Saturday, October 31, 2015

ভ্রমণকারী বন্ধুর পত্র – লাদাখ পর্ব

বন্ধুবর,

অপার্থিব কিছু পাওয়ার জন্য ভয়াবহ এক পার্থিব দৌড় দিয়েই আমার এই পত্রাঘাত শুরু করলাম। এরপর নাহয় আমার ডায়েরি পোড়ো। লাদাখ জায়গাটা আমার তো খানিক অপার্থিবই লেগেছে, তার ওপরে আমার ভোদাফোনের টাওয়ার অর্থাৎ বাকী পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, কাজেই অপার্থিব ভাবাটা ঠেকাচ্ছে কে? অবশ্য লেহ্‌-এর হোটেলে দিন দুয়েক ফ্রি ওয়াই-ফাই পেয়ে ছিলাম, ওই যাকে বলে বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছ...!

যাকগে যা বলছিলাম, ১৩ অক্টোবর ভোর তিনটেয় উঠে চারটের মধ্যে জে এন ইউ-এর গেস্টহাউস থেকে দিল্লি এয়ারপোর্টের দিকে রওনা গাড়িতে। পৌঁছে বিস্তর চেকিং-এর হ্যাপা শেষ করে সবে টয়লেট থেকে বেরিয়েছি, ওমা শুনি এয়ার ইন্ডিয়ায় ফাইনাল কল হয়ে গেছে। তখনও প্রায় আধ ঘন্টা বাকী। আর আমাদের টার্মিনাল ষাট। বোঝো ঠেলা! মালপত্র নিয়ে দৌড় দৌড় দৌড়। ওই যে, প্লেন ধরা সহজ নয়। সবার আগে দীপ আর সৌম্য। দীপের ফোনে মাঝে মাঝেই এয়ার ইণ্ডিয়ার তরফ থেকে প্লেনে না উঠতে দেওয়ার হুমকি আসছে। যাইহোক, আমি আর মেয়ে কোথাও দাঁড়াইনা, এমনকী চলমান পথের থুড়ি এসকালেটরের ওপর দিয়েও দৌড়াই প্রাণপনে। লড়ঝড়ে শরীরে ব্যথা জানান দেয় এদিকে সেদিকে, সে ভাবার সময় নেই ৩৫-৩৬...৪২-৪৪...৫৬-৫৮...ওই এসে গেল প্রায়..৫৯-৬০...উফফফফ..., আমি আর বুই পৌঁছেও যাই হাঁপাতে হাঁপাতে। চিন্তা শুধু বীরেনকে নিয়েই। বুকে যন্ত্র বসানো, ওর না আবার শরীর খারাপ করে। শুনি দীপ আর সৌম্যের সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার কাউন্টারের লোকজনের হিন্দিতে গরমাগরম বাতচিত চলছে। আমিও লালমোহনীয় হিন্দিতে যোগ দিই। আরে, আপনারা যখন ফোন করেছেন, তখন তো আমরা আসছিলামই, কে জানে দিল্লি এয়ারপোর্ট এত লম্বা আর আমাদের সঙ্গে একজনের বুকে পেসমেকার বসানো আছে, কতটা তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব। ওরাও হুমকি দেয় আপনাদের মালপত্র সব নামিয়ে দেব, তখনও দশ মিনিটের বেশি সময় হাতে রয়েছে। বু আর বুই দুজনেরই আবার জুতো খুলিয়েছে, বাব্বা বাব্বা, জুতোর ফিতে বাঁধার সময়টুকু তো দেবে! এ যেন আমাদের শঙ্করীদি, বৌদি তাড়াতাড়ি বল কী রান্না হবে, হুড়মুড়িয়ে রান্না করে সময়ের আগে সব্বাইকে খাইয়ে দিয়ে বাসনটা মেজে ফেললেই ব্যস, কাম ফতে।

যাইহোক, সবশেষে বীরেন আর টুসিকেও দেখা যায়। আমরা উৎসাহিত গলায় বলি, ওই তো এসেই গেছে, কাউন্টারের লোকদুটিও গজগজ করতে করতে ক্ষান্ত দেয়। পৌঁছে বীরেন হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, আমি তো ভাবলাম আর ধরতেই পারব না। দীপ হিসেব কষে আশ্বাস দেয়, আরে এখনো প্লেন ছাড়ার সিডিউল টাইম হয়নি, আমাদের কাছে টিকিট আছে, উঠতে দেবে না মানে? আমাদের লাগেজ খুঁজেপেতে নামাতে আরও দশ মিনিট তো লেগেই যেত, আর ইতিমধ্যে আমরা উঠে পড়লে আবার লাগেজও ওদের ওঠাতেই হোতো। অতএব...। যাইহোক আমরাও টপাটপ প্লেনে চড়ে বসি আর দুগ্‌গা দুগ্‌গা বলে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই প্লেন গড়াতে শুরু করে।

