Tuesday, November 29, 2016

ফের কাক্কেশ্বর উবাচ

কাক জিজ্ঞাসা করল, কালোকে অর্ধেক করলে কী হয়?
আমি বললাম, কালোকে অর্ধেক করলে আর কী হবে আধখানা কালো হবে!
কাক মাথা নেড়ে বলল, হলো না, হলো না, সাদা।
আমি বললাম, ধুত, তাই আবার হয় নাকি? আমার কালো রঙ পেন্সিল ভেঙে গেলে তো সেটা কালোই থাকে, দুটো অর্ধেক কালো।
পেন্সিল নয়, পেন্সিল নয় টাকা, কালো টাকা। তোমার কালো টাকা আছে? কাক আবারও জিজ্ঞাসা করে।
আমি বললাম, না, কালো রঙের টাকা হয় নাকি? আমার কাছে তো একটাও নেই! গোলাপী রঙের দুটো দুহাজার টাকার নোট রয়েছে যেটা কোথাও ভাঙিয়ে দিচ্ছে না। খুচরো হবে নাকি?
কাক বিরক্ত হয়ে একটানা বলে গেল, কালো টাকা মানে ব্ল্যাক মানি তাও জানোনা? খুচরো? খুচরো মোটেও এখন সহজ কথা নয়। দশ টাকার কয়েন চাও তো গোটাকতক দিতে পারি কেউ নিচ্ছেনা। তোমার বয়স কত? ওজন? কালো টাকা নেই যদি তবে লাইনে দাঁড়াওনি যে বড়? তুমি দেখেছ আম্বানী, জয়ললিতা, মোদী, মমতা কাউকে লাইনে দাঁড়াতে?
মাথা নেড়ে ভয়ে ভয়ে বললাম, কই না তো, দেখিনি। কোনও মিডিয়া খবর করেনি। বয়স? আমার বয়স তো তেতাল্লিশ বছর আর ওজন সত্তর কেজি। কিন্তু আমি তো এ টি এম থেকে টাকা তুলতেই পারিনা।
কাক হেঁকে বলল, বয়স সত্তর কেজি, ওজন তেতাল্লিশ বছর, দিব্যি ফেসবুক-হোয়াটস অ্যাপ করতে পার আর টাকা তুলতে পারনা? বললেই হল? তুমি তো আর গরীব নও যে ফস করে পঞ্চাশ দিনের আগেই মরে যাবে! তাহলে হয় তুমি দেশদ্রোহী নাহলে সিপিএম।
আমি ভীষণ চটে গিয়ে বললাম, একদম বাজে কথা বলবে না। আমার বয়স মোটেও সত্তর কেজি নয়।
কাক একটুও পাত্তা না দিয়ে পেন্সিলটা দুবার ঠক ঠক করে ঠুকে ঘাড় বেঁকিয়ে একটুক্ষণ কী ভেবে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, পেটিএম জানো? ক্রেডিট কার্ড? ক্যাশলেস মানি?
আমি এবার ভারী খুশি হয়ে বললাম, পেটিএম তো? কেন জানব না? ওই যে মোদীর ছবি দিয়ে কাগজে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
কাক বলল, আরে বিজ্ঞাপন চাও বললেই হয়। এই নাও বলে একতাড়া কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিল।
দেখি কাগজের গায়ে বড় বড় করে লেখা - শ্রী শ্রী ভুষুন্ডি কাগায় নম। সাউথ ব্লক, সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং...
এখানে হিসাবী বেহিসাবী সমস্ত কালো টাকা সাদা করিয়া থাকা হয়।
জমা টাকা কালো তাহা নিজে জানাইলে কর ৩০% জরিমানা ১০% সারচার্জ করের ৩৩% অর্থাৎ সবমিলিয়ে হল গিয়ে ৫০%। বাকি টাকা চারবছর গরিব কল্যাণ প্রকল্পে কাজে লাগবে।
জমা দেওয়া টাকা কালো বলে ধরা পড়লে...ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার তো মাথাফাতা সব গুলিয়ে গেল।
বললাম, আর যাদের টাকা কালো নয়, যারা টাকা তুলতে পারছে না, টাকা পেয়েও ভাঙাতে পারছে না, যারা টাকা এখনও বদলাতে পারলনা...?
কাক ভারী বিরক্ত হয়ে বলল, তাও জানোনা? এরা হল হিসেবের বাইরে, খরচের খাতায়। এদের জমা টাকায় সরকারের স্বাচ্ছল্য বাড়ল, কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে ঋণ দেওয়ার মতো পুঁজি বাড়ল। সকাল থেকে বকবক করে দিলে তো আমার সময় নষ্ট করে। এখন সময়ের দাম বড্ড বেড়ে গেছে -৫০ দিন, তিন মাস, ছমাস... কতটা কালো টাকা সাদা হচ্ছে তার ওপর বদলে বদলে যাচ্ছে।
এই বলে কাক্কেশ্বর মন দিয়ে আবার কালো-সাদা হিসেব কষতে লাগল আর আমি হাতে দুটো বাতিল থুড়ি না ভাঙাতে পারা দুহাজার টাকার নোট নিয়ে আকাশপাতাল ভেবেই যেতে থাকলাম কোথায় ভাঙাব?





