুধু শব্দের মতো ঝরে যায়। তবু ব্যথাবেদনার জন্যই হয়ত ঠান্ডা লাগে। আর ঠিক তখনি মনে পড়ে শান্তিনিকেতনের কোন এক গ্রামের সেই কাঁচা বাড়িটার কথা যার একমাত্র ঘরটিতে শুয়ে চালের ফাঁকে ফাঁকে আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম।

একদিন চাকরির কী একটা পরীক্ষা ছিল। বাস থেকে নেমে এক কোমর জল ভেঙে ঢুকেছিলাম প্রেসিডেন্সি কলেজে। নাহ, চাকরিটা পাইনি। এমন অনেক তুমুল বৃষ্টির দিনের কথা মনে পড়ে। পথে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি। তখন খুব খিদে পেত।
এখন তো খেয়ে-পরে দিব্যিই চলে যাচ্ছে। শুধু বৃষ্টি পড়লে ফুটপাতের ওপর পলিথিনে ঢাকা সারি সারি মাথা গোঁজার ঠাঁইগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, কলেজ যাওয়া-আসার পথে দেখা হেদুয়া চত্ত্বরে কী পরে অফিস যাতায়াতের পথে ওখানে বা পার্কসার্কাস মোড়ের ঠিক আগে।

আজ সারাদিন ধরেই বৃষ্টি। হয়তো সারারাতও।

জীবন!

কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
একটি শিশু তখন ক্রমশ: কাঠ হয়ে যাচ্ছিল।
তার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু নয় রক্ত।
কিছুক্ষণ আগেই বোমায় মারা গিয়েছে সব স্বজনেরা।

ঠিক এই সময় একটি মূক ও বধির বালিকা
নি:শব্দে ধর্ষিত হচ্ছিল ছয়জন শক্তিশালী পুরুষের কাছে।

ঈশ্বর তখন কফিতে চুমুক দিয়ে অলিম্পিক গেমস দেখছিলেন এবং
মাঝে মাঝে কাপটা নামিয়ে উদ্ভাসিত মুখে হাততালিও দিচ্ছিলেন সশব্দেই।

ঈশ্বর

ঈশ্বর কবে যেন সত্যিকারের
মানুষ হয়ে গেলেন -
ঝলমলে বহুমূল্য চেহারায়!
তাঁর দুচোখে লোভ আর
ঘৃণা চকচক করে এখন।
ওষ্ঠে বিজয়ীর হাসি যেন ভক্তদের
করায়ত্ত্ব করেছেন অনায়াসে।

অথচ,
ঈশ্বর অথবা মানুষকে আগেও দেখেছি
কখনও - দীনদরিদ্র, ভিখারির বেশে।
যখন তাঁর নাম ছিল, ভালোবাসা।

Thursday, August 18, 2016

জীবন!

খাদের ধারে কেমন করে দাঁড়ায় মানুষ!
দাঁড়িয়ে থাকে অনন্তকাল -
কেউ জানেনা!
তবুও দাঁড়ায়,দাঁড়িয়ে থাকে অনন্তকাল
খাদের ধারেই -
মানুষ কেবল।


Wednesday, August 10, 2016

গাছ

মেয়ে একদিন বলেছিল,সবুজ শাড়িতে আমাকে নাকি গাছের মতো দেখায়। ইদানীংকালে আমার প্রোফাইলের সব ছবিই ওর তোলা।

গাছ হলে কেমন হত? মনে হয়েছিল নিজের এই ছবিটা দেখে। ওই যে কাঁধের ওপর সবুজ পাতাটা এসে পড়েছে, ওইটা হয়ত আমারই ডালের। এই যে ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে অন্ধকার রাত্তিরে, চুপ করে দাঁড়িয়ে ভিজতাম। আচ্ছা গাছেদের কি শীত করে আমার মতো? কে জানে! হয়ত এমন অসুখ করত না সারাজীবন। রোদ্দুর উঠলে হাত পা থুড়ি ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে হয়ত আপন মনে ভাবতাম আর ডালে ডালে পাখির কিচিরমিচির কানে বাজত। পাতা ঝরত, নতুন পাতা গজাত। ফুলও ফুটত হয়ত। আচ্ছা তাকেই কি বলা যায় হাসি? কেউ কি এসে থমকে দাঁড়াত গাছতলায়,চেনা চেনা লেগে? কে জানে!

