Tuesday, January 17, 2017

জীবনযাপন


জীবন থেকে মাঝে মাঝেই যাপন খুলে রাখি।

দু-একটা দিন একলা পালাই।

নিজের কাছেই ফাঁকি!

যাপন থেকে মাঝে মাঝেই জীবন তুলে রাখি।

দু-একটা দিন একলা হারাই।

নিজের মনেই থাকি।

জীবন এবং যাপন তবু জড়িয়ে ধরে রাখি।


ক্ষমা

ক্ষমা মানে
নিজের বুক থেকে ছুরি বার করে
নামিয়ে রাখা।
যে তোমাকে হত্যা করেছিল, তার
বুকে প্রতিঘাত নয়।
ধর্ম
জাত
সমাজ
লিঙ্গ
ব্যক্তিগত বাদ-প্রতিবাদ।
ক্ষমা
একপক্ষীয় হয়।
ক্ষমা মানে
কখনও প্রশ্রয়।

অনুবাদ খেলা





(১)

শব্দের জন্যই সে বেঁচে থাকত
অন্যদের থেকে পাওয়া,
এবং নিজেও লিখেছিল
কিছু কিছু।
ওহ! কত ছোট্ট থেকে
এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি
বেড়ে ওঠা শব্দেরা
আহ কী জাদু!
আবেগ, ঠান্ডা ও উষ্ণ।
এবং তারা কমবয়েসীই
রয়ে যাবে চিরকালই;
মেয়েটির মতো ক্রমে
বৃদ্ধা হবে না আর...


(২)

এসো তাহলে -
এই কলম নাও,
এই হাত,
এ আত্মা;
এসো তাহলে -
এই কবিকে নাও,
এ হৃদয়,
আর শব্দদের;
এবং নিজেকে হারিয়ে ফেল
কবিতায়...

Wednesday, January 11, 2017

চিহ্নিতকরণ


সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম -

সাদা চাদরে ঢাকা মৃতদেহটা

যখন ওরা বহন করে নিয়ে এল।

বলেছিলে ওটা তোমার।

মানতে রাজি হইনি একেবারেই।

স্পষ্ট বুঝেছিলাম আমি ছাড়া কেউ নই।

এই নিয়ে বাদানুবাদ ক্রমশ:

উত্তপ্ত হচ্ছিল তোমার-আমার।

আর ঠিক তখনই মৃত মানুষটির চোখে

পলক পড়েছিল। একবার-দুবার...

তোমার দিকে ফিরে রাগত কন্ঠে বলেছিলাম,

কি বিশ্বাস হল তো যে আমি বাঁচতেই চাই?

তুমি নিশ্চিন্ত গলায় উত্তর দিলে, কী আশ্চর্য

মরতে তো আমায় তুমিই বার করেছিলে, তাই...

অতএব তর্কের মীমাংসা হল না। এবং

তোমার-আমার মাঝখানে সাদা কাপড়ে ঢাকা দেহটি

চিহ্নিতকরণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল।

লেডি অবলা বসু – নারী শিক্ষায় প্রাসঙ্গিকতা


লেডি অবলা বসুর সঙ্গে আমার কাজের যোগাযোগের শুরুটা একটু অদ্ভুতই। ঠিক এইভাবে যে ওনার কাছে পৌঁছাব তা ভাবিনি। বাংলায় ভ্রমণকাহিনি লিখছি দীর্ঘদিন। আর তা লিখতে লিখতেই পূর্বসূরীদের লেখা অর্থাৎ বাঙালি মেয়েদের লেখা ভ্রমণকাহিনি খোঁজার ইচ্ছা জাগে মনে। কাজটা করতে গিয়ে স্বর্ণকুমারী দেবীর মতো পরিচিত নামের পাশাপাশি অনামী অনেকের নাম যে পাব তা আশাই করেছিলাম। বরং ছোটদের মুকুল পত্রিকায় লেডি অবলা বসুর লেখা ভ্রমণকাহিনিগুলি আমাকে প্রাথমিকভাবে আশ্চর্যই করেছিল। তবে পরে বিষয়টির গভীরে যখন ঢুকেছি মনে হয়েছে তাঁর পক্ষে এটাই খুব স্বাভাবিক ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালি মহিলাদের মধ্যে অবলা বসুই হয়তো সবথেকে বেশি দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলেন। আবার শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহী অবলা বসু ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রসারের জন্য ভ্রমণকাহিনি লেখার জন্য ছোটদের পত্রিকাই বেছে নেবেন সেটাই স্বাভাবিক। কাশ্মীর নিয়ে লেখা তাঁর প্রথম ভ্রমণকাহিনিটি শুরুতেই এই কথা বলেওছেন। সত্যি বলতে কী সেই সময়ের প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে অবরোধবাসিনী বাঙালি মেয়ের কাছে বেড়াতে যাওয়া এবং ফিরে এসে সেই কাহিনি লেখার মধ্যেই নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার বীজটি লুকিয়ে ছিল। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই অবলা বসুর জাপান ভ্রমণ হয়ে উঠেছিল তাঁর নারী শিক্ষা সমিতির প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা।

