পুরনো কবিতারা

ছোটবেলার টুকিটাকি লেখা

সাত বছর বয়সে লেখা আমার প্রথম ছড়া -

    মশা

আমরা মশা
রক্তচোষা
সাতশ জনে
সবাই মিলে
যাই ভোজনে

ছোটবেলায় সবচাইতে বেশি কবিতা লিখেছি দশ-এগার বছর বয়সে -


দশ বছর বয়সে লেখা দুটি কবিতা -

      এক জীবনের দুই যাত্রী

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
                               দেখি
একই জীবনের দুই যাত্রী
                      চলেছে দুদিকে -
কান্না পেলে দেখি
                 সেও চায় কাঁদতে
কিন্তু তার বুক ভেঙে গেলেও
                 সে পারে না...
পারে না সে কাঁদতে
জানে না সে হাসতে
চেনে না সে মৃত্যুকে।
আমি তো থাকব না একদিন...
                সে কিন্তু অমর
তারই অন্তরে যে রয়েছি আমি।


              চিঠি

                   ছন্নছাড়া অবস্থা,
রুমালটা পড়ে রয়েছে
                           এককোণে।
কি যে হবে
                  ভেবেই পাচ্ছি না।
খবর এসেছে কালকে
               রুমুর ভীষণ অসুখ
এখন তখন অবস্থা।
চিঠি লিখছি বেলাকে,
               মানে রুমুর মাকে।
হঠাৎ খবর এল
              মারা গেছে রুমু।
খা খা দুপুরে শুধু
              শোনা যায় একলা কাকের ডাক
                                  কা...কা...কা...।

এগার বছর বয়সে লেখা দুটি কবিতা -

তারমধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের এই কবিতাটা -

             রোদ

সবজে শ্যাওলা ধরা সিঁড়ির ওপর
একফালি জীর্ণ হলুদ রোদ খেলা করে -
হঠাৎ হঠাৎই হয়ে যায়
লম্বাটে মুখের মতন
কখনোবা ছোট্ট টিপের মত।
মঝে মাঝে লুকোচুরি খেলা
মাঝে মাঝে থমকে যাওয়া যেন
ধীরে ধীরে রোদ সিঁড়ি ভেঙে ওঠে -
এক ঝলক হালকা হাসি
ছাদের ওপর মিলিয়ে যায়
রোদ।



       ওরা এসেছে

ওই দেখ,
কালো শাড়ি পরনে, চোখে আশ্বাসের বাণী নিয়ে
                       সে এসেছে।
             সে মৃত্যু।
            চেয়ে দেখ,
দাঁড়িয়ে আছেন
            আমার পূর্বপুরুষেরা।
চুপ কর, শক্ত হও
            ওরা আমাকে নিতে এসেছে।
আমি আজ নিজের মধ্যে
            নিজে ফিরে যাব।


প্যারোডি করতে বেশ ভালোলাগে আমার। করি আবার ভুলেও যাই। ছোটবেলার খাতায় রয়ে গেছে একটা -

অঙ্ক কষতে একলা হাতে
নিবেছে মোর বাতি
ঘুম এসেছে ওরে ওরে
ঘুম এসেছে ওরে এবার
ঘুমকে পেলেম সাথী।
যেভাবেত করেছিলাম
মিলে যেত তাতে
আবার এখন করতে হবে
রাত ফুরালে প্রাতে।
এমন সময় আলো এল
মুখের হাসি মিলিয়ে গেল
হঠাৎ দেখি ঢুকছে বাবা

মিষ্টি নিয়ে সাথে।

4 comments:

  1. প্যারোডিটা অসাধারণ, জানিনা ক'জন অরিজিনালটা ধরতে পারবে বা আদৌ জানে। তাহলে কিন্তু অরণ্যে রোদন হয়ে যাবে। এক জীবনের দুই যাত্রী তে কবির বয়স নিয়ে একটা সংশয় রয়েই গেল। দশ বছর বয়সের কবিতায় মৃত্যু স্থান পেয়েছে----এবার দেখছি লালমোহনবাবুর ভাষায় তোমায় কালটিভেট করতে হচ্ছে।

    ReplyDelete
  2. সব সত্যি কিন্তু সুবীরদা। ওই বয়সে আমার খুড়তুতো বোন তানা মারা যায় ব্লাড ক্যানসারে। শিশু মনে সেই প্রথম মৃত্যুর ধাক্কা। শুধু একলা কাকের ডাক ওই দুটো লাইন অরুণ কাকা মানে কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় এডিট করে দিয়েছিলেন। কখনো বাড়িতে এলে সেইসময়ের খাতা দেখাব। এখন বেশ লাগে দেখতে। মোটামুটি এগারো বছরের মধ্যে ভালোবাসা, মৃত্যু কোনো বিষয়ই বাদ ছিলনা কবিতায়। পরে আরো কিছু লেখা দেব ওই বয়সের।

    ReplyDelete
  3. এবার তাহলে বলতেই হচ্ছে---এতো মেয়ে মেয়ে নয় দেবতা নিশ্চয়।

    ReplyDelete