Monday, August 31, 2015

ভালোমানুষ আর রাজনীতি

রাজনীতি নিয়ে আমার ধারণা খুব কম। আরো কম অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার কথা বললেই মনে পড়ে 'কালান্তর' কাগজে কাজ করার দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে চন্দনদা আর কল্যাণদার কথা। আচ্ছা, বিবাহিত মহিলা হলেই সব জায়গায় কেন জিজ্ঞাসা করে দ্বিতীয় সন্তানের ইচ্ছা রয়েছে কী না? জানিনা, অন্যদেরকে করে কী না, আমায় তো কালান্তর আর স্বর্ণাক্ষরে দুজায়গাতেই করেছিল। কী উত্তর দিয়েছিলাম মনে নেই, তবে স্বর্ণাক্ষরে পরে মহাশ্বেতা বলেছিল, আমি নাকি অমরেন্দ্রবাবুর এই প্রশ্নের উত্তরে স্বতস্ফূর্তভাবে বলেছিলাম, পাগল নাকি? কালান্তরে চন্দনদা না কল্যাণদা কে এই প্রশ্নটা করেছিল মনে নেই। হাজার কী বারোশো টাকার মতো পেতাম মাস গেলে, তাই তার নাম ছিল স্টাইপেন্ড। কিন্তু কাজ করতে বেশ লাগত। এমনকী রোজ ছা্রপোকা মারতে মারতে আর কামড় খেতে খেতেও। কালান্তরের চেয়ার-টেবিলগুলোই আসলে বিপ্লবী ছারপোকাদের দখলে ছিল। কিম্বা ছারপোকা মারাটাই হয়ত বিপ্লবের প্রথম পর্যায়।
চন্দনবাবু, কল্যাণবাবু ডাকায় দুজনেই আঁতকে উঠে বললেন, হয় কমরেড বলো, নয় দাদা। দেখলাম কমরেড বলার মতো বিপ্লবী হতে পারিনি, দাদা-ই ভালো। এখানেই আমার সাংবাদিকতার ঠিকঠাক হাতেখড়ি। কাজ করার ভীষণ স্বাধীনতা ছিল। তর্ক হত নানা বিষয়ে, এমনকী ওনাদের সঙ্গে মতবিরোধও। কিন্তু কাজের পরিবেশ প্রথমদিকে বেশ চমৎকার ছিল। আমি দেখেছি কোথাও কাজ করতে গেলেই আমার কাজের ঠেলায় কিছু মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, কিছু লোকের বিরাগভাজন হই। তেমনই কিছু সমস্যা হল মূলতঃ নিউজ এডিটরের সঙ্গে। আমার তো আবার ভয়ানক রাগ। ব্যাগপত্র গুটিয়ে বললাম, চললাম। চন্দনদা, কল্যাণদা ডেকে বিস্তর বোঝালেন। শেষে চন্দনদা বললেন, আমি তোমার বাবার মতো, আমি প্রবীরবাবুর হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। তুমি এত ভালো কাজ শিখেছ, ভালো কোনো জায়গায় সুযোগ পাও, যেও, সেদিন বারণ করব না, কিন্তু এভাবে যেও না। তারপরে স্বর্ণাক্ষরে চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত কাজ করেছি। হ্যাঁ, নিউজ এডিটরের সঙ্গে একটাও কথা না বলেই দীর্ঘদিন কাজ করেছি তারপর। এটা চন্দনদা, কল্যাণদা আমাকে মাথায় করে রাখত বলেই।
একবারই শুধু কল্যাণদার কাছে বকুনি খেয়েছিলাম, আমি হিতেন ঘোষের মেয়ে সেটা বলিনি বলে। উত্তরে বলেছিলাম, আপনারা তাঁকে আদৌ মনে রেখেছেন কিনা তাতো বুঝিনি, তাছাড়া আমি নিজের পরিচয়েই কাজ করতে চেয়েছি। অবশ্য মায়ের কথা জানতেন, কারণ কালান্তরে মায়ের বেশ কয়েকটা উপন্যাস বেরিয়েছিল শারদীয় সংখ্যায়।
কাগজে পড়েছিলাম গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে চন্দনদার আত্মহত্যার কথা। খুব মনখারাপ হয়েছিল। কেন যে এ কাজ করলেন অমন নিরীহ নিপাট ভালোমানুষ লোকটা।

আজকের এই নোংরা রাজনীতি দেখতে দেখতে পিতৃপ্রতিম মানুষটিকে মনে পড়ে খুব। আর কল্যাণদা আজও নিশ্চয় হাত নেড়ে সেই টিপিকাল ভঙ্গীতে নিউজের গুরুত্ব, কোনটা কোথায় কেন যাবে বোঝাচ্ছেন। আচ্ছা নতুন ছেলে মেয়েরা আমাদের মতো এঁড়ে তক্ক করে তো?
কাজ শুরু করার প্রথমদিনেই দুজনের কেউ একজন বলেছিলেন মনে আছে, আমাদের 'পুলিশ' কিন্তু তালব্য শ।
চারদিকে দেখছি পুলিশে অথবা পুলিসে মানুষের ওপর লাঠি চালাচ্ছে অথবা পার্টির গুঁতোয় টেবিলের তলায় ঢুকছে, আর আমি কেবল ভেবেই যাচ্ছি যে এই পুলিশ তালব্য শ না দন্ত স!!