দাঁড়াও, আগের কথা আগে সেরে নিই, তোমাকে তো বলেইছিলাম যে, অনেকদিন ধরেই আমাদের লাদাখ বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছিল, মানে চলেই যাচ্ছিল। যেবারে প্রায় সব ঠিকঠাক, সেবারেই বীরেনের বুকে পেসমেকারের মতো যন্ত্রটা বসল আর তাই আপাতত পিছিয়ে গিয়েছিল। মুশকিল হচ্ছে, ইদানীং বীরেনের মনে হচ্ছে, যন্ত্র নিয়ে আর কতদিন চলবে, তাই লাদাখ দেখা হয়ত আর হবে না। অতএব ডাক্তারকে বলেটলে সব ফাইনাল করা হল। বেশি হাঁটাহাঁটি বা সিঁড়ি ভাঙা চলবে না, নিজের শরীর বুঝে বাকীটা। ওদিকে যাওয়ার দিন যত কাছে আসে আমার নিজের শরীরগতিক ততো খারাপ হতে থাকে। কিন্তু না, ক্যানসেল করলে বীরেন ভারী কষ্ট পাবে। নিজেকে তাই বলি, ওঠো হে।

তা উঠেই পড়ি ১০ তারিখ বিকেল চারটে নাগাদ রাজধানী এক্সপ্রেসে। সেই কোন ছোটবেলায় আনন্দমেলায় সমরেশ বসুর লেখা গোগোলের অ্যাডভেঞ্চার ‘রাজধানী এক্সপ্রেসের হত্যারহস্য’ পড়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে চাপবার সখ হয়েছিল, তা এ্যাদ্দিনে পূরণ হল। ভাগ্যিস, দীপের এল টি সি ছিল, আর ভাগ্যিস, আমি মনে মনে বড় থুড়ি হোৎকা হয়ে যাইনি, তাই ছোটবেলার মতোই মজা পেলাম। ট্রেনে ডায়েরি লিখিনি, চলমান জানলার পাশে বসে স্রেফ খান দুয়েক কবিতা।

দিল্লি পৌঁছে গাড়ি ভাড়া করে জে এন ইউ-এর দিকে রওনা। ওখানেই গেস্টহাউসে আমাদের জন্য ঘর বুক করে রেখেছিল আমার হস্টেলের বন্ধু পালু, অর্থাৎ শর্মিষ্ঠা পাল। এই প্রথম স্যুটে থাকলাম সেও এক ছেলেমানুষী মজা আর কুড়ি বছর পর আরও এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা সেও দারুণ মজার।

আমাদের ঠাঁই হল আরাবল্লী ইন্টারন্যাশনাল গেস্টহাউসে।  গেস্টহাউসের অন্য একটা উইং-এ খাবার ঘরে দুপুরের খাওয়ার পালা শেষ করতে না করতেই পালু, শোভন আর ওদের ছোট্ট ছেলে ধিঙ্গিপদ হাজির। ছোট ছোট বেগুনের মাখা তরকারিটা দিব্য হয়েছিল। দুপুরের গণগণে রোদের মধ্যেই ওদের সঙ্গে পার্থসারথী রকে পৌঁছে ঘোরাঘুরি হল। সেখান থেকে নেমে ওরা ফিরে গেল, আমরা চললাম কুতুব মিনার দর্শনে।

ইতিহাসের আনাচে-কানাচে ঘুরতে ঘুরতেই মাথা আক্ষরিক অর্থে ঝিমঝিম। সন্ধ্যাবেলায় পালুদের বাড়িতে স্ন্যাকসের নেমতন্ন, ও নানারকম খাবার বানাতে খুব ভালোবাসে। চন্দনদা বলে, চল স্নেক খেয়ে আসি। পালুর বাড়ি পৌঁছে মাথায় জল ঢালি হুড়মুড়িয়ে, তারপরে বিছানায় বেশ খানিকক্ষণ গড়াগড়ি দিই। তারপর পালুর বানানো ফিস ফ্রাই আর দুরকমের কেক খেয়ে ক্রমশঃ চাঙ্গা হই। ওরই মধ্যে বীরেন টুসিকে বলে দারুণ এই ফিসফ্রাইটা বানানো শিখে নিতে, নিরামিষাষী চন্দনদা চুমকিকে পালং শাকের নিমকি শিখে নিতে উৎসাহ দেয়। আর আমি বলি কী, এসবের থেকে এমন বন্ধু থাকাটাই ভালো নয় কি যে সবই বানাতে পারে, একটু কষ্ট করে শুধু তার ঠিকানায় পৌঁছে গেলেই হল। পেট প্রায় ভরাই, তাই রাতের খাওয়ার জন্য কেউ আর নড়তে রাজি হল না, শোভন, বীরেন আর দীপ গিয়ে কাছের ধাবার থেকে খাবার নিয়ে আসে। এত খাবার শেষও হয়না। খাওয়ার শেষে দফায় দফায় আমাদের গেস্টহাউসে পৌঁছে দেয় শোভন। আসলে জে এন ইউ-এর চত্ত্বরটা এত বড় যে হেঁটে যাওয়ার জন্য অনেকটাই। ভারী ভালোলাগে সবুজ গাছে ছাওয়া বিস্তীর্ণ এলাকা। বুইকে বলি, ভালো করে পড়াশোনা কর, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে যদি আসতে পারিস। তবে বুইয়ের আকর্ষণ পড়াশোনা নয়, ধিঙ্গিপদ – মা ভাইটা কি মিস্টি না? আমার প্রায় সতের বছরের মেয়ে বলে। ভাইয়ের সঙ্গে তার বড্ড ভাব। ওদিকে জে এন ইউ ক্যাম্পাসে কুড়িয়ে পাওয়া ময়ূরীর পালক তার টুপিতে গোঁজা। সেটা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কাড়াকাড়িও চলে রীতিমতো।

