ভারতবর্ষ একটি ধর্মভিত্তিক দেশ, কোনও ধর্ম
নিরপেক্