কেচ্ছা-কাহিনি

টাইমস অফ ইন্ডিয়া থেকে কয়েক বছর বেশ কিছু বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হত বিভিন্ন বিষয়ে। তার সব কটাতেই নিয়মিত কলাম লিখতাম আমি। একবার 'উদিতা'-র থেকে একটা ইন্টারভিউ নিতে গেছি। মেয়েটি আই এ এস পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্য এটাই আমার জানা ছিল। মেয়েটির মা একজন নামকরা আই এ এস অফিসার। তাঁর দ্বিতীয় স্বামীও তাই। সম্ভবতঃ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে যতদূর মনে পড়ে। মেয়েটির বাড়িতে একটা বিরাট পিয়ানো ছিল মনে পড়ে। দাদু-দিদার কাছেই মানুষ। তাঁরাই দিয়েছেন, ও বাজাতে খুব ভালোবাসে। অনেক কথা হল। আমি দেখেছি, অন্যদের ক্ষেত্রে কী হয় জানিনা, ইন্টারভিউ নিতে আমার অসম্ভব ভালোলাগে এবং অপরপক্ষও আমার সঙ্গে খুব প্রাণ খুলে কথা বলে, সে যেই হোক না কেন। মেয়েটি আমাকে অনেক কথা বলেছিল, তার ছোটবেলার দুঃখের স্মৃতি, মায়ের কথা, নিজের বাবার প্রতি ঘৃণা, সৎ পিতাকেও অপছন্দ করা। বলতে বলতে শেষে বলেছিল, এসব কথা আপনি প্লিজ লিখবেন না। আমি বলে ফেলেছি। আমি বলেছিলাম, তুমি কিচ্ছু চিন্তা কোরো না, আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, এসব কথা লিখব না। পরের দিন আবার ফোন, প্লিজ লিখবেন না কিন্তু। আমি বললাম, তুমি নিশ্চিন্ত থাক এমন কোনো কথা আমি লিখব না যাতে তোমার বা তোমার পরিবারের কোনো অসম্মান হয়।
আসলে আমার কেচ্ছা ব্যাপারটাই ভালোলাগেনা।
আসলে ওর মায়ের গল্পে কোথাও একটা আমার মাকেও খুঁজে পাচ্ছিলাম।
আই এ এস পরীক্ষায় সফল মেয়েটির ইন্টারভিউ জমা দিলাম। অ্যাসিস্টেন্ট এডিটর কল্যাণদা বললেন, এসব কী লিখে আনলি? অদ্ভুত একটা মুখভঙ্গী করে বললেন, ওর বাবা-মার ওইসব ব্যাপারট্যাপার লিখবি তো...। আমি নির্বিকার মুখে সংশোধন করি নিজের বাবা নয়, স্টেপ ফাদার। - কী জানতাম নাতো? তবে ওর বাবা কে? অন্য কেউ হবে - আমার নির্লিপ্ত জবাব। এটা একদম করতে পারিসনি, এতো বড় একটা সুযোগ হারালি। আমি নীরব। যদিও সাক্ষাৎকারে ও কীভাবে পরিশ্রম করে আই এ এস পেয়েছিল তার খুঁটিনাটি যত্ন করেই লেখা ছিল।
হ্যাঁ, সুযোগ হয়তো হারালাম, কারণ টাইমসে পাকা চাকরি আর হয়নি আমার কখনোই। তবে ওইখানে দাঁড়িয়েই ঠিক করলাম এমন একটা লেখা দেব যাতে একটা কথাও বলতে পারবে না।
সেই অর্থে সুযোগ এল। ভাটনগর পুরস্কার পেল আই এস আই থেকে সংঘমিত্রা। তার গবেষণার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। অতএব আমার ডাক পড়ল 'উদিতা'-র হয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার। আমি খুব মন দিয়ে ওনার গবেষণাপত্র পড়লাম ইন্টারনেটে। তারপর ঘেঁটে বার করলাম তার লিঙ্কড একটা বিষয়ের ওপর দুজন নোবেল পেয়েছে সেইটা। পড়ে ফেললাম। ইন্টারভিউটা বেশ চমৎকার হল। যখন এডিটোরিয়ালে দিলাম বুঝলাম এর বিন্দুবিসর্গ কারোর মাথায় ঢুকবে না। অতএব কেউ কোনো কথাই বলল না, হুবহু ছাপা হল। কিন্তু পত্রিকাটা হাতে নিয়ে মনে হল না অনেকটা চোনার মধ্যে একফোঁটা দুধের মতোই লেখাটা পত্রিকায় একেবারেই মানাচ্ছে না। বোর হলাম নিজেই।
তবে যে প্রশ্নটার জবাব আমাকে অনেকবার দিতে হয়েছে অর্থাৎ জুওলজির ছাত্রী হয়ে সাংবাদিকতা কেন করি তার একটা জুতসই কারণ হল।
এখন কাগজ খুলেই রোজ বন্ধ করে ফেলি। দেখি কত সাংবাদিক কেচ্ছা লিখে যাচ্ছে, কেচ্ছায় ভরে যাচ্ছে কাগজগুলো। আর রগরগে কেচ্ছা পড়তে পড়তে মানুষ ভুলে যাচ্ছে পেটে ভাত নেই। আসলে এই ভুলিয়ে রাখাটাই তো মিডিয়ার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের ব্লগারদের মুসলিম ধর্মান্ধরা মারে বলে তার একটা বাজার আছে, হিন্দুর হাতে হিন্দু মরলে মাঝের পাতার তলায় এক কলামের ছোট্ট খবর হয়, না দিলেই নয় গোছের। বাজারে খাবে না যে সেই খুনটা সেলিব্রিটি মা মেয়েকে মারার মতো অথবা কোন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার যেন তার প্রেমিকা আর তার মেয়ের দেহ টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলছিল সেইসব মুখরোচক খুনের মতো।

বাজারে খুনও তো মুখরোচক হতে হয়।

দড়ি টানাটানি

পচিমবঙ্গে এখন ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে অক্ষমদের মধ্যে। এ যেন ছোটবেলার সেই দড়ি টানাটানির খেলা। না, আজ আর সাধারণ মানুষ এই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের মধ্যে নেই। যতই তারা আছে বলে দু'দলে চিৎকার করুক না কেন। ঢের হয়েছে। এই লড়াই বাম অথবা ডানকে একাই লড়তে হবে। হেরে বা জিতে প্রমাণ করতে হবে নিজেদের। নাহলে পুরোটাই হয়ে দাঁড়াবে দুটো দলের নিজেদের মধ্যে মারামারি, গুন্ডাবাজি। সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল, কিন্তু তার ফলে যা পেল তাতে তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে আর চাওয়ার আশাটুকুও হাতে নেই। সাধারণ মানুষ যদি কোনোদিন সত্যিকারের লড়াইয়ে নামে তাহলে কাউকেই আর চাইবে না সেদিন। যেরকম কোনঠাসা হয়েছে মানুষ তাতে এটা ঘটতেই পারে যেকোনোদিন। শুধু বেশ কিছু মানুষ আত্মসুখে মগ্ন। তারা বাধা দেবে প্রাণপনে।

পথে চলে যেতে যেতে

কলকাতার পথে একা একা হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে টুকরো টুকরো ছবি মনে গেঁথে যায়। আজ দেখলাম, এক মুচি তার কাজের ফাঁকে হাতের ওপর রাখি লাগিয়ে তাকিয়ে দেখছে। মাথাটা নীচু ছিল তাই চোখ দেখতে পাইনি, কল্পনা করে নিলাম খুশি খুশি মুখটা। তারপর গোটা তিনেক রাখি গুছিয়ে এক পাশে রেখে আবার কাজে মন দিল, আমিও এগিয়ে গেলাম। মানুষের এই যে ছোট ছোট তুচ্ছ তুচ্ছ সুখের মুহূর্ত তা যেন অনেক বিরাট কিছু পাওয়ার থেকেও বড়। আমিও ওর ওই ছোট সুখের কিছুটা মনে রেখে দিলাম।

