Friday, July 31, 2015

সাম্রাজ্যবাদ বলছি, তোমরা শোনো


পৃথিবীতে কালো চামড়ার মানুষ বড় বেড়ে গেছে।
অথচ আমরাই তো সাদা, সুন্দর, আমরাই শক্তিমান।
পৃথিবীর দখল তাই থাকবে আমাদেরই হাতে।
জমির দখল, অর্থের দখল, সুখ
এমনকী শান্তিও থাকবে আমাদেরই হাতের মুঠোয়।
অতএব ওদের মেরে ফেলো।কিন্তু এমন করে মেরো
যাতে আমাদের হাতে কোনো রক্তের দাগ না লেগে থাকে,
এমন করে মেরো যাতে আমাদের কাপড়ে না লাগে রক্তের ছিটে।
যাকে বলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা।

এই নাও নতুন অস্ত্র - সন্ত্রাস।
তাবলে পুরোনো অস্ত্রগুলোও রেখো, কাজে লাগবে -
লোভ, মগজধোলাই আর বিভেদ।
ওই শেষটিই হল আসল -
সবরকমভাবে ওটিকে সার্থক কর।
ধর্মে এবং জিরাফে থুড়ি লোভে।
ওদের কয়েকজনকে বেশ সুবিধা দাও।
যাতে আমাদের পায়ের তলায় বসে
বাকীদের ছোটলোক বলে ঘৃণা করতে পারে।
আর ওই কী আছে ওদের ধর্মটর্ম,
লাগিয়ে দাও দুদলে পাঞ্জা লড়াই।
আমরা গ্যালারিতে বসে বেশ ভালো করে উপভোগ করব।
সমর্থন তো করব নিশ্চয়, নাহলে জমে নাকি?
একদলকে প্রকাশ্যে আর অন্যদলকে গোপনে - নারদ নারদ।

তারপর ওরা নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করে
এ ওকে বোমা মেরে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সব একেবারে রাতারাতি সাফ।
দরকার হলে শান্তির জন্য আমরাও কোথাও কোথাও একটু
বড় বোমটোম ফেলব, কিছু মানুষকে নিঃশব্দে সরিয়ে দেব,
তবে সেসব নিয়ে ভাবার কিছু নেই, ও ব্যক্তিগত ব্যাপার।
শাসন করার জন্য তো কিছু বোকা, বাধ্য, আর বংশদবদ রয়েই যাবে।
তারপরে আমাদের একছত্র বাজার, সাম্রাজ্য, সুখ, শান্তি...।

Thursday, July 30, 2015

হত্যা

হত্যাকে হত্যাই বলি আমি
সে রাষ্ট্রই করুক অথবা মানুষ।
অন্ন আর শিক্ষা দেওয়ার কথা ছিল যার -
কথা ছিল দেবে আশ্রয় আর শ্রমের মূল্য।
তার বদলে মৃত্যু দেবে সে কোন অধিকারে?

বাংলাভাষা - আমার মা

আমি ঠিক জানিনা আজকাল
তোকে বেশি ভালোবাসি না বাংলা ভাষাকে?
জানি তোর কলমের প্রতিটি রক্তবিন্দুর অনুপ্রেরণা একমাত্র আমি।
অন্য কোন নারীকে ভুল বানানে অনুপ্রেরণা বলে ডাকলে
খুব রাগ হয়। বাংলা ভাষা না আমার কার জন্য জানিনা অবশ্য।
কতবার তোকে বলেছি, '', '', '', '
এমন অনেক সাধারণ উচ্চারণে ভুল আছে তোর,
এখনো শিখিসই নি চন্দ্রবিন্দু 
কোথায় দেওয়া যায় আর কোথায় যায় না।
অথচ জেদ করে ভুলটাই লিখবি। যেন ছোটবেলার
সেই মায়ের বারণ শুনবনা গোছের নাছোড়বান্দা বায়না।
মা কি কারো চিরকাল থাকে রে?
কিন্তু মায়ের কথা ভোলাও যায় না দেখিস।
বাংলা ভাষাও যে আমাদের মা।