আন্তর্জালে বাংলা ভ্রমণপত্রিকা ও ব্লগ

২৫ ও ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ 'বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা' শীর্ষক দুই দিন ব্যাপি জাতীয় আলোচনাচক্রে ভাষা ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন এমন গুণী মানুষজনের কাছ থেকে ভাষা, ভাষাবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কীভাবে পাশাপাশি কাজ করতে পারে এবং করছে এ বিষয়ে নানান বিদগ্ধ আলোচনায় সমৃদ্ধ হলাম।
এই আলোচনাচক্রের প্রথম দিনের একটি অধিবেশনে আমরা যারা প্রয়োগক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছি তাঁদের কয়েকজনের মধ্যে একেবারেই প্রযুক্তি বিষয়ে অজ্ঞ, কেবলমাত্র ভ্রমণসাহিত্যে উৎসাহী হয়েও 'আন্তর্জালে বাংলা ভ্রমণপত্রিকা ও ব্লগ' শিরোনামের একটি উপস্থাপনা রাখতে পেরে আমি আনন্দিত।

আলোচনাচক্রটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগের অর্থানুকূল্যে আয়োজন করেছিল সরসুনা কলেজের বাংলা বিভাগ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ।

Monday, November 14, 2016

পর্যবেক্ষণ

বামেরা প্রতিবাদ করছেন। ওদিকে তৃণমূলও। এবারে বাম-তৃণমূল মিলল কিনা সেই নিয়েও চিন্তিত অনেকে।
বামেরা আর যাই করুক প্রতিবাদ একটা করার অভ্যেস চিরকালের। আর এটাও সত্যি যে বামেদের উপরতলার নেতারা সাধারনভাবেই থাকেন বলেই দেখেছি। আর যাঁরা ইয়ে করতে শুরু করেছিলেন তাঁরা এখন তৃণমূলে গিয়ে নিশ্চিন্তে করছেন।
খেয়াল করুন বামেরা কিন্তু কালো টাকা ধরার বিরোধীতা করছে না। করছে কাজটা যেভাবে হয়েছে তার সার শূন্যতায়।
বিরোধী থাকাকালীন করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে ধরণের মমতার প্রতিবাদী মূর্তি খুব প্রভাব ফেলেছিল জনগণের মধ্যে। না তাঁরা পেয়েছেনও। হাতে রইল সাইকেল।

আরে যে যার মতো প্রতিবাদ করুক না নিজেদের স্বার্থে, তবু করুক।
যে মানুষটার হাতে এখনও ভারতবর্ষের মানুষের রক্ত লেগে আছে, ধর্ম ব্যবসায়ী সেই মানুষটাকে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

ভোট দিইনা গত দশ বছরেরও বেশি। এই সবই পর্যবেক্ষণ।

গণমাধ্যম!

