Thursday, January 21, 2016

সিগারেটটা ধরাতে চাই একবার

সাম্রাজ্যবাদ, ধর্ম এমনকী  ভালোবাসা -
মাঝে মাঝে সবকিছুকেই সিগারেটের মতো
ফুঁকে দিতে ইচ্ছে করে আমার -একেবারে জ্বালিয়ে দিতে।
খুব বিরক্ত হয়ে উঠলে আধখানা মনখারাপকে
দুমড়ে-মুচড়ে গুঁজে দিতে পারি অ্যাসট্রেটে,
অথবা ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি মাটিতেও।
তারপর পা দিয়ে চেপে নাহয় নিভিয়েই দেব।
নাহলে একটু একটু করে পোড়াব সবকিছুকেই আর
ধোঁয়ার বাহারি রিঙ বানিয়ে বাতাসে বিষ মিশিয়ে দিয়ে যাব।
অশ্রু, ঘাম সব ছাই হয়ে ঝরে পড়বে। উড়বে বিষাদকণা।
সবশেষে হাতে রয়ে যাবে হৃদয় অথবা না পাওয়ার শেষ টুকরোটুকু।


Wednesday, January 20, 2016

কী আমাদের জাত আর ধর্মই বা কী?



ভারতবর্ষ একটি ধর্মভিত্তিক দেশ, কোনও ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ নয়। ঈশ্বরে বিশ্বাস নয়, ঈশ্বর ব্যবসাই যার মূল ভিত।

এ দেশের একটা বড় অংশের মানুষই জানেন ঈশ্বর মানার বিষয় নয়, অন্যকে মানানোর বিষয়। ধর্ম এখানে ব্যবসা এবং রাজনীতির একটা বড় হাতিয়ার মাত্র। রামদেব অথবা লোকনাথের মতো জীবিত এবং মৃত বিরিঞ্চিবাবা ও তাদের অনুগামীরা হল সবথেকে বেশি যুক্তিবাদী মানুষ যারা ধর্ম নিয়ে জমিয়ে ব্যবসা করে। বিজেপি এবং তার সহকারি দলগুলো আদৌ হিন্দুত্ববাদী নয়, তারা ধর্মকে ক্ষমতা এবং রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে খুব ঠাণ্ডা মাথায় ব্যবহার করে। তর্কের বিষয় হলেও ধর্ম এবং জাতবিভেদ পরস্পরের হাত ধরে হাঁটে এই অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক খেলায়। আমরা জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে প্রতিনিয়ত তার শিকার হই।

রোহিত ভামুলা-র মতো কেউ কেউ সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক এবং দেশীয় রাজনীতির শিকার হয়। বাকি অধিকাংশ যারা ধর্ম নামক ব্যবসার মস্তিস্ক প্রক্ষালণের শিকার তারা টের পাইনা, যেমন করে জলের তলায় হাঙরে পা কেটে নিলেও টের পাওয়া যায় না। আসলে সংরক্ষণ তো হওয়া উচিত অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপর। সেখানে কোনও রাজনৈতিক দলই, সে দক্ষিণ-বাম, হিন্দুত্ববাদী-অবাদী কেউই কিন্তু এই পদক্ষেপ নিতে সাহস করবে না। কারণ মানুষ নয়, সকলেরই নজর একটাই – ভোটব্যাঙ্ক – সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু উভয়ের মন রাখাই তাই তাদের ধর্ম। সেই সেপারেট অ্যান্ড রুল থিয়োরি অব্যাহত আজও।

রোহিত ভামুলার আত্মহত্যা বা কালবুর্গীর হত্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, নিয়মিত ঘটনাক্রমের একটি আলোচিত অংশমাত্র। কিছুদিন পরেই বাসী খবর হয়ে যাবে, কিছু বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের পর। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি একই থাকবে যতদিন এদেশে-ওদেশে সর্বত্র ধর্ম আর জাতের ব্যবসা চলবে। সাধারণ মানুষ যতদিন না ধর্ম বিশ্বাস এবং জাত-পাতের ভেদ থেকে নিজেকে বার করে আনতে না পারছে ততোদিন এই মৃত্যুমিছিল চলবেই সর্বত্র। আসলে ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ পারতপক্ষে বোকা। তারা বোঝেই না তাদের এই বোকামিকেই হাতিয়ার করে একেবারে অবিশ্বাসী কিছু মানুষ, যারা তাদের হিন্দু-মুসলিম কী দলিত-ব্রাহ্মণ বানিয়ে তুলেছে।

কাল থেকেই মাথায় ঘুরছে গানটা – ‘কী আমাদের জাত আর ধর্মই বা কী?/ ফুলের ডালা যখন তোমার সামনে সাজাচ্ছি/ তোমাদেরই জন্যে যখন কাগজ বানালাম/তার উপরে লিখবে বলে রাম রাম রাম’

