Friday, July 24, 2015

রবি ঠাকুর - আমি তোমার সাধারণ মেয়ে।

ওগো রবিঠাকুর,
আমি তোমার ওই রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা নই,
সাধারণ মেয়ে।
দেবীটেবি হয়ে না দাঁড়ালে
আজকাল কেউ পুজো করে না আমাদের।
হেলা - সে আর নতুন কথা কী?
তোমার গানের কথাগুলো তাই
একটু বদলে নিয়ে গাই এখন  –
আদর করে মোরে শৃঙ্খলে বাঁধিবে সংসারে-সমাজে
সে আমি নহি।
নারী বলে  মোরে লাঞ্ছনা করিবে দেহে-মনে
সেও আমি নহি।
'পার্শ্বে রাখ যদি সঙ্কটে সম্পদে
সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে
সহায় হতে
তবে পারিবে চিনিতে আমারে।
আজ শুধু করি নিবেদন'
রবি ঠাকুর,
আমি তোমার সাধারণ মেয়ে।

2 comments:

  1. একটি সাধারন মেয়ের কাহিনী
    আমি একটি মেয়ে,খুব সাধারন মেয়ে,কবিরা তাঁদের সাহিত্যে ,গল্পে ,গানে যে মেয়ের উপাখ্যাণ লেখেন----আমি সেরকম কেউ নই-----আসলে ওনাদের কারো সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি কোনদিন ।
    যাক সেসব কথা,যা বলবো বলে শুরু করেছিলাম তাই বলি -----মানভূমের অখ্যাত এক গ্রাম ঊষুলডুংরী,ওখানেই আমার জন্ম৷ আমার মায়ের যখন 15 বছর বয়স,তখন তার কোলে এলাম আমি,কি ভাবছো শহরের বাবুর দল ????? আমাদের এ সব জায়গায় 15 বছর অনেক বয়স, আমার আগে একটা ভাই ছিল,জন্মেই মরে যায় ।
    আমি যখন 15 দিনের,তখন থেকেই আমার মাকে কাঠ কাটতে যেতে হতো পাহাড়ে ,সারাদিন ধরে কাঠ কেটে,সেই কাঠ হাটে বিক্রী করতো আমার মা,যা পয়সা পেতো সেটা বাপের বিড়ি আর মাঢ়ী কেনার পর যদি পয়সা বেঁচে থাকতো,আমাদের জন্য চাল কিনে আনতো।
    ফিরে এসে আমাদের জন্য দুটো ভাতের বন্দোবস্ত করেই মা বসে পড়তো,না গো না....জিরোতে নয়,বিড়ি বাঁধতে ।
    আমি যখন 6 বছরের,আমার বাপ একদিন মরে গেলো,ভালোই হল একরকম....আমি নয়,মা বলেছিল,প্রতি রাতে মারধোর খাওয়াটা তো বন্ধ হল অন্তত । ও তোমাদের একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,আমার একটা নতুন মা এসেছিলো এর মধ্যে ,আমার মায়ের ছেলে বাঁচেনি বলে আরকি । বাপ টা চোখ বুজতেই শুরু হল দুটো ঘর নিয়ে মা আর সৎ মার মধ্যে নিত্যদিনের মারামারি ।
    এত কষ্ট করেও মা কিন্তু আমায় গ্রামের প্রাইমারী ইস্কুলটায় পড়াটা ছাড়ায় নিকো। নিজে রাত তিনটেয় উঠে কাঠ কেটে এনেছে,দুপুরে ফিরেই বসে গেছে বিড়ি বাঁধতে ।
    আমি যখন ক্লাস থ্রীতে,আমার একটা মাষ্টারও রেখেছিল মা,পড়ালেখা চলছিল,দুপুরের ভাতটাও জুটে যাচ্ছিল ইসকুলেই,বিজ্ঞান,অঙ্ক,ইংরাজী,সবেতেই 80 -র উপর নম্বর,মাষ্টারগুলা আমায় ভালোটাই বাসতো ।
    কি ভাবছেন বাবু !!!! এটা যদি কোন সিনেমা বা সিরীয়াল হতো,তাহলে এরপর জুটে যেতো একটা রাজপুত্তুর,যার আমায় ভালো লেগে যেতো,বেশ ক'টা পাশটাশ করে ,একটা মোটা মাইনের চাকরী নিয়ে,তারপর বিয়ে, কাহিনী মধুরেণ সমাপয়েৎ ।
    কিন্তু এ যে কঠিন বাস্তব ৷ আমি তখন ক্লাস ফাইভে ৷ একদিন কাঠ কেটে ফেরার পথে মাকে কয়েকজন ধরে ধরে দিয়ে গেলো,মা মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলো ৷জানা গেল বেশ কিছুদিন ধরেই মার কাসির সঙ্গে রক্ত পড়ছিল ,আমার পড়াশুনার ক্ষতির ভয়ে মা কিছু বলেনি ৷ ডাক্তার দেখানো হলো । জানা গেলো দুরারোগ্য কর্কট রোগ মার ফুসফুসে ।
    সে বছর মকর -সংক্রান্তির দিন চলে গেলো মা ৷ আমি তখন বারো ।
    পড়াশুনা বন্ধ,সৎ মায়ের যন্ত্রনা ,এই সব সহ্য করে জীবন কাটাচ্ছিলাম,মুক্তির উপায় খুঁজে দিল আমাদের পাশের পাড়ার প্রকাশ,আমায় স্বপ্ন দেখালো.....তার কাছে মনপ্রাণ সঁপে দিলাম ।কিন্তু দুঃখ যে নিত্যসঙ্গী আমার । প্রকাশ একদিন অর্থের দাবী জানালো আমায় গ্রহন করার জন্য । এবারও মধুরেনঃ হলোনা ।
    আবার সৎমা র গলগ্রহ হলাম ।শেষে আমার তিনগুন বয়সী এক জনের গলায় আমায় ঝুলিয়ে কর্তব্য সারলেন আমার সৎমা । আমার জীবনে শুরু হলো মায়ের জীবনের পুনরাভিনয় ৷৷

    ReplyDelete
  2. এটাই বাংলাদেশের সাধারণ মেয়ের কথা। আমরা কতটুকুই বা চিনি তাদের?

    ReplyDelete