হয়ত তারপর গাছের গায়ে চকখড়ির দাগ পড়ত একদিন। বিষ দেওয়া হত শিকড়ে। আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ত সব পাতা। ন্যাড়া শুকনো আধমরা গাছটা বেশ কিছুকাল একা একা দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ত,ভিজত জলে। তারপর তাকে কেটে টুকরো করে নিয়ে যাওয়া হত অন্য কোথাও। আর তার জায়গায় উঠত কংক্রিটের ব্রিজ অথবা চওড়া রাস্তা,বাঁধানো ফুটপাত দখল করত তার ভূমি।

অনেক গভীরে তার রয়ে যাওয়া কোনও শুকনো শিকড়ের গায়ে কি লেগে থাকত রক্ত অথবা অশ্রুর দাগ,সকলের অজান্তে?


কিন্তু এইসব তো কেউ জানতে পারত না কোনদিনই। গাছেদের কথা অথবা কান্না যে কেউ শুনতে পায়না, পড়তে পারে না তাদের শব্দ,অক্ষর,বর্ণমালা।

Monday, August 8, 2016

এগলেস পুডিং অ্যান্ড এন্ডলেস মিজারি

রান্নায় আমি প্রায় দ্রৌপদীর মতোই নির্ভীক। দূর্বাসা তো কোন ছাড়, আমার সতেরো বছরের মেয়ের রাগেরও পরোয়া করিনা।

ভূমিকা -

স্কুল থেকে ফিরেই সে জিজ্ঞাসা করল, মা, আজ কী খেয়ে পড়তে যাব?

দরজা খুলে দিয়ে এসেই আবার বিছানায় কাত হয়েছিলেন জননী। তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন, গতকাল দুধ-কর্নফ্লেক্স খেয়েছে, অতএব আজ নৈব নৈব চ। কতদিন আর ম্যাগি অফার করা যায়? আধখোলা চোখে জিজ্ঞাসা করলেন, টায় বেরোবি? মেয়ের বিরক্ত গলায় উত্তর (জানে, তবু আবার বলে কেন, মাকে নিয়ে পারা যায় না), সাড়ে সাতটার ব্যাচে পড়ব, যেমন যাই সাড়ে ছটা, পৌনে সাতটা। ঘড়ির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে জননী বলেন, তা সুজি খাবি? করব? (সুজি করতে তিনিও যে বিশেষ আগ্রহী তা নয়) না, বরং তোর সঙ্গে বেরিয়ে বাইরে কিছু কিনে দেবখন। উদাস গলায় উত্তর আসে, তোমার যা ইচ্ছে, আমি আর কী বলব (অর্থাৎ, কোনটাই বিশেষ মনঃপুত হল না)। একটু ভেবে নিতেই জননীর মাথায় দি আইডিয়া পুডিং খাবি? অনেকদিন করিনি। দাঁড়া আর পাঁচ মিনিট গড়িয়ে নিই, উঠছি, ও আর কতক্ষণ লাগবে। মেয়ে আচ্ছা বলে চলে যায় রেডি হতে।

রঙ্গমঞ্চ

প্রথম অঙ্ক

ফ্রিজে দুধ আছে, চকলেট স্প্রেড আছে (হুঁ, এইজন্যই তো বুদ্ধি করে এনে রাখি কাজে লেগে যায় কখন), বিস্কুট তো আছেই পাঁউরুটি না থাক, চিনি, সুগার ফ্রি, মাখন কিচ্ছুর কমতি নেই। ম্যয় গতবারে আনা স্ট্রবেরি টপিংসও আছে (আমাকে আর পায় কে)!

দ্বিতীয় অঙ্ক

মিক্সিতে মনের আনন্দে ঢালি দুধ, চকলেট, বিস্কুট, চিনি, সুগার ফ্রি (জননীর নিজেরই ডায়াবেটিস)। ব্যস, এবার শুধু ডিম ভেঙে দিয়ে চালিয়ে দিলেই হবে। গুনগুন করে সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ফ্রিজ খুলে ডিমের শূন্যস্থানের দিকে তাকিয়ে এবার নিজেরই ফ্রিজ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়।