এতো গেল আগের কথা। তারপরে তো ১২ তারিখ ভোরে উঠে রোক্‌কে রোক্‌কে বলে আমরা প্লেনে চেপে পড়লাম সদলবলে। সদলবলে মানে, আমরা তিনজন, বীরেন, টুসি, বু আর সৌম্য। চন্দনদা, চুমকি অন্য প্লেনে পরে আসছে। প্লেনে সবারই একটা করে জানলা। দীপের এল টি সি-র কল্যাণেই আমার যা একটু-আধটু প্লেনে চড়া। প্লেনে উঠলেই নিজেকে কেমন বুড়ো আঙলার রিদয়ের মতো লাগে আমার। সেই হাঁসের পিঠ থেকে দেখা খেলনার মতো ছোট্ট ছোট্ট বাড়িঘর, সবুজ চৌখুপী ক্ষেত, নদী আর রাস্তার দাগওপর থেকে পৃথিবীটাই এত ছোট হয়ে যায় যে মনে হয়, মানুষ মিথ্যেই শুধু নিজেদের মধ্যে হানাহানি, কাটাকাটি করে, পুরোটাই কী বিষম অর্থহীন। লাদাখ-কাশ্মীর বেড়ানোয় প্রায়ই এই কথাই মনে হয়েছে মিলিটারি সেনা আর সাধারণ মানুষদের জীবন দেখতে দেখতে।

মেঘেদের রাজ্যে রোদের ঝলক পেরিয়ে যেতেই চোখে পড়ে নীচে কারাকোরামের বিরাট রেঞ্জ। কোনো পাহাড়ের মাথায় বরফের সাদা চাদর, কারোর বা মেঘের। মেঘ আর বরফ মিলেমিশে রোদ-ছায়ায় সে এক অপরূপ দৃশ্য। শুধুই মুগ্ধ হওয়া।

প্লেন থেকে নেমে লেহ্‌-এর লাউঞ্জেই আমরা গড়াগড়ি যাই। বাপরে কী ঘুম পাচ্ছে, ওদিকে এয়ারপোর্টে ঘোষণা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় লেখা রয়েছে দিনের বেলায় ঘুমাবেন না। কী জ্বালা! চন্দনদাদের ফ্লাইট পরে, ফলে অপেক্ষা আর অ্যাক্লিমাটাইজেসন দুটোই সাথ সাথ হতে থাকে। চন্দনদারা পৌঁছালে এয়ারপোর্টের বাইরে পা রাখতেই লেহ্‌-এর রূক্ষ্ম সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আমাদের। কিন্তু দেখি গাড়ি নাই। ফলে আবারও অপেক্ষা এবং নিজেদের পোঁটলাপুঁটলি হাতড়ে বিস্কুট, চিঁড়ে, ছোলা ভেজানো, কোল্ড ড্রিঙ্কস এসব  খাওয়া। বাপরে কী ভীষণ খিদে পেয়েছে। আমার তো প্লেনেই পাশের লোকটা না খেয়ে প্লেট ফেরত দিচ্ছে দেখে ওর খাবারটাই খেতে ইচ্ছে করছিল, নেহাত চক্ষুলজ্জার খাতির। তবে আমরা সকলেই নিশ্চিন্ত যে যেরকম খিদে আর ঘুম পাচ্ছে তাতে আমরা বেমালুম অ্যাক্লেমাটাইজড

অবশেষে গাড়ি পাওয়া গেল। আমাদের ড্রাইভারের নাম থুড়ি টাইটেল তুন্ডুপ। লেহ্‌-এর নেড়া পাহাড় আর লাল-সবুজ-হলুদ রঙিন গাছের রূপ দুচোখ ভরে দেখতে দেখতে মূল বাজার চত্ত্বরে পৌঁছাই। অক্টোবরের পাতা ঝরার সময় বলেই প্রকৃতির এত বিচিত্র রূপ। এবার হোটেলের সন্ধান করতে নামে দীপেরা। আর তুন্ডুপ গল্প জোড়ে আমার সঙ্গে – হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করে, আপনারা নমস্তে কে কী বলেন? আমি বলি, নমস্কার। তুন্ডুপ হাসিমুখে বলে, নমস্কার, নমস্কার, জুল্লে জুল্লে। আমরা বলি, জুল্লে। লাদাখে দিন কাটাতে কাটাতে ক্রমশঃ জানতে পারি, গুড মর্নিং, গুড ডে থেকে গুড বাই সবই ওদের কাছে, ‘জুল্লে’। পথেঘাটে সর্বত্র লেখা থাকে, ‘জুল্লে’। আর সর্বত্র চেনা-অচেনা লোকজনেরা দেখা হলে হাসিমুখে বলে ওঠেন, ‘জুল্লে’। এই মায়াময় শব্দটা তাই বড় ভালোলেগেছে আমার।