Sunday, August 30, 2015

তোমাকে দেখছিলাম

কলকাতার পথে হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝেই নীরার সঙ্গে দেখা হয় আমার। সেই কবে থেকেই। আজও দেখলাম ওকে। হলুদ পাড়ের একটু অফ হোয়াইট ঘেঁষা সাদা ছাপা শাড়িতে। হ্যাঁ, ইদানীং বয়স বেড়েছে খানিক। চেহারাটাও কিছুটা ভারী হয়েছে। হাতে মোবাইল-এ কী সব করতে করতে একা একাই হাঁটছিল। মাঝে মাঝে আবার মোবাইল বন্ধ করে চুপচাপ। হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছিল অল্প অল্প। রাস্তায় ওকে দেখেছি অনেকদিন বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন বেশে, বিভিন্ন মেজাজে। কখনো একা কথা বলতে বলতে হাঁটে, কখনো খুশিতে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে। দু'একবার চোখের জল নিয়েও হনহন করে লুকিয়ে চোখ মুছতে মুছতে হেঁটে যেতে দেখেছি ওকে। তবে তখন খুব দ্রুত হাঁটে। পাছে কেউ বুঝতে পারে। আজ দেখলাম শান্ত অন্যমনস্কভাবে হেঁটে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই ভাবি ওকে জিজ্ঞাসা করি, ও খোঁজে কাকে? চলে যাওয়া সুনীলকে না কী সেই সাতাশ বছরের নীলু অর্থাৎ নীললোহিতকে? কোথায় থাকে ও, দিকশূ্ন্যপুরে? নাহ্‌, কোনদিনই জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। কাছাকাছি গেলেই দেখি টপ করে একটা আধা চলন্ত বাসে কী ট্রামে উঠে পড়ে অথবা ভিড়ের মধ্যে কোথায় হারিয়ে যায়। তাই শুধু দূর থেকেই দেখি ওকে বাসস্টপে কয়েক মুহূর্ত...।

Friday, August 28, 2015

ইচ্ছে – প্রথম পর্ব


আজ সকাল থেকেই ‘ইচ্ছে’ নিয়ে দু’চার কথা লিখতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ঠিক যা ইচ্ছে জমছে না কলমে থুড়ি কী বোর্ডে। ‘ইচ্ছে’ ব্যাপারটা বেশ চমৎকার যতক্ষণ তা একলার থাকে। যখনই তার ইচ্ছে হয় আরও আরও মানুষেরাও সেই ইচ্ছেতে চলে আসুক তখন অন্যপক্ষের ইচ্ছে না হলেই ভারী মুশকিল।

এই যে আমায় ছোটবেলায় যারা ভীষণ কাছের থেকে দেখেছে তারা বলে, তোকে আর মনে নেই? ‘আমার এখন কান্না পাচ্ছে, আমি কাঁদবই’ - ওইটাই তো তুই। একদম ঠিক। কারণ ওই কান্নায় অন্যদের বিশেষ অসুবিধা ঘটত না বলে বা ছোটরা অমন কেঁদেই থাকে।

কিন্তু বড় হয়েও আমার ইচ্ছেগুলো ওইরকমই রয়ে গেল। ক্লাস টেনে যখন স্কুলের মধ্যে বন্ধুদের টেনে নিয়ে হেডমিস্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম, মা ভারী বিরক্ত হয়ে বলেছিল, তোমায় তো বলে লাভ নেই, করছ কর এরপর নিজে উল্টাবে আর তখন পাশে কেউ থাকবে না। একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল সেই ভবিষ্যতবাণী।

ক্লাস নাইন-টেনে পড়তে একা একা ধানক্ষেতে বিকেল-সন্ধ্যেয় ঘুরে বেড়ানোর অভ্যেস ছিল। তখন ওইসব জায়গা একদম ফাঁকা। একদিন সূর্য অস্ত গেছে, ফিরে আসছি, একজন গ্রাম্য ধরণের দেখতে লোক আমায় বললেন, এভাবে একা একা ঘুরে বেড়িও না, বিপদ হতে পারে। বললাম, বিপদ তো আমার হবে, আপনার তাতে কি? আমার ইচ্ছে আমি ঘুরে বেড়াব। বেচারা লোকটা নিতান্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চলে গেল। আমার অবশ্য অত বড় বয়সেও বিপদের কোনো ধারণা ছিল না, এটা ঠিক।

একবছর বিষ্ণুপুরে থাকতে হস্টেলের খাবার আমার ভালোলাগত না। অধিকাংশ দিনই রাতে খেতাম না। এক বন্ধু অনেক সাধাসাধি করে একেকদিন খাওয়াতো। অধিকাংশ দিন তাকে বলতাম আমি খাব না, থালাটা ছুঁড়ে ফেলে দে, আমার ইচ্ছে। হস্টেলের পিছনের দিকে মাঠ, ঝোপঝাড় আর অনেক ভাঙ্গা ভাঙ্গা মন্দির ছিল। ওখানে যাওয়া বিশেষ করে বিকেলের দিকে হস্টেলের নিয়ম ছিল না। অতএব অধিকাংশ দিন ওইখানেই যেতাম আমরা দুই বন্ধুতে। একেকদিন ধরা পড়লে বলতাম, ইচ্ছে হয়েছিল।

নাহ্‌, কোনোদিন ইচ্ছের জন্য মিথ্যে কথা বলিনি কাউকেই। মিথ্যে বলতে আমার খুব বিরক্ত লাগে, একটুও ইচ্ছে করে না।

কলকাতায় হস্টেলে অসম্ভব কড়া নিয়ম ছিল। হস্টেল থেকে বেরোতে হলে হাজার রকমের সই-সাবুদ, পাস...। যারা বেচারা প্রেম করত বড্ড ঝঞ্ঝাটে পড়ত। হস্টেল থেকে পাঁচজন ছাড়া বেরোনো যেত না। এইসব প্রেমিকাদের আমি বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করেছি, কখনো দারোয়ানকে রোল আনতে দিয়ে সরিয়ে দিয়ে, কখনোবা পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে সঙ্গ দিয়ে। আসলে ওই চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম আমার অসহ্য লাগত। হস্টেলের ভিতরেও নিয়ম ভেঙ্গেছি কখনও। আমার ওপর কিছু চাপিয়ে দিলেই আমি সেটা ঠিক কোথাও না কোথাও নামিয়ে রেখে আসি। নিজেও একই কাজ না করতে চেষ্টা করি তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে বেগড়বাই করে। যাইহোক একবার ব্রাহ্মসমাজের এক অনুষ্ঠানে হস্টেল থেকে সব্বাইকে যেতে হল। ওখানে পৌঁছনোর পর চারজন প্রেমিকা এসে আমায় বলল তারা পালাতে চায়, দলে একজন কম পড়েছে। আমি বললাম চল, আমারও বোর লাগছে। কিছুটা দূরে তাদের প্রেমিকেরা অপেক্ষা করছিল। সবাই মিলে সল্টলেকের একটা পার্কে গিয়েছিলাম মনে আছে। ওরা প্রেম করছিল আর আমি দুপুরবেলায় রোদের মধ্যে দোলনায় দুলে দুলে একা একাই বকবক করছিলাম আর গান করছিলাম। ভাগ্যিস আর কেউ ছিল না। কিন্তু বেলা যত বাড়তে লাগল ওদের এই ঘোর প্রেমের ইচ্ছেতে আমার মাথা গরম হতে লাগল। না ওদের কাছে যাওয়া যায়, না দূর থেকে ডাকলে সাড়া দেয় – সে এক কেলেঙ্কারী কাণ্ড। শেষে অনেক কষ্টে সব কটাকে গুছিয়ে যখন আনতে পারলাম তখন অনুষ্ঠান শেষ, টিফিন দেওয়ার লাইন পড়েছে। সুড়ুৎ করে লাইনে ঢুকে গেলাম। তারপরে অন্যদের সঙ্গে দিব্য তাল মিলিয়ে আলোচনা অমুকের গান কিম্বা বক্তৃতা...। না দেখলে-শুনলে কী হবে সে ম্যানেজ করা যায় একটু ইচ্ছে থাকলেই। তবে ওদেরকে শাসিয়ে ছিলাম বাব্বা তোদের সঙ্গে আর নয়, হয়েছিল আর কী!