সত্যি বলতে কী অবলা বসুর বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে শিক্ষিত বাঙালি মেয়েদের বিদ্যাসাগরের পরেই অবলা বসুর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। মেয়েদের জন্য সারা বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সেই সময়ের নিরিখে বেশ কঠিন কাজ ছিল। তবে ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এবং হয়তো স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রী হওয়ায় এই কাজে তিনি যে বাধা পেয়েছিলেন বলে তেমন কিছু জানা যায় না। অথচ মৃত্যুর সত্তর বছরেরও কম সময়ে এই মহিয়সী মহিলার অবদান প্রায় বিস্মৃতিতে চলে যাওয়ার ঘটনা আমার খুবই আশ্চর্য লেগেছে। স্বাধীনোত্তর দ্বিখণ্ডিত বাংলায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত অধিকাংশ স্কুলের যে অস্তিত্ব আর নেই তা যদিও খুব আশ্চর্যের কিছু নয়, কিন্তু যেগুলি এখনও বেঁচে আছে তাদের প্রতিষ্ঠাত্রীকে না জানাটা বেদনাদায়ক। আর সবচাইতে বেদনাদায়ক বোধহয় ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয় যার সঙ্গে তিনি কর্মজীবনের শেষপর্যন্ত যুক্ত ছিলেন তাদের স্পষ্টতঃই সে ঋণ অস্বীকার করা। অবলা বসুর ওপর কাজটি করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বেশ তিক্তই। এই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা তাঁরই অর্থে নির্মিত ভবনের ছাদের নীচে দাঁড়িয়ে বেশ ন্যক্করজনক ভাষাতেই বলেছিলেন যে সেখানে অবলার কিছু নেই। সত্যিই কিছুই নেই অবলা ও জগদীশচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির লাগোয়া তাঁদের বাসভবনে। বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠাতেও অবলা বসুর ভূমিকার কথা প্রায় ধরাই হয় না। ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় থেকে তাঁর নামাঙ্কিত প্লেকটিও নাকি উধাও হয়েছে সার্ধ শতবর্ষে! কেন এই বিস্মৃতি? কোনও উত্তর খুঁজে পাইনি!

একমাত্র নারী শিক্ষা সমিতি অবলা বসুকে স্মরণে ও বরণে রেখেছে তাদের কাজের মধ্যে দিয়ে। সংস্থাটি যত ছোটই হয়ে আসুক কলকাতা ও ঝাড়গ্রামের দুটি ঠিকানাতেই সক্রিয় রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আমার স্বল্প পরিচিতির বৃত্তে বারবারই মনে হয়েছে রীতাদি মানে রীতা ব্যানার্জির কথা। তাঁর একটি কথা বড় ভালো লেগেছে আমার অবলা বসু প্রচার চাইতেন না, আমরাও তাঁর কথা মনে রেখে নীরবে কাজ করে যাই। এটা হয়তো রীতাদির নিজের পরিচয়ও।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে সত্যিকারের শিক্ষিত আলোকময়ী বাঙালি নারীদের পেয়েছি, আজকের শিক্ষিত মহিলাদের ভিড়ে সেই সত্যিকারের মন ও মেধা দুর্লভ। আর মেয়েদের প্রকৃত শিক্ষিত করে তোলার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটা জাতির ভবিষ্যত। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার প্রকৃত চিত্রটি অনুধাবণ করলে অবলা বসুর অসমাপ্ত এই বিরাট কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনীয়তা খুব স্পষ্টই লক্ষ্য করা যায়। আধুনিকতা পোশাকে বা আচারে নয় প্রতিফলিত হওয়ার প্রয়োজন শিক্ষায় ও ব্যক্তিত্বে তথা মানসিকতায়। সাধারণ ঘরের মেয়েরা প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে উঠলে সমাজ থেকে পণ প্রথা, বধূ হত্যার মতো নিয়ত বেড়ে ওঠা সমস্যাগুলি কমতে পারে। অবলা বসুকে আমরা যতই বিস্মৃতির অন্তরালে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করিনা কেন তাঁর প্রয়োজন আজও সমধিক।

শূর্পনখাদের কথা


সন্ত্রাস রাষ্ট্রীয় হোক, অন্ত:রাষ্ট্রীয় বা আন্ত:রাষ্ট্রীয় তার প্রাথমিক শিকার হয় মেয়েরা। প্রাথমিকভাবে সমাজের নীচুতলার মেয়েরা। যাদের অবস্থান নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্তে। যুদ্ধের ক্ষেত্রে অবশ্য এই বাছবিচারটুকু মুছে যায়। আসলে বিষয়টা হল শারীরিকভাবে দূর্বল এবং সামাজিকভাবে গৌণ ভেবে নেওয়া মেয়েদের ওপর দখলের মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিকতার নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ।

