Saturday, October 3, 2015

জার্সিবদল

একজন ভীষণ আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে বামেরা কী করে দক্ষিণপন্থী হয়? আমার মনে হল, তাই লিখলাম, আসলে সকলের এখন একটাই নীতি - ক্ষমতাপন্থী।

বামেদের একটা বড় অংশই তৃণমূলে বা বিজেপিতে চলে গেছে আর বাকী যারা আছে তারা পুলিশের গায়ে পচা ডিম ছুঁড়ে দিনবদলের কথা ভাবছে। কী দিনকাল দেখতে হচ্ছে সত্যি!

আমার বাবা-মা দুজনেই নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বড় হয়েছি রাজনৈতিক তর্কাতর্কি শুনতে শুনতেই। কেন জানি তার মধ্যে ভীষণ আদর্শের গন্ধ লেগে থাকত বলে মনে হত। বাড়িতে থান ইঁটের মত 'ক্যাপিটাল' এর সবকটা খণ্ড ছিল, বাপরে, চিরকাল আমি রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরে।

বাম রাজনীতি নিয়ে বাবার মধ্যে তীব্র হতাশা দেখেছি। একটা বইও লিখেছিল, 'বামপন্থী রাজনীতির সঙ্কট' নামে। না, আমি পড়িনি। বাম জমানায় বড় হয়েছি, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্কট এমনিই হাড়ে হাড়ে অনুভব করি। সিপিএম সিপিআই ভাগ হয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন সিপিআই করেও ছিল। যথেষ্ট পরিচিত নেতাই ছিল। আমাকে কল্যাণদা কেন বাবার নাম বলিনি বলে বকায় আমি উত্তর দিয়েছিলাম, আপনারা আদৌ তাঁকে মনে রেখেছেন এটাই আমার মনে হয়নি, তাই বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। শেষের দিকে বাবা কিছুটা মমতাকে সমর্থনও করত। পশ্চিমবঙ্গের অনেক সাধারণ মানুষের মতোই একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল হয়তো। এ বিষয়ে আমার মত মেলেনি। মা বলে, যদি কাজের লোক খারাপ বলে বদল কর, তাহলে পরেরজন আরো খারাপ হয়। রাজনীতিতেও আমার সেটাই মনে হয়। এবং হলোও তাই। ভাগ্যিস বাবাকে বেঁচে থেকে এই দৃশ্য দেখতে হলনা যে ওদিকে মাইকে মমতার গান কিম্বা স্বপ্ন বাজছে আর এদিকে বামেরা পচা ডিম ছুঁড়ছে।

ক্ষমতাপন্থীরা যত খারাপ, তার থেকেও খারাপ সুবিধাপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। একথা আমি বারবারই লিখি। তাদের কাণ্ড দেখে লজ্জায় ঘেন্নায় আমারই যেন মাথা নীচু হয়ে যায়। অথচ কী সব মানুষ ছিলেন, যাঁদের কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি।

কালকে তাড়াতাড়িতে ডাক্তারখানায় যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। জানলা দিয়ে দেখলাম ফুটপাতের ঘরের দরজার কাছে রান্না চড়িয়েছে এক মহিলা। ভেতরে তার লোকটি বসে কী করছে। পাশের ঘরের চিত্র আর এক। এই চিত্র আমি বাম জমানায় দেখেছি। ক্লাসলেস সোসাইটি যাদের আদর্শ। এই জমানাতেও দেখছি। তৃণমূল স্তরের মানুষদের উন্নতি না কী যাদের লক্ষ্য ছিল। এবং আগামীতেও এই ছবি বদলাবে না জানি। কারণ কোনো পন্থী হওয়ার সুযোগ বা সুবিধা এদের নেই। কেন জানি নিজের অসুস্থতা নিয়ে সেই মুহূর্তে বড় হাসি পেল আমার, মনে হল বড় বিলাস, মনে হল ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ি। কিন্তু এর কোনোটাই করলাম না, যেমন যাচ্ছিলাম, যেতেই থাকলাম...।


জামা বদল করতে পারিনি ঠিকই আসলে যে আদর্শের জামা গায়ে দিয়ে বড় হয়েছি তা বদলানো যায়না, অথচ আজকে তা পড়ে চলাও যায় না। সবটাই অর্থহীন, সবটাই হাস্যকর। তবু মনে হয় একটা কিছুতে স্থির থাকাটা উচিত। নিজেকে বা নিজেদের বদলানো দরকার, জামা না বদলে। যদি সত্যিই মানুষ অন্য মানুষের কথা ভাবতে চায়। বেসিকালি সেটা চায় না বলেই ঘন ঘন কেবল জামা বদলায়।

No comments:

Post a Comment