এরপরে ওই হস্টেল ছেড়ে দিই। সেই ইচ্ছে। প্রাইভেট হস্টেলে থাকার সময় টিফিন খাওয়ার পয়সা থাকত না অধিকাংশ দিনই, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেন জানি টিউশনি জোগাড় করতে পারিনি। আসলে ভীষণ ইন্ট্রোভার্ট আর আনস্মার্ট ছিলাম। কিন্তু ওইসময় কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় একা হেঁটেছি অনেক সময়, বেশ লাগত।

এই হস্টেলে থাকার সময়েই একদিন মৌসুমীদির বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেও আর এক অদ্ভুত মেয়ে ছিল। ওর ওপর আমার একটাই রাগ ছিল, তখন আমার গোটা দুয়েক সালোয়ার কামিজ আর দুটো-তিনটে শাড়ি ছিল। ওই সালোয়ার কামিজ দুটোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কলেজে পড়ে যেতাম। আর মাঝে মাঝেই তার একটা পড়ে ও অদৃশ্য হত এবং কয়েকদিন বাদে না কেচে ফেরত দিয়ে যেত। খুব রাগ হলেও বুঝেছিলাম এই রকমই। মানে এটা ওর ইচ্ছের মধ্যে পড়ে। আমার রুমের আরেকটি মেয়ে রবীন্দ্রভারতীতে পড়ত। তার ইমিটেশন দুল পড়লেই কানে ইনফেকশন হয়ে ফুলে যা তা কাণ্ড হত। প্রতিবার কাঁদতে শুরু করত আর আমাকে গরম জল তুলো দিয়ে পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে সেটা ম্যানেজ করতে হত। সেটাও ওর ইচ্ছে বুঝে পরের দিকে বকুনি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

একদিন সন্ধ্যেবেলায় মৌসুমীদি এসে বলল, চল আমাদের বাড়ি যাবি। মনটা নেচে উঠল ইচ্ছেয়। বললাম চলো। এর আগে বিষ্ণুপুরে থাকতে একবার এক রুমমেটের বাড়ি গিয়েছিলাম রুমের সবাই মিলে। তার নাম ছিল মল্লিকা। বাড়ি ছিল মেদিনীপুরের কোথাও একটা। পিঠের সময় নিয়ে গিয়েছিল। নানা রকম পিঠে খেয়েছিলাম ওদের বাড়িতে আর খিচুড়ি-ইলিশ মাছ। তখন তো বাড়িতে ফোনও নেই। একটা পোস্টকার্ড ছেড়ে দিয়ে রওনা। এবারে সে সময়ও নেই, কারণ ইচ্ছে জেগেছে। মৌসুমীদি বলল, চল, এইসময় আমাদের ওখানে বড় মেলা বসে। তা চেপে বসলাম ট্রেনে, ভাবলাম ফিরে এসে বাড়িতে বলা যাবেখন। মুড়াগাছা লোকালের নাম শুনেছি ঢের, এবারে গন্তব্য সেই মুড়াগাছাই। রাতের ট্রেন কেমন হু হু হাওয়া, বাইরে ভরা জ্যোৎস্না। স্টেশনে নেমে দেখি জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। রাস্তার পাশে বড় বড় গাছ, ছায়া এসে পড়ছে পথে। ওরই মাঝে নির্জন রাত্তিরে রিক্সায়। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত ওদের বাড়ির ছাতে পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নায় বসেছিলাম। কে জানে কোথায় আজ মৌসুমীদি, মাঝে মাঝেই ওকে মনে পড়ে আমার, আর সেই জ্যোৎস্না রাত।

এই হস্টেলেই আরেকটা মেয়ে ছিল, মেমসাহেবের মত দেখতে, ওকে আমরা ডাকতাম নেড়ু বলে। নাম ছিল শর্মিষ্ঠা, চুলগুলো পিক্সিকাট করা সেইসময়ে। ওর সঙ্গেও কলকাতায় ঘুরে বেরিয়েছি আমি অনেকদিন। সবচেয়ে মনে পড়ে বেশ গভীর রাতে একদিন সল্টলেক থেকে ফিরছিলাম। চারদিক নিঃশব্দ, অন্ধকার।

মাঝে মাঝে ভাবি কোথায় গেল মল্লিকা, নিবেদিতা, ফুলকি, মৌসুমীদি, শর্মিষ্ঠার মতো কেউ কেউ। কোথায় গেল বাংলাদেশের মেয়ে শম্পা? সাধারণ মেয়েটা একটা বড়লোকের ছেলেকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু কাহিনির শেষটা আর জানতে পারিনি। কোথায় গেল তারা যারা কখনো না কখনো আমার ইচ্ছের সঙ্গী হয়েছিল? আর ইচ্ছেগুলো, তারাও কি একইরকম আছে?

আমি জানি ইচ্ছে মানে অনেকসময়েই কিছুটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, ইচ্ছে মানে অনেকসময় আত্মকেন্দ্রিকতাও।

ইচ্ছে মতো ইচ্ছে করা যায় না অনেকসময়, ইচ্ছেমতোই করা যায় না অনেকসময়।

তবু ইচ্ছেরা থাকে। থেকেই যায়। আমার মতো কেউ কেউ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছে পূরণ করে কখনও।

আর অনেক মানুষ যখন একসঙ্গে বৃহত্তর ইচ্ছেপূরণ করে তখন তার নাম হয় বিপ্লব বা দিনবদল।


কিন্তু সেই ইচ্ছেগুলোও অধিকাংশ সময়ে ইচ্ছে হয়েই রয়ে যায়।

অচলায়তন

মানুষ এক অচলায়তন ভাঙে তারপর আরেক অচলায়তন তৈরি করে। আসলে মানুষের রক্তে রয়েছে যক্ষপুরীর ওই তাল তাল হিরের লোভ। এই লোভের আরেক নাম ক্ষমতা। এই ক্ষমতার লোভে লালকে মারে সবুজ, সবুজকে লাল, এক ধর্মের মানুষ মারে অন্য ধর্মের মানুষকে, সাদা মারে কালোকে। আসলে মানুষ মারে মানুষকেই। এতরকমের লোভ আর মুখোশে নিজেকে ঢাকতে ঢাকতে ভুলে যায় ওপক্ষে যে আছে সে মানুষই। মারলে তার নিজের মতোই ব্যথা লাগে, রক্তপাত হয়। তবু মানুষ উর্দি পরে ক্ষমতার আর ক্ষমতা নেই যার তাকে মারে। ক্ষমতার বদল হলে অপর পক্ষকে মারবে। কিন্তু অচলায়তন ভাঙবে না। কারণ আমাদের গোড়ায় গলদ রয়েছে শিক্ষায় আর সাংবিধানিক নিয়মকানুনে।