তৃতীয় অঙ্ক

প্রাথমিক আকস্মিকতার ধাক্কা কাটিয়ে (মানে অনেককিছু নেই ইনফরমেশনের মধ্যে ডিম ছিল না) মা জননী এবার মেয়ের ঘরে গিয়ে বিগলিত গলায় বলেন,বাবু, একটাও ডিম নেই, প্লিজ, একটু এনে দিবি, দেখ না, সব রেডি করে ফেলেছি। বিষম বিরক্ত গলায় বাবুর উত্তর, কোথায় ডিম পাব এখন? এখানে কোনও দোকানে ডিম রাখেনা, আর এখন কোনও দোকান খোলেনিও। জননী সুর আরও নরম করেন, (তিনি জানেন যে দোকানে যাওয়ার নামে এমনিতেই বাবুর গায়ে জ্বর আসে) কেন, বাবা যে বলেছিল, ডানদিকের মুদির দোকানটায় সব পাওয়া যায়। বিরক্ত গলায় কন্যার উত্তর, এখন ওটা খোলে না, সেদিন আমি যখন পড়তে যাচ্ছিলাম, তখন সবে খুলছিল। তাহলে একবার না হয় বাজারের ওই দোকানটায় যা, ওই যে মুদির দোকানের উলটোদিকে, ওটায় ডিম-দুধ রাখে। জননী নাছোড়বান্দা। বাবুর কন্ঠস্বর ক্রমশঃ উচ্চমার্গে উঠছে, ওটা কতটা দূরে জানো? আরেকটু এগিয়ে রাস্তাটা বাঁকলেই তেঁতুলতলা। শনিবার বাবার সঙ্গে আসছিলাম, বাবা অন্য দোকানে ঢুকেছিল, আমাকে বলল, তুই ডিম আর দুধটা কিনে নে। কতক্ষণ লাগবে জানো? যেতে আসতেই পনেরো পনেরো মানে আধঘন্টা, সোয়া ছটা বেজেই যাবে, আমার আজ আর খাওয়া হবে না (শেষটা কিঞ্চিৎ কাঁপা কাঁপা গলায়)। জননীর বেপরোয়া উত্তর, দূর, আমি কতবার ওখান থেকে ডিম আর দুধ এনেছি, ও তো একেবারে বাজারের সামনেই, দশ মিনিট লাগবে তোর, যা না, বাবা, প্লিজ, রেডি তো হয়েই গেছিস। আমি এদিকে সব ঢেলে দিয়ে বসে আছি, কথা বলে তো আরও দেরি করছিস।

অতএব, ব্যাজার মুখে কন্যার গমন।

চতুর্থ অঙ্ক

হঠাৎ কী মনে পড়ায় জননীর ফোন, তোর আগের সেই ভূগোল স্যারের বাড়ির নীচের দোকানটায় দুধ-ডিম সব রাখত, যাওয়ার সময় গলিটায় একবার উঁকি দিয়ে যাস তো মা। বিরক্ত গলায় উত্তর আসে, হুঁ

ইতিমধ্যে মা ফ্রিজের সর্বত্র এবং রান্নাঘরের আনাচে-কানাচে দেখে নিয়েছেন কোথাও ডিমের পর্যন্ত নেই। আসলে কিছুদিন আগে একবার অদ্ভুত জায়গা থেকে চারটে ডিম বেশ রহস্যজনকভাবেই আবিস্কৃত হয়েছিল। কিন্তু সে তো অন্য গল্প।

একটু পরেই মায়ের ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে মেয়ের নাম দেখে জননী কেটে দিয়ে ফোন করেন। কারণ ওইটেই নিয়ম আমার ব্যালেন্স কমাবে না। ওপাশে কিঞ্চিৎ বিরক্ত কন্ঠ, সব দোকান বন্ধ মা, সঅঅব, স্যারের গলির দোকানও। আমি বাজার পেরিয়ে অনেকটা এসেছি। স্রেফ মুদির দোকানটা খোলা। জননী জানেন বৃথা আশা, তবু নিরুপায় গলায় বলেন, একবার জিজ্ঞাসা করে দেখনা। (মা-কে নিয়ে আর পারা যায় না গোছের কন্ঠে) দেখছি, আচ্ছা। একটু পরেই পুনরায় মায়ের ফোন, হ্যাঁ রে, পাসনি তো? মেয়ের জবাব, না (আমি তো বলেইছিলাম, তুমি বেকার খাটালে গোছের কন্ঠে)। মায়ের তীব্র আশ্বাস, চলে আয়, লাগবে না, কোনদিন এগলেস পুডিং বানাইনি বটে, তবে বানিয়ে ফেলব, চিন্তা করিস না।