একজন সাংবাদিক হিসেবে যে বিষয়টা আমাকে আজ সবথেকে ভাবায় তা হল আজকে গণমাধ্যমের অবস্থান।

এ দেশে সংবাদমাধ্যম অর্থাৎ খবরের কাগজ চালু হওয়ার প্রথম দিকে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল দুরকম। বৃটিশ কাগজগুলি ইংরেজ শাসনের পৃষ্ঠপোষকতা করত এবং ভারতীয় কাগজগুলি ইংরেজ বিরোধীতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, আমজনতার বয়ান এবং তাদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরত। এতে যেমন বিচিত্র ভাষা-ধর্মের একটা দেশের মধ্যে প্রতিদিনের জীবনের বঞ্চনা শোষনের একটা যোগসূত্র স্থাপিত হতো ঠিক তেমনি ইংরেজ বিরোধীতার একটা সাধারণ রূপ ধরা পড়ত।

খুব স্বাভাবিকভাবেই উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী এর যেটুকু সুফল পেয়েছিল তা সাধারণ মানুষ পায়নি। আবার এই উচ্চ ও মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশই ছিল শাসক শ্রেণীর দালাল।

এর ব্যতিক্রম বলতে যাঁর নাম বারবারই মনে পড়ে তিনি 'গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা' (১৮৬৩)-র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার। কাঙাল হরিনাথের কাজ ও লেখা আজও প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় আমার।

সংবাদমাধ্যমগুলির পরিবেশনা দেখলে এখন যেটা মনে হয়, খবরের স্লট বা পাতা ভরতে তারা যতটা আগ্রহী ততোটা 'খবর' নিয়ে নয়। কিছু রয়েছে পরিস্কার পৃষ্ঠপোষক গণমাধ্যম যা সরাসরি সরকারের যে কোনও নীতি সমর্থন করে। এটা সবসময় ছিল ও থাকবে। কিছু গণমাধ্যম সব দিক বজায় রেখে চলে যাতে পাশা উলটোলেও তার ক্ষতি হবে না। এরা সবচেয়ে ক্ষতিকর।

আরও ক্ষতিকর যেটা, গণমাধ্যমের শুরুর দিকে 'গণ' তে মাধ্যম চালাতো এখন ওই 'মাধ্যম' চালায় 'গণ' কে। আর তাই রিক্সাওলাও বলে, 'এবারে পাকিস্তান পুরো বুঝবে।' তা তুমি বুঝলে কী করে জানতে চাইলে বলে, 'টিভির ওমুক চ্যানেল বলছিল।'

একটা সময়ে কাগজে প্রতিবাদী চিঠি লেখার একটা বেশ চল ছিল। তখনও সোশাল মিডিয়ার যুগ নয়। অনেকটা জায়গা নিয়েই ছাপা হত কিন্তু বেশিরভাগই এডিটেড ভার্সন। অপছন্দের চিঠিপত্র ওয়েস্ট পেপার বাস্কেট ভরাতো। কাগজে চিঠি লিখেই লেখক হিসেবে খানিক প্রতিষ্ঠাও পেয়ে গেলেন কেউ কেউ। এখনও বেরোয় কিন্তু সেই ব্যাপারটা আর নেই।

সোশাল মিডিয়া এক হিসেবে মানুষের মুখপাত্র হয়ে দাঁড়ালো। আর্থিকভাবে একেবারে নীচুতলার মানুষেরা অবশ্য এর আওতার বাইরেই আছেন এখনও। যদিও এখন রিক্সাওলার পকেটেও মোবাইল। ফুটপাতের মানুষও রেডিওর বদলে মোবাইলে মন দেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়া যাকে বলে। কম টাকায় নেট কানেকশন, ফ্রি ওয়াইফাই-এর পর, বিনাপয়সার সিম অজস্র অফার।

একটা প্রশ্ন জাগে, মানুষ যখন সহজে তার ক্ষোভ বিস্তৃত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে তখন তার প্রয়োগ করার ইচ্ছে বা ক্ষমতা আর কতখানি থাকবে?


তবে মিডিয়া যখন আঁটঘাট বেঁধেই নোট বাতিলের পরেরদিন পেটিএম এর বিজ্ঞাপন ছাপে, তখন মনে হয় যারা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করছেন তাঁদের আর্তনাদের অন্তত একটা উপায় বা মাধ্যম থাকুক। এখনও যাকে গণমাধ্যম বলতে পারি।