সত্যিই তো, কী আমাদের জাত আর ধর্মই বা কী, এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানোর আমাদের সময় হয়েছে আজ।

ধরাবাঁধা

একটা সে যে টুকরো মানুষ
আবর্জনা ভাঙা-চোরা
যতই তুমি আস্তটা চাও
সহজ কভু নয় গো গড়া।
মানুষটাই যে ভাঙাচোরা।

টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিয়ে
স্নেহ কিম্বা ভালোবাসায়
জুড়তে জুড়তে দু-একটা ফের
খুলে গিয়ে কেবল হারায়।
মানুষটাই যে গড়া শুধু টুকরোটাকরায়।

যতই তাদের খুঁজে আনো -
সহজ কী আর সেসব বাঁধা?
আধা কেবল জুড়তে পার,
ছড়িয়ে রবেই বাকি আধা।
মানুষটাই নয় যে তো সেই ধরাবাঁধা।


Tuesday, January 19, 2016

অনেকদিন পর, কোনও কথা হবে না

না কোনোও লেখার নয়, এটাই ছিল আজ বিকেলের জলখাবারের নাম।

আমার হাতের বিচিত্র টিফিন খেতে বাড়ির সক্কলে বেশ ভালোবাসে, বিশেষতঃ আমার মেয়ে। নানারকম ব্যথা-বেদনায় অনেকদিন ধরেই বেশ ঘায়েল, তাই সব বন্ধ ছিল। শীতেই আবার এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ বেশি থাকে। ওদিকে শীতও নেই, আমিও। আজ বিকেলে কিছুটা সুস্থ লাগছিল, তাই বিছানায় বসে গোটা দুয়েক ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে করতেই মেয়েকে হাঁক দিলাম, ওরে ফ্রিজ খুলে কড়াইশুঁটি, গাজর আর ঝুড়ি থেকে সবচেয়ে ছোট একটা আলু নিয়ে আয়। সঙ্গে ছুরি, খোসা ছাড়ানোর ইয়েটা আর গোটা দুয়েক বাটি আর একটা খবরের কাগজ। মেয়ে হাতের মোবাইলে খুটখুট আর মুখে হুঁ হুঁ করতে করতে খানিক বাদে এনে দিল। গাজর আর আলু ধুয়েও আনে কী ভাগ্যি আমার!

সব ছাড়িয়ে কেটে মেয়েকে বললাম, ওরে মাইক্রোওয়েভের হলুদ বাটিটায় জল দিয়ে বসিয়ে দে পাঁচ মিনিট। দেখিস সব যেন জলে ডুবে থাকে। চাট্টি নুন ফেলে দিস জলে। মেয়ে মোবাইলে চোখ রেখেই করে যায় সব কাজ। আমাদের মাইক্রোওয়েভের আবার এখন দুটো বাটনই শুধু কাজ করে স্টার্ট আর পজ। স্টার্ট বাটনটা একবার টিপলে তিরিশ সেকেন্ড চলে। ফলে অঙ্ক অনুযায়ী দশবার টিপলে পাঁচ মিনিট হয়। এভাবেই সে চলে, চলে যায় বহুদিন। আমারই মত নড়বড়ে আর গড়বড়ে হয়ে (শেষবার যে সারাতে এসেছিল সে পাশের একটা-দুটো স্ক্রু না লাগিয়েই চলে গিয়েছিল, আমি ছিলাম না তখন)।

যাইহোক, যে গল্প করছিলাম। দেখতে দেখতে পাঁচ মিনিট কেটে যায়। আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে ধীরেসুস্থে উঠে সেদ্ধ সবজি নিয়ে মিক্সিতে ঘুরাই। সেটা বহুবার দোকান ফেরত হয়ে, ইদানীং প্রচণ্ড চিৎকার করে, তাহোক চলে তো। সে তো আমিও করি আর চলি ফের। তারপর আদা, জিরে, লঙ্কা গুঁড়ো, বেকিং পাউডার আর নুন দিই, চাট্টি টমেটো সসও, সবই আন্দাজে। তারপর একটা বেসনের প্যাকেটে যেটুকু বেসন ছিল তলায়, ঢেলে দিই। তারপরেও ঠিক জমে না। চাট্টি ময়দা ফেলি। আচ্ছা, এতটা যখন হলই, তখন একটু ডিমের গোলায় ডুবিয়ে ভাজলে ভালো হত নাকি? দুটো ডিম ভেঙে গোলা বানিয়ে নিই চট করে। তেল গরম করে ছাড়ি। ওই যাহ্‌, একদফা ভেজে আর তো বেশি নেই দেখি! ওরই মাঝে মা, এক পাক ঘুরে যায় রান্নাঘরে, বলে, এরসঙ্গে কফি হলে বেশ হত। বলি, সব হচ্ছে মা, কিচ্ছুটি ভেবো না, বুইকে বললাম তো, নতুন কাপগুলো আর প্লাস্টিকের রঙিন প্লেটগুলো বার করতে, ওরে কোথায় গেলি? মেয়ে মোবাইল থেকে মুখ না তুলেই বলে, দাঁড়াও দাঁড়াও, সব তো জল দিয়ে ধুয়ে রাখছি, কাপের তলায় কালো দাগ কিসের? বলি, ও নিয়ে ভাবিস না, ওটা ইনবর্ন।