পঞ্চম অঙ্ক

(যেটা কিনা সেই পুডিং খেতে খেতেই লিখিত এবং এটাই সবচেয়ে সিরিয়াস অধ্যায়)

ফ্রিজ খুলে আগেই চোখে পড়েছিল, কাস্টার্ড পাউডার আছে। ভয় কী? স্ট্রবেরি কাস্টার্ড। মানে টপিংসের গল্প বাদ। দূর বাবা, এখন খাবার মতো জায়গায় পৌঁছলেই বাঁচি। বেশ অনেকটা কাস্টার্ড পাউডার দিয়ে মিক্সি চলল। বন্ধ করে চামচে করে তুলে টেস্ট। এ বাবা চকলেট কোথায়, এ তো পুরো স্ট্রবেরি পুডিং হয়ে গেছে! আরেকটু চকলেট ঢালি। আরও দুটো বিস্কুটও, সাবধানের মার নেই কিনা। মিক্সি চালানোর ফাঁকে ফাঁকেই মাইক্রোওয়েভের কাচের পাত্রে মাখন মাখিয়ে তলায় চিনি ছড়িয়ে চালিয়ে দিই। আরে ক্যারামেলটা করতে হবে না?

ক্যারামেল হয়ে গেলে তার ওপরে মিশ্রণটা ঢেলে দিই। আরে জমবেই। পাখাটা চালিয়ে ছোট মোড়া চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে পড়ি সামনে। মাইক্রোওয়েভ চলতে থাকে। যার স্টার্ট আর পজ বাটন ছাড়া আর কোনও বাটনই কাজ করেনা এখন। তাতে আর ঘাবড়াচ্ছে কে? স্টার্ট দিলে তিরিশ সেকেন্ড। এরপর তুমি যত মিনিট চাও সেভাবে বারংবার টিপতে টিপতে ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছবে। আরে এতেই তো ভাতও হয়ে যাচ্ছে এমন কী ভাপা মাছও। চলুক না যতক্ষণ শ্বাস।

মিনিট তিনেক পরে বন্ধ হলে কাঁটা চামচ ডুবিয়ে দেখি  নাহ্‌, এখনও টলমল করছে। আবার মিনিট তিনেক।

ওই রে, দেড় মিনিট হতে না হতে, স্পষ্ট দেখেছি, বিনা চশমাতেই, মাইক্রোওয়েভের কাচের ফাঁক দিয়ে ওই উপচাচ্ছে, উপচাচ্ছে, উপচাচ্ছে (কেলো, এটা কিন্তু একদম মনে মনে)। সঙ্গে সঙ্গে তাকে থামাই। খুলি, নামাই। নাহ্‌, জমেনি। আরে জমেনি তো বোঝাই যাচ্ছে, নাহলে আর উপচানোর চেষ্টা করবে কেন? কিন্তু উপায় কী? মরিয়া হয়ে আবার বসিয়ে দিই। মিনিট দুই যা হবার তা হবে...।

দেখলাম। নিরুপায় হয়ে দেখলাম, বেশ কিছুটা উপচিয়ে তবে সে শান্ত হল। এবং সান্দ্র হয়েছে। মানে জমে যাবে অদূর ভবিষ্যতেই। কিন্তু আপাত-ভবিষ্যতের খুব বেশি দেরি নেই। মেয়ের আন্দাজে একটা বাটিতে কেটে নিয়ে মাইক্রোওয়েভের প্লেটটা মুছে আবার চালিয়ে দিই মিনিট দুই। এবার ওকে নিয়ে একটু আস্তে ধীরে ভাবলেই চলবে। মেয়ের গরম বাটিটা সোজা ডিপ ফ্রিজে চালান দিয়ে আবার ওর ঘরে উঁকি মারি।

মোবাইল নিয়ে সে ব্যস্ত যথারীতি। ঘড়ি দেখি। ছটা কুড়ি। নিজেকেই বাহবা দিই, প্রগ্রেস বেশ ভালো। সবিনয়ে বলি, হয়েই গেছে রে, ঠান্ডা করতে দিয়েছি। মিনিট পাঁচেক থাকুক। এই ধর সাড়ে ছটা। সাড়ে ছটা? সাড়ে ছটায় তো আমি বেরিয়েই যাব, রীতিমতো হুমকি ভেসে আসে। যদিও আশু বেরোনোর বিন্দুমাত্র কোনও লক্ষণ তার সর্বাঙ্গে নজরে পড়ে না আমার। তবু ফের মোলাম গলায় বলি, তুই সাড়ে ছটা, পৌনে সাতটা বলছিলি না? ওই ধর পৌনে সাতটাতেই গেলি নাহয় আজ, পৌঁছে যাবি ঠিক। আরে একটু ঠান্ডা নাহলে কী খেতে ভালো লাগবে?

