Tuesday, July 28, 2015

নারী এবং স্বাধীনতা - ২

ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ইংল্যান্ডে গিয়ে নারী স্বাধীনতার চেহারা দেখে ভারতীয় নারী, বিশেষ করে অবরোধবাসিনী বাঙালি নারীদের জন্য মন কেঁদেছিল ঊনিশ বছর বয়সী কৃষ্ণভাবিনী দাসের। ঘরের বাইরে সেই তারও প্রথম পা রাখা। এই ভ্রমণ তাকে সমাজচ্যূত করেছিল। চিরবিচ্ছেদ ঘটিয়েছিল একমাত্র কন্যাসন্তানের সঙ্গে। অথচ কৃষ্ণভাবিনী দাস কিন্তু ইংরেজ নারীদের প্রশংসার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনাও করেছিলেন।

ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রী হয়েই দিব্যি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতেন অবলা। কেউ তাঁকে মাথার দিব্যি দেয়নি নারী শিক্ষার বিরাট কর্মকাণ্ড করতে। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় অজস্র মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে অবলার উদ্যম এবং অর্থব্যয়। যদিও তার অধিকাংশই হয়তো এখন আর নেই, যেকটা আছে তার থেকেও প্রায় মুছে গেছে অবলার নাম। নারী শিক্ষাসমিতি তাদের স্কুল এবং কাজ নিয়ে আজও নিভৃতে তাঁকে স্মরণ করে। আমরা শিক্ষিত (!) বাঙালি মেয়েরা তাঁকে একেবারে ভুলে গেছি। অথচ বাঙালি নারীর শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের পরেই উচ্চারিত হওয়া উচিত ছিল অবলার নাম।

তাঁরই অর্থে তৈরি ভবনে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন - আমাদের কাছে অবলার কিছু নেই টেই...হ্যাঁ একেবারে এই ভাষায়। মনে হয়েছিল নেহাত কলিযুগ, নাহলে ধরণী দ্বিধা হত ঠিক। প্রায় সারাজীবনটাই অবলা দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানটির পিছনে - শ্রম, অর্থ সব।

স্বর্ণকুমারী দেবীও স্বামীর অর্থে দিব্যি খেয়ে ঘুমিয়ে বেড়িয়ে দিন কাটিয়ে দিতে পারতেন। মানে তাঁর প্রথম ভ্রমণ কাহিনি 'প্রয়াগযাত্রা'-র শুরুটা পড়ে বুঝেছিলাম যে শুধু লেখা বা সম্পাদনা নয়, আলসেমিতেও ইনিই আমার গুরু। তিনি কীনা বছরের পর বছর 'ভারতী' পত্রিকার সম্পাদনা করে গেলেন। সেকালের বিধবা নারীদের কল্যাণে তৈরি করলেন একাধিক প্রতিষ্ঠানও।

লক্ষ্মীমণি-রমাসুন্দরী থেকে সরলা-গিরীন্দ্রনন্দিনী মুক্ত মনের আধুনিক নারী ঊনিশ শতকে অনেকেই ছিলেন। যাঁরা বাকী অবরোধবাসিনীদের সূর্যালোক দেখাতে হাত বাড়িয়েছিলেন। তাঁদেরই উত্তর নারী আমরা - শিক্ষাকে রাখলাম কাগজে-কলমে আর আধুনিকতাকে পোশাকে-আষাকে। আর মুক্ত মনের আইডিয়াটা স্রেফ গুলিয়ে গেল টিভি সিরিয়াল দেখতে দেখতে।


নিজেরাই আবার ফিরছি অন্ধকারে। আলো দেখাব কাকে?

No comments:

Post a Comment