১২ তারিখ হোটেলে পৌঁছতেই দুপুর। হোটেল ‘বিমলা’, উচ্চারণ হবে, বিম্‌লা। মালকিনের মেয়ের নামে। কেয়ারটেকার ধনগিরির সঙ্গে ক্রমশঃ আলাপ জমে ওঠে। এই ছেলেটি একেবারে বিভূতিভূষণের লেখা থেকে  উঠে আসা একটি চরিত্র। এর কথা পরে লিখছি। তিনতলায় কাঁচে মোড়া চারটে ঘর। ঝলমলে দিন, ঘর থেকেই দেখা যায় একপাশে লেহ্‌ প্যালেস আর অন্যদিকে বরফমাথা পাহাড় স্তোক-কাংড়ি। হোটেলের বাগানে আপেল গাছে লাল-সবুজ আপেলের ভিড় নজর এড়ায় না কারোরই। ঢুকেই রিশেপশনের আগে বাইরে টেবিলের ওপরে রাখা একটু পোকায় কাটা কী দাগ লাগা বাতিল আপেল দিয়ে আমাদের আপেল খাওয়ার শুরু হয়, তারপরে বীরেন হাত বাড়ায় গাছের দিকে। তবে আপেল পর্বও বিরাট, তাই ক্রমশঃ প্রকাশ্য। আপাতত  এদিন বিশ্রাম, শরীরের সঙ্গে উচ্চতাকে মানিয়ে নেওয়া আর বেড়ানোর পরিকল্পনা ঠিকঠাক করে ফেলতে গাড়ির সঙ্গে দরাদরি। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ, লাদাখের সিজন শেষ, তাই হোটেল, গাড়ি আগে থেকে কিছুই ঠিক করে রাখা হয়নি, পৌঁছে যাকিছু করা যাবে, ভিড় তো নেই, এই ভরসায়।

বেড়ানোর শুরু ১৩ তারিখ থেকে, আমার ডায়েরিরও। ‘আমাদের ছুটি’-র সুবীরদার রেফারেন্সে হাসানের সঙ্গে কথা পাকা হয়, টেম্পো ট্রাভেলর, চোদ্দো জনের সিটে আমরা ন’জন আর ব্যাগব্যাগেজ। ড্রাইভার আর গাড়ির মালিক যে তার নাম মানে টাইটেলও তুন্ডুপ।


এবারে ডায়েরির পাতায় চোখ বুলাই। বেশিটাই লিখেছি পথে, গাড়ির ঝাঁকুনি খেতে খেতে, তাই নিজের হাতের লেখা নিজের কাছেই দুর্বোধ্য এখন। উদ্ধারের একটা চেষ্টা করে দেখা যাক। এই ডায়েরি লেখার ঠেলায় এবারে একপাটি গ্লাভস হারিয়েছি। খোদ ডায়েরিটাও বার দুয়েক অন্ততঃ হারাতে হারাতে কান ঘেঁষে বেঁচে গেছে। আর আমার ঘড়ির ব্যান্ড লুজ হয়ে যাওয়ায় পরের দিকে কটা বাজে বলে সব্বাইকে বিস্তর জ্বালিয়েছি। চন্দনদাই বোধহয় মন্তব্যটা করেছিল, তুমি তো দেখছি প্রফেসর শঙ্কুর মতো ডায়েরি লিখছ। অনেকসময় কেবল নোট রেখেছি, সেগুলোও ঠিকঠাক করে দাঁড় করাতে হবে। তবে দীপ আমার লেখার পরিমাণ দেখে বলেছে, এই যা লিখেছ, এটাই তো অনেক। সে যাইহোক ...

Friday, October 9, 2015

ভ্রমণ

মাঝে মাঝে আমার ভালো থাকতে ইচ্ছে করে না,
ভালোলাগেনা মন্দ থাকতেও।
আর তখন বিছানার ওপর আমার মৃতদেহটা,
যে না কী ভালো অথবা মন্দ থাকতে চায়,
তাকে স্রেফ ফেলে রেখেই বেড়াতে চলে যাই
পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে,
বন্ধুত্ব করতে আকাশ, নদী আর ঘাসের সঙ্গেও।

