Tuesday, February 23, 2016

লোভ

মানুষের লোভ শুধু মানুষকে খণ্ড খণ্ড করে
মানুষেরা নাম হারায়, অন্যনামে চিনি তারে,
অচেনা সে, আপনার অন্যকে হত্যা করে,
অন্য হত্যা করে আপনাকে, অন্যনামে।
পড়ে থাকে মানুষের খণ্ড খণ্ড লাস।
মানুষ কেড়ে খায় মানুষের গ্রাস
অন্য নামে, অন্য কোনও পরিচয়ে।
অনেক আছে তার, তবু কেড়ে খায়।
ক্ষুধার্ত মানুষ মরে,ডাস্টবিনে মুখ গুঁজে থাকে।
মানুষের লাস স্তুপ হয় ভাগাড়ে ভাগাড়ে
অন্যনামে বিক্রি হয়ে যায় নারীমাংস।
যাকিছু চাইলেই পাওয়া যায়, তাও চাই
অন্য আকারে স্বাদ বাড়ে তাতে।
মানুষের বদলে লোভ হাত চাটে।

যুদ্ধ হয়, বোমা ফেলে প্রকাশ্যে মানুষ
মারে একে অন্যকে, গুপ্ত ঘাতকের হাত
শানায় ছুরির ধার, বোমা বাঁধে আপনার বুকে।
নিজেরই সমগ্র জমি খণ্ড আরও খণ্ড করে।
যত কেড়ে নিতে পারে,ততো বাড়ে সাম্রাজ্যের সীমা।
পৃথিবীর নির্দিষ্ট ভূমি সকলেরই কম পড়ে কিনা!
যে মানুষ হত্যা করে, কেড়ে খায় নারী ও সুখাদ্য,
অন্য অন্য নামে  - পশু বলে গালি দেয় তাকে!
সবশেষে লড়াই বজায় থাকে চিতা আর কফিনে।
একটিমাত্র জন্ম,এমন কী মৃত্যুও কোনদিন মানুষ করে না।
সবকিছু শেষ হলে, শুধু ক্ষুধার্ত লোভ জেগে থাকে।
আরও আরও সুখের প্রত্যাশার দিয়ে যায় উত্তরাধিকার।

Monday, February 22, 2016

ভাবছিলাম

দুদিন আগে পথে বেরিয়েছিলাম, এ পি সি রোডে চোখে পড়ল সার দিয়ে ভারত মহাসভা না কী একটা লেখা গেরুয়া পতাকা। ভালো করে খেয়াল করে দেখিনি। আজ রাস্তায় চোখে পড়ল পদ্মফুল আঁকা অনেক গেরুয়া পতাকা। এও সেই রেলিং-এ আটকানো। মোদীর আগমনের প্রতিফলন।
ভাবছিলাম।
গেরুয়া রঙটা আসলে আমার ঠিক কোনওদিনই সহ্য হয় না। ওটা বৈরাগ্যের রঙ নয়, বৈরাগ্যের মোড়কে ভোগের রঙ। ওটা হিংসার রঙ। ওটা কিছু মানুষের রক্তের রঙ।
ভাবছিলাম।
এই আমার দেশ।
অথচ নানা ধর্ম, জাতি, ভাষা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এই দেশ আমার বড় প্রিয়।
ধর্ম যা ধারণ করে।
ধর্মীয় আচরণ মানুষের ব্যক্তিগত হোক।
রাষ্ট্র কেন ধর্মের নামে সন্ত্রাস করবে?
হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের সন্ত্রাসবাদী বলে না কেন?
মুসলমান মানে সন্ত্রাসবাদী বলে?
যেমন আমাদের কাছে বাঙালি মানে অশিক্ষিত।
শব্দের মানে বদলে যায় ব্যবহারে।
ভাবছিলাম।
গতকাল কী একটা কথায় বলছিলাম, মানুষ ইচ্ছা করলেই দিব্বি বাঁচতে পারত। শুধু যদি নিজেকে একবারও মানুষ বলে ভাবত। সেইটুকু ভাবতে পারে না বলেই যত ঝামেলা, রক্তপাত।
একটাই জীবন, সবাই যদি দিব্বি বাঁচত আর খেতে পাওয়া, আশ্রয়ের মতন বেসিক ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবত তাহলে কোনও জটিলতা ছিল না।
লোভ জিনিসটা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই আর তার ভালোভাবে বাঁচা হলনা একটা জীবন।