ফ্রিজে পাঁউরুটির গোটাদুয়েক টুকরো ছিল। তারই একটা সামান্য ভিজিয়ে, চটকে আরেকটু নুন দিয়ে মেখে নিই। এই তো দিব্যি বেড়ে গেছে। আরেকদফা ভেজে ফেলি। ওরই ফাঁকে অন্যদিকে কফি হতে থাকে, টুকটাক বাসন ধুয়ে রাখি। এবারে চপের মণ্ড আর প্রায় নেই। তাতেও মন্দ কি? শেষ পাঁউরুটিটাকে টুকরো টুকরো করে পাত্রের গায়ে লেগে লেগে থাকা ওই মণ্ডের সঙ্গে মাখিয়ে নিই। ডিমের গোলা তো অনেকটাই আছে। ব্যস্‌, আজকে ঠেকায় আমায় কে? টপাটপ গোলায় ফেলি আর তুলি আর কড়াইতে ছাড়ি। বড়িয়া বড়া হতেই থাকে। ওরই ফাঁকে টপ করে অথবা কপ করে একটা খেয়ে দেখেছি, নুন ঠিক আছে। নাহ্‌, ঝালের কথা বলে লজ্জা দেবেন না, সতেরো বছরের মেয়ের আমার ঝুড়িতে লঙ্কা দেখলেই চোখে জল আসে।

খেতে খেতে মেয়ে জিজ্ঞেস করে, মা জিজ্ঞেস করে, জানতে চায় মেয়ের বাবাও, এটা ঠিক কি? বলি, ওই যে বললাম, কোনও কথা হবে না। মা বলে, তা তো বুঝলাম, কিন্তু রেসিপি? বলি, দাঁড়াও আগে লিখি, তারপরে পড়ে নিও, ব্লগে-ফেসবুকে।’

মেয়ের দিকে ফিরে বলি, 'খেতে পারছিস তো? - এন্ডস্‌ ওয়েল দ্যাট অলস্‌ ওয়েল, কি রে ভুতো?

কী আশ্চর্য সব্বাই সায় দেয়!!

তখন কথারা...

কথারা জমতে জমতে কি হয়, গাছ? যদি সত্যি হত, তো বেশ লাগত। সব মানুষের মনের কথা জমে জমে কেমন নানারঙের গাছপালায় পৃথিবীটা ঝলমল করত। কিছু গাছ মরা হত, কিছু রঙহীন, তাতেই বা ক্ষতি কি? হত তো? আর মানুষও কেমন নিজের সব কথা বলে ফেলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচত। অথচ কেউ কিচ্ছু জানত না। কেবল লাল-নীল-সবুজ-হলুদ পাতারা বাতাসে মাথা দোলাতো আর ফিসফিসে সব শব্দ ভেসে বেড়াত চারদিকে। সব কথা মিলেমিশে বাতাসের স্বর আর গাছেদের গান।

Monday, January 18, 2016

আর সি টি-র দ্বিতীয় পর্ব - শেষ অধ্যায়

রোববার বিকেলে অপূর্বদা ফোন করে কুশল সংবাদের মাঝে জানতে চাইছিলেন, তোমার দাঁতের খবর কি?

বললাম, এখনও তো শেষ হয়নি, তবে যার ছোটগল্প হওয়ার কথা ছিল, সেটা উপন্যাসে দাঁড়িয়েছে।

আজ সকালে বেদনাহত হয়ে গিয়েছিলাম ডাক্তারের সমীপে (এ আমার পুরোনো ডাক্তার, শোভাবাজারে, দাঁতের ব্যাপারে এর সঙ্গে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো, তবে প্রায় কাছাকাছি বয়সী হওয়ার জন্য বোধহয় মাঝেমাঝে ঝগড়াও হয়।)। তারই কিছু কথোপকথন

