Friday, February 24, 2017

দুখিনী বর্ণমালা


বাংলা ভাষা আমার মা -

এই বলে ঢাকার রাজপথে গর্জে উঠেছিল

রওশন আরা, সুফিয়া, হালিমারা।

কেউ তা শুনতে পায়নি!

পুলিশের নির্মম হাত টেনে নিয়ে

গিয়েছিল মমতাজ বেগমকে।

একজনও দেখতে পায়নি!

আর এর কিছু পরে

আসামের বরাক উপত্যকায়

বাংলা ভাষা আমার মা - এই ধ্বনিতে

শহীদ হয়েছিল কমলা।

সেও আজ বিস্মৃত।



'ভাইয়ের রক্তে রাঙানো'

একুশে ফেব্রুয়ারির শিশিরভেজা ভোরে

ঢাকার এক পথের পাশে

প্রতিবাদের দুখিনী বর্ণমালা হয়ে

আজীবন শুধু পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে  

পাথরের দুই নারী।


নতুন সময় ওয়েব পত্রিকায় প্রকাশিত - ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Sunday, February 12, 2017

সম্পাদকীয় - আমাদের ছুটি www.amaderchhuti.com

সকলেরই যাওয়া থাকে, একটা গন্তব্য থাকে, ফিরে আসাও থাকে যথাসময়ে। এরই নাম হয়তো ভ্রমণ যা জুড়ে থাকে আজীবন।

হালকা ভিড়। ট্রেন দিয়ে দিয়েছিল বেশ খানিকক্ষণ। অসংরক্ষিত কামরাগুলো ভরে উঠেছে তাই। ইতস্তত দেখতে দেখতে এক জায়গায় সাদর আমন্ত্রণ পাই - আইয়ে মেমসাব। আপকে লিয়ে হি খালি রাখখা হুঁ। অবাক হলেও বসে পড়ি জমিয়েই। ব্যাগপত্তর ওপরে তুলে দিই। সামনে একটি মুসলিম পরিবার। মাঝবয়সী বউটি মিটিমিটি হাসে। চেহারায় তেমন কোনও বৈশিষ্ট্য নেই যে আঁকা যাবে। পাশে বছর নয়-দশের গোলাপী- কমলা সালোয়ার কামিজে চঞ্চল মেয়ে। মায়ের পরণে কালোতে-হলুদে সালোয়ার কামিজ, মাথায় ওড়নার ঘোমটা। স্বামীটির চেহারাও একেবারে সাদামাটা। অল্প কাঁচাপাকা চুল-দাড়িতে ঝিমন্ত মুখ। এপাশে ওপাশে আরও আরও বিশেষত্বহীন মহিলা-পুরুষের মুখ। কেউ ব্যস্ত শিশু নিয়ে, কেউ মোবাইল। কেউবা জানলার দিকে উদাসীন। এরাই হাসিমুখে তাকায়। বসতে দেয় ডেকে। এরাই ভারতবর্ষ।

ট্রেন স্লো হয়। হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে এক হিজড়ে রমণীর। হাততালি আর হাসির বিনিময়ে কিছু টাকা নিয়ে নেমে যায় স্টেশনে থামার আগেই চলন্ত ট্রেন থেকে। ওদিকে কচি বাচ্চা নিয়ে ওই চলন্ত ট্রেনেই উঠে পড়ে আরেক পরিবার - লোকজনের সাবধানতার আর্তনাদের পাশ কাটিয়ে।

মাঝের জংশন স্টেশনে ট্রেন একটু বেশিক্ষণ দাঁড়াতেই ভিড় বাড়ে। এক কাশ্মীরি পরিবার কোলে-কাঁখে বাচ্চা নিয়ে উঠে পড়ে। সিটের ফাঁকে ফাঁকে গুঁজে যায় কয়েকজন। বাকিরা ওপরে বাঙ্কে। এবারে বন্ধ পাখার ওপরে জমছে জুতো-চটি। অনেকবার দেখেছি এ দৃশ্য, তবু মনে পড়ছে কাঞ্চনের লেখা - 'জিস দেশ মে গঙ্গা বহতি হ্যায়'। বৌটি সবার ছোটটিকে কোলে নিয়ে বসে। আলু চিপস বাচ্চার মুখেও দেয়, তারপর নিজের মুখে ফেলে বলে, নুন। ওপর থেকে বড় দুজন চাইলে চোখ পাকিয়ে বকে - চুপ। বাবা আবার তাদের জন্যও কেনে। বিস্কুটে, চিপসে খুশী বাচ্চারা, সবারই হাতে হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়েছে বাবা-মা।