Wednesday, November 9, 2016

কাক্কেশ্বর উবাচ

কাক বলল, 'দুশো দুগুণে কত হয়?'
আমি বললাম, চারশো।
কাক মাথা নেড়ে বললো, 'হলো না, হলো না পাঁচশো।'
আমি রেগে গিয়ে বললাম, বললেই হলো, সবাই জানে দুই দুগুণে চার।
কাক বলল, 'সেটা নির্ভর করছে পাঁচশো টাকাটা নতুন না পুরোনো?'
আমি বললাম, সে আবার কি?
কাক বলল, 'ধরো কালোবাজারি আর জাল টাকার কারবার রোখার কথা বুঝিয়ে সরকার পুরোনো পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট রাতারাতি অচল করে দিলো...'
রেগে গিয়ে বললাম, দিলো তো দিলো, তাতে কি অঙ্ক বদলে যাবে?
কাক বলল, 'যেতেই পারে। ধরো তুমি একজন সাধারণ মানুষ, ধরো তোমার বাড়িতে এবার মাইনের টাকায় সব পাঁচশো আর হাজার টাকা এসেছে, ধরো তুমি রাত এগারটা থেকে এটিএম এ লাইন দিয়ে একটা-দুটোর বেশি একশো টাকা তুলতে পারলে না, ধরো তোমার পৌঁছনোর আগেই এটিএম মেশিন বসে গেল, ধরো কাল তোমার বাজারের টাকা নেই, ধরো তুমি বেড়াতে গেছো আর সঙ্গে পাঁচশো আর হাজার টাকার নোটই আছে, ধরো তোমার মেয়ের বিয়ে...' - কাক তো সমানে ধরো এই ধরো ওই বলেই যেতে লাগল।
আমি শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম, তাতেই বা কি?
কাক বলল, 'এও বুঝলে না!'
বললাম, না।
কাক বলল, 'তোমার যখন খুব দরকার তখন দেখবে পাঁচশো টাকা নিয়ে কেউ তোমাকে দুশো, আড়াইশো, তিনশো, চারশো টাকা দিচ্ছে আর তুমিও প্রয়োজনে তাইই নিয়ে নিচ্ছ। তাহলে দুশো দুগুণে পাঁচশো হল কিনা বল? দুশো এক্কে পাঁচশো হলেই বা ঠেকাচ্ছে কে?'
এই বলে পেন্সিলটা ঠুকতে ঠুকতে বলল, 'বিরক্ত কোরো না তো, কালো টাকা আর সাদা টাকার হিসেব মেলাতে দাও। হাতে একদম সময় নেই মাত্র বাহাত্তর ঘন্টা।'
আমার তো ততক্ষণে অঙ্কটঙ্ক সব মাথার মধ্যে গুলিয়ে গেছে।
রেগে গিয়ে বললাম, ধুত, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
কাক বলল, 'এ আবার না বোঝার কী আছে? ধরো তোমার কাছে অনেক কালো টাকা আছে। সে আর কি তুমি দেশে রাখবে? বিদেশের ব্যাঙ্কে, সোনায়, শেয়ারে খাটিয়ে রাখবে। তুমি যদি মাঝারি মানের কালো টাকা রাখো বালিশে আর কমোডে, তাহলে ওই বালিশেই মাথা দিয়ে আর ওই কমোডেই ইয়ে করে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। আর তুমি যদি সাধারণ মানুষ হও আর তোমার যদি কালো টাকা না থাকে তাহলে তো আরওই কেলেঙ্কারি। এমন তো নয় যে গত দু-এক দিনও এটিএম থেকে শুধু একশো টাকার নোট বেরিয়েছে তাহলে এই যে এবার দুদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ এটিএম বন্ধ ঠেলা সামলাও।'
আমি বললাম, নাহয় পেটে পাঁচশ-হাজার টাকা বেঁধে বাহাত্তর ঘন্টা কষ্ট করা গেল, দেশ থেকে কালো টাকা আর জাল টাকা তো কমবে?
কাক বলল, 'সে বলা আরও কঠিন। সে একমাত্র বলতে পারে আমাদের মোদী দাদা।'
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কিরকম?
কাক বলল, 'প্রশ্ন হচ্ছে যাদের ভোটে জিতে সরকার ক্ষমতায় এলো, তাদের কালো টাকা গেলো কোথায়? সেটা স্কুপের আগে বদলালো না পরে? কারণ নতুন পাঁচশো-দুহাজার টাকা তো ছাপানো হয়ে গেছে ঘোষণার আগেই। তারপরেও প্রশ্ন হচ্ছে, এক হাজারের বদলে দু হাজার টাকা করা হল কেন? টাকার অঙ্কটা যত বেশি হবে ততোই যারা জাল টাকার কারবার করে তাদের পক্ষেও সুবিধা আর যারা কালো টাকার লেনদেন করে তাদের পক্ষেও।'
আমার আরওই সব গুলিয়ে গেল। কাককে আবার প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলাম তো কাকটা ভারী রেগে গিয়ে বলল, 'বড় যে বকবক করেই যাচ্ছ, আমার বুঝি সময়ের দাম নেই? সময় ভারী মাগগিগণ্ডা এখন আর সব আমি খুচরোয় নিচ্ছি আগামী বাহাত্তর ঘন্টা।'
আমি দুহাতে চাপড়ে দেখলাম জন্মদিনে পাওয়া একটা পাঁচশো আর একটা হাজার টাকা ছাড়া আর কিচ্ছু পকেটে নেই।