Wednesday, July 29, 2015

সম্পর্ক

মানুষে মানুষে সম্পর্ক অনেকটা চৌরাশিয়ার বাঁশির মতো। যার সঙ্গে যে সুরে বাজে যখন। বাস্তবে কিন্তু মানুষ সম্পর্ককে হয় আছে বলে গায়ে মেখে থাকতে চায়, নয় নেই বলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায়। অথচ একেকটা সম্পর্কে কখনো ভেসে থাকা যায়, কখনোবা ডুবে যাওয়া যায়...। এভাবেই সম্পর্কেরা ছুঁয়ে না ছুঁয়েও বেঁচে থাকতে পারে। শুধু যদি মানুষ সেই বিশ্বাসটা রাখে পরস্পরের প্রতি। অনেকটা সেই অবন ঠাকুরের মনের সবুজ খাতার মতো। আসলে কেউ হারায় না।

সম্পর্ক মানে ছুঁয়ে না ছুঁয়ে বাঁচা।
হিসেবের কড়ি না গুনেই।
হয়তোবা জমা-খরচ মিলবে না কিছুই।
হয়তোবা সবটাই খরচ -
জমার খাতায় নিরেট একটা শূন্য।
তাতেই বা কী যায় আসে?
এতো আর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নয় যে
না থাকলে সর্বনাশ।
এতো থাকা বা না থাকা দুটোই সর্বনাশ,
অথবা নতুন করে বিপদের কোনো আশঙ্কাই নেই আর।
আর এইসব না ভেবে কাটালে আরো ভালো -
কারণ ভাবতে গেলে জীবনটাই কখন যাবে ফুরিয়ে,
তখন এমনিও শূন্য ছাড়া উভয়পক্ষের আর কীই বা থাকবে হাতে?

পিছন ফিরে তো কেউ তাকায় না

কলকাতার রাস্তায় মাঝে মাঝে দেখি তোকে -
মেট্রোয় হয়তো ব্যস্ত কথোপকথনে;
কখনোবা ট্যাক্সির পিছনের সিটে
খেয়াল করতে না করতেই ক্রসিং পেরিয়ে গেছিস।
কখনো দেখেছি পাশের বাসের জানলাটা
আমার জানলার পাশ দিয়ে ডানা মেলে চলে গেছে যখন -
হাতে বই, অথচ চোখে অন্যমনস্ক দৃষ্টি।
মনে মনে ভেবেছি ঠিক স্টপেজে নামলে হয়!

ইদানীং কলকাতার রাস্তায় মাঝে মাঝেই তোকে দেখতে পাই -
চৈত্রের বিকেলে যখন লাল পলাশ বা কৃষ্ণচূড়ার আগুন
চোখে পড়ে যায় কংক্রিটের এই শহরের পথে।
বৃষ্টিতে দেখেছি লাল-নীল ছাতাদের ভীড়ে,
অথবা মনকেমন করা জুঁইয়ের সুবাসে।
শরতে-হেমন্তে-শীতে-বসন্তে ঋতুর মতোই
বদলাতে থাকিস তুই কলকাতার পথে পথে।
আর আমি তোকে দেখতে দেখতে একলা পেরিয়ে যাই ক্রসিংগুলো।

শেষ যেদিন চোখে পড়ল সেদিন ঠিক আমার আগে আগেই হাঁটছিলি তুই -
একা, মাথাটা ঝুঁকিয়ে, পাটা যেন টেনে টেনে -
যেন কী একটা অসহনীয় ভার চেপে বসেছে শরীরে,
যেন গভীর এক বেদনা গলা টিপে ধরেছে তোর;
শেষ বিকেলের রাঙা আলো পড়ছিল ক্লান্ত কপালে, চোখের পাতায়, চিবুকে।
কোনোদিনই পিছু ডাকিনি তোকে, সেদিনও ডাকলাম না।
সব মানুষকেই নিজের ক্রুশ তো নিজেকেই বয়ে নিয়ে যেতে হয়।
সকলেরই কষ্ট হয়।তবু যে সামনে থাকে তার ব্যথা বুঝতে পারে অন্যে।

