Sunday, September 25, 2016

বৃষ্টির হিরে-মানিক কুচি - তারপরে

বড্ড গরম। মাঝে মাঝে রোদ্দুর উঠছে, আবার মেঘলা। পাখার তলায় বসে ঘাম মুছছি আর ল্যাপটপে কাজ করছি। হঠাৎ কানে এল ফেরিওয়ালার ডাক। তা কত ফেরিওলাই তো আমার বারান্দার নীচ দিয়ে হেঁকে হেঁকে যায়। আজ অচেনা ডাক শুনে ভারী আশ্চর্য হয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি, আরে! এ তো আমার সেই লন্ঠনওলা!

জোরে হাঁক পারি, ও লন্ঠনওলা, শুনে যাও। সে মাথা উঁচু করে একবার আমার দিকে চেয়ে বলে, লন্ঠন তো নেই। এখন রোদ্দুর নিয়ে ঘুরে বেড়াই। তাই সই, ওপরতলায় ডেকে দরজা খুলে দিয়ে বলি, আচ্ছা তোমার সেই লাল-নীল-সবুজ লন্ঠন গেল কোথায়? বলল, সে তো রেখে এসেছি সেই বৃষ্টির বনে দারুচিনি দ্বীপের ঠিক পাশে। যেখানে ওই সুখ-দু:খেরা হাত ধরাধরি করে খেলা করে।

বললাম, তা নাহয় বুঝলাম, কিন্তু অন্ধকারে বৃষ্টির হিরে-মানিক কুচি ছড়াতে ছড়াতে সেই যে চলে গেলে আর তোমার দেখা নেই। এদিকে সর্বজনে আমায় জিজ্ঞাসা করছে, তারপর কী হল? অমনি সে হাসতে হাসতে বলল, কবিতায় আবার তারপর বলে কিছু হয় নাকি? ও তো গল্পে থাকে।

এবার জানতে চাই, রোদ্দুর যে নেব, তোমায় দেব কি? সে অম্লানবদনে বলে, কেন তোমার দু:খ, রাগ, আত্মাভিমান, হিংসা আর যা যা কাউকে দিতে পারনা সেই সমস্তকিছু। বলি, সে হিসেব মেলাবে কী করে? দাঁড়িপাল্লা কই? ক্ষতি হলে? ফের নিশ্চিন্ত গলায় বলে না মিললেই বা কি, কেউ তো আর তোমায়-আমায় ফেল করিয়ে দিচ্ছে না? আর তাও যদি করায় তাতেও কিচ্ছু যায় আসেনা।

এই না বলে মিনির সেই কাবুলিওলার মতো হেঁইও করে আমার বোঝাটা তুলে নিয়ে আমার আঁজলা ভরে রোদ্দুর দিয়ে গেল।

অন্যমনস্ক হয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর মনে পড়াতে মুঠো খুলে দেখি, ওমা, এ তো সেই হিরে-মানিক কুচি। কেবল সকালের আলোতে তারা কেমন ঝলমল করছে।

Saturday, September 24, 2016

আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাইনে তোমারে

কারো কারো স্পর্শে অন্ধকার থাকে। কাদাও। কারো স্পর্শে আলো। ভোরবেলা। কারোর স্পর্শে জলভরা মেঘ থাকে কখনও।ছুঁয়ে দিলেই বৃষ্টি। কারোর স্পর্শে শেষ বিকেলের বিষন্নতা। অভিমান।

ইচ্ছা- অনিচ্ছার চাওয়া- না চাওয়ার এইসব স্পর্শ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ক্রমাগত হাঁটতে থাকি জন্ম থেকে মৃত্যু অভিমুখে। যেখানে সে চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকে গানের ওপারে। স্পর্শহীন।

Sunday, September 18, 2016

বাতিলযোগ্য

মাঝে মাঝে নিজেকে বাতিলযোগ্য লাগে, পুরোনো কাগজের মতো নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় যা কেবল দখল করে থাকে কিছুটা জায়গা আর আঁকড়ে থাকে কিছুটা সময়।

মাঝে মাঝে নিজেকে বাতিলযোগ্য লাগে রঙ ওঠা জামা আর ছেঁড়া জুতোর মতো যারা ধরে থাকে সুখ- দু:খের কিছু অলৌকিক স্মৃতি।

মাঝে মাঝে নিজেকে বাতিলযোগ্য লাগে যে কবিতা ছিঁড়ে ফেলেছি, যে কথা হারিয়ে গেছে মনের অগোচরে সেইসব অলিখিত বেদনার মতো।

তবু ফেলতে পারিনা কিছুই - নিজেকেও, শুধু হাতড়ে বেড়াই এ জীবন।

ইনোসেন্স

তোমার টুকরোগুলো জুড়ে জুড়ে একটা ছবি আঁকব। মেঘের মাঝে নদীর টুকরো বসাব না ঠিকই কিন্তু ভালোমন্দ আর হাসিকান্নাদের মিশিয়ে দেব। সুন্দর না কুৎসিত তা দেখাটা বড় নয় কারণ তোমার ঠোঁটের টুকরোয় লেগে থাকবে শৈশব। 

Thursday, September 1, 2016

মৃত কবিতারা

সদ্য মৃতের মতো নিঃশব্দ, বাসহীন। অথচ মৃত্যুর তো ধূপ-ধুনো, অগরু-চন্দনের সুগন্ধ থাকে। রজনীগন্ধার তীব্রতা ঢেকে দেয় পদ্মের গায়ে লেগে থাকা নরম জলজ বাস। অশ্রুতেও কিছু লুকানো শব্দ-অক্ষর ঝরে ঝরে পড়ে শিউলির মতো। এলোমেলো স্মৃতিরা ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তোলে, অনুরণিত হয়। অথচ শব্দেরা কফিন কাফন অথবা ফুলমালায় বিস্মৃত প্রায়।