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে যেমন তাপসী মালিকের নাম উঠে আসে তেমনি তার সমসাময়িক, পূর্ববর্তী বা পরবর্তী রাজনৈতিক পটভূমিকায় আরো আরো অন্য অন্য নাম। আর নামহীনেরা রাজনীতির সুবিধাবাদ থেকে বেঁচে যায় এইটুকুই যা।

আসলে ওই নামগুলো নামই থাকে, ইতিহাসের জন্মলগ্ন থেকে। দ্রাবিড় কন্যা শূর্পনখার নাক-কান কেটেছিল আর্য লক্ষণ। শূর্পণখা তাই গল্পে রাক্ষসী হয়ে থাকে।

কী আশ্চর্য তারপরেও নাক-কান কাটা, কী পোড়া মুখ নিয়ে শূর্পণখারা বেঁচে ওঠে। পারলে হয়তো ফিরে আসত লাশকাটা ঘর থেকেও। আর তাই যে কোনও সন্ত্রাসেই তাদের নিশ্চিহ্নকরণ রাজনৈতিকভাবেই জরুরি হয়ে পড়ে।

অচ্ছে দিন


বাস থেকে চোখে পড়ল হোর্ডিংটা - বাঁ দিকে কোটপড়া মোদিজীর ভরাট মুখে শান্ত স্নিগ্ধ হাসি। মাঝে গ্যাস সিলিন্ডারের ছবি ও বক্তব্য। ডানদিকে লাল পাড় সাদা শাড়িতে গা ঢেকে শ্যামলা গ্রাম্য বধূর মুখে করুণ হাসিটি।

১) মডেল হলে অভিনয়টি বাস্তবসম্মত হয়েছে, চমৎকার।
২) কিন্তু 'অচ্ছে দিন'-এ একটা শালও জোটেনি বেচারীর! ক্লাস ডিফারেন্স এতটাই প্রকট ও সত্যি। শুধু পোশাকেই নয়, হাসিতেও।

Tuesday, January 3, 2017

তোমারি গান গেয়ে


তিনি চলে যাচ্ছেন।

পথ জুড়ে ঢল নেমেছে মানুষের।

এমনই এক শীতের দুপুর-বিকেলে -

'যদি দূরে যাই চলে তবু

মনে রেখ...'

বালিকা বয়সে ফিরছি -

মায়ের সুরে গলা মিলিয়ে

'সেদিন আমার অঙ্গ তোমার অঙ্গে

ওই নাচনে নাচবে রঙ্গে...'

সকল দাহ কি মেটে, মিটে যায়?

নাকি তাই ফিরে আসা মনে মনে বারবার?

'আসব যাব চিরদিনের সেই আমি...'

রবীন্দ্রসদনে শেষ গানটি গেয়ে উঠে যাচ্ছেন -

সুচিত্রা মিত্র।

২০১৭

নতুন বছর (১)


সেই তো দিন

সেই তো রাত

পুরোনো আর নতুনে,

সেই একই

নেই তফাত

ভালোবাসায় রোদনে।

তবুও ভাবি

নতুন বছর

নতুন সূর্য ভোরবেলার,

আসুক ফের

জনমভর

আশায় হোক মন ফেরার।

এই নিয়েই

বেঁচে থাকা

বন্ধু তোমার, আমাদের।

শুভেচ্ছাতে

ভালো রাখা

আজ এবং চিরকালের।



নতুন বছর (২)


উল্লাসে কি ঢেকে দেওয়া যায় না পাওয়ার যন্ত্রণা?

ঝলমলে আলোর রোশনাইয়ে গোপন অন্ধকারগুচ্ছ?

একদিনের ধোঁয়া ওঠা প্লেট ভরিয়ে দেবে বচ্ছরকার ক্ষুধা!

কালও কেউ রিকশা টানবে, ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে দেবে, বেচবে নিজেকে।

কালও ফুটপাতে কেউ কাত হয়ে ঘুমাবে একাই।

গণধর্ষিতা গায়ে আগুন দেবে, কৃষক গলায় দড়ি।


তবুও নতুন সূর্য উঠবে, আজও পুরোনো চাঁদ

পৃথিবীর কোনও প্রান্তে রুপোলী থালার মতো

জানলার ফ্রেমে তোমার।

এভাবেই বেঁচে ওঠা প্রতিটি নতুন বছরে আরেকবার।



নতুন বছর (৩)


দু:শাসনে দেশ গিয়েছে

দুর্নীতিতে রাজ্য -

মন্ত্রী-আমলা জেল ভরেছে

মরা-ই প্রজার কার্য।

এসেই গেল নতুন বছর

'অচ্ছে দিন' হে 'মিত্রোঁ' -

দিনবদলের চিন্তা ছাড়

নোটবদলই চিত্র।