আসলে পিছন ফিরে তো কেউ তাকায় না।


ঝড়ের নাম কেন মানুষেরই নাম হয়ে থাকে

অনেক বয়স জমেছে শরীরের ভাঁজে
চোখের পাতায়, চিবুকে।
চলে তো যেতেই হবে একদিন -
যাবও।
তার আগে পৃথিবীর এই
সুন্দর শ্মশানে তোমার ওষ্ঠে
কিছু প্রিয় দাগ রেখে যাব।
আমিও যাব একদিন -
চলে যাব আকাশ, নদী, পাহাড়
আর জলপ্রপাতের ডাকে।
যেখান থেকে ফিরে আর আসে না কেউ।
সেদিন জানবে তুমি -
ঝড়ের নাম কেন মানুষেরই নাম হয়ে থাকে।

Tuesday, July 28, 2015

নারী এবং স্বাধীনতা - ২

ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ইংল্যান্ডে গিয়ে নারী স্বাধীনতার চেহারা দেখে ভারতীয় নারী, বিশেষ করে অবরোধবাসিনী বাঙালি নারীদের জন্য মন কেঁদেছিল ঊনিশ বছর বয়সী কৃষ্ণভাবিনী দাসের। ঘরের বাইরে সেই তারও প্রথম পা রাখা। এই ভ্রমণ তাকে সমাজচ্যূত করেছিল। চিরবিচ্ছেদ ঘটিয়েছিল একমাত্র কন্যাসন্তানের সঙ্গে। অথচ কৃষ্ণভাবিনী দাস কিন্তু ইংরেজ নারীদের প্রশংসার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনাও করেছিলেন।

ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রী হয়েই দিব্যি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতেন অবলা। কেউ তাঁকে মাথার দিব্যি দেয়নি নারী শিক্ষার বিরাট কর্মকাণ্ড করতে। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় অজস্র মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে অবলার উদ্যম এবং অর্থব্যয়। যদিও তার অধিকাংশই হয়তো এখন আর নেই, যেকটা আছে তার থেকেও প্রায় মুছে গেছে অবলার নাম। নারী শিক্ষাসমিতি তাদের স্কুল এবং কাজ নিয়ে আজও নিভৃতে তাঁকে স্মরণ করে। আমরা শিক্ষিত (!) বাঙালি মেয়েরা তাঁকে একেবারে ভুলে গেছি। অথচ বাঙালি নারীর শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের পরেই উচ্চারিত হওয়া উচিত ছিল অবলার নাম।

তাঁরই অর্থে তৈরি ভবনে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন - আমাদের কাছে অবলার কিছু নেই টেই...হ্যাঁ একেবারে এই ভাষায়। মনে হয়েছিল নেহাত কলিযুগ, নাহলে ধরণী দ্বিধা হত ঠিক। প্রায় সারাজীবনটাই অবলা দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানটির পিছনে - শ্রম, অর্থ সব।

স্বর্ণকুমারী দেবীও স্বামীর অর্থে দিব্যি খেয়ে ঘুমিয়ে বেড়িয়ে দিন কাটিয়ে দিতে পারতেন। মানে তাঁর প্রথম ভ্রমণ কাহিনি 'প্রয়াগযাত্রা'-র শুরুটা পড়ে বুঝেছিলাম যে শুধু লেখা বা সম্পাদনা নয়, আলসেমিতেও ইনিই আমার গুরু। তিনি কীনা বছরের পর বছর 'ভারতী' পত্রিকার সম্পাদনা করে গেলেন। সেকালের বিধবা নারীদের কল্যাণে তৈরি করলেন একাধিক প্রতিষ্ঠানও।

লক্ষ্মীমণি-রমাসুন্দরী থেকে সরলা-গিরীন্দ্রনন্দিনী মুক্ত মনের আধুনিক নারী ঊনিশ শতকে অনেকেই ছিলেন। যাঁরা বাকী অবরোধবাসিনীদের সূর্যালোক দেখাতে হাত বাড়িয়েছিলেন। তাঁদেরই উত্তর নারী আমরা - শিক্ষাকে রাখলাম কাগজে-কলমে আর আধুনিকতাকে পোশাকে-আষাকে। আর মুক্ত মনের আইডিয়াটা স্রেফ গুলিয়ে গেল টিভি সিরিয়াল দেখতে দেখতে।


নিজেরাই আবার ফিরছি অন্ধকারে। আলো দেখাব কাকে?