ডাক্তার ঠিক যতটুকু ব্যথা ততোটুকুই বলবেন, একটুও বাড়িয়ে বলবেন না যেন।
রুগী কী মুশকিল, আমি তো কমিয়েই বলছি, অন্য কেউ হলে তো চিৎকার করত, নেহাত আমার ব্যথায় থাকার অভ্যেস আছে।
ডাক্তার এক্স-রে করে দেখে নিলাম তো, সব ঠিক আছে। ওই সিমেন্ট থেকে কারো কারো জ্বালামতো হয়, ওই যে পুড়িয়ে দিলাম না?
রুগী (বিষন্ন গলায়) হুঁ। (মনে মনে, সিমেন্ট তো কাল দিলেন। পুড়িয়ে সে তো শুক্রবার, বললেন যে জিঙ্ক অক্সাইড! কী জানি বাপু, তা ভালোয় ভালোয় মিটলেই হল ইঁট, সিমেন্ট, চুন, সুড়কি... কোনোটাতেই আপত্তি নেই আমার)
ডাক্তার (কী সব লাগিয়ে টেম্পোরারি কভারিংটা আরেকটু চেঁছে চেপে বসান। এর আগে দাঁতের ওখানটাতেও কী সব করেছেন।) লাগছে?
রুগী আঁ, আঁ, আঁ...
ডাক্তার (আরেকটু চেপে বসিয়ে) কতটা ব্যথা লাগছে?
রুগী (কিঞ্চিৎ রাগত এবং হতাশ গলায়) লাগছেই তো, খুব ব্যথা লাগছে। লাগছে বলে ব্যথার জায়গায় আরও লাগিয়ে দেবেন? (মনে মনে, আপনি কেমন লোক মশাই? শুনেছি পুলিশে ছুঁলে আঠেরো ঘা, দাঁতের ডাক্তারে ছুঁলে কত?)
ডাক্তার ( কী কী করতে হবে বলার শেষে প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে) কিচ্ছু টেনশন নেবেন না, ঘাবড়ানোর কিছু নেই, নো টেনশন।
রুগী (বেদনার্ত হাসিতে) হুঁ। (তারপর ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্টের উদ্দেশে) বুঝলেন, অতি দুঃখে মানুষের হাসি পায় ...।

এখন শুধু এটাই চিন্তার, ট্র্যাজিক উপন্যাসটার শেষে গিয়ে মধুর মিলন হবে তো?


Saturday, January 16, 2016

ডিম-সবজির হুলুস্থুলু

গল্পটা বোধহয় বছরখানেকের পুরোনো, তবে যেকোনো সময়ের জন্য কাজের!

আমি রান্নায় তেমন পটু নই। তবে খেতে ভালোবাসি আর রান্নার বই পড়তেও খুব ভালো লাগে। আমার মেয়ে টিফিন নিয়ে একটু বায়না করে। ফলে কখনও কেনা টিফিন খাই আবার কখনওবা এটা-ওটা বানিয়ে দিই। সেটা চেনা কিছু অথবা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত। আবার এক একটা খাওয়ার পিছনে ছোটখাটো কাহিনিও তৈরি হয় অনেকসময়সেসব এখানে প্রকাশের যোগ্য কীনা জানিনা।

তাও আজকের গল্পটা বলি -

সন্ধ্যায় মেয়েকে বললাম, এই গরমে রান্নাঘরে ঢুকতে ভালো লাগছেনা। এদিকে বাড়ির কাছের চাউমিনের দোকানটাও বন্ধ। মেয়ের বক্তব্য খুব খিদে পেয়েছে, কিন্তু আমি মুড়ি, চিঁড়ে ইত্যাদি (অখাদ্য –এটা উহ্য অবশ্য) খাবনা। ওতো রোজই সকালে স্কুল যাবার আগে সোনামুখ করে খেয়ে যাই। বরং না খেয়ে থাকব তাও সই। বাবা বলল খাবিনা ঠিকাছে। খানিকক্ষণ না খেলে কিছু হবেনা, পড়াশোনা কর। আমি আর কী করি ( একে মা তায় তারতো আবার পরীক্ষা চলছে অতএব পেট এবং মনমেজাজ দুইই খুশি রাখতে হবে) ফ্রিজ খুলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম যে কী কী পাওয়া যেতে পারে।

এর পরের কথোপকথনটা খাওয়ার পর।তার আগে অবশ্য মেয়ের আবদারে বাবার মোবাইলে খাবারের ছবি উঠেছে।

