আজকে হাতে এল ‘একুশ শতাব্দী’ এবং পুণা থেকে প্রকাশিত একটি
বাংলা পত্রিকা ‘অভিবাসী’-র লেখক কপি। ‘অদ্বিতীয়া’-র জানুয়ারি সংখ্যাও ডাকযোগে
পাঠানোর জন্য ওরা ঠিকানা নিয়েছে। প্রিন্টে বিভিন্ন পত্রিকা, খবরের কাগজ, লিটল
ম্যাগাজিনে প্রায় বছর পনেরো ধরে লেখার অভিজ্ঞতায় আমি জেনেছি ছোটপত্রিকাগুলির
সাম্মানিক দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও লেখককে একটি কপি বই দিয়ে সম্মান জানায়। আর
বাণিজ্যিক কাগজ-পত্রিকাগুলি লেখক কপি দেওয়ার পাশাপাশি সম্মানদক্ষিণাও দিয়ে থাকে।
অবশ্য এক হিসেবে এই ব্যাপারটা ছোট থেকেই দেখেছি যেহেতু বড় হয়েছি একেবারেই
লেখালেখির পরিবেশে। আন্তর্জাল পত্রিকার ক্ষেত্রে লেখককে জানিয়ে দিলেই মিটে যায়।
যেহেতু অধিকাংশই অবাণিজ্যিক প্রয়াস এবং লেখা পড়ার জন্য একটা ক্লিকই যথেষ্ট।
আগামী মে মাসে ‘আমাদের ছুটি’ পাঁচ পেরিয়ে ছ’বছরে পা রাখছে।
একবছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে কলকাতার নন্দন চত্ত্বরে ‘জীবনানন্দ সভাঘর’-এ আমরা একটা
ঘরোয়া আড্ডা আর ছবি দেখার আসর করেছিলাম। অতিথিদের চা ছাড়া কিছুই খাওয়ানো সম্ভব
হয়নি। সম্পূর্ণ আয়োজন আমরা দুজনে মিলেই করেছিলাম, সাধ্যে যা কুলিয়েছিল। নন্দন
চত্ত্বরের একটা সুবিধা আছে যে চাইলেই বেরিয়ে টুক করে খেয়ে নেওয়া যায় টুকিটাকি।
কারণ এত জনের খাবারের আয়োজন করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। সেবারেই আশাতীত
দর্শক পেয়েছিলাম আমরা। হলটি ছোট হওয়ায় অনেকে বসার জায়গাও পাননি একটাসময়ে। এরপরে
অনেকবারই অনেকে বলেছেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে তেমন কোনও আয়োজন করে ওঠা সম্ভব হয়নি।
আগামীতে ইচ্ছে রয়েছে সাধ্যে এবং বিশেষ করে আমার শরীরগতিকে কুলালে। আরেকটা কথাও
বারবার মনে হয়েছে, বা অনেক পাঠক অনুরোধও করেছেন – ‘আমাদের ছুটি’-র বাছাই লেখার
একটি সঙ্কলন করার জন্য। সত্যি ফ্রি পিডি এফ-এ অনেকেই ডাউনলোড করেছেন ঠিকই, তবু
হাতে নিয়ে পাতা উলটে পড়ার একটা আলাদা মজা থাকে সবসময়েই। যথেষ্ট ভালো গুণমানের অনেক
লেখাই ইতিমধ্যে এই পত্রিকায় বেরিয়েছে তা পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি, মতামত এবং আগ্রহও বলে
দেয়। এছাড়াও আমার মনে হয়েছে, শুধুমাত্র ‘কথোপকথন’ গুলি আলাদা করে পুস্তকাকারে
প্রকাশ করলে সেটাও সাক্ষাৎকারের একটি সংগ্রহযোগ্য বই হবে তো নিশ্চয়। কিন্তু আমাদের
পক্ষে বই ছাপানো এবং বিক্রি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আর্থিক বা ব্যবসায়িক কোনও দিক
থেকেই সম্ভব হয়ে উঠবে না বুঝেছি। তবে একবার আবার আড্ডায় বসার ইচ্ছেটা আছে অবশ্যই।