রোজ সকালে উঠে আমরা সকলে পঞ্চকের মত আউড়ে যাই
, ওঁ তট তট তোটয় তোটয়, স্ফট স্ফট স্ফোটয় স্ফোটয়, ঘুণ ঘুণ ঘুণপয় ঘুণপয়...
নাহলে মহাপঞ্চকদাদার চোখরাঙানি আছে যে।

ওদিকে দক্ষিণের জানলাটা কেউ আর খোলে না।
ওদিকে মানুষ মার খায় আর মরতে থাকে ক্ষমতার হাতে।

আমরা আউড়ে যাই -

ওঁ তট তট তোতয় তোতয়...

Wednesday, August 26, 2015

তাসের দেশ

ছিলাম মানুষ। তারপরে হলাম হিন্দু, মুসলমান, শিখ, বৌদ্ধ, ক্রিস্টান...। তারপরে তাও না, হলাম রাজনীতির অঙ্ক। ভাবছি এর পরে কী? কোনদিন দেখব পিঠে তকমা মারা ৬৯ ঙ হিন্দু অথবা ৭২ক মুসলমান।

বলি, ও রাজপুত্তুর, এই তাসের দেশে কবে আসবে তোমার তরী বেয়ে? রঞ্জনরা একের পর এক খুন হলে তোমায় ছাড়া তো গতি নেই এই যক্ষপুরীতে।

রাজা-রানিদের একটা বড় রকমের নির্বাসনের দরকার। তারা আর কেউ নন্দিনীর ডাকে নিজের খাঁচা ভেঙে বেরোবে না আজ। সে দিন গেছে। সে রাজাও নেই, সেই নন্দিনীও। অতএব তুমিই ভরসা। যদি বাকী মানুষগুলোর ভয়ের আর অভ্যেসের মুখোশগুলো খুলতে পার।


নাহলে আমরা গোলামের দল বাঁচি কী করে বলতো?

Monday, August 24, 2015

বিরহ

কেন তোকে এত ভালোবাসলাম
কবিতা?
কেন ফিরে এলি তুই?
বেশ তো ছিলাম এই
জীবন গদ্যে।

ফিরেই যদি এলি
তবে, খালি চলে যাওয়ার
কথাই বা বলিস কেন?
কেন ভালোবাসতে পারিস না একটুও
পুরোনো বন্ধুকে?

কত দিনরাত তোর সঙ্গে কেটেছে
বলতো আমার?
সেই একার শৈশবে,
নিঃসঙ্গতার কৈশোরে,
আর এলোমেলো যৌবনের দিনগুলিতে।

তারপরে, যখন আমার সঙ্গী হল, বন্ধু হল
তুই একা একা কোথায় হারিয়ে গেলি বলতো?

তারপর, অনেক অনেকদিন পর যখন ফিরে এলি
তখন মনে হল,
যেন তোকে ভীষণ চিনি -
সেই পুরোনো দিনগুলোর মতো,
যেন কালকেই দেখা হয়েছিল আমাদের।
অথবা একেবারেই অচেনা, যেন অন্য কেউ।

এক একবার ঝড়-বৃষ্টির মতো আসিস দরজা-জানলা ভেঙ্গে
আবার যেন চিনতেই পারিস না মুখ ফিরিয়ে চলে যাস পরক্ষণেই।
মাঝে মাঝেই হাঁটা দিস যেদিকে দুচোখ যায়
যেন আর ফিরেই আসবি না কোনোদিনও।
অথচ, এতদিনেও বুঝলি না
তোকে ছাড়া যে একটুও চলে না আমার

তোকে ছাড়া...
কবিতা...।

Friday, August 21, 2015

গোলাপসুন্দরীর তৃতীয় পর্ব এবং ঋতবাক

আমাদের কলেজের হস্টেলের দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একটা ফোর সিটার রুম ছিল। ঘরটা ভেতর দিকে, একটাই জানলা সেটা হস্টেলের ভেতর দিকে বারান্দামুখী। ঘরটা বেশ অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে। এই ঘরটায় থাকার সময় প্রতিদিন ভোরবেলায় জ্বর আসতো আমার। পাখার হাওয়ায় ভীষণ কষ্ট হত। সারাবছর কম্বল বা মোটা চাদর গায়ে দিয়ে শুতাম তাও। সকালবেলায় ছোট বাচ্চার মতো চোখগুলো আটকে যেত, খুলতে হত অনেক কষ্ট করে। এই ঘরে আমি বহুরাত জেগেছি। না, পড়াশোনা নয়, অধিকাংশ সময়েই গল্পের বই পড়ে। ওই জানলাটার সামনেই আমার খাটটা ছিল। রাতে ঘরে আলো জ্বালানো যেত না। জানলা দিয়ে করিডরের আলো আবছা বাঁকাভাবে আমার খাটে এসে পড়ত। রাত জেগে বা খুব ভোরে উঠে অনেকে পড়ত, আর তাই সারারাতই জ্বলত করিডরের আলোটা।
এই আবছা আলোয় গভীর নিঃশব্দ রাতে আমি কমলকুমার মজুমদারের 'গোলাপসুন্দরী' পড়ি। কমলকুমারের লেখায় যেটা আমাকে ভীষণ আচ্ছন্ন করে তা হল মায়াময়তা। উপন্যাস শেষ হয়ে গেলেও বহু সময়, বহুদিন মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে সেই অনুভব। উপন্যাসটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল সেইসময়। পরপর বেশকিছু কমলকুমার পড়ি এবং ওই অসামান্য গদ্য নিজের লেখায় আনার চেষ্টা করি। অল্পবয়সে যেটা খুব স্বাভাবিক। বহুকাল আগেই সেই পর্ব চুকে গেছে অবশ্য।
কিছুদিন আগে বাংলা সাহিত্য আকাডেমিতে মায়ের একটা বক্তৃতা ছিল কমলকুমারের ওপর। বিষয় - গোলাপসুন্দরী। নতুন করে না পড়লেও মাকে কিছু তথ্য দেওয়ার উৎসাহে গোলাপসুন্দরী সম্পর্কীয় বেশ কিছু প্রবন্ধ পড়ে ফেললাম। অর্থাৎ আমার জীবনে 'গোলাপসুন্দরীর দ্বিতীয় পর্ব এল।
কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই এই লেখাটা কলমে এল কবিতার মতোই নিজে নিজে। যখন লিখছি তখন আমার একবর্ণও 'গোলাপসুন্দরী'-র কাহিনি মনে নেই। কিন্তু আছে ওই মায়াময়তার রেশ। মনে হল অন্য নাম দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পারলাম না। ওই নামটিই মাথার মধ্যে কেবল ঘুরে বেড়াতে লাগল। বাংলা সাধু গদ্যে আগে কখনো লিখিনি, তাই কেমন হয়েছে নিয়ে বেশ উৎকন্ঠিতই ছিলাম। কয়েকজন লেখক বন্ধু এবং সুস্মিতাকে পড়তে দিয়েছিলাম বেশ ভয়ে ভয়েই। সুস্মিতার ভালোলেগেছিল জানিয়াছিল। তবে ঋতবাক-এ লেখাটি প্রকাশ করে আমাকে বেশ হতবাকই করে দিয়েছে। ধন্যবাদ সুস্মিতা। এটা বোধহয় আমার গোলাপসুন্দরীর তৃতীয় পর্ব।