কন্যাঃ মা, তোমার এই রেসিপিটা ফেসবুকে আমিষ রান্নায় পোস্ট করনা।

মাঃ দূর লোকে হাসবে।

কন্যাঃ তাহোক, তুমি বল না কী লিখবে।

মাঃ (ওপরের ভূমিকাটি বলে নেওয়ার পর) প্রথমে ফ্রিজ খুলে দেখুন, নিশ্চয় ডিম থাকবে। গোটা দুয়েক ডিম বার করে এবার সবজির বাক্সটি টেনে নিন। আপনিতো জানেনই যে আজ গাজর আর বিন নেই, কী আর করবেন ক্যাপসিকাম আর টমেটোই বার করুন। আর এই মন্দার বাজারেও দু’একটি পেঁয়াজ আর আলু আপনার ভাঁড়ারে নিশ্চয় আছে। এবারে একটা আলু টুকরো টুকরো করে মাইক্রোওয়েভে সেদ্ধ করতে দিন। আধখানা ক্যাপসিকাম, একটি টমেটো, একটি পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কেটে নিন। এবারে একটি পাত্রে ডিমদুটি ফাটিয়ে নুন আর বেকিং পাউডার দিয়ে বেশ করে ঘেঁটে নিয়ে তারমধ্যে সবজি কুচি ও আলু সেদ্ধ ভালো করে মিশিয়ে নিন(আমার মেয়ে ঝাল খেতে পারেনা, তাই কাঁচা লঙ্কা কুচির পরিবর্তে গোলমরিচ গুঁড়ো)। তাও পরিমাণে কম কম লাগছে? আরে, কেউ খায়নি বলে ফ্রিজে একটা পাঁউরুটির পেছনের টুকরো পড়ে আছেতো, এই সুযোগে সেটাও উঠে যাবে, অতএব ওটাকে টুকরো টুকরো করে দিয়ে দিন। তাও যেন ঠিক জমছেনা, ডিমটা কমতো, আরেকটা ডিম দেব? তার চেয়ে বরং বেসন আছেতো, তাই খানিকটা দিয়ে দিই। বেসনটা জলে গোলার কোন মানেই হয়না, দুধ আছেতো। এইতো বেশ অনেকটা হয়েছে। এইবারে ফ্রাই প্যানে তেল গরম করে ছাড়া যেতে পারে।
ওমা, তাও কেমন ছাড়া ছাড়া লাগছে! যাকগে, আরেকটা ডিমের অপশনতো ছিলই। ঘেঁটে নিয়ে ওপরে ছড়িয়ে দিই। সব ফাঁকফোকরগুলো চমৎকার বুজে যায়। এই গরমে আর কাঁহাতক দাঁড়ানো যায়, দূর ছাই ওপরের পিঠটা কিছুতেই ভাজা হচ্ছেনা যে – দিই বাড়িয়ে। এই য্ যা... একটু পোড়া পোড়া গন্ধ আসছেনা? চট করে বন্ধ করে দিই বরং। ওপাশে কফিটা বানাই, ভাপে ভাপে এটা ঠিক হয়ে যাবে...।
প্যান উলটে বড় থালায় অদ্ভুত ওমলেটটি(?) ঢেলে নিয়ে ওপরে টমেটো সসটা একটু কায়দা করে ঢেলে দিন, দিব্যি ডেকরেশন হয়ে যাবে (আর কিছুই নেই যখন)। তারপর ছুরি (কার্টিলারি না থাক, সবজি কাটার ছুরিটাতো আছে, ওতেই চলবে) চামচ সাজিয়ে স্মার্টলি কফির সঙ্গে পরিবেশন করুন। দেখবেন মেয়ের মুখ কেমন হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আর আমাকে দুধ-মুড়ি দিলেও কোন অসুবিধা নেই বলা মেয়ের বাবার মুখেও স্মিত হাসি। সে এক অসাধারণ ঘরোয়া মুহূর্ত।

পুঃ আপনাদের ভাগ্য ভাল যে ফ্রিজে কাঁচকলা আর ওলও ছিল, কিন্তু সেগুলো দিয়ে কোন গন্ডগোল বাঁধাইনি।

কন্যাঃ আর এটার নাম কী রাখবে মা?


মাঃ সবজির ওমলেট নয়, সেতো আগেই খাইয়েছি, এতে অনেক ভেজাল আছে। বরং ডিম-সবজির হুলুস্থুলুই নাম দিই, মানে এটা না বানালে যা হত আরকী...

Friday, January 15, 2016

সম্মান এবং সাম্মানিক ইত্যাদি

আজকে হাতে এল ‘একুশ শতাব্দী’ এবং পুণা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা পত্রিকা ‘অভিবাসী’-র লেখক কপি। ‘অদ্বিতীয়া’-র জানুয়ারি সংখ্যাও ডাকযোগে পাঠানোর জন্য ওরা ঠিকানা নিয়েছে। প্রিন্টে বিভিন্ন পত্রিকা, খবরের কাগজ, লিটল ম্যাগাজিনে প্রায় বছর পনেরো ধরে লেখার অভিজ্ঞতায় আমি জেনেছি ছোটপত্রিকাগুলির সাম্মানিক দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও লেখককে একটি কপি বই দিয়ে সম্মান জানায়। আর বাণিজ্যিক কাগজ-পত্রিকাগুলি লেখক কপি দেওয়ার পাশাপাশি সম্মানদক্ষিণাও দিয়ে থাকে। অবশ্য এক হিসেবে এই ব্যাপারটা ছোট থেকেই দেখেছি যেহেতু বড় হয়েছি একেবারেই লেখালেখির পরিবেশে। আন্তর্জাল পত্রিকার ক্ষেত্রে লেখককে জানিয়ে দিলেই মিটে যায়। যেহেতু অধিকাংশই অবাণিজ্যিক প্রয়াস এবং লেখা পড়ার জন্য একটা ক্লিকই যথেষ্ট।

