Sunday, July 12, 2015

আমরা নাকি বুদ্ধ, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথের দেশের মানুষ!

আমরা নাকি বুদ্ধ, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথের দেশের মানুষ!

ধনঞ্জয় মরিয়া প্রমাণ করিল যে সে মরে নাই – গতকাল একটা ইংরেজি সিনেমা দেখছিলাম। যার বিষয়বস্তু ছিল মিডিয়া কীভাবে মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষ নামক অদ্ভুত জীবটির কাছে আসলে মূল্যবোধ, বিবেক এসব আলগা মুখোশ মূলতঃ সে একটি পশুই (‘পশু’ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়!)। গল্পের পটভূমিকা গত শতাব্দীর প্রথম দিককার। অথচ এখনো আধুনিক।

এযাবত ফাঁসি গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আর কেউ ধনঞ্জয়ের মতো মিডিয়া সেলিব্রিটি হতে পারে নি। সেইসময় ধনঞ্জয় টি আর পি-তে এক নম্বরে ছিল নিশ্চয়। সম্প্রতি আবারও ফিরে আসছে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি অথবা মৃত্যুদণ্ডের প্রশ্নটি নিয়েই।

হত্যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় – তা ব্যক্তিস্বার্থে হোক বা বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে।  খুন হোক বা রাষ্ট্র যন্ত্রের হাতে মৃত্যুদণ্ড। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই চেতনে বা অবচেতনে কোথাও না কোথাও অন্যকে আঘাত করার প্রবৃত্তি থাকে। অন্যকে আঘাত না করাই বোধহয় মনুষ্যত্বের একটা বড় ধাপ। অন্যকে আঘাত যত চরমের দিকে যায় ততো তার ভেতরের পাশবিক দিকটি বেরিয়ে আসে, মানুষটি মারা যায়। এও হয়তো এক ধরণের অসুস্থতা। যদি সুস্থতার মাপকাঠি সেভাবে ধরি। আসলে সবটাই তো মানুষ কী ভাবছে তার ওপরে। তবে এখন তো মানুষের ভাবনার সর্বময় নিয়ন্ত্রক মিডিয়া – বিধাতাপুরুষের থেকেও যে আরো সাংহাতিক – হয় কে নয় আর নয় কে হয় করতে। সে অর্থে যে হত্যা করে সে একপ্রকারের অসুস্থ। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র যদি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?

সেইসময়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় বেশ কিছু টুকরো চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল। তবে আমার যে চিঠিটার পক্ষে-বিপক্ষে বেশ একটা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদ প্রতিদিন কাগজে  – ‘আমরা নাকি বুদ্ধ, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথের দেশের মানুষ’। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে বিচার করলে বুদ্ধ, গান্ধী অথবা রবীন্দ্রনাথ কেউই সবটুকু ভালো ছিলেন না। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থেই হোক বা বৃহত্তর স্বার্থে তাঁরা ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন। সেইটা চেয়েছিলেন এবং সেই ভেবে কাজ করেছিলেন বলেই তাঁরা আজো স্মরণীয়।


কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র যখন অনেকের মাথায় বোমা ফেলে, অনেক মানুষকে হত্যা করে, তার বিচার হয় না, শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড তো আরো দূরের কথা। মারা যায় টুকরো মানুষ, যারা কোনো না কোনোভাবে এই বৃহত্তর রাষ্ট্রযন্ত্রের শিকার। উলুখাগড়ারাই চিরদিন প্রাণ দেয়, এ তো ধ্রুবসত্য। বেঁচে থাকে ঈশ্বরের মতো মিডিয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত ধরে, নাহলে উভয়ের চলবে কী করে?

No comments:

Post a Comment