কী আর করি ওই দুটো হাতে নিয়ে মোবাইল তাক করে কাক্কেশ্বরের সঙ্গে সেল্ফি তুলতে গেলাম। কিন্তু ছবিটা ক্লিক করার আগেই সে 'কী সব্বোনাশ কী সব্বোনাশ সব হিসেব-বেহিসেব ফেসবুকে আপলোড করে দেবে রে, কী কেলেঙ্কারি' এই বলতে বলতে উড়ে গেল।

Monday, November 7, 2016

আমাদের ছুটি আন্তর্জাল ভ্রমণপত্রিকার নতুন সংখ্যা প্রকাশিত

সম্পাদকীয় -

আর সব শারদীয়া বেরিয়ে গেল, 'আমাদের ছুটি'-র এত দেরি কেন লেখক-পাঠকদের থেকে এমন অনুযোগ প্রায়ই পাচ্ছি। পত্রিকা পড়ার জন্য এই আন্তরিক আগ্রহ ভালো লাগছে আমাদেরও। পত্রিকাটি বছরে চারটে সংখ্যার বেশি প্রকাশ করে উঠতে পারি না আমরা বৈশাখ, শ্রাবণ, কার্তিক আর মাঘে। তাই বর্ষার পরে অক্টোবরের শেষাশেষি বা নভেম্বরের শুরুতে পত্রিকার নির্ধারিত সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। অনেক শারদ সংখ্যা তো এখন জুলাই মাস থেকেই পড়া শুরু হয়ে যায়। হেমন্তের মনকেমন করা বিকেল-সন্ধ্যার অবসর না হয় খানিক কাটিয়ে তুলুক 'আমাদের ছুটি'

বেশ কিছুকাল ধরেই 'আমাদের ছুটি'র পাতায় পুরোনো বাংলা ভ্রমণকাহিনির স্বাদ পাচ্ছেন পাঠকপাঠিকারা। সেই ইতিহাস উদ্ধার পর্বের শুরুটা প্রকাশিত হল এবার ছাপার অক্ষরেও। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি ভারতবর্ষে রেলপথ চালু হয়। তার আগে বাঙালি মেয়ে তীর্থে বেরোলেও তার কোনও লিখিত দলিল চোখে পড়ে না। আঠারোশ সত্তরের দশকে এক বাঙালি তরুণী 'বম্বাই' বেড়াতে গিয়ে লিখল তার ভ্রমণকাহিনি 'আমাদিগের ভ্রমণ বৃত্তান্ত'। লেখিকার নামের উল্লেখ ছিল না। অবশ্য তার আগেই আঠারোশ ষাটের দশকে 'বামাবোধিনী' পত্রিকা প্রকাশের তিনমাসের মধ্যেই কবিতায় তাঁর ভ্রমণকথা লিখেছিলেন রমাসুন্দরী।

একবিংশ শতকের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের এক মফঃস্বলী মেয়ে লিখতে শুরু করেছিল ভ্রমণকাহিনি। নিজের বেড়ানোর কথা লিখতে লিখতে আর ভ্রমণপত্রিকার সম্পাদনা করতে করতে তার মনে প্রশ্ন জাগে আমার আগে কারা লিখেছিল বেড়ানোর গল্প, কোথায় গেল সেইসব লেখা?

