না কোনোও
লেখার নয়, এটাই ছিল আজ বিকেলের জলখাবারের নাম।
আমার
হাতের বিচিত্র টিফিন খেতে বাড়ির সক্কলে বেশ ভালোবাসে, বিশেষতঃ আমার মেয়ে। নানারকম
ব্যথা-বেদনায় অনেকদিন ধরেই বেশ ঘায়েল, তাই সব বন্ধ ছিল। শীতেই আবার এক্সপেরিমেন্টের
সুযোগ বেশি থাকে। ওদিকে শীতও নেই, আমিও। আজ বিকেলে কিছুটা সুস্থ লাগছিল, তাই বিছানায়
বসে গোটা দুয়েক ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে করতেই মেয়েকে হাঁক দিলাম, ‘ওরে ফ্রিজ খুলে কড়াইশুঁটি,
গাজর আর ঝুড়ি থেকে সবচেয়ে ছোট একটা আলু নিয়ে আয়। সঙ্গে ছুরি, খোসা ছাড়ানোর ইয়েটা আর
গোটা দুয়েক বাটি আর একটা খবরের কাগজ।’ মেয়ে হাতের মোবাইলে খুটখুট আর মুখে ‘হুঁ হুঁ’ করতে করতে খানিক বাদে এনে
দিল। গাজর আর আলু ধুয়েও আনে কী ভাগ্যি আমার!
সব
ছাড়িয়ে কেটে মেয়েকে বললাম, ‘ওরে মাইক্রোওয়েভের হলুদ বাটিটায় জল দিয়ে বসিয়ে দে পাঁচ
মিনিট। দেখিস সব যেন জলে ডুবে থাকে। চাট্টি নুন ফেলে দিস জলে।’ মেয়ে মোবাইলে চোখ রেখেই করে যায়
সব কাজ। আমাদের মাইক্রোওয়েভের আবার এখন দুটো বাটনই শুধু কাজ করে – স্টার্ট আর পজ। স্টার্ট
বাটনটা একবার টিপলে তিরিশ সেকেন্ড চলে। ফলে অঙ্ক অনুযায়ী দশবার টিপলে পাঁচ মিনিট
হয়। এভাবেই সে চলে, চলে যায় বহুদিন। আমারই মত নড়বড়ে আর গড়বড়ে হয়ে (শেষবার যে
সারাতে এসেছিল সে পাশের একটা-দুটো স্ক্রু না লাগিয়েই চলে গিয়েছিল, আমি ছিলাম না
তখন)।
যাইহোক,
যে গল্প করছিলাম। দেখতে দেখতে পাঁচ মিনিট কেটে যায়। আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে ধীরেসুস্থে উঠে সেদ্ধ সবজি নিয়ে মিক্সিতে ঘুরাই।
সেটা বহুবার দোকান ফেরত হয়ে, ইদানীং প্রচণ্ড চিৎকার করে, তাহোক চলে তো। সে তো আমিও
করি আর চলি ফের। তারপর আদা, জিরে, লঙ্কা গুঁড়ো, বেকিং পাউডার আর নুন দিই, চাট্টি টমেটো সসও, সবই
আন্দাজে। তারপর একটা বেসনের প্যাকেটে যেটুকু বেসন ছিল তলায়, ঢেলে দিই। তারপরেও ঠিক
জমে না। চাট্টি ময়দা ফেলি। আচ্ছা, এতটা যখন হলই, তখন একটু ডিমের গোলায় ডুবিয়ে
ভাজলে ভালো হত নাকি? দুটো ডিম ভেঙে গোলা বানিয়ে নিই চট করে। তেল গরম করে ছাড়ি। ওই
যাহ্, একদফা ভেজে আর তো বেশি নেই দেখি! ওরই মাঝে মা, এক পাক ঘুরে যায় রান্নাঘরে,
বলে, ‘এরসঙ্গে কফি হলে বেশ হত।’ বলি, ‘সব হচ্ছে মা,
কিচ্ছুটি ভেবো না, বুইকে বললাম তো, নতুন কাপগুলো আর প্লাস্টিকের রঙিন
প্লেটগুলো বার করতে, ওরে কোথায় গেলি?’ মেয়ে মোবাইল থেকে মুখ না তুলেই বলে, ‘দাঁড়াও দাঁড়াও, সব তো জল
দিয়ে ধুয়ে রাখছি, কাপের তলায় কালো দাগ কিসের?’ বলি, ‘ও নিয়ে ভাবিস না, ওটা
ইনবর্ন।’
ফ্রিজে
পাঁউরুটির গোটাদুয়েক টুকরো ছিল। তারই একটা সামান্য ভিজিয়ে, চটকে আরেকটু নুন দিয়ে
মেখে নিই। এই তো দিব্যি বেড়ে গেছে। আরেকদফা ভেজে ফেলি। ওরই ফাঁকে অন্যদিকে কফি হতে
থাকে, টুকটাক বাসন ধুয়ে রাখি। এবারে চপের মণ্ড আর প্রায় নেই। তাতেও মন্দ কি? শেষ
পাঁউরুটিটাকে টুকরো টুকরো করে পাত্রের গায়ে লেগে লেগে থাকা ওই মণ্ডের সঙ্গে মাখিয়ে নিই। ডিমের গোলা তো অনেকটাই
আছে। ব্যস্, আজকে ঠেকায় আমায় কে? টপাটপ গোলায় ফেলি আর তুলি আর কড়াইতে ছাড়ি। বড়িয়া
বড়া হতেই থাকে। ওরই ফাঁকে টপ করে অথবা কপ করে একটা খেয়ে দেখেছি, নুন ঠিক আছে। নাহ্,
ঝালের কথা বলে লজ্জা দেবেন না, সতেরো বছরের মেয়ের আমার ঝুড়িতে লঙ্কা দেখলেই চোখে
জল আসে।
খেতে
খেতে মেয়ে জিজ্ঞেস করে, মা জিজ্ঞেস করে, জানতে চায় মেয়ের বাবাও, এটা ঠিক কি? বলি, ‘ওই যে বললাম, ‘কোনও কথা হবে না’। মা বলে, ‘তা তো বুঝলাম, কিন্তু
রেসিপি?’ বলি, ‘দাঁড়াও আগে লিখি, তারপরে পড়ে নিও, ব্লগে-ফেসবুকে।’
মেয়ের
দিকে ফিরে বলি, 'খেতে পারছিস তো? - এন্ডস্ ওয়েল দ্যাট অলস্ ওয়েল, কি রে ভুতো?’
কী
আশ্চর্য সব্বাই সায় দেয়!!
No comments:
Post a Comment