Saturday, January 16, 2016

ডিম-সবজির হুলুস্থুলু

গল্পটা বোধহয় বছরখানেকের পুরোনো, তবে যেকোনো সময়ের জন্য কাজের!

আমি রান্নায় তেমন পটু নই। তবে খেতে ভালোবাসি আর রান্নার বই পড়তেও খুব ভালো লাগে। আমার মেয়ে টিফিন নিয়ে একটু বায়না করে। ফলে কখনও কেনা টিফিন খাই আবার কখনওবা এটা-ওটা বানিয়ে দিই। সেটা চেনা কিছু অথবা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত। আবার এক একটা খাওয়ার পিছনে ছোটখাটো কাহিনিও তৈরি হয় অনেকসময়সেসব এখানে প্রকাশের যোগ্য কীনা জানিনা।

তাও আজকের গল্পটা বলি -

সন্ধ্যায় মেয়েকে বললাম, এই গরমে রান্নাঘরে ঢুকতে ভালো লাগছেনা। এদিকে বাড়ির কাছের চাউমিনের দোকানটাও বন্ধ। মেয়ের বক্তব্য খুব খিদে পেয়েছে, কিন্তু আমি মুড়ি, চিঁড়ে ইত্যাদি (অখাদ্য –এটা উহ্য অবশ্য) খাবনা। ওতো রোজই সকালে স্কুল যাবার আগে সোনামুখ করে খেয়ে যাই। বরং না খেয়ে থাকব তাও সই। বাবা বলল খাবিনা ঠিকাছে। খানিকক্ষণ না খেলে কিছু হবেনা, পড়াশোনা কর। আমি আর কী করি ( একে মা তায় তারতো আবার পরীক্ষা চলছে অতএব পেট এবং মনমেজাজ দুইই খুশি রাখতে হবে) ফ্রিজ খুলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম যে কী কী পাওয়া যেতে পারে।

এর পরের কথোপকথনটা খাওয়ার পর।তার আগে অবশ্য মেয়ের আবদারে বাবার মোবাইলে খাবারের ছবি উঠেছে।

কন্যাঃ মা, তোমার এই রেসিপিটা ফেসবুকে আমিষ রান্নায় পোস্ট করনা।

মাঃ দূর লোকে হাসবে।

কন্যাঃ তাহোক, তুমি বল না কী লিখবে।

মাঃ (ওপরের ভূমিকাটি বলে নেওয়ার পর) প্রথমে ফ্রিজ খুলে দেখুন, নিশ্চয় ডিম থাকবে। গোটা দুয়েক ডিম বার করে এবার সবজির বাক্সটি টেনে নিন। আপনিতো জানেনই যে আজ গাজর আর বিন নেই, কী আর করবেন ক্যাপসিকাম আর টমেটোই বার করুন। আর এই মন্দার বাজারেও দু’একটি পেঁয়াজ আর আলু আপনার ভাঁড়ারে নিশ্চয় আছে। এবারে একটা আলু টুকরো টুকরো করে মাইক্রোওয়েভে সেদ্ধ করতে দিন। আধখানা ক্যাপসিকাম, একটি টমেটো, একটি পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কেটে নিন। এবারে একটি পাত্রে ডিমদুটি ফাটিয়ে নুন আর বেকিং পাউডার দিয়ে বেশ করে ঘেঁটে নিয়ে তারমধ্যে সবজি কুচি ও আলু সেদ্ধ ভালো করে মিশিয়ে নিন(আমার মেয়ে ঝাল খেতে পারেনা, তাই কাঁচা লঙ্কা কুচির পরিবর্তে গোলমরিচ গুঁড়ো)। তাও পরিমাণে কম কম লাগছে? আরে, কেউ খায়নি বলে ফ্রিজে একটা পাঁউরুটির পেছনের টুকরো পড়ে আছেতো, এই সুযোগে সেটাও উঠে যাবে, অতএব ওটাকে টুকরো টুকরো করে দিয়ে দিন। তাও যেন ঠিক জমছেনা, ডিমটা কমতো, আরেকটা ডিম দেব? তার চেয়ে বরং বেসন আছেতো, তাই খানিকটা দিয়ে দিই। বেসনটা জলে গোলার কোন মানেই হয়না, দুধ আছেতো। এইতো বেশ অনেকটা হয়েছে। এইবারে ফ্রাই প্যানে তেল গরম করে ছাড়া যেতে পারে।
ওমা, তাও কেমন ছাড়া ছাড়া লাগছে! যাকগে, আরেকটা ডিমের অপশনতো ছিলই। ঘেঁটে নিয়ে ওপরে ছড়িয়ে দিই। সব ফাঁকফোকরগুলো চমৎকার বুজে যায়। এই গরমে আর কাঁহাতক দাঁড়ানো যায়, দূর ছাই ওপরের পিঠটা কিছুতেই ভাজা হচ্ছেনা যে – দিই বাড়িয়ে। এই য্ যা... একটু পোড়া পোড়া গন্ধ আসছেনা? চট করে বন্ধ করে দিই বরং। ওপাশে কফিটা বানাই, ভাপে ভাপে এটা ঠিক হয়ে যাবে...।
প্যান উলটে বড় থালায় অদ্ভুত ওমলেটটি(?) ঢেলে নিয়ে ওপরে টমেটো সসটা একটু কায়দা করে ঢেলে দিন, দিব্যি ডেকরেশন হয়ে যাবে (আর কিছুই নেই যখন)। তারপর ছুরি (কার্টিলারি না থাক, সবজি কাটার ছুরিটাতো আছে, ওতেই চলবে) চামচ সাজিয়ে স্মার্টলি কফির সঙ্গে পরিবেশন করুন। দেখবেন মেয়ের মুখ কেমন হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আর আমাকে দুধ-মুড়ি দিলেও কোন অসুবিধা নেই বলা মেয়ের বাবার মুখেও স্মিত হাসি। সে এক অসাধারণ ঘরোয়া মুহূর্ত।

পুঃ আপনাদের ভাগ্য ভাল যে ফ্রিজে কাঁচকলা আর ওলও ছিল, কিন্তু সেগুলো দিয়ে কোন গন্ডগোল বাঁধাইনি।

কন্যাঃ আর এটার নাম কী রাখবে মা?


মাঃ সবজির ওমলেট নয়, সেতো আগেই খাইয়েছি, এতে অনেক ভেজাল আছে। বরং ডিম-সবজির হুলুস্থুলুই নাম দিই, মানে এটা না বানালে যা হত আরকী...

No comments:

Post a Comment