এবারে ঝালমুড়িওলার সঙ্গে গুঁতোগুঁতি লেগেছে পরের চিপসওলার। ঝালমুড়ির বিক্রি দেখে সে বিরক্ত হয়ে পাশ কাটাতে গিয়ে বাধা পেয়ে ট্রেনটি ঝালমুড়িওলার পৈত্রিক সম্পত্তি কিনা সেই বিষয়ক গালাগালি দিয়ে ওঠে। ঝালমুড়িওলা অভ্যস্ত নির্বিকার। ওদিকে টাক দুমাদুম আওয়াজ পেয়ে সচকিত হই। সামনের চঞ্চল মেয়েটি বাবার কোলের ওপর দিয়ে উঁকি দিয়ে আপনমনে হেসে লুটায়। এতক্ষণে তার ও তার মায়ের সঙ্গে ভাবও হয়েছে খানিক। নাম তার মীনা। মীনার মা মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে কলকাতায় বাপের বাড়ি থেকে ফিরছে জম্মুতে নিজের ঘরে। ছেলে আছে সেখানে। মীনা আর তার বাবার খুনসুটি চলছে প্রায় সারাক্ষণ।

তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে মা, হাতে ছোট ঢোলক। সেই ঢোলকের তালে তালে হাতে লোহার রিং নিয়ে শারীরিক কসরত দেখায় বড় মেয়ে। বয়স বছর ছয়-সাত হবে হয়তো। শিশু দেখে অনেকেই তার বাটিতে, হাতে টাকা-পয়সা দেয়। মায়ের কোল থেকে অবোধ ছোটটি হেসে ওঠে একবার।

মীনার মায়ের সঙ্গে টুকটাক কথা হচ্ছে কাশ্মীরি বৌটির। মীনার মায়ের মৃদু কন্ঠস্বর প্রায় শোনা যায় না। অন্যজনের জীবনকাহিনির আভাস পাই পরের বড় স্টেশন আসতে আসতেই - এদিককারই মেয়ে। বাপ-মা নেই। খালা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে এত দূরে। একবার গেলে আবার কবে ফিরব কে জানে! কিছু বলার ছিল না। তবে জীবনে খাওয়া তো বড় কথা নয়, ভালো থাকাটাই আসল। ভারতবর্ষ এবার কথা বলে ওঠে পরিষ্কার বাংলায়।

বৌটি দুরন্ত ছোটটিকে সামলাতে না পেরে হাসতে হাসতে যেন সবাইকে উদ্দেশ্য করেই জোরে বলে ওঠে, ইয়ে বঙ্গাল কা বাচ্চা তো নেহী কাশ্মীরকা বাচ্চা। কাশ্মীরকা আদমী ভি কুছ নেহী শুনতা, বচ্চা ভি। ওদিকে চানাওলা চানা মাখতে মাখতে অমরেশ পুরীর সিনেমার কথা বলে তার ক্রেতাকে। হঠাৎ কানে আসায় কার্যকারণ বুঝে উঠতে পারিনা।

সকালেও খুব ঠান্ডা ছিল। বেলা বাড়তেই ঝলমলে রোদ্দুর। জানলার বাইরে সবুজের সমারোহ, কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, ঝমঝম করে ব্রিজ পেরোল গঙ্গার।

সেও তো অনেকক্ষণ। এখন দুপাশে ধান কাটা আদিগন্ত ন্যাড়া ক্ষেত, আঁকাবাঁকা আল আর মাঝে মাঝে এক একটা ঝাঁকড়া সবুজ গাছ।

সব পেছনে ফেলে এগিয়ে যাই।

কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে…


অন্ধকারে হাঁটছিলাম। দূর থেকে তার লন্ঠনের আলো পথ দেখাচ্ছিল। আলো ক্রমশঃ কাছে আসছিল। লাল-নীল রঙিন আলো-ছায়া কাঁপছিল দেওয়ালে। তারপর কখন যেন অন্ধকার কেটে আলোর রাজ্যে এসে পৌঁছালাম। সে এক অনন্ত আলোর ভুবন। আলোর সেই প্লাবনের উৎস কোথাও খুঁজে না পেয়ে ফিরে তাকালাম নিজের দিকেই। দেখি, আমার প্রাণের গভীর গোপন মহা আপন সেই আলো আমায় ভরিয়ে উছলে উঠে ছড়িয়ে যাচ্ছে দিকে দিগন্তরে।