লেখাটা নিয়ে পরে আরো বিস্তৃত কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে মনে। করতে পারলে সেটা হয়ত গোলাপসুন্দরীর চতুর্থ পর্ব হবে। তবে আপাতত এইটুকুই -

http://rritobak.blogspot.in/2015/08/blog-post_41.html

Wednesday, August 19, 2015

ভালোবাসা

আকাশ ভাঙলো এইমাত্র -
তুমুল বজ্রস্বরে
বুকের গভীরে।

আকাশ নামলো এইমাত্র -
বরষা ঝরঝরে
হৃদয় নিবিড়ে।

আকাশ ছুঁয়েছে এইমাত্র -
মাটির শরীরে
ভাসালো উহারে।

Tuesday, August 18, 2015

বিশ্বাস

ধর্ম মানে যেদিন শান্তি হবে,
আর ঈশ্বর মানে পরস্পরকে ভালোবাসা।
সেদিন আমি ধর্ম এবং ঈশ্বর বিশ্বাসী হব।

নারী মানে যেদিন মানুষ হবে,
আর মানুষ মানে লোভ-লালসাহীন হৃদয়।
সেদিন আমি নিজেকে নারী বা মানুষ বলে দেখো ঠিক ভেবে নেব।

রাজনীতি যেদিন মানুষের নীতি হবে
আলাদা আলাদা রঙ থাকবেনা আর ঝাণ্ডায়।
সেদিন ভালোবাসার মিছিলে ঠিক তোমার পাশেই থাকব।

ততদিন নাহয় একাই কবিতা লিখলাম।

Monday, August 17, 2015

শাঁখা-সিঁদুর




ফেসবুকের একটি গ্রুপে সদ্য নিহত ব্লগার নীল-এর একটি পোস্টের বিরুদ্ধে লেখা একটি পোস্ট পড়ছিলাম। বিষয় ছিল শাঁখা-সিঁদুর। মেনে নিলাম, নীল কিছুটা তীব্র ভাষায় বলেছিলেন, ব্যবহার করেছিলেন স্ল্যাং শব্দ। কিন্তু বলেছিলেন খাঁটি সত্য কথা।


কিছুদিন আগে নূপুর পড়বার সখ হল। আমার কিশোরী মেয়ে আপত্তি জানিয়ে বলল, জানোনা মা এসব কিসের চিহ্ন? জিজ্ঞাসা করলাম, কে বলেছে তোকে এসব, আমাদের সঙ্গে তো এ বিষয়ে কথা হয়নি তোর? বলল, কোনো এক শিক্ষিকা পড়ানোর সময় বলেছেন। খুশি হলাম। শিক্ষিকা কিছু সত্য শেখালে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয় জীবনে। আমাকে কে এসব শিখিয়েছিল মনে পড়ে না। ছোটবেলায় শাঁখা-সিঁদুর পড়া নিয়ে কোনোদিনই মায়ের মধ্যে কোনো তাপ উত্তাপ দেখিনি। কখনো পড়েছে, কখনো পড়েনি। আমার ধারণা বিশেষ মাথা ঘামাতে চায়নি। আমি বরং শখ করে অনেকসময় সিঁদুরের টিপ পড়তাম কপালে। বেশ লাগতো। মাঝে মাঝে শুধু বিরক্ত হত মনে আছে বাবা এ বিষয়টা বললে। মানে যখনই ওই চাপিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা আসত। পরবর্তীকালে যখন জেনেছি বাবা-মা বিবাহিত ছিলনা তখন এই ব্যাপারটা আরোই আশ্চর্য লেগেছে। আর না করার কারণ যেখানে স্রেফ বাবার আলসেমী। হ্যাঁ, আলসেমী করেই ব্যাপারটা হয়ে ওঠেনি, শেষপর্যন্ত আমার বিয়ের মাস তিনেক আগে মায়ের বিস্তর চাপাচাপিতে উদ্যোগ করে মাকে অফিসিয়ালি বিয়ে করে বাবা। তাও কতবার চেয়েছিলাম সাক্ষী হই, কিছুতেই রাজি হলনা। বাবা-মায়ের বিয়ের সাক্ষী হওয়ার এমন সুযোগটা স্রেফ বাবার আপত্তিতে হলনা, মায়ের কোনো আপত্তিই ছিল না।


কলেজে পড়াকালীন হস্টেলে মাঝেমধ্যেই এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক চলত বন্ধুদের সঙ্গে। বলেছিলাম, দেখিস বিয়ের সময় কেউ আমাকে শাঁখা-সিঁদুর পড়াতে পারবেনা। না, তর্কের খাতিরে বলিনি, গভীর বিশ্বাস থেকেই বলেছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে যে এতটাই সিরিয়াস ছিল তা বিয়ের সময় অন্যজন ঠিক বুঝতে পারেনি। তাহলে অবশ্যই ঘটনাগুলো ঘটতো না। ফলে কেন শাঁখা-সিঁদুর পড়তে হবে বলে বিয়ের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ভয়ানক কেঁদেছিলাম বিয়ে আমি করবনা বলে। এখানে বলে রাখি বিয়ে করছিলাম একেবারেই স্বেচ্ছায়। যাইহোক সকলে অনেক বুঝিয়ে কোনোমতে বন্ধুরা সাজিয়েগুজিয়ে অসম্ভব রাগত আমাকে বিয়ের আসরে তুলল। রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়ার পর সিঁদুর দানের সময় প্রচণ্ড বেগে হাত ছুঁড়লাম। ছবিটা দেখলে এখন অসম্ভব হাসি পায়। বিশেষ করে ঝুমলাদিদি আর সারুর আতঙ্কিত মুখ দেখে যে এবারে ও কী করবে কে জানে! রাগের চোটে রাতে নার্ভাস ব্রেক ডাউন। বৌভাতের দিন আরেক কাণ্ড। বেঁকে বসলাম কেন সিঁদুর পড়ে সাজতে হবে? কেন কেউ আমাকে শাড়ি পরিয়ে দেবে? আমি সাজব না। অনেক কষ্টে সাইডে সিঁথি করে সামান্য ছোঁয়া থাকবে এই কড়ারে রাজি হলাম। বিয়ে আর বৌভাত দুদিনই ভয়ানক কাঁদো কাঁদো মুখ আমার। আসলে কিন্তু বিষয়টা অন্য ছিল।


বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই ঠকাঠক মেরে দুটো শাঁখাই ভেঙে ফেললাম। আর লোহা বাঁধানো হাতের মুঠোয় চেপে দুটুকরো।

শুনেছি আমার ননদেরা বলেছিল, তাদের ভাইয়েরা আসলে ভীষণ ভালো, তাই তাদের বৌয়েরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। হতো তাদের বর আর শ্বশুরবাড়ি তাহলে বুঝতো। গল্পের এই অংশটা সবথেকে বোরিং লেগেছে আমার। মেয়েরা যাই করুক ক্রেডিটটা শেষপর্যন্ত ছেলেদের হবে, এবং দেবে যারা তারাও আদপে মহিলাই। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই আমার মায়ের লেখাকে ভাবত বাবা লিখে দিয়েছে। এবং যখন তারা ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করল যে নাহ্‌, লেখাগুলি মায়েরই, তখন কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার বাবার প্রশংসা করে বলত, অমন স্বামী থাকলে হতেই পারে, নেহাত আমাদের নেই তাই আর হলনা। মুশকিলের বিষয় এই যে মাকে মাছের ঝোল উনুনে চাপিয়ে উপন্যাস লিখতে কিম্বা উনুনে নিজের লেখা কাগজ দিস্তা ধরে গুঁজে দিতে এক হয়তো আমিই দেখেছি।

এখন চিন্তাভাবনায় কিছু পরিবর্তন এসেছে আমার। লাল-সাদা ঢাকাই কী তেমন তেমন শাড়ির সঙ্গে লাল লিপস্টিকের মতোই শাঁখা-সিঁদুরটা জমে ভালো। আর সেদিনের কান্ডগুলোর জন্য বেশ হাসিও পায় এখন। আরেকটু স্পোর্টিভলি বিয়েটা করা উচিত ছিল আমার মনে হয়। এত রেগে কেউ নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে?
সবচেয়ে বিরক্তিকর পোশাক প্যান্ট-শার্ট কী টি-শার্টের সঙ্গে সিঁদুর-শাখা। এই আধুনিকারা আবার সিঁদুরও নয়, অন্য কিছু রঙ মাখেন। এদের দেখলেই আমার কেমন গা গুলিয়ে ওঠে। এর থেকে শাড়ি আর শাঁখা-সিদুরে অনেক বেশি সুন্দর মা-মাসিমারা। এঁরা পোশাকে যত আধুনিকা হন মনের দিক থেকে ততোটাই মান্ধাতার আমলের। এঁদের দেখলে আমার মনে হয় ঊনবিংশ বাঙালি মেয়ে ঠিক বুঝেছিল, কর্ম আর শিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা। আর আজকের বাঙালি মেয়ে আধুনিকতা বোঝে পোশাকে। মনেও নয়, মননেও নয়। এটা বোধহয় ভয়াবহ বাংলা সিরিয়ালের শিক্ষা।কে জানে বাবা!
নীল বিন্দুমাত্র ভুল বলেনি। তবে ও চিরাচরিত কথা বলেছিল। অর্থাৎ, শাঁখা-সিঁদুর একটি মেয়েকে একটি পুরুষের ‘মাল’ অর্থাৎ ভালো ভাষায় বললে সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। এটাতো পুরুষশাসিত সমাজের প্রতি একটা বক্তব্য। ঠিক কথা। সেটা তো অনেক পুরুষই মনে করেন। তবে অবশ্যই সকলে নন। বরং কমবেশি সব মেয়েরাই মনে করে। এই সংস্কার থেকে তারা যতদিন না বেরিয়ে আসছেন ততদিন কিছুতেই বলে বোঝানো যাবেনা যে সংস্কারটা টিঁকিয়ে রেখেছে মেয়েরাই।ছেলেদেরকে দোষ দেওয়াটা নিতান্ত অজুহাত মাত্র নিজের সংস্কার আঁকড়ে থাকার জন্য। সে আমাকে নিত্য সিঁদুরও পরাবেনা ধৈর্য ধরে আর নিত্য শাঁখা কী লোহা বাঁধানো নিয়ে গজর গজরও করবে না। বিরক্ত হবে কখনো, তারপর ধুত্তোর বলে নিজের কাজে মন দেবে। গজগজ করবে বাড়ির বয়স্ক মহিলারা আর নিজের মন। সেইটা কিন্তু মেয়েদেরই পেরোতে হবে। নাহলে ফল ওই কিম্ভুত সাজ – জিনসের সঙ্গে সিঁদুরের আধিখ্যেতায়। আসলে ওইখানেই আটকে রয়েছে অধিকাংশ বাঙালি মেয়ের আধুনিকতা - ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসা পোশাকে আর আধখানা শিক্ষায়।
লেখাটা পড়ে একটি অল্পবয়সী ছেলে আমায় ফেসবুকে ইনবক্স করল, কেন আমি মেয়েদের দোষ দেখেছি। বললাম, কী করব বলো, আজ পর্যন্ত আমি কেন শাঁখা, সিঁদুর পড়িনা তাই নিয়ে কোনো ছেলে আমায় জিজ্ঞাসা করেছে বলে মনে পড়েনা। এমনকী বাসে কন্ডাক্টররাও দিদি, বৌদি, মাসীমা যা পারে ডাকে। কিন্তু অনেকবার প্রশ্ন শুনেছি মেয়েদের মুখ থেকে, আমি বিধবা না ডিভোর্সি। কোনোটাই নই শুনে দীর্ঘশ্বাস পড়েছে আমার স্বামীভাগ্য ভেবে। যেন শুধু ওইটুকুর জন্য সে কিছুই করে উঠতে পারল না। আর সবাই তো জিজ্ঞাসা করেনা, কিন্তু অনেকের চোখে প্রশ্ন ঝুলে থাকে মেয়ে সহ আমাকে দেখলে পথেঘাটে, বাসেট্রেনে। তাই মেয়েদের কথাই আগে মনে আসে আমার।
 

Saturday, August 15, 2015

স্বাধীনতা



স্বাধীনতা নিয়ে আমার কিছু ভাবনাচিন্তার কথা সকালে লিখতে বসেছিলাম। প্রিয় নোটবুকটা জবাব দিল। অতএব কিছুটা গেল হারিয়ে।

আসলে আমি অনেকদিন ধরেই স্বাধীনতা শব্দটার অর্থ খুঁজে বেড়াচ্ছি। খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছিনা। ছোটবেলায় বেশ লোমহর্ষক একটা অর্থ বলে মনে হত।



