Friday, October 9, 2015

পরীক্ষাতন্ত্র


আমার ভাইঝি যখন তার মায়ের পেটে, একদিন আমার মেয়ে তার মিমিকে প্রশ্ন করল, জন্মালে ওকেও কি পরীক্ষা দিতে হবে? মিমি বলল, সে তো হবেই। শুনে হতাশ গলায় মেয়ে বলল, তাহলে আর জন্মে লাভ কী?

পড়াশোনা করতে আমার বেজায় ভালোলাগে, তবে পরীক্ষা দিতে আমারও না। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের চেয়ে পরীক্ষাতন্ত্র ঢের ভালো। আমাদের দেশে এবং অবশ্যই রাজ্যে যা চলছে তা দেখতে দেখতে এই ভাবনাটাই মাথায় ঘুরছে। ওই যে বললাম আজকাল আমায় ন্যাড়ামোতে পেয়েছে। যা ইচ্ছে তাই ভাবছি আর লিখছি। আমার এই দলতন্ত্র কোনোদিনই ভালোলাগেনা। ভোট দেওয়া ছেড়েছি বহুদিন কোনো মানে নেই বলে। কী হবে? আমরা জনগণ লাইন দিয়ে ভোট দিতে যাব। এমনকী মারধোর খাব কীনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারপরে যার হাতে ক্ষমতা সে ছাপ্পা ভোটেই হোক কী নির্বাচন কমিশনে চোখ রাঙিয়েই হোক জিতবে। এরমধ্যে গণতন্ত্র আসছে কোথায়? অতএব আমি লাইনে নেই বাবা। ভোটের দিন নাকে তেল দিয়ে দিব্য ঘুমাই এবং ঘুমাবই।

এর থেকে দলটল সব তুলে দিক। মুখ্যমন্ত্রী, তার সমস্ত সচিব, সহকারী পদে এবং প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রেও বিভিন্ন পদের জন্য পরীক্ষা হোক। তাতে আই এস কী ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষার মতো নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া থাকবে। শিক্ষিত মানুষেরা পরীক্ষা দিয়ে পদগুলিতে বসুন। হ্যাঁ, কিছু মানুষের ব্যবসা বাড়বে - মুখ্যমন্ত্রী সাজেশনস বা প্রধানমন্ত্রী মেড ইজিতে দেশ ছেয়ে যাবে, সে যাক। মাঝে মাঝে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারীও হবে। অন্ততঃ মূর্খমন্ত্রীর জ্বালা থেকে বাঁচা যাবে। ক্ষমতাতন্ত্রের চেয়ে পরীক্ষাতন্ত্র ঢের ভালো।

আর কে বলেছে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ? যতদিন সরকারিভাবে কোথাও রিলিজিয়ন লিখতে হবে ততোদিন ভারত একটি অতীব সাম্প্রদায়িক দেশ। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোনো ধর্ম মানতেই পারেন, কিন্তু সরকারিভাবে বিভিন্ন ফর্মে কেন আমাকে রিলিজিয়ন লিখতে বাধ্য করা হবে? গরু গরু করতে করতে গরুদেরই দেশ হয়ে যাচ্ছে। গোমাতার সন্তানেরা আর কত ভালো হবে?
দল এবং ধর্ম এইদুটো যদি না থাকে, আর কিছু না থাক দেশে চাট্টি শান্তি থাকলেও থাকতে পারে।

বলি কী একবার সব্বাই ভোট দেব না, দেখি কে জেতে? আমরা কেউ ফর্মে রিলিজিয়ন লিখব না, কেমন করে ধর্মের নামে মানুষ মানুষকে মারে? একবার করে দেখিই না সব্বাই।

আরে বাবা মানুষ বলে কিছুদিন নিজেদের ভেবেই দেখিনা, ধর্ম আর রাজনীতির মুখোশ নামিয়ে রেখে।


ব্যক্তিগতভাবে আমি তাই দল মানিনে, ধর্মও, শুধু শিরদাঁড়াটা সোজা রাখি, মানে চেষ্টা করি অন্ততঃ (সেটা যদিও খুব শক্ত স্পন্ডাইলোসিস থাকলে)।

No comments:

Post a Comment