এবং চিরকাল আমার বন্ধুসংখ্যা বেড়েই চলে।

ভুলো

জীবনের জরুরি জিনিসগুলো সব এলোমেলো ফেলে রাখি -
ভালোবাসা, কবিতা, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, ব্লাড রিপোর্ট সব।
দরকারের সময় তাই আর কিছুই খুঁজে পাই না।
খুব শীতের দিনে খুঁজে পাইনা টুপি আর গ্লাভস,
অথবা জ্বরের ঘোরে বন্ধুর হাত।
শেষপর্যন্ত অবশ্য তাতে কিছুই যায় আসে না -
দিন তার নিজের মতোই কাটে, কেটে যায়।
সবই ফেলে রাখি অথবা ছড়িয়ে,
কিন্তু কিছুই তো ফেলে দিইনা এ জীবনে
জানি কোথাও না কোথাও রয়ে যায় ঠিকই।

আর এই বিশ্বাসে দিব্যিই বেঁচে থাকা যায়।

পরীক্ষাতন্ত্র


আমার ভাইঝি যখন তার মায়ের পেটে, একদিন আমার মেয়ে তার মিমিকে প্রশ্ন করল, জন্মালে ওকেও কি পরীক্ষা দিতে হবে? মিমি বলল, সে তো হবেই। শুনে হতাশ গলায় মেয়ে বলল, তাহলে আর জন্মে লাভ কী?

পড়াশোনা করতে আমার বেজায় ভালোলাগে, তবে পরীক্ষা দিতে আমারও না। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের চেয়ে পরীক্ষাতন্ত্র ঢের ভালো। আমাদের দেশে এবং অবশ্যই রাজ্যে যা চলছে তা দেখতে দেখতে এই ভাবনাটাই মাথায় ঘুরছে। ওই যে বললাম আজকাল আমায় ন্যাড়ামোতে পেয়েছে। যা ইচ্ছে তাই ভাবছি আর লিখছি। আমার এই দলতন্ত্র কোনোদিনই ভালোলাগেনা। ভোট দেওয়া ছেড়েছি বহুদিন কোনো মানে নেই বলে। কী হবে? আমরা জনগণ লাইন দিয়ে ভোট দিতে যাব। এমনকী মারধোর খাব কীনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারপরে যার হাতে ক্ষমতা সে ছাপ্পা ভোটেই হোক কী নির্বাচন কমিশনে চোখ রাঙিয়েই হোক জিতবে। এরমধ্যে গণতন্ত্র আসছে কোথায়? অতএব আমি লাইনে নেই বাবা। ভোটের দিন নাকে তেল দিয়ে দিব্য ঘুমাই এবং ঘুমাবই।

এর থেকে দলটল সব তুলে দিক। মুখ্যমন্ত্রী, তার সমস্ত সচিব, সহকারী পদে এবং প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রেও বিভিন্ন পদের জন্য পরীক্ষা হোক। তাতে আই এস কী ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষার মতো নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া থাকবে। শিক্ষিত মানুষেরা পরীক্ষা দিয়ে পদগুলিতে বসুন। হ্যাঁ, কিছু মানুষের ব্যবসা বাড়বে - মুখ্যমন্ত্রী সাজেশনস বা প্রধানমন্ত্রী মেড ইজিতে দেশ ছেয়ে যাবে, সে যাক। মাঝে মাঝে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারীও হবে। অন্ততঃ মূর্খমন্ত্রীর জ্বালা থেকে বাঁচা যাবে। ক্ষমতাতন্ত্রের চেয়ে পরীক্ষাতন্ত্র ঢের ভালো।

আর কে বলেছে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ? যতদিন সরকারিভাবে কোথাও রিলিজিয়ন লিখতে হবে ততোদিন ভারত একটি অতীব সাম্প্রদায়িক দেশ। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোনো ধর্ম মানতেই পারেন, কিন্তু সরকারিভাবে বিভিন্ন ফর্মে কেন আমাকে রিলিজিয়ন লিখতে বাধ্য করা হবে? গরু গরু করতে করতে গরুদেরই দেশ হয়ে যাচ্ছে। গোমাতার সন্তানেরা আর কত ভালো হবে?
দল এবং ধর্ম এইদুটো যদি না থাকে, আর কিছু না থাক দেশে চাট্টি শান্তি থাকলেও থাকতে পারে।

বলি কী একবার সব্বাই ভোট দেব না, দেখি কে জেতে? আমরা কেউ ফর্মে রিলিজিয়ন লিখব না, কেমন করে ধর্মের নামে মানুষ মানুষকে মারে? একবার করে দেখিই না সব্বাই।

আরে বাবা মানুষ বলে কিছুদিন নিজেদের ভেবেই দেখিনা, ধর্ম আর রাজনীতির মুখোশ নামিয়ে রেখে।


ব্যক্তিগতভাবে আমি তাই দল মানিনে, ধর্মও, শুধু শিরদাঁড়াটা সোজা রাখি, মানে চেষ্টা করি অন্ততঃ (সেটা যদিও খুব শক্ত স্পন্ডাইলোসিস থাকলে)।