নারী এবং স্বাধীনতা

দৃশ্য এক -
মেট্রোয় যাওয়ার পথে পাশে বসেছিল দুই বিদেশিনী। আমার বাঁপাশে একজন, তার পাশে এক বাঙালি মহিলা, তাঁর ওপাশে আরেক বিদেশিনী। মনে হল হয়তো দুই বান্ধবী হবে। মনে মনে ভাবলাম, আহা দুজনে মিলে কেমন একা একা (!) ভিনদেশ দেখতে এসেছে। চুপচাপ বসে বাঙালিনীর সঙ্গে তাদের আলাপচারিতা শুনছিলাম। সদ্য আলাপ না পূর্বালাপ বুঝলাম না। দুই মেয়েই একদম সাজেনি। লম্বা ঢোলা প্যান্ট আর গেঞ্জিতে স্বচ্ছন্দ সুন্দরী। দীর্ঘ সোনালি চুল কোনোমতে কালো গার্ডারে আটকানো। চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক, নখে নেলপালিশ, বাহারি গয়না এবং নানারকম পোশাকের অসংখ্য বাঙালি মেয়ের মাঝে নিরাভরণ দুজনে আলো হয়ে ফুটেছিল। আমার পাশের মেয়েটিকে দেখে তো মনে হচ্ছিল যেন কোন গল্পের বই থেকে উঠে এসেছে। যাক্‌, তার হাতের বড় হয়ে যাওয়া ঈষৎ হলুদ নখের দিকে তাকিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হলাম আমার হাত সম্বন্ধে। সেগুলোরও একই দশা কীনা। সাতদিনের জিনস আর দিন তিনেকের জামা আর কোনোমতে আঁচড়ানো চুল নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র ঘাবড়ায়িত ছিলাম না অবশ্য।ওদের সঙ্গে সামান্যই আলাপ হলো একদম নামার সময়। বাঙালি মহিলাটি আগে নেমে যাওয়ায় আমার ধারণাই হয়েছিল যে টালিগঞ্জ এলে ওরা বুঝতে পারবে না। কথাতেই বুঝেছিলাম টালিগঞ্জে নামবে। হলোও তাই। তবে আমি ওদের নামিয়েই ছাড়লাম।

দৃশ্য দুই -
মেট্রোয় ফেরার সময় আমাদের সামনের মহিলা সিটের দুটি চরিত্রের দিকে চোখ পড়ল। একটি তরুণী মেয়ে আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা, তার একজন পরেই আরেক তরুণী পরণে ছোট শর্টস। মেয়েকে বললাম, ছবি তুলে রাখার মতো দৃশ্য - এই হচ্ছে আমাদের নারী স্বাধীনতার বাস্তব। মেয়ে অবশ্য তখন আমার কাছে আনেডুকেটেড আর ইললিটারেটের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইছিল। আমিও ভাবছিলাম...।

Monday, July 27, 2015

ভালোবাসা

কখনো আঘাত করলেও
ওকেই ভালোবেসো।
বিশ্বাস কোরো শেষমুহূর্ত পর্যন্তই।
অন্যসময় অনেক সুখ দিয়েছিল বলে।
ওরই নাম তো ভালোবাসা।

Friday, July 24, 2015

বর্ষা (২)

আমি যখন চাইছি ভীষণ ঝড় হোক -
হোক তো দেখি তুমুল এবং তোলপাড়।
তখন কেবল মৃদু হাওয়া বুলিয়ে যায় 
চোখের ওপর, মুখের ওপর কোমল হাত।
আমি যখন চাইছি ভীষণ বৃষ্টি হোক -
ভাসুক নদী-সাগর এবার বন্যাতে
তখন শুধু বৃষ্টি ছিটে হাতের পর
মেঘ কেটে যায় মেঘ ভেসে যায় দিগন্তে।

বর্ষা তোকে চাইতে গেলেই হোস উধাও!
করবি দেখা অন্য দিন ফের কোথাও?