ভাবছিলাম।

Sunday, February 21, 2016

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের এলোমেলো ভাবনা

একটা পোস্ট দেখলাম, তাতে লেখা বাংলা ভাষাদিবস অথচ তারিখটা ইংরেজি। হয়তো আন্তর্জাতিক তকমা পেয়েছে তাই। প্রথম থেকেই কি বাংলা কোনও তারিখ ছিল না, কে জানে! সকাল থেকে একেকবার মোবাইলে ফেসবুক খুলছি আর ভাষাদিবসের চমকে বন্ধ করে রাখছি।কলকাতার রাস্তায় বেরোলে আজকাল বাঙালি কাউকেই প্রায় বাংলা বলতে শুনিনা, এমন কী নিজেদের মধ্যেও। ভাবছিলাম...

ভাষাদিবস, এপার বাংলা

অন্যদিন তো মনেই পড়ে না মা।
আজ সকাল থেকেই তোমায় নিয়ে
হইচই, কত কথা ও কবিতা, গান!

অন্যদিন তোমায় মনে পড়ে না মা -
অফিসে যাই অথবা ছেলেমেয়ের ইংরেজি ইস্কুলে।
রাস্তায় যেতে যেতে মেয়ের বন্ধুর মায়ের সঙ্গে
ইংরেজি আর হিন্দি মিশিয়ে কথা বলি যখন
ভদ্রমহিলা অবাঙালি, উনি কিন্তু হিন্দিতেই উত্তর দেন।
রাস্তায়-ঘাটে দোকানে-বাজারে ইংরেজি বা হিন্দি
ছাড়া কিছুই বলি না, পোশাকে-আশাকেও তাই
পাছে কেউ আনস্মার্ট অথবা বাঙালি ভাবে।

তুমি আমার মা - প্রাণপনে ভোলার চেষ্টা করি।
নেকটাই গুঁজে যখন ইন্টারভিউ দিতে যাই
আমি এবং ওপক্ষের সবাই ছেলেবেলায়
মা কে মা অথবা আম্মা ডেকেছিলাম।
এখন অবশ্য মুখোমুখি কথা বলি ইংরেজিতেই।
চাকরিটা যে বড্ড জরুরি। ওরা কী ভাববে!
বাঙালি হলেও সাহেবদের তো ইংরেজিটাই চলে।

আর তুমি দেখে নিও, এই দিনে, ঠিক এই দিনে
সকাল থেকেই মনে করব আমরা বাঙালি।
কারা যেন ওদেশে এই ভাষার জন্য মরেছিল!
একদিনের জন্য ওই গর্বটুকু, ঐতিহ্যের আঁচটুকু
যেন ফসকে না যায়। বাংলা ভাষা, মা আমার,
আমরাও তোমারই সন্তান। দেখ ভুলে যেও না যেন।
আমরা তো আজ সকাল থেকে কেবলি তোমার কথাই
বলে চলেছি, কবিতায়, গানে, বা আর যা যা কিছু সম্ভব -
ধুতিতে-শাড়িতে, নিদেন পক্ষে অ আ ক খ লেখা স্কার্টে।

ও মা, তোর চোখে কেন জলের ধারা?


Saturday, February 13, 2016

হলুদ বনে বনে নাকচাবিটি হারিয়ে গেছে, সুখ নেইকো মনে

যখন সবে বড় হচ্ছি, এইসময়টায়, এই সরস্বতীপুজোর আশেপাশে, বসন্তের শুরুতে যখন বিকেল-সন্ধ্যের দিকে একটা ভারী মনখারাপের হাওয়া দিত, মনটা কেমন হু হু করে উঠতো অকারণেই। যেন কী নেই, কী হারিয়ে গেছে, কী পাওয়া হয়নি...।