এর উত্তর খুঁজতে বিভিন্ন গ্রন্থাগারে, বইমেলায়, আন্তর্জালের অলিগলিতে এবং আরও নানা সম্ভাব্য, অসম্ভাব্য জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে গড়ে ওঠে আরেক ভ্রমণকাহিনি 'আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গমহিলাদের ভ্রমণকথা'। উনিশ শতকের বাঙালি নারীদের বাড়ির বাইরে বহির্বিশ্বের আঙিনায় পা রাখার গল্প উঠে আসে একুশ শতকের বাঙালি মেয়ের কথায় ও তাদের লেখা 'কাহিনি'তে।

এরই প্রথম পর্ব প্রকাশিত হল 'গাঙচিল' প্রকাশনা থেকে। অসংখ্য ধন্যবাদ প্রকাশক অধীরদাকে।

Saturday, November 5, 2016

কবিতা

শব্দের সিন্দুকে/ অভিমান জমা পড়ে থাকে।/ চাবিখানি তার দিতে পারি -/ দেবো বল কাকে?

Thursday, November 3, 2016

ভূগোল!

মাত্র একশো বছর আগেও পৃথিবীটা বেশ বড় ছিল। দিগন্তে তাকালে সীমা চোখে পড়ত না। ভূগোল মানে অনেক বড় একটা পৃথিবীর কথা পড়তে হবে জানতে হবে পাঠ্যে, তার বাইরেও।

আমাদের ছোটবেলায় রাশিয়া মানে ছিল মস্ত বড় একটা দেশ যেখান থেকে চমৎকার সব গল্পের বই আসে। ক্রমশঃ ছবিওলা রঙিন রঙিন বইগুলো বদলে গিয়ে তুর্গেনেভ, তলস্তয়, দস্তাভস্কি, গোর্কি হোক না, সেও এক নতুন দুনিয়ার সন্ধান দেয়। কবেই যেন সেইসব বই হারিয়ে গেল, ছোটবেলার রঙিন বইগুলো। বড়বেলার বইগুলোও আর নতুন করে দেখিনা। ভূগোল বলল, ইউ এস এস আর ভেঙে গেছে অনেকগুলো ছোট ছোট দেশে।

মাঝবয়সে এসে দেখলাম পৃথিবী ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসছে। গুগল ম্যাপে তার গতি সর্বত্র অবাধ। সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ব এসে ঠেকল ঘরের ভেতর। বড্ড ছোট, বড্ড ছোট! অত্তবড় ভারতবর্ষটা কবেই ভেঙে টুকরো টুকরো দেশ। তার ভেতরে রাজ্যগুলো টুকরো টুকরো হচ্ছে। রাজ্যের ভেতরে জেলাও টুকরো টুকরো।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমি, এতো বছর পর ছেলেবেলার বাংলা-বিহার সীমান্তের ছোট্ট শহরে ফিরে গিয়ে দেখলাম ছবির মতো স্টেশনটার মাথার ওপরে একজায়গায় লেখা ঝাড়খণ্ড! ভাবি কী আশ্চর্য ভূগোল বদলে গেল!

আজ দুপুরেই মফঃস্বলের মেয়ে শুনে এক সদ্য পরিচিতা জানতে চাইলেন, কোন জেলা? বললাম, বর্ধমান। সন্ধেবেলায় জানলাম, সেটা কখন জানি আসানসোল হয়ে যাচ্ছে! ফের ভূগোল বদলে যাবে!

কাল যদি সকালবেলায় দিগন্তটা পাঁচিল হয়ে আমার দরজায় এসে দাঁড়ায় ভাবছিলাম।

ভাবছিলাম, 'ভূগোল' শব্দের অর্থ কি ভাঙা?

এই ক্লান্তি একান্ত ব্যক্তিগত।

রাজনীতি নিয়ে আলোচনা বড় ক্লান্তিকর। আরও ক্লান্তিকর লাগে এর অর্থহীনতা। পশ্চিমবঙ্গ ভাঙছে আরও আরও। হ্যাঁ, এই নামেই ডাকি এখনও। বাংলা বলতে বাংলাদেশকেই মনে হয় আমার। কী লাভ 'ধরণী' দ্বিধা হয়ে?
ভাবছিলাম, একসময়ে এই সরকারও সরবে। তখন এ রাজ্যের অর্থনীতি কোন তলানিতে নাকি ঋণাত্মক অঙ্কে পৌঁছাবে জানিনা।
আজকাল বড় ক্লান্ত লাগে এইসবকিছুই। আরও ক্লান্ত লাগে প্রতিবাদের মোমবাতি মিছিলের আলো।

এই ক্লান্তি একান্ত ব্যক্তিগত।