বর্ষা

রাতের আঁধারে বৃষ্টিফোঁটার সঙ্গে ঝরে যায়
পৃথিবীর গোপন সব রাগ-অভিমান,
প্রিয় সঙ্গম অভিলাষ।
ধরিত্রী মায়ের মতো কোল পাতে
কোমল হয়ে ওঠে সুবাস।
গাছেরা সবুজ হয় -
স্তন্যপানে পরিপুষ্ট আপন সন্তান।

বিষণ্ণতা

বিষণ্ণতার মেঘ ঢেকেছে রোদ্দুরে।
বিষণ্ণতার অসুখ হৃদয় জুড়ে।
বিষণ্ণতায় নত হয়ে কেউ হাঁটে।
বিষণ্ণতাই গলায় দড়ি বাঁধে।
ছোঁয়াচ লেগেছে আমাদেরও দুনিয়ায় -
শিশুরাও আজ বিষণ্ণ ডুবে যায়।

বিষণ্ণতা -
সারা দুনিয়ার অসুখ চলছে ভারী -
ভালোবাসা পেলে তবে তো সারাতে পারি।

কবে ভোর হবে বলতো?

বৃষ্টি, বিরহ আর বিষণ্ণতার শেষে
কবিতার হাতে লেগে থাকে -
অনেকটা রক্তের দাগ 
আর কিছুটা চোখের জল।
কবে ভোর হবে বল?

পৃথিবী তোর জন্য

নতুন একটা তরুণ পৃথিবী খুঁজে পেলে
তোর জন্য এক মুঠো মাটি নিয়ে আসতাম -
একমুঠো নির্বিষ মাটি, এক আঁজলা নির্মল জল,
এক টুকরো ধোঁয়াহীন আকাশ।
আর ওখানে যদি সত্যিকারের
কিছু মানুষ খুঁজে পেতাম -
নির্মল হৃদয়, সরলতা আর ভালোবাসা
কুড়িয়ে আনতাম যতটুকু পারি।
আমার পৃথিবী, তোকে এতো ভালোবাসি
অথচ আজ প্রতিমুহূর্তে বিষাক্ত আর ধূসর
হয়ে যেতে দেখি বড় অসহায় চোখে।
আমার সাধ্যতো সামান্যই।
তবু আরেকটা সবুজ পৃথিবী
খুঁজে পেলে তোর জন্য
অন্তত কিছুটা রঙ নিয়ে আসতাম।

রবি ঠাকুর - আমি তোমার সাধারণ মেয়ে।

ওগো রবিঠাকুর,
আমি তোমার ওই রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা নই,
সাধারণ মেয়ে।
দেবীটেবি হয়ে না দাঁড়ালে
আজকাল কেউ পুজো করে না আমাদের।
হেলা - সে আর নতুন কথা কী?
তোমার গানের কথাগুলো তাই
একটু বদলে নিয়ে গাই এখন  –
আদর করে মোরে শৃঙ্খলে বাঁধিবে সংসারে-সমাজে
সে আমি নহি।
নারী বলে  মোরে লাঞ্ছনা করিবে দেহে-মনে
সেও আমি নহি।
'পার্শ্বে রাখ যদি সঙ্কটে সম্পদে
সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে
সহায় হতে
তবে পারিবে চিনিতে আমারে।
আজ শুধু করি নিবেদন'
রবি ঠাকুর,
আমি তোমার সাধারণ মেয়ে।

Thursday, July 23, 2015

খিলখিল্লের মুল্লুকেতে থাকতো নাকি দুই বেড়াল, একটা শুধায় আরেকটাকে তুই বেড়াল না মুই বেড়াল?