আগামী মে মাসে ‘আমাদের ছুটি’ পাঁচ পেরিয়ে ছ’বছরে পা রাখছে। একবছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে কলকাতার নন্দন চত্ত্বরে ‘জীবনানন্দ সভাঘর’-এ আমরা একটা ঘরোয়া আড্ডা আর ছবি দেখার আসর করেছিলাম। অতিথিদের চা ছাড়া কিছুই খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণ আয়োজন আমরা দুজনে মিলেই করেছিলাম, সাধ্যে যা কুলিয়েছিল। নন্দন চত্ত্বরের একটা সুবিধা আছে যে চাইলেই বেরিয়ে টুক করে খেয়ে নেওয়া যায় টুকিটাকি। কারণ এত জনের খাবারের আয়োজন করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। সেবারেই আশাতীত দর্শক পেয়েছিলাম আমরা। হলটি ছোট হওয়ায় অনেকে বসার জায়গাও পাননি একটাসময়ে। এরপরে অনেকবারই অনেকে বলেছেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে তেমন কোনও আয়োজন করে ওঠা সম্ভব হয়নি। আগামীতে ইচ্ছে রয়েছে সাধ্যে এবং বিশেষ করে আমার শরীরগতিকে কুলালে। আরেকটা কথাও বারবার মনে হয়েছে, বা অনেক পাঠক অনুরোধও করেছেন – ‘আমাদের ছুটি’-র বাছাই লেখার একটি সঙ্কলন করার জন্য। সত্যি ফ্রি পিডি এফ-এ অনেকেই ডাউনলোড করেছেন ঠিকই, তবু হাতে নিয়ে পাতা উলটে পড়ার একটা আলাদা মজা থাকে সবসময়েই। যথেষ্ট ভালো গুণমানের অনেক লেখাই ইতিমধ্যে এই পত্রিকায় বেরিয়েছে তা পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি, মতামত এবং আগ্রহও বলে দেয়। এছাড়াও আমার মনে হয়েছে, শুধুমাত্র ‘কথোপকথন’ গুলি আলাদা করে পুস্তকাকারে প্রকাশ করলে সেটাও সাক্ষাৎকারের একটি সংগ্রহযোগ্য বই হবে তো নিশ্চয়। কিন্তু আমাদের পক্ষে বই ছাপানো এবং বিক্রি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আর্থিক বা ব্যবসায়িক কোনও দিক থেকেই সম্ভব হয়ে উঠবে না বুঝেছি। তবে একবার আবার আড্ডায় বসার ইচ্ছেটা আছে অবশ্যই।

বছর দুয়েক আগে একটি ভ্রমণ অনুষ্ঠানের সারাদিনের আমন্ত্রণ পেয়ে বাস-ট্রেন-রিক্সা ইত্যাদি ঠেঙিয়ে গিয়ে দেখলাম সকালের জলখাবার থেকে দুপুরের খাওয়া, বিকেলের চা, সবই কুপন কেটে যথেষ্ঠ অর্থব্যয় করে খেতে হচ্ছে। নাহ্‌, অমন নানা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়ে আর যাইনি। কী মুশকিল এত কষ্ট করে অন্যের বক্তব্য শুনতে যাব, নিজের টাকা খরচ করে, তায় কিনে খেতে হবে কুপন কেটে। আমার বাপু নন্দন চত্ত্বরই ভালো, কিনেই খাব যদি, কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।

কিছুদিন আগে একটি আন্তর্জাল পত্রিকার তরফে একটি আশ্চর্য প্রস্তাব পেয়েছিলাম। তারা একটি বাছাই সঙ্কলন প্রকাশ করছে, তাতে আমার একটি লেখা মনোনীত হয়েছে। কিন্তু আমাকে সেই সঙ্কলনের কুড়িটি কপি কিনতে হবে। প্রত্যেক কপির দাম একশো টাকা। এবং তাও পুরো টাকাটা অ্যাডভানসড নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। প্রথমটায় যাকে বলে শকড্‌ হলাম – বিমূঢ় বলা যেতে পারে খানিক বাংলায়। উত্তর দিতেই পারছিলাম না। তারপরে একটু ঠাণ্ডা হলে জানালাম, আমার লেখা প্রকাশের দরকার নেই। ওই অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। সত্যিই নেই, আমি তো পরস্মৈপদী থুড়ি বরস্মৈপদি, তায় ছাপোষা কেরানির বউ। যে যেখানে টাকা চায়, বলি উনি আসুন, তারপরে। এভাবেই চাঁদাওলাদের কাছ থেকে বেমালুম আত্মরক্ষা করি আমি।