ডিপ ফ্রিজ খুলে একবার উঁকি মারি দূর যেমন গরম তেমনি গরম। মেয়ের হুমকিতে আর চেয়ারে বসার স্থৈর্য থাকে না। ফ্রিজের সামনে কোমরে হাত দিয়ে রণরঙ্গিনীর ভঙ্গীতে দাঁড়াই। হুঃ, মানুষ হলে কবেই ঠান্ডা হয়ে যেত, আর এ তো নতুন ফ্রিজ। খানিকবাদে স্রেফ মরিয়া হয়েই বের করে ফেলি। যাইহোক ভবিষ্যত বড় নিকটবর্তী। যথেষ্ট পরিমাণ কাজু-কিসমিশ দিই, মানে কিঞ্চিৎ বেশিই আর কী। তারপর প্রায় বুক ঠুকে মেয়ের সামনে প্লেটের ওপর বাটি নিয়ে দাঁড়াই –‘দেখ হয়ে তো গেল, জমেও গেছে। তুই শুধু শুধু টেনশন বাড়িয়ে দিস। তবে কতটা ঠান্ডা আর কতটা গরম তা ঠিক বলতে পারব না।

মেয়ে হাসিমুখে হাত বাড়ায় (হেবি মুডে আছে, বাব্বা বেঁচেছি)। খেয়েদেয়ে জোর গলায় জানান দিল, ইস্‌, মা, ছটা পঞ্চাশ হয়ে গেছে। জননীর মুডও এখন স্টেবল –‘ও তো নিজেই দেরি করলি, ওইটুকু পুডিং খেতে কারও কুড়ি মিনিট লাগে? আমি কিন্তু একদম সাড়ে ছটায় দিয়েছি। যা, রিকসা করে চলে যাস বাসস্ট্যান্ডে। মেয়ে এবার জানায়, ভালোই হয়েছে মা, ডিম যে দাওনি, বোঝাই যাচ্ছে না। মায়ের মুখে একগাল হাসি, চলবে বলছিস তাহলে?

শেষ অঙ্ক

ইতিমধ্যে মেয়ের বাবার কাছে মোবাইলে মেসেজ গেছে, দুধ, ডিম ইত্যাদি ইত্যাদি। মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে তিনি ফোন করলে মেয়ের মায়ের আবার ক্যালকুলেশন শুরু হয়ে যায়। ঝটপট মাইক্রোওয়েভ থেকে বেরিয়ে আসে উত্তপ্ত পুডিং। বাহ্‌, একেবারেই জমে গেছে। সত্যিই তাই। ক্যারামেলের দিকটাকে ওপরে আনার জন্য যখন উলটাই তখনও সে একেবারেই অনড়। আরে দূর, চকলেট পুডিং-এ আর ক্যারামেল কী দেখা যাবে? আর খাব তো সেই আমরাই। সোজা ফ্রিজে চালান দিই। ডিপে নয় প্রথমে অল্প ঠান্ডায়। শেষে কাচের বাটিটা ভেঙে আরেক কাণ্ড হোক আর কী।

এবার মনের আনন্দে লিখতে বসি। সাধে কী আর মা বলত, অঘটনঘটনপটিয়সী। জমিয়েছি তো বিনা ডিমেই এক্কেবারে।

লিখতে লিখতেই বেল বাজে। দরজা খুলি। ফ্রিজ থেকে সরবত বের করে দিতে দিতেই টপ করে পুডিং-এর বাটিকে এবার ডিপে চালান দিই। আবার যে ভবিষ্যত নিকটবর্তী।

খানিক অপেক্ষা করে ঈষদুষ্ণ পুডিং-ই কাজু-কিসমিশ সাজিয়ে দিই। হ্যাঁ, সক্কলকে ওপরের সান্দ্র অংশটা দিয়েছি। নীচের কঠিন অংশটা নিজের জন্য। কে যেচে খারাপটা দেয়? একেই আমি যাই ধরে দিই মুখে তাই দুজনেই বলে দারুণ। সেটা বলারও তো কিছু যুক্তি থাকা দরকার।

তবে নিজেও খেয়ে দেখেছি, খারাপ বলে কার সাধ্যি?