শুধু সেই লন্ঠনওলাকে আর কোথাও দেখলাম না। বুঝলাম, তার কাজ ফুরিয়েছে এতদিনে। যাবার আগে সে তার বৃষ্টির হীরে-মানিক কুচির অরূপরতন হারটি পরিয়ে দিয়ে গেছে আমার গলাতেই। পথের সেই ক্ষণিক থেকে চির সাথীকে নমস্কার জানিয়ে আমিও এগিয়ে চলি।


ছুটি চাইছিলাম


ছুটি চাইছিলাম।

টেবিলের ওপরে জমে ওঠা

ওষুধের খালি ফয়েল

আর সারাদিন মাথা রাখা

বালিশটার থেকে।

গায়ের চাদরটা রোজই

বদলে নিই দু-একবার।

মাঝে মাঝে পাশবালিসেও

মাথা রাখি বৈকি।

ইটকাঠের দেওয়াল পেরিয়ে

কেবল ভাঙা জিনিসপত্র আর

কাগজ বিক্রির ডাক বিছানায়

শুয়ে কানে আসে।

তিরিশ টাকায় যা নেবে তাইও।

ওরা কেউ ক্রৌঞ্চ দ্বীপের

খবর রাখে না।

সেখানের পাখিরা কবেই তো

হারিয়ে গেছে বন কাটতে কাটতে।

আসলে পাখি অথবা মানুষের

কথা কোনটাই বলছিলাম না।

কোথাও যেতে চাইছিলাম -

ব্যথা থেকে, বিছানা থেকে,

সাদা-রঙিন ওষুধের থেকে।

খুব দূরে কোথাও, তাও নয় হয়তো।

বইয়ের পাতায়, কলমে, বুনে তোলা

শব্দের ফাঁকে ফাঁকেই

ছুটি চাইছিলাম।


জমি কার?


পৃথিবীর জন্ম হল।

জন্মলগ্নে

জমি ছিল সাগর আর নদীর।

তারপর গাছ আর অন্য প্রাণীদের।

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল।

জমিদখলের লড়াই ছিল না,

গুলি ছিল না, মৃত্যু ছিল না।

মানুষের জন্ম হল।

জন্মলগ্ন থেকে

জমি হল মানুষের।

তারপর কৃষকের, শ্রমিকের।

বিরোধ হল, আপোষ হল।

কিছুটা রক্তপাতও।

শাসকের জন্ম হল।

জন্মলগ্ন থেকে

জমি হল রাষ্ট্রের।

সে সীমা টেনে দিল

চাষযোগ্য ও বাসযোগ্য ভূমির।

কতটা জমি গাছের অথবা প্রাণীর।

নদী কিম্বা সাগরের।

রাষ্ট্রের আদেশে তা বাড়ল-কমল,

এবং বদলালোও।

সীমালঙ্ঘনে

গুলি চলল এবং রক্তপাত।

তারপর আবার গুলি, রক্তপাত।

এবং গুলি ও রক্তপাত।

মৃত্যু।




বাউল গান


মানুষ ভজ ওগো সাঁই।

মানুষই পিরিতি দিবে

মানুষেই ঘৃণা করিবে;

তবু মানুষ বিনে

মানুষের গতি নাই।

মানুষ ভজ ওগো সাঁই।

মানুষেই শরীর দিবে

মানুষেই হৃদয় জুড়িবে;

ছুরিও মারিবে তোমায় তাই।

তবুও বুকের গভীরে

তারেই দিও ঠাঁই।

খেপী কয়, ওগো মোর সাঁই

মানুষ ভজ, মানুষ ভিন্ন

মানুষের আর গতি নাই।

বইমেলা - ২০১৭

বিছানায় শুয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ। ওই আর কী খই ভাজা।