বছর দুয়েক আগে একটি ভ্রমণ অনুষ্ঠানের সারাদিনের আমন্ত্রণ
পেয়ে বাস-ট্রেন-রিক্সা ইত্যাদি ঠেঙিয়ে গিয়ে দেখলাম সকালের জলখাবার থেকে দুপুরের
খাওয়া, বিকেলের চা, সবই কুপন কেটে যথেষ্ঠ অর্থব্যয় করে খেতে হচ্ছে। নাহ্, অমন নানা
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়ে আর যাইনি। কী মুশকিল এত কষ্ট করে অন্যের বক্তব্য শুনতে
যাব, নিজের টাকা খরচ করে, তায় কিনে খেতে হবে কুপন কেটে। আমার বাপু নন্দন চত্ত্বরই
ভালো, কিনেই খাব যদি, কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
কিছুদিন আগে একটি আন্তর্জাল পত্রিকার তরফে একটি আশ্চর্য
প্রস্তাব পেয়েছিলাম। তারা একটি বাছাই সঙ্কলন প্রকাশ করছে, তাতে আমার একটি লেখা
মনোনীত হয়েছে। কিন্তু আমাকে সেই সঙ্কলনের কুড়িটি কপি কিনতে হবে। প্রত্যেক কপির দাম
একশো টাকা। এবং তাও পুরো টাকাটা অ্যাডভানসড নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে
হবে। প্রথমটায় যাকে বলে শকড্ হলাম – বিমূঢ় বলা যেতে পারে খানিক বাংলায়। উত্তর
দিতেই পারছিলাম না। তারপরে একটু ঠাণ্ডা হলে জানালাম, আমার লেখা প্রকাশের দরকার
নেই। ওই অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। সত্যিই নেই, আমি তো পরস্মৈপদী থুড়ি
বরস্মৈপদি, তায় ছাপোষা কেরানির বউ। যে যেখানে টাকা চায়, বলি উনি আসুন, তারপরে।
এভাবেই চাঁদাওলাদের কাছ থেকে বেমালুম আত্মরক্ষা করি আমি।
যত ক্ষুদ্রই লেখক হই, একটু হলেও সম্মান তো প্রাপ্য?
সাম্মানিক দেওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব হয়না, আমরাও পারিনা নিজেদের পকেট থেকে ‘আমাদের
ছুটি’ করতে গিয়ে। কিন্তু তাই বলে পত্রিকার সঙ্কলনের জন্য লেখকের কাছে অর্থ চাইব?
আমার তো যুক্তিবুদ্ধিতে কুলায়নি। তবে কবেই আর বুদ্ধিমান ছিলাম? কিছু কিছু বোকামো তবু
ভালো বলেই মনে হয় আমার জীবনে।
এই প্রসঙ্গে মনে হল, আমার গবেষণার কাজটা এই যে প্রকাশকেরা
নিজেদের থেকে আগ্রহ দেখিয়ে প্রকাশ করছেন, এই সম্মানটুকু পেয়ে তাঁদের কাছে
ধন্যবাদার্হ্য হয়ে আছি আমি। নাহলে নিজের বই আমার হয়তো কোনোদিনই প্রকাশ করা হত না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেনা এমনটা নয়। যত ভ্রমণ কাহিনি লিখেছি এযাবত, ঝেড়ে-বেছেও কয়েকটা
খণ্ড হয়ে যায়। কবিতাও তথৈবচ। গল্প তুলনায় কম, কিন্তু অন্ততঃ একটা বইয়ের জন্য
যথেষ্ট। মা মাঝে মাঝেই বলে, আর আমিও আশ্বাস দিই, হবে হবে, সময় হলেই হবে। শুধু
মেয়েকে চুপি চুপি বলে রেখেছি, জীবদ্দশায় যদি কিছুই না বেরোয়, মরে গেলে অন্ততঃ
বাছাই একটা ভ্রমণ কাহিনির বই প্রকাশ করিস। বাংলা ভ্রমণ কাহিনি নিয়ে এত পরিশ্রম করে
যাচ্ছি, সেই তালিকায় নামটুকু থাক।
No comments:
Post a Comment