মনে আছে প্রাইমারি স্কুলের সামনের বারান্দায় আমাদের নিত্যকার প্রেয়ার হতো। সেখানে অন্যদিন কখনো আঙুল দিয়ে সামনের জনকে খোঁচানো, চোখ পিটপিট করা, ফিসফিস করা এগুলো কেউ না কেউ করলেও স্বাধীনতা বা ছাব্বিশে জানুয়ারির দিন সবাই খুব সিরিয়াস। ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ’ – এইসব গান সমস্বরে গাইতে গাইতে শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিত। ইতিহাসে চিরকালই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা আমার প্রিয় ছিল। মনে আছে, ক্লাস নাইনে, ব্রেস্ট টিউমার অপারেশনের পর তখনো ব্যান্ডেজ খোলেনি, বাড়িতে রেস্টে আছি, পনেরোই আগস্টের দিন স্কুল যাব বলে প্রচণ্ড বায়না করায় বাবা বাধ্য হয়ে নিয়ে গিয়েছিল কেবলসের স্কুলে। মার্চপাস্টে যোগ দিতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু বাবার সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম পুরো সময়টা। তবে আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে ঝলমলে পনেরোই আগস্ট ডি ভি গার্লসে পড়তে। বিরাট স্টেডিয়ামে চিত্তরঞ্জনের বিভিন্ন স্কুলের অজস্র ছেলেমেয়ে মিলে মার্চপাস্ট, অনুস্ঠান – সে এক হইহই রইরই কাণ্ড। সম্ভবত সেটাই আমার শেষ পনেরোই আগস্ট।

এখন আর স্বাধীনতার দিনে বীর বিপ্লবীদের কথা মনে পড়েনা। সেলুলার জেলেই কেউ জুতো খুলে ঢোকেনা। তার চেয়ে বড় কোনো মন্দির-মসজিদ ভারতবর্ষে আছে নাকি?

বিভূতিভূষণের লেখা মনে পড়ে। তিনি এমন সব মানুষের সঙ্গে মিশেছিলেন যারা ভারতবর্ষ দেশটার নাম জানেনা, জানেনা স্বাধীনতার অর্থ। আজো ভারতবর্ষের একটা বড় অংশের মানুষের কাছেই এই দুটো শব্দই অর্থহীন। আবার কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কাছে বড় বেশি অর্থবহ।

আর ছাপোষা মানুষের কাছে বাড়তি একটা ছুটির দিন। বেলা করে ঘুম, বেড়ানো, এন্টারটেনমেন্ট।

আর প্রতিবছর পনেরোই আগস্ট এলে বহুদিন ধরে কাউকেই ভোট না দেওয়া আমি আরেকবার ভাবতে বসি ‘স্বাধীনতা’ শব্দের অর্থ। মানে ওই সময় নষ্ট আর কী।

Monday, August 10, 2015

বাংলাদেশ

সময়টা ভুল ছিল কিনা জানিনা
তবে জন্মেছি এটা সত্য।
সময়টা ভুল ছিল কিনা জানিনা
তবে হাতে কলম ছিল।
মুখে ভাষা ছিল।
পেটে খিদে ছিল।
চোখে স্বপ্ন ছিল।

ওরা বলল,
কলম বন্ধ কর।
পারলাম না।
বলল, চুপ কর।
তাও পারলাম না।
বলল, খিদে আর স্বপ্ন বলে কিছু নেই।
তার উত্তরে গান গেয়ে উঠলাম।

বলল, তোমার জন্মানোটাই অপরাধ।
অতএব মৃত্যুদণ্ড।
ওরা বলল - ঘাতক অথবা ধর্ম অথবা রাষ্ট্র।

অথচ প্রকাণ্ড একটা আশ্চর্যের মতো বেঁচে রইলাম আমি – বাংলাদেশ।

Saturday, August 8, 2015

বাইশে শ্রাবণ

এপারে বৃষ্টি পড়ে
যুবকের রক্ত ঝরে,
ওপারে বৃষ্টি পড়ে
তরুণের রক্ত ঝরে,
রবি ঠাকুর হাহাকারে
শুধু প্রশ্ন করে,
এত রক্ত কেন?

বৃষ্টি শুধু নিঃশব্দে দাগ ধুয়ে দিয়ে চলে যায়।

ঘাতকের হাতে নিহত তরুণেরা

ও কারো বন্ধু ছিল,
কারো প্রিয়জন,
কারো প্রেম,
কারোর বা স্নেহের ধন।

ওর বড় ব্যথা লেগেছিল -
টুকরো টুকরো হয়ে যেতে।
বড় বেদনার মত বাজেনিতো -
আর কারো শিরা ধমনীতে!

আসলে আমরা সকলেই মৃত -
হত্যাকারী বা দর্শক;
ওই শুধু ভীষণরকমভাবে বেঁচে আছে -
স্বপ্ন দেখা এক ভবিষ্যত।

Friday, August 7, 2015

সেই ছেলেটা


সেই ছেলেটা - আকাশ দেখে সাঁওতাল এক গ্রামের বাঁকে,
সেই ছেলেটা - তালের বনে পাতার গল্প যাকে ডাকে,
সেই ছেলেটা - ভালোবাসে শরীর নামের কবিতাকে,
সেই ছেলেটা - তুলি হাতে শুধুই যে তার স্বপ্ন আঁকে,
সেই ছেলেটা – তোমরা কেউ লতে পারো কোথায় থাকে?
সেই ছেলেটা - মেঘবালিকা দিনরাত্তির খুঁজছে তাকে

Thursday, August 6, 2015

টুকরোটাকরা জীবন



জীবনে কেবল টুকরোই ছোঁয়া যায়
জীবনে কেবল টুকরোই জোড়া যায়
এভাবেই আমি তোমাকে ছুঁই রোজ।
এভাবেই তুমি আমাকে ছুঁয়ে যাও
এভাবেই জুড়ি দুজনের ছোঁয়াগুলো
জুড়তে জুড়তেই পূর্ণ হওয়ার খোঁজ।

We can only touch each other by parts to try to become whole together

আসলে তুমি কোথাও ছিলেনা
আসলে তুমি কোথাও নেই আজো।
আসলে তুমি শুধুই কল্পনা
আসলে তুমি স্বপ্ন হয়েই সাজো।

Love exists nowhere eternally except in our dreams

Wednesday, August 5, 2015

কিস্তি মাত

মাঝে মাঝে তোমাকে রাগিয়ে দিতে
ভীষণ ভালোলাগে আমার।
রাগিয়ে দিয়ে মুখের ওপর তুড়ি মেরে
হো হো করে হেসে উঠে বলব,
রাজা সামলাও হে, কিস্তি মাত।
তুমি তাকিয়ে দেখবে ঘোড়াটা ঠিক
আড়াই চালের মাথায় লক্ষ্যে স্থির,
ডাইনে, বামে এগোনো বা পিছোনোর
কোন পথই নেই আর।

হাতের ধাক্কায় বোর্ড উল্টালেই
কি খেলা শেষ হয়?
কেউ তো কখনো জিততেও পারে
তোমার বিপরীতে?