Tuesday, October 6, 2015

ফ্রি

সাংবাদিক বা ক্যামেরাম্যান হলে পিটুনি ফ্রি আর পুলিশ হলে ডিমপচা। এটা অনেকটা সেই আমার ভাইঝিকে চচ্চড়ি খাওয়ানোর সময় ঢ্যাঁড়শভাজা ফ্রি-এর মতো। চচ্চড়িটাই পিসির ঠেলায় গিলতে হচ্ছে, তায় ঢ্যাঁড়সভাজা! নিতান্ত ছাপোষা মানুষ পেটের দায়ে সাংবাদিক বা পুলিশ হয়। ওপরওলার চোখ রাঙানি তো আছেই, তার ওপরে এত ফ্রি সয় কী করে? ভাবছি এই নেতাটেতাদের এমন কিছু ফাউ দেওয়া যায় না? তাঁরা তো ঠান্ডা ঘরে দিব্য দিন কাটান কী আমেরিকা-ভুটান ঘুরে বেড়ান। ওদিকে পুলিশ সাংবাদিক পিটোয়, বিরোধীরা পুলিশের গায়ে ডিমপচা ছোঁড়ে, এদিকে নিজেরা মার খায়। 

রেললাইনের ধারে কার যেন লাস শুয়ে থাকে - তার নাম বোধহয় উলুখাগড়া। কারণ জীবনটাই যে ফ্রি-তে চলে গেল তার।

ন্যাড়ামো

ইদানীং আমার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিতে চোখ গেলেই নিজেকে কেমন ‘আবোল তাবোল’-এর ন্যাড়ার মত লাগছে। যে কেউ আমার হাসিটা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, পুরো ন্যাড়ার হাসি। ওই যে, যে কী না পৃথিবীটা যদি চ্যাপ্টা হত আর সব জল গড়িয়ে ডাঙায় চলে আসত আর লোকজনে ধপাধপ ধপাধপ আছাড় খেতো ভেবে হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছিল। আজকাল আমারো মাঝে মাঝে ওরকম ইচ্ছা হয় বৈকী। আর একেবারে নেড়ার মতোই বাজে বকছি।

ধরুন, তৃণমূলের নেতা কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে এবারের বর্ষায় আর কোথাও সাধারণ মানুষকে জলে হাবুডুবু খেতে হবে না, আর ওমনি রে রে করে বৃষ্টি এসে মঞ্চটঞ্চ সব ভেঙে জলে পুরো ভেসে গেল। আর নেতা আর তার চ্যালাচামুণ্ডারা সৌখিন সুগন্ধী মাখানো জামা-প্যান্ট পরে কাদাতে সব ধপাধপ ধপাধপ আছাড় খেতে লাগল। (এটা শুরুর দিকে কিন্তু সিরিয়াসভাবে পড়তে হবে)

না ভাই, না ভাই আমাকে গান গাইতে বোলো না। আজকাল আমি আর গান গাইনে। gun লেখেন এবং gun আমাদের দিদি। সে কী সব মধুর সুর আর মোলাম কথা যে কোথাও শিশি-বোতলের মতো ঠেকবে না। (এইখানে যাদের কাছে দিদির কবিতার বই আছে তারা খুব মোলাম সুরে দু-একটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন, আমার কাছে নেই কী না, তাই ঠিক কোন গানটা এখানে মানাবে লিখতে পারলাম না)

এই না বলে তো রামছাগলটার মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলাম। সেটা দিদির কবিতার শোকে, না কী বাড়ির সামনে নর্দমা মেরামত করছে বলে বারবার আছাড় খাওয়ার আশঙ্কা থেকে অথবা হাতের ব্যথায় তা ঠিক বলতে পারব না। ইদানীং প্রায়ই আমার ওই ছাগলটার মতো কান্না পায়, যার ভাই না কে আধখানা বার সাবান খেয়ে নিয়েছিল, তাতে আধখানা মরে গিয়েছিল, একদম ওই কান্না। বাঁহাত অবশ হয় আছে, বাঁ পা খোঁড়াচ্ছে আর ডানদিকটার তাই ভারী কষ্ট হচ্ছে। (এইখানটায় ভীষণ সিরিয়াস কাঁদো কাঁদো গলায় না পড়লে কিন্তু কিছুতেই হবে না)

সেদিন রাস্তা দিয়ে আসছিলাম, আমি আর মেয়ে। একটা কালো বেড়াল চোখে পড়ল তার একটু একটু সাদা। বুই বলছিল মনোক্রোমাটিক বেড়াল। আমি বললাম, ফটোক্রোমাটিক বেড়াল হলে ভালো হতো না কি? দিনের বেলা রোদ্দুরে কালো হতো আর রাত্তিরে ছাই ছাই। মেয়ে বলল, এ কি তুমি চশমা পেয়েছ না কি? বললাম, আহা একটা রুমাল হলেই তো মিটে যায়।


যাকগে ঢের রাত হলো এবারে চশমা খুলে বেড়াল ভুলে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে ঘুমিয়ে পড়ি। কালকে আবার কী হয়, গেছোদাদা কী করে, উধোতে বুধোতে ঝটাপট ঝটাপট লাগে কী না...সে অনেক চিন্তার ব্যাপার থাকে, নিত্যি থেকেই যায়...এরই নাম তো জীবন থুড়ি আবোল-তাবোল।