রাত্তিরে খেয়ে উঠে ডেজার্ট হিসেবে দিব্বি আবার ঠান্ডা ঠান্ডা পুডিং খাওয়া যাবে।

ওই যে সব ভালো যার শেষ ভালো। হতেই হবে। আম্মো বানিয়েছি কিনা।

সমাপ্ত








Sunday, August 7, 2016

প্রাণের মানুষ

দুবছর আগে আমাদের ছুটি-র শ্রাবণ সংখ্যার সম্পাদকীয়। আজ মনে পড়ল হঠাৎ -

এবার না-ভ্রমণে গিয়েছিলাম শান্তিনিকেতনে। সেই বোলপুর স্টেশন,রিকসাওয়ালাদের ডাকাডাকি, হিন্দি গানের সুর...।
প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে ... তবু কোথাও কোথাও তাকে দেখার ইচ্ছা করে বৈ কী...

সোনাঝুরির সাজিয়ে তোলা হাটে,হ্যান্ডিক্রাফটসের সারি সারি দোকানে,রিকসার অস্বাভাবিক চড়া ভাড়ায়, রবীন্দ্রভবনের মিউজিয়ামের লম্বা লাইনে,ছন্দহীন মফস্বলী পরিকাঠামোয় গড়ে ওঠা সারি সারি নানান লজ, ঝুপড়ি হোটেল অথবা গ্রাম বাংলার কুঁড়েঘরের আদলে তৈরি হওয়া আধুনিক রিসর্টের অবয়বে কোথাও বিশু পাগল নেই।

তীব্র গরম। ফেরার পথে ট্রেনে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল।
- বল তো মা ছবি আঁকায় কোন রঙটা সবচেয়ে বেশি লাগে?
- সবুজ।
- না,নীল। ছোটরা তো প্রকৃতির ছবিই বেশি আঁকে,আকাশ নীল,সমুদ্র নীল,নদী নীল। আমার তো রঙের বাক্সের সব নীল ফুরিয়ে যায়।
- বাইরে দেখ,আকাশটা ধূসর,আর বাকী সব সবুজ সবুজ সবুজ... তাহলে?
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বিশু পাগল আছে,গেছো দাদা আছে প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে...

তাই হেরি তায় সকলখানে...।

http://amaderchhuti.com/mag12/index.php

Thursday, August 4, 2016

আমাদের ছুটি - সম্পাদকীয়

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে সুন্দরবনকে ধ্বংস করা চলবে না এমন একটা জোরালো আবেদন বেশ কিছুদিন ধরেই উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওদিকে ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষের সরকারের তরফ থেকে প্রকল্পটিকে দুই দেশের মৈত্রী সূচক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে শ্রী দেবাশিস সেনগুপ্তের একটি লেখা পড়ে আর 'আমাদের ছুটি'-র নিয়মিত লেখক তুহিন ডি খোকনের অনুরোধে সম্পাদকীয়তে এই প্রসঙ্গে দু-একটি কথা বলি।

রামপাল জায়গাটি বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। সুন্দরবনের যে অংশটি বাংলাদেশে রয়েছে তার থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে। তার মধ্যে আবার মাঝের ১০ কিমি 'বাফার জোন' মানে স্বল্প ঘনত্বের জঙ্গল। মোদ্দা কথা যা দাঁড়াচ্ছে, জঙ্গলের এলাকা থেকে মোটামুটি ৪ কিমি দূরেই তৈরি হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। প্রকল্পটি ভারত সরকারের তরফে এনটিপিসি এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎমন্ত্রক বিপিডিবি-র যৌথ উদ্যোগ। দুপক্ষই এতে সমপরিমাণ অর্থ লগ্নি করেছে। উপরন্তু, নির্মাণের পর আগামী দশ বছর ধরে প্ল্যান্টটির দেখভালের দায়িত্বও এনটিপিসি-র ওপরেই। কয়লাচালিত হওয়ায় নিয়মিতই বর্জ্য পদার্থ হিসেবে নির্গত হবে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড। বিপুল পরিমাণ এই কয়লাও আসবে সুন্দরবনের জলপথেই সারা বছর ধরে বহুসংখ্যক মালবাহী জাহাজে। একনাগাড়ে উড়ে আসা কয়লার গুঁড়ো, সালফারের পুরু আস্তরণ ঢেকে দেবে জল-জঙ্গল। যদিও বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রক এবং এনটিপিসি পরিবেশ দূষণের এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে! ঘোষণা করা হয়েছে এই প্রকল্প হবেই।