যে দল ক্ষমতা হারায় আর যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের মধ্যে তফাতটা অনেকটা আয়নায় মুখ দেখার মতো। মানে নিজেকেই দেখছি, একটু উল্টিয়ে। যেন পরিবর্তন চাওয়াটা মানুষের খুব অপরাধ হয়ে গিয়েছিল, তাই এখন প্রাণপনে প্রমান করার চেষ্টা যে কী সুশাসনেই তোমরা ছিলে আর সব বোমাবাজি, ধর্ষণ, খুন আধুনিক কাব্য-কাহিনি। কিছু খারাপ লোক চিরকাল আছে যারা ক্ষমতা বদলের সঙ্গে রঙ বদলায়। এই খারাপটা এখন সমাজের উঁচুতলা থেকে নীচুতলা সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। তারা পেটে ভাত থাকলেও খুন করে, না থাকলেও। কখনো নিজে করে, কখনো অন্যকে সুপারি দেয়।

আমি রাজনীতি কিচ্ছু বুঝি না। ভোট দিই না কতদিন মনেই পড়ে না। গতকাল খ্যাতনামা অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের একটা কথা হঠাৎ চোখে পড়ে ভারী পছন্দ হল। যার বাংলা করলে মোটামুটি দাঁড়ায় – রাজনৈতিক নেতাদের ডায়াপারের মতোই একটু অন্তর বদলানো দরকার। সত্যিই তাই।

রাষ্ট্র কিছু অপরাধীকে মদত দেয়, যারা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। কিছু অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলায় নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে। কিছু নিরপরাধীকেও ফাঁসিতে ঝোলায় তারও আবার খুঁজলে নানান ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। এটা রাজ্যে রাজ্যে দেশে দেশে কালে কালে চিরকালীন কাহিনি।

আসলে গণতন্ত্র হল সোনার পাথরবাটি – কাগজে কলমে থাকে কিন্তু দেখা যায় না। রাজতন্ত্রে তবু নির্দিষ্ট শত্রু ছিল মানুষের যার বিরুদ্ধে লড়াই করা যেত। আর গণতন্ত্র তো আমারই শিল, আমারই নোড়া, আমারই ভাঙে দাঁতের গোড়া।

বোঝো ঠ্যালা।

আমি পরিবর্তনেও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন বিকল্পেও বিশ্বাসী নই।

দোষ কারো নয় গো মা...আমি সখাত সলিলে ডুবে মরি...

রুমাল থেকে বেড়াল হলাম কীভাবে


ছিলাম ‘ধর্ষিতা’। তাও একরকম চলছিল। হলাম ‘বিপজ্জনক’! কী কান্ড! এ যে সুকুমার রায়কেও হার মানালো! তাও তো মাথার ওপর ছাদ নেই, পায়ের তলায় মাটি নেই, হাতে কোনো অস্ত্র নেই। আছে শুধু ভয়ানক একটা আতঙ্ক? বাঁচলেই বিপদ, সমাজের-রাষ্ট্রের মুখ পুড়বে, দরকারও নেই আর – মেয়ে জন্মের প্রয়োজন তো মিটেই গেছে। অতএব মেরে ফেলে হাত ধুয়ে ফেল। চিহ্নটি যেন না থাকে। এতো সেই জমিদারী আমল থেকে চলে আসছে। ক্ষমতা বদলায়, বদলায় শাসনযন্ত্র। শিকার আর শিকারী এক থাকে।

‘বিপজ্জনক’ শব্দটার একটা অন্য অর্থ আছে। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, রুখে দাঁড়িয়েছি। বলেছি মরব না, বাঁচব।

কিন্তু কীভাবে বাঁচব? শেষপর্যন্ত তো মরেই প্রমাণ দিতেই হবে যে আমরা বেঁচেছিলাম। এখনো সমাজ-রাষ্ট্র আমাদের বলে ‘চুপ’। আর নাহলে চিরকালের মতো চুপ করিয়ে দেব।

তবু আমরা কেউ কেউ অন্তত চুপ করব না। কেউ কেউ অন্তত ‘বিপজ্জনক’ হয়ে বাঁচব অথবা মরব। অনেকদিন তো রুমাল হয়ে থাকলাম। এবার একটু বেড়াল হওয়ার চেষ্টা করেই দেখি না...।

Wednesday, July 22, 2015

ধর্ষিতার কাল্পনিক কথোপকথন

রাষ্ট্র তোমাদের খেতে দেয়নি
মানলাম।
রাষ্ট্র তোমাদের শিক্ষা দেয়নি
তাও মেনে নিলাম।
রাষ্ট্রই তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছে অস্ত্র।
এটাও আজ খুব সত্যি।

বলতো, রাষ্ট্র কি আমাদেরও
কেড়ে নেয়নি মুখের গ্রাস?
দিয়েছে শিক্ষার আলো?
এমনকী অস্ত্রও?