সক্কালবেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি, ঘুমের ঘোরে 'আবোল তাবোল', 'হ য ব র ল' সব কেমন গুলিয়ে গেছে। যা দিনকাল পড়েছে একেবারেই অবাক হলাম না। নিত্যি জেগে জেগে গুলিয়ে যায় আমি রুমাল না বেড়াল? ঠিক কোথায় আছি, হ য ব র ল অথবা আবোল তাবোলে? গেছোদাদা ঠিক বলছে না বিরিঞ্চিবাবা? ওদিকে হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন দৌড়চ্ছে তো দৌড়োচ্ছে, চোর-ডাকাত সব পড়ে রইল।

হঠাৎ শুনি কে যেন হেঁড়ে গলায় বলে উঠল, সাত দুগুনে কত হয়? চোদ্দো বলি আর মরি আর কী, কোনো হিসেব এখন আর অত সহজ নয়। যদি ওটা চোদ্দো কোটি হয় তাহলে সি বি আই এলে রাখব কোথায়? আমার তো দিদিও নাই, কমোডও নাই। এইবেলা তাই হুস হুস করে কাকটা তাড়িয়ে শুকনো রুটি চিবোতে বসলাম।

Sunday, October 4, 2015

শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু, হে প্রিয়

মাঝে মাঝে হাতে তোমার জ্যাকেটখানি দিও। হ্যাঁ, গতকাল রত্না আমার বাড়ি বয়ে এসে ওর গোটা দুয়েক গরম জ্যাকেট দিয়ে গেল লাদাখ যাব বলে। ভারী ভালোলাগল। সপরিবারে এসে কিছুক্ষণ কাটিয়ে গেল গল্পে-ঠাট্টায়। আমিও যথারীতি না বসে হস্টেলের মতোই এক পা খাটে ভাঁজ করে রেখে আরেকপায়ে দাঁড়িয়ে বকবক করে গেলাম। বেশ লাগল, ওকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করলাম অল্পবয়সের বন্ধুত্ব।

মায়ের সোয়েটার, বন্ধুর জ্যাকেট, দাদার সুটকেশ - জীবনে ব্যক্তিগত সম্পত্তির খুব একটা দরকার আছে কি? যেটা দরকার আছে তা হল অনেকটা ভালোবাসা।


শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে প্রিয়, মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও।

Saturday, October 3, 2015

জার্সিবদল

একজন ভীষণ আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে বামেরা কী করে দক্ষিণপন্থী হয়? আমার মনে হল, তাই লিখলাম, আসলে সকলের এখন একটাই নীতি - ক্ষমতাপন্থী।

বামেদের একটা বড় অংশই তৃণমূলে বা বিজেপিতে চলে গেছে আর বাকী যারা আছে তারা পুলিশের গায়ে পচা ডিম ছুঁড়ে দিনবদলের কথা ভাবছে। কী দিনকাল দেখতে হচ্ছে সত্যি!

আমার বাবা-মা দুজনেই নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বড় হয়েছি রাজনৈতিক তর্কাতর্কি শুনতে শুনতেই। কেন জানি তার মধ্যে ভীষণ আদর্শের গন্ধ লেগে থাকত বলে মনে হত। বাড়িতে থান ইঁটের মত 'ক্যাপিটাল' এর সবকটা খণ্ড ছিল, বাপরে, চিরকাল আমি রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরে।

বাম রাজনীতি নিয়ে বাবার মধ্যে তীব্র হতাশা দেখেছি। একটা বইও লিখেছিল, 'বামপন্থী রাজনীতির সঙ্কট' নামে। না, আমি পড়িনি। বাম জমানায় বড় হয়েছি, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্কট এমনিই হাড়ে হাড়ে অনুভব করি। সিপিএম সিপিআই ভাগ হয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন সিপিআই করেও ছিল। যথেষ্ট পরিচিত নেতাই ছিল। আমাকে কল্যাণদা কেন বাবার নাম বলিনি বলে বকায় আমি উত্তর দিয়েছিলাম, আপনারা আদৌ তাঁকে মনে রেখেছেন এটাই আমার মনে হয়নি, তাই বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। শেষের দিকে বাবা কিছুটা মমতাকে সমর্থনও করত। পশ্চিমবঙ্গের অনেক সাধারণ মানুষের মতোই একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল হয়তো। এ বিষয়ে আমার মত মেলেনি। মা বলে, যদি কাজের লোক খারাপ বলে বদল কর, তাহলে পরেরজন আরো খারাপ হয়। রাজনীতিতেও আমার সেটাই মনে হয়। এবং হলোও তাই। ভাগ্যিস বাবাকে বেঁচে থেকে এই দৃশ্য দেখতে হলনা যে ওদিকে মাইকে মমতার গান কিম্বা স্বপ্ন বাজছে আর এদিকে বামেরা পচা ডিম ছুঁড়ছে।