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল বেশ কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গেও সুন্দরবন অঞ্চলে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা শোনা গিয়েছিল। তখনই পরিবেশ সচেতন বিভিন্ন মহল থেকে জোর আপত্তি ওঠায় ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে। পরবর্তীতে কাঁথির কাছে হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর জোরালো প্রস্তাব এলেও সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিবাদকে মর্যাদা দিয়ে রাজ্যসরকার সম্প্রতি সেটি নাকচ করেছে।

কন্যার পরিবেশবিজ্ঞানের পাঠ্য বই-এ দুরকমের ইকোলজি চর্চার কথা পড়েছিলাম শ্যালো ইকোলজি আর ডিপ ইকোলজি। খুব ছোট্ট করে বলতে গেলে পরিবেশের উপর সামগ্রিক প্রভাবের কথা খেয়াল না করে শুধু মানবসমাজের কল্যাণের কথা চিন্তা করা হল শ্যালো ইকোলজি চর্চা আর পরিবেশের কোনও রকম রদবদল ঘটানোর আগে তাতে জীবজগতের সুদূরপ্রসারী কী ফলাফল হতে পারে সেই ভাবনা হল ডিপ ইকোলজি-র দর্শন। আর এসব লিখতে লিখতে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়ে কেবল কানে ভাসছিল শ্রাবণী ব্যানার্জির সুন্দরবন দর্শন লেখার শেষে লেখিকার বাবার কথাটি, মনে রাখিস পৃথিবীটা শুধুমাত্র মানুষের জন্য নয়।
www.amaderchhuti.com

Wednesday, August 3, 2016

ওয়ান্স আপন আ টাইম

একটা একটা করে কবিতার পাতা ভাসিয়ে দিচ্ছিলাম জলে। শব্দ-অক্ষর-বর্ণমালা মুছতে মুছতে ভেসে চলল কোন অতীতে। শব্দরঙা কাব্যবালিকা যেখানে অনন্তকাল দুহাত পেতে বসেছিল। সে অনেকদিন আগের কথা। তখন বৃষ্টিরা কথা বলত রিমঝিমিয়ে।

এরে ভিখারি সাজায়ে

দুহাত পেতে দাঁড়িয়ে রইলাম আজীবন। আর অঞ্জলিভরা বৃষ্টির ছাঁট কখন যেন নদী পেরিয়ে সাগরে পৌঁছল!

Tuesday, August 2, 2016

উতলধারা বাদল ঝরে...

ছোটবেলায় এমন সকাল থেকে বৃষ্টি চললে হাতের কাজ সেরে অথবা হাতের কাজ ফেলে মা হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে বসে একের পর এক বর্ষার গান গাইতো। অনেকদিনই আমিও মায়ের সঙ্গে বসে পড়তাম। হারমোনিয়াম বাজানো আসেনা। তাই তানপুরা বেঁধে আমায় দিতো। অনেকসময় শুধু তানপুরা বাজিয়েও গান চলতো।

উতলধারা বাদল ঝরে এই গানটা প্রায় দিনই গাইতো। ভীষণ গভীরভাবে। আর তারপরেই একেকদিন মজা করে বলত, কী হাল বোঝ বঁধুর! ...ওগো বঁধু দিনের শেষে এলে তুমি কেমন বেশে... মানে সারাদিন ভিজে ন্যাতা হয়ে কাদা পায়ে গা বেয়ে টপটপ করে জল ঝরছে...। আমি মনে মনে ভাবলাম তারপর যদি গোটা কতক হ্যাঁচ্চো, হ্যাঁচ্চো করে তো একেবারে পোয়া বারো।

কী গান ছিল, আর কী গান হল! আমরা দুজন বেশ খানিকক্ষণ প্রবল হেসে নিয়ে ফের গান ধরি আজ যেমন করে গাইছে আকাশ তেমনি করে গাও গো..., আর অমনি বাইরে আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করে।