ছোট থেকেই বছরভর জীবনে আমার একটাই উৎসব - বইমেলা। তার জন্যই দিন গোণা। নতুন জামার চেয়েও আদরণীয় নতুন বই। শেষদিনে বিজয়া দশমীর চেয়েও মনখারাপ। উনিশ বছর আগে ওই শেষদিনটাতেই বই পড়ুয়া দুজনে একসঙ্গে চলাটাও শুরু করেছিলাম। যদিও আমাদের ততোধিক বই পড়ুয়া কন্যার মন্তব্য, বেশ কয়েকটা বিয়ে তো দেখলাম ইদানীংকালে, তোমাদের ছবি দেখলে মনেই হয় না যে তোমরা আদৌ বিয়ে করেছিলে। কী সব কাগজে সইটই করছিলে, তা বইমেলায় গিয়েই তো করতে পারতে সেটা! বলি, তুই তো ছিলিস না, এখন হলে তাই-ই করতাম। তা এবার সেই শেষদিনেও যেতে পারলাম না।

তবে বইমেলা যা দেখলাম, যেটুকু দেখলাম তাতে সর্বত্রই সদ্য ঘটে যাওয়া অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের থুড়ি নোট বদলের দীর্ঘশ্বাস চোখে পড়ল বেশি করে। শুয়োরের খোঁয়াড়ের কিছুটা উন্নতরূপের ঢাকা দেওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্টলগুলোতে হাঁপিয়ে উঠছিলেন প্রকাশনার লোকজনই। প্রতি বছরের চেনা স্টল খুঁজে পাচ্ছিলেন না পাঠকেরাও। বিক্রি মার খাচ্ছিল উভয়তই। 'ট্রাভেল ছুটি', 'জল-জঙ্গল'-এ কিছুক্ষণ কাটানোয় বোঝা গেল এই ছবি। বই সাজাতে গিয়ে র‍্যাকটাই কিমকর্তব্যবিমূড়ের মতো খসে পড়েছিল সে কথা হাসতে হাসতে বলছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্মি। এবারে নিজেদের মতো স্টল সাজাতে পারেনি বলে উর্মি, দেবলীনা সবারই বেশ মনখারাপ ছিল শুরুতে। তবে শেষবেলায় যখন বইয়ের বাক্স ঘাড়ে নিয়ে সকলের প্রিয় টিনটিনদা ফিরছিল, ফেসবুকে হাসিমুখ ছবিটা দেখে মনে হল, সব ভালো যার শেষ ভালো। মেশিন বিগড়েছিল একদিন 'ফ্যামিলি বুকশপ'-এ। মাসের শেষে মেয়ের পছন্দের বই না নিয়েই ফিরতে হয়েছিল সেদিন। পরে একদিন 'গাংচিল'-এর ওখানেও মেশিন বিগড়েছে দেখলাম। নোটকাণ্ডে বিক্রি যে মার খাবে সে আশংকা কিছুটা হলেও সত্যি অধীরদার কথাতেই বুঝতে পারলাম। যদিও নিজের বইয়ের কপি চেয়ে বার দুয়েক বকুনি খেয়েছি। তো কী আর করি, বাড়িতে থাকা নিজের বইয়ের একমাত্র কপিটাই বয়ে বয়ে বইমেলায় 'ট্রাভেল রাইটার্স ফোরাম'-এ রতনদাকে দিয়ে এলাম। আরে স্বয়ং রতনলাল বিশ্বাস যখন তাকের মাথায় 'অবলা বসুর ভ্রমণকথা' দেখিয়ে বলেন, তুমি অসাধারণ কাজ করেছ দময়ন্তী, তখন তো 'আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত' নাচতে নাচতে দিতেই হয়। চেনা নামের মধ্যে বইমেলায় এবার একেবারেই অনুপস্থিত 'স্বর্ণাক্ষর' আর 'পরশপাথর''কালান্তর'-এর স্টলে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বলে আসাটা সেই চাকরি জীবন থেকেই আমার কেমন জানি অভ্যেস।