ক্ষমতাপন্থীরা যত খারাপ, তার থেকেও খারাপ সুবিধাপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। একথা আমি বারবারই লিখি। তাদের কাণ্ড দেখে লজ্জায় ঘেন্নায় আমারই যেন মাথা নীচু হয়ে যায়। অথচ কী সব মানুষ ছিলেন, যাঁদের কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি।

কালকে তাড়াতাড়িতে ডাক্তারখানায় যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। জানলা দিয়ে দেখলাম ফুটপাতের ঘরের দরজার কাছে রান্না চড়িয়েছে এক মহিলা। ভেতরে তার লোকটি বসে কী করছে। পাশের ঘরের চিত্র আর এক। এই চিত্র আমি বাম জমানায় দেখেছি। ক্লাসলেস সোসাইটি যাদের আদর্শ। এই জমানাতেও দেখছি। তৃণমূল স্তরের মানুষদের উন্নতি না কী যাদের লক্ষ্য ছিল। এবং আগামীতেও এই ছবি বদলাবে না জানি। কারণ কোনো পন্থী হওয়ার সুযোগ বা সুবিধা এদের নেই। কেন জানি নিজের অসুস্থতা নিয়ে সেই মুহূর্তে বড় হাসি পেল আমার, মনে হল বড় বিলাস, মনে হল ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ি। কিন্তু এর কোনোটাই করলাম না, যেমন যাচ্ছিলাম, যেতেই থাকলাম...।


জামা বদল করতে পারিনি ঠিকই আসলে যে আদর্শের জামা গায়ে দিয়ে বড় হয়েছি তা বদলানো যায়না, অথচ আজকে তা পড়ে চলাও যায় না। সবটাই অর্থহীন, সবটাই হাস্যকর। তবু মনে হয় একটা কিছুতে স্থির থাকাটা উচিত। নিজেকে বা নিজেদের বদলানো দরকার, জামা না বদলে। যদি সত্যিই মানুষ অন্য মানুষের কথা ভাবতে চায়। বেসিকালি সেটা চায় না বলেই ঘন ঘন কেবল জামা বদলায়।

চাঙ্গায়নী সুধা

ডাক্তার অজয় মুখার্জীর কাছে গেলাম। জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন? বললাম, আপনার ওষুধে সবে মনে হচ্ছিল সেরে উঠছি তো ভাইরাল জ্বরে আমায় কাত করে ফেললে। আর এই নিত্যি অসুখ হতে হতে ইদানীং মাথাটাও আরও বিগড়োচ্ছে, যাকে যা নয়, তাকে তাই বলে ফেলছি। আপনি বরং আমায় ওষুধপত্র না দিয়ে পোয়াটাক চাঙ্গায়নী সুধা দিন কিম্বা হাল্লার রাজাকে মন্ত্রীমশাই যে ওষুধটা দিলেই রাজার গোঁফদাড়িগুলো খাড়া খাড়া হয়ে উঠতো আর এক লাফ দিয়ে নেমে চিৎকার করে উঠতেন, যুদ্ধু যুদ্ধু, সেইটে দিলেও আপাতত চলবে। আসলে আজ ২ তারিখ হয়ে গেল, ১০ তারিখে লাদাখের জন্য রওনা দেব কীনা, এখনও তো কোঁ কোঁ করছি আর ঝিমোচ্ছি আর মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে চ্যাঁচাচ্ছি।

ডাক্তারবাবু দেখেটেখে বললেন বেশ আছেন, যেতে কোনো অসুবিধা নেই, এই না বলে খসখস করে কীসব লিখে দিলেন। বেড়াতে তো আমি এমনিও যাব, ওমনিও যাব। কোমরে যখন প্রবল স্পন্ডাইলোসিসের ব্যথা নিয়ে গোটা চারেক ব্যথার ট্যাবলেট খেয়েও একশোটার ওপর সিঁড়ি ভেঙেছি তখন এতো নিতান্ত তুরুশ্চু ব্যাপার।

আসলে কোথাও বেড়াতে গেলেই আমার মনে হয় জীবনটা বড্ড ছোট, আর তো আসার সুযোগ পাব না, তাই সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে যতটা পারি দেখে নিই, উপলব্ধি করে নিই, কিচ্ছু যেন বাদ না পড়ে, এমন কী কোথাও কিছু সময়ের চাপে বাদ পড়লে রাস্তার মধ্যেই কাঁদতে বসেছি আর হলনা এ জীবনে বলে। বেড়াতে যাওয়াও একধরণের চাঙ্গায়নী সুধা বৈকী।


তবে যদি সেরে উঠি তাহলে চাঙ্গায়নী সুধার জন্য সক্কলকে আমি এই ডাক্তারকেই রেফার করব ভেবেছি। কেমন দেখলেই আধখানা রোগ সেরে যায়। তাহলে বাকী আধখানা আর থাকে কী করে?