তাহলে রাষ্ট্রের বদলে
চিরকাল আমাদের টুকরো টুকরো
করো কেন?
যখন অন্নের অভাব ছিলনা
তোমাদের ঘরে
তখনো মেরেছো গোপনে,
আর আজ রক্তাক্ত নগ্ন শরীরে পড়ে থাকি প্রকাশ্য রাজপথে।

তোমাদের মাংসের লোভ আর আমাদের অস্ত্রহীনতা
এটাই কারণ শুধু।

রাষ্ট্র যদি কারণ হতো - সমালোচনা না করে অস্ত্র ধরতে তার বিরোধীতায়
আসলে ভীতু আর লোভী হলে লাগে কিছু মুখোশ অথবা আবরণ।

মা দুর্গার গল্প

পুজো আসছে,
বয়স বাড়ছে আমাদেরও -
লক্ষ্মী-সরস্বতী, মা দুর্গা।
পুজো পেয়েছি বছর বছর
এখন তো নিত্যি পুজোর ঘটা।

সেই কোন আদ্যিকালে কে যেন বলেছিল -
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা...।

মনে পড়ে পুরনো সব গল্প -
সেকালে বালবিধবা মেয়ের গর্ভে
সন্তান আসতো মাঝে মাঝেই।
পোয়াতি মাকে মরতে হত নিঃশব্দে।
নদীর জল তো কম ছিল না কোনদিনই
আর নাহলে টোটকা, জড়িবুটি।
বেঁচে থাকা সহজ নাকি?
সমাজের কড়া শাসন -
একাদশীতে জল না খেয়ে মরো
তখন তো পর্দানসীন ছিলাম।

এখন পথে বেরোই -
গৃহকর্মনিপুনা, চাকুরিরতা।
দিল্লি, গোয়া, রানাঘাট, কামদুনি -
বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী থেকে নির্ভয়া।
খুন হই অথবা ধর্ষিতা।
কাগজ, টিভির হেডলাইন
মুচমুচে করি সেই আমরাই।
গল্পটা প্রায় একই আছে।
প্রেক্ষাপট বদলেছে সামান্য।

তারপর, গল্পের শেষে কী হলো? শোনো তবে,
রক্ত মুছে প্রতি বছর আবার প্রতিমায় সেজে উঠি।
উৎসব অথবা মচ্ছব আমাদের ঘিরে
ওই যে কী যেন এখনের পূজা মন্ত্র?
ঢাকের তালে শরীর দোলে...।

তবু কান পেতে থাকি নিয়ত
সমস্ত কলরোল ছাপিয়ে
যদি কখনো শোনা যায় -
যদি কেউ বলে এ জীবনে -
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা...।


একই পরিণতি

মেয়ে সন্তান বেড়ে উঠছে - নারী।
শঙ্কিত দৃষ্টিতে দেখি
কেমন করে পৃথিবী জোড়া
লোভের মধ্যে দিয়ে সে হাঁটে,
হেঁটে যাবে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি।
আমিও হাঁটছি আজো, হেঁটেছেন মায়েরা,
হাঁটবে আগামী সব কন্যা সন্ততি...।
শিশু, কিশোরী, যুবতী, মাঝবয়সী, বৃদ্ধা
সকলেরই কাল, আজ, আগামীদিনে একই পরিণতি।

পরিচয়

প্রিয়া, কন্যা, ভগ্নী অথবা
চিরকালীন মা,
বেশ্যা অথবা বিজ্ঞাপনের
শরীর বেচা নারী,
এমনকী ধর্ষিতা।
ভাবছি...
এইসব পরিচয় ফেলে
কবে আস্ত একটা আমি হয়ে উঠব?