বাংলা বই-পত্রিকার জগতে গোষ্ঠী ব্যাপারটা চিরকালই খুব চালু। এ যাবত একেকটা প্রিন্ট মিডিয়াকে ঘিরে গোষ্ঠী, কিছু প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনাকে ঘিরে গোষ্ঠী এবং লিটল ম্যাগাজিনের ছোট-বড় নানান গোষ্ঠী ছিল। মূলত: গোষ্ঠীর লোকজন পরস্পরের বই কেনেন, পিঠ চাপড়ান। আবার কেউ কেউ পত্রিকার নামে অথবা নিজ গুণেই গোষ্ঠীর বাইরে বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছে যান। গোষ্ঠী সাহিত্যে এ বছরের নতুন সংযোজন ফেসবুকের বেশ কিছু গ্রুপ ও তাদের প্রকাশনা। এই সূত্রেই আরও একটি বিষয় যা চোখে পড়ল যে, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের এই বাজারেও বেশ কিছু সম্পূর্ণ নতুন প্রকাশনা দামী কাগজ-কভারে ঝকঝকে প্রোডাকশন নিয়ে বাংলার মরে আসা বাজারে নেমেছে। তাহলে কি কলেজ স্ট্রিট বই মার্কেটের আপাত যে ভগ্ন দশাটা আমরা লেখক-পাঠক দেখতে পাই, যার জন্য প্রাপ্য টাকাটা চাইতেও দোনামোনা করি তার সবটা ঠিক নয়?

এইসবই ভাবছিলাম ঝিমোতে ঝিমোতে। আসলে আমাদের মেয়েরা যখন বড় হবে, বাংলা সাহিত্যের জগতটা তখন ঠিক কোথায় পৌঁছাবে, কেমনই বা হবে সেই বাঙালি পাঠক, ভাবছিলাম। ওই যে খই ভাজা।


মিস পেরিগ্রিনস হোম ফর পিকিউলিয়ার চিলড্রেন - দু-চার পাতা উলটে

ছবি পরিচালনার ডিগ্রি এবং আন্টিক শপ আর ফ্লি মার্কেট খুঁজে পাওয়া পুরোনো ফটো জমানোর সখ এই ছিল র‍্যানসম রিগের ঝুলিতে। পুরোনো এইসব ছবিগুলির অনেকটাই ছিল নানা কারণে বেশ অদ্ভুতই। নিজের সংগ্রহের পুরোনো ছবি ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ করেই খেয়াল করেন, এর বেশিরভাগ ছবিই ছোটদের! তাঁর মনে কৌতূহল জমে ওঠে এইসব ছবির শিশুদের কাহিনি জানবার। আর তা সম্ভব নয় বলেই মনে হয় নিজেই নাহয় গল্প গেঁথে তুলি। ধারাবাহিক এই সিরিজের প্রথম বইটিতে লেগেছে মাত্র ৫০ টি ফটো। আর তার জন্য ঘেঁটেছেন এক লক্ষ ফটোগ্রাফ। এই অধ্যবসায় না থাকলে ছোটদের জন্য সেই মাপের লেখা যায় না হয়তো।

শুধু অধ্যবসায়ই নয়, থিমের বৈচিত্র‍্যর কথাও বারবারই বলতে হয় ইংরেজিতে লেখা ইয়াং আডাল্ট জাঁরের ক্ষেত্রে। এই কাহিনির শুরুতে 'প্রোলোগ' অংশে লেখক গল্পের মূল চরিত্রের ঠাকুরদাদার জীবনের কথা নিয়ে এসেছেন। আসলে সেই গল্পটা জার্মান হানায় দেশ থেকে পালিয়ে আসা এক ইহুদি শিশুর কাহিনি। যে হারিয়ে ছিল আত্মীয়স্বজন সবাইকেই আর মানুষ হয়েছিল এক অরফানেজে। অথচ বৃদ্ধ যখন নাতির কাছে গল্প করেন তখন তাঁর কল্পনায় জার্মান সেনারা হয়ে ওঠে 'মনাস্টার' আর অরফানেজ রূপকথার পুরী, যেখানে নানান বয়সী ম্যাজিকাল শিশুরা তাঁর সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই কাহিনি এই গল্পের পশ্চাৎপট মাত্র। মূল কাহিনির নায়ক আজকের এই ছেলেটি। সেই গল্প সবে শুরু করেছি পড়া।

জার্মানদের হাতে ইহুদী নিধনও হতে পারে একটি কিশোর উপন্যাসের পটভূমি! আর পুরোনো ফটোগ্রাফ হতে পারে গল্প লেখার ইন্ধন! সত্যি কুর্ণিশ লেখককে। বইটির আরেক আকর্ষণ ফটোগ্রাফগুলি।

এবারেও বইমেলার বইপড়া শুরু মেয়ের সংগ্রহ উলটেই। আমাকে সমৃদ্ধ করার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদটা সবার আগে প্রাপ্য ওরই।