আজ অনেকদিন পরে তেমন একটা অনুভূতি হল যেন

হলুদ বনে বনে নাকচাবিটি হারিয়ে গেছে, সুখ নেইকো মনে।

এই ছেলেবেলা

ছেলেবেলা, এই ছেলেবেলা, একটু দাঁড়া, শোন, শুনে যা তাড়াতাড়ি -
কাঁধে একটু মাথা রাখতে দিবি? এক্কাদোক্কা খেলতে দিবি তোর উঠোনে?
উত্তর দিস না যে, গাল ফুলিয়ে চলে যাচ্ছিস! বাড়াবাড়ি।
হলুদ মাখা হাতে এখন সামলে রাখি ঘর-সংসার।
একটু বড়ই নাহয় হয়ে গেছি, তবু কতই বা আর?
ভাব আড়ি কী ঝগড়া কিম্বা মারামারি, সব এখনও করতে পারি।
পুজোর দিনে হলুদ শাড়ি দেখ এখনও পড়তে পারি।
সব এখনও সব এখনও, কথায় কথায় কান্নাকাটি, মুখঝামাটি
সব কিচ্ছু। খেলনাবাটি খেলতে পারি তোর সঙ্গেও।

আমায় একবার ফিরিয়ে নিবি তোর দলে, একবারটি?

Saturday, February 6, 2016

কলকাতা বইমেলা

ফেসবুকের পাতায় কলকাতা বইমেলা বেশ জমে উঠেছে। অনেকেই কবে যাচ্ছি জানিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করছেন, গুণীজনদের সঙ্গে ছবি তুলছেন। সেইসব ছবিই ঘুরেফিরে আসছে আমার নোটিফিকেশনে। দেখতে দেখতে ভাবছিলাম।

আমার ধারণা ছিল বা আছে, বইমেলায় গেলে শুধু বইদের সঙ্গেই আড্ডা দিতে হয় পাতা উলটে দেখে, খানিক পড়ে, কখনও লোভ সামলাতে না পেরে কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরেও। মনে পড়ে ছোটবেলায় সেই মফঃস্বল থেকে বইমেলায় আসতাম। লম্বা লাইন দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়ানো। তখন অন্ততঃ গোটাকতক বই আমি বিভিন্ন স্টলে বসেই পড়ে শেষ করতাম। বই নিয়ে মাঠে ঘাসের ওপর বসেও পড়া চলত।

এখন শুধু সপ্তাহের দিনগুলোয় দুপুরবেলায় একটু সময় নিয়ে আস্তে ধীরে বই দেখা যায়। অন্যদিন তো মন্দিরে ঢোকার মতো অবস্থা এক গেট দিয়ে ঢুকে কোনমতে ফুল-বেলপাতা দিয়ে আরেক গেট দিয়ে বেরিয়ে যাও।

বইমেলায় হঠাৎ কোনও চেনা মানুষ অথবা বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে বেশ লাগে। তবে বইদের সঙ্গে বন্ধুত্বটা একা একাই ভালো। অথবা নিজেরা মিলে।

নামীদামী লোকজনকে আমি চিরকাল এড়িয়ে চলি। তাঁদের লেখাই আমার কাছে তাঁদের সান্নিধ্য। ব্যক্তিমানুষকে দূরে রাখাই ভালো আমার মনে হয়।

কলকাতা বইমেলার শেষদিন আমাদের বিবাহবার্ষিকী। এটা কাকতালীয় নয়, একেবারেই দিনক্ষণ দেখেই করা। কোনবার তারিখ মেলে, কোনবার না। তবু শেষদিনটায় বইমেলায় যেতে বেশ লাগে, হোক ভিড়, তাও।


আর যেমনই হোক না কেন, যেখানেই বই থাকে, সে লাইব্রেরী হোক, কারোর বাড়ি হোক অথবা বইমেলা সে জায়গা আমার প্রিয় হবেই।

Tuesday, February 2, 2016

ওঠো হে

ছোটবেলা থেকেই অদৃশ্য অসুখে ভোগার একটা বাজে স্বভাব আছে আমার। এই বয়সেও তা গেলো না। যা বুঝছি দৃশ্যমান জগতে যতদিন থাকব ততোদিন অদৃশ্য অসুখ আমাকে তাড়া করে বেড়াবে। তাদের নাম আর ওষুধগুলো শুধু বদলে বদলে যাবে। ছোটবেলায় হিস্টিরিয়া-এপিলেপ্সি ছিল আর থাইরয়েডের সমস্যা। কথা জড়িয়ে যেত, মুখ দিয়ে লালা পড়ত, তোতলামি ছিল মুখে আর লিখতে গিয়েও। সেইসময়ে আমার কোনও বন্ধু ছিল না, গাছপালা, আকাশ-মাটি ছাড়া। আমার খুব অসুখ করলেও কেউ কোনওদিন খোঁজ করেনি। অথচ আমাদের সঙ্গে ইলেভেন-টুয়েলভে একটি হ্যান্ডিক্যাপড ছেলে পড়ত, তাকে বন্ধুরা, শিক্ষকেরা খুবই সাহায্য করত। ও ফার্স্ট হত আর আমি সেকেন্ড। স্বাভাবিকভাবে ওকে ভারি হিংসে করতাম। ছোট ছিলাম যে।

সাংবাদিক হওয়ার চেষ্টা কোনওদিন করিনি। বাবা বলেছিল, সাংবাদিকতা আমার দ্বারা হবে না। দেবেশমামাও তাই বলেছিল। সেইজন্যই বোধহয় আমার পেশা আর নেশা হল সাংবাদিকতা এবং লেখালেখি। সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালোলাগে ইন্টারভিউ নিতে। আমি খুব অলস সাংবাদিক। সে আর কী করা যাবে। আমাদের ছুটি পাঁচে পড়ল বলে। আর মেয়ের বয়স সতেরো। দুটোকে মানুষ করার চেষ্টা করছি তো একসঙ্গে।

তিনবছর আগে ধরা পড়েছিল ফাইব্রোমায়ালজিয়া, চিকিৎসা করাইনি, সেটা আমারই গাফিলতি। আজ আবার নতুন করে ডায়াগনোসিস হল, চিকিৎসাও শুরু করলাম। মাস ছয়েক আগে বাইপোলার ডিসঅর্ডার ধরা পড়েছে, চিকিৎসা হচ্ছে। এইসবই চলবে বাকি জীবনটা। ভাবছি এসব ডিঙিয়ে এবারে আর কী কী করা যায়। সুগার আর প্রেসারকে নাহয় আব্বুলিশ ধরলাম। ও তো এখন প্রায় সবারই থাকে।

আপাতত নিজেকে কিছুটা উৎসাহ দেওয়া যায় বৈকি। হস্টেলের বন্ধুদের গ্রুপটা ভারি উৎসাহ দেয় আমায়। আগে ওরা জানতোই না, কলেজে পড়ার সময়, এখন বলি। আসলে তখন নিজেকে অসুস্থ বলতে খুব প্রেস্টিজে লাগতো। শুধু রুমমেট একজনকে বলেছিলাম, যার হাতের কাছেই সুইচবোর্ড ছিল, রোজ সকালে আমার জ্বর আসে, পাখা বন্ধ করিস, নাহ্‌ সে একদিনও করেনি। সে অবশ্য আমাদের এই গ্রুপে নেই। খুব ছোটবেলার দু-একজন বন্ধুও সাহস যোগায়। আজকাল বড্ড বন্ধুনির্ভর হয়ে পড়েছি আমি। প্রেস্টিজের বালাইটালাই আর রাখিনা। মেয়ে আর তার বাবাও ওই বন্ধুদের মধ্যেই পড়ে।

তবে শেষপর্যন্ত নিজেকে সবচেয়ে উৎসাহ দিতে হয় নিজেকেই।

ওই যে মা বলেছে, দরজা জানলা খুলে সময়ের ঝুঁটিটা শক্ত মুঠোয় ধর, ওঠো হে

আপাতত একদিন করে বাঁচি। কাল কী হবে কে জানে!
রোজ সকালে ঘুম ভাঙে আর ব্যথায় উঠতে পারি না।
নিজেকে কেবল বলি, ওঠো হে
কাজ করতে বসি আর ওষুধের ঠেলায় আর অসুখের জেরে ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়, মাথা অস্থির হয়ে যায়।
নিজেকে হেঁকে বলি, ওঠো হে

নিজেকে বলি, ওহে ছোটবেলায় তো দিব্যি পারতে একা একাই, তুমি কিন্তু বড্ড বুড়ো হয়ে যাচ্ছ।
নিজেই বলি, বললেই হল, আমার বয়স এখন কমতির দিকে। ফের যদি বুড়ো বুড়ো করবি তো তোর একদিন কী আমার একদিন।
এই না বলে ঝটপট উঠে বসে আমাদের ছুটি-র তথ্য সংযোজন করতে শুরু করি। পত্রিকা বেরোবে যে এই কয়েকদিনের মধ্যেই।
তারপরেও অনেক কাজ। কত কী পেনডিং রয়ে যাচ্ছে।
অতএব, ফের ওই ওঠো হে
আপাতত বেগুন ভাজতে যাই উঠে।