যত ক্ষুদ্রই লেখক হই, একটু হলেও সম্মান তো প্রাপ্য? সাম্মানিক দেওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব হয়না, আমরাও পারিনা নিজেদের পকেট থেকে ‘আমাদের ছুটি’ করতে গিয়ে। কিন্তু তাই বলে পত্রিকার সঙ্কলনের জন্য লেখকের কাছে অর্থ চাইব? আমার তো যুক্তিবুদ্ধিতে কুলায়নি। তবে কবেই আর বুদ্ধিমান ছিলাম? কিছু কিছু বোকামো তবু ভালো বলেই মনে হয় আমার জীবনে।

এই প্রসঙ্গে মনে হল, আমার গবেষণার কাজটা এই যে প্রকাশকেরা নিজেদের থেকে আগ্রহ দেখিয়ে প্রকাশ করছেন, এই সম্মানটুকু পেয়ে তাঁদের কাছে ধন্যবাদার্হ্য হয়ে আছি আমি। নাহলে নিজের বই আমার হয়তো কোনোদিনই প্রকাশ করা হত না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেনা এমনটা নয়। যত ভ্রমণ কাহিনি লিখেছি এযাবত, ঝেড়ে-বেছেও কয়েকটা খণ্ড হয়ে যায়। কবিতাও তথৈবচ। গল্প তুলনায় কম, কিন্তু অন্ততঃ একটা বইয়ের জন্য যথেষ্ট। মা মাঝে মাঝেই বলে, আর আমিও আশ্বাস দিই, হবে হবে, সময় হলেই হবে। শুধু মেয়েকে চুপি চুপি বলে রেখেছি, জীবদ্দশায় যদি কিছুই না বেরোয়, মরে গেলে অন্ততঃ বাছাই একটা ভ্রমণ কাহিনির বই প্রকাশ করিস। বাংলা ভ্রমণ কাহিনি নিয়ে এত পরিশ্রম করে যাচ্ছি, সেই তালিকায় নামটুকু থাক।


Tuesday, January 12, 2016

একতারাতে একটি যে তার

বুকের ভিতর এক শূন্য থাকে
কেউবা তাকে বন্ধু ডাকে
কেউবা বলে এতো সেইজনা।

আমি তার ভেতরে আপনা খুঁজি
খুঁজতে গিয়ে আপনি বুঝি
সে আর আমি একজনা।

সাঁই, সে আর আমি একজনা।

যে যেভাবে দেখে রে তায়
তেমনি তারে পায় বা না পায়
পেতে চাইলে আপনা ভোলো,
তবে দেখবে সে রয়েছে সবখানা।
সে তোমার শূন্য না পূর্ণ হবে
জানে তোমার ছয়জনা।

ক্ষেপী বলে,সব ভুলে প্রেমে ডুব দিয়ে দেখো
সে আর তুমি একজনা,


সাঁই, সে আর তুমি একজনা।

আয়নার সামনে

যতই চেষ্টা কর অথবা একেবারে না ভেবেও
আসলে তুমি কিছুই করতে পারনা কারোর জন্যই।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখ, ভিখারি অথবা
স্বার্থপর ছাড়া কোনো মুখ দেখতে পাবে না।
ভালোবাসতে না পারলে কে আর কবে
ঈশ্বর হয়েছে বল? আর সত্যিকারের ভালোবাসা?
সেও ধর, খুব সহজ কাজ নয়, সবাই ঠিক পারে না।
মানুষ হওয়া তো অনেক পরের কথা।

এইসবকিছুর আগে আয়নায় নিজের মুখোমুখি হও।

আমার তো কেবল সেই চেষ্টাতেই একটা জীবন বৃথা কেটে যাচ্ছে।

স্মৃতি

মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত শব্দমালা
ঢেকে দেয় আমার বেদনার শাখাপ্রশাখা,
তোমরা তাকে কবিতা নাম দাও হয়ত।

আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাক দিই - বন্ধু, ছেলেবেলা...।
যার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে বত্রিশ বছর।
অথচ মুখোমুখি কেউ কথা বলিনি আজও।

খুব বৃষ্টিতে অথবা শীতের বিষণ্ণবেলায় জেগে ওঠে

ফটোফ্রেমে আটকানো সেই সরল ঠোঁটের বাঁকটুকু। 


Monday, January 11, 2016

পাঞ্জা

কবিতা লিখতে আসলে
স্রেফ কব্জির জোর দরকার।
ওসব ভাবটাব সকলের থাকে।
পৃথিবীটাকেই কামড়ে খাওয়ার
অথবা তোমাকে, সে কেবল কোনো
এক কবিই পারে - এক মুঠো ধুলো নিয়ে
সোনা করে দিতে বিনা জাদুতেই।
আগ্নেয়গিরির শিখরে প্রেম নিবেদন
যারতার কম্ম নয়, কবিরাই পারে বারবার।
বেজম্মা মানুষের ওপর খুব রেগে গিয়ে,
ধুস্‌ শালা, আর লিখব না –
কবিরাই শুধু আমৃত্যু এই জেদ রেখে যায়।

গীতবিতান

দিনরাত্তির অসুখ-বিসুখ বেদনা ভীষণ -
মাথার কাছে দেবব্রত জাগেন সারাক্ষণ।
বুকে যখন মনখারাপের টান –
সুচিত্রা গেয়ে ওঠেন ভূবনজোড়া গান।

খুশি হলেই দুহাত বাড়াই -
নতুন করে পাব বলে ভালোবাসার জন,
ছেলেবেলার ওপার থেকে মায়ের গলায় ভেসে আসে -
আকাশভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ।

আবার যখন রেগে উঠি, সমস্ত খানখান –
সুরের জাদু শান্ত করে - চেনা গীতবিতান।
কষ্ট প্রহর, একটানা রাত, আমার আজীবন –
দুঃখে-সুখে রবি ঠাকুর সঙ্গে হেঁটে যান।

Sunday, January 10, 2016

ভুল

মাঝে মাঝে মনে হয়,
চুপ করে থাকারই এ সময়।
অথবা একেবারে না-থাকার মতো।
তবু কথা বলি, বলে যাই,
বৃথা জেনেও তুলি কন্ঠস্বর।
নিরর্থক শব্দ ব্যয়, জানি পন্ডশ্রম।
অথচ কলমে আঁচড় কেটে লিখি
অবিরাম, এখনও অকারণ।
ভুল করে ভালোবেসে ফেলি
মানুষেরেই - নদী বা গাছেদের মতো,
পাহাড় অথবা সাগর খুঁজে ফিরি
তাহাদেরই ভিড়ে। অথচ সে একেবারে মৃত।




Wednesday, January 6, 2016

মস্তিষ্ক প্রক্ষালণ

সবাই যখন মৃত জওয়ানদের সেলাম জানাচ্ছেন, আমি ভাবছি, যদি ভারতবর্ষ ভাগ না হত কত মায়ের চোখের জল মুছতে হত না, কত নারী স্বামী বা প্রিয় মানুষকে হারাত না, কত সন্তান পিতৃহীন হতনা।

রাজায় রাজায় যুদ্ধ না হলে অনেক উলুখাগড়ার প্রাণ বাঁচে।

রাষ্ট্র যুদ্ধকে যতই দেশপ্রেমের তকমা দিক, উলুখাগড়াকে যতই মহান বানিয়ে তুলুক, আসলে যুদ্ধের নামে, সন্ত্রাসের নামে উভয়পক্ষের কিছু সাধারণ মানুষ, যাদের চাকরি হল সৈন্যবাহিনিতে কাজ করা, তেমন কিছু মানুষ মারা যান।

রাষ্ট্র আমাদেরও মস্তিষ্ক প্রক্ষালণ করে বলে আমরাও তাঁদের মানুষ না ভেবে মহান বানাই

ওদিকে ক্ষমতালোভী কিছু মানুষ অন্য মানুষের মস্তিষ্ক প্রক্ষালণ করে ধর্মযোদ্ধা থুড়ি সন্ত্রাসবাদী বানাচ্ছে।


আরে বাবা মানুষ মরছে রে। সে যে নামে, যে দেশেই মরুক।

আমার ডায়েরির নাম ছিল ‘আকাশ’

ছোটবেলা থেকেই আমার বন্ধু কম। বন্ধু তাই বানিয়ে নিই মনে মনে। তার সঙ্গেই কথা বলা ডায়েরির পাতায়। ইদানীং ব্যথাবেদনায় জর্জরিত হতে হতে হাতড়ে হাতড়ে আবার তাকেই খুঁজে বেড়াই। আপন মনে তাকে লিখি ব্যথা আর বেদনার নানা বয়ান। পুরোনো কথা, নতুন সমস্যা, যাবতীয় আবোলতাবোল। কোথাওনা কোথাও তার কাছে ঠিক পৌঁছায়, সে শোনে নিঃশব্দে চিরকাল, আজীবন। কোথাও একটা শক্তি যোগায় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। কোথাও একটা বলে, তু্মি কিছুতেই হেরে যাবে না।

ওই যে মার্টিন নামে এক মুচি ছিল...।


জীবন আর আমার মধ্যে লড়াই চলতেই থাকে।

Tuesday, January 5, 2016

লাদাখ

হেমন্তে এখানের পাহাড়ে
লাল-হলুদ-সবুজ গাছেরা
সেজে ওঠে পাতার ঝালরে।
শীত শেষে সেই সব পাতা
ঝরে, ঝরে যায়। সব রঙ
ঝরে গেলে একান্তে গুল্মেরা
বরফের শ্বেত ঘুমে একা একা
দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকে,
একা একা অপেক্ষা করে
কোনো আগামী হেমন্তের -
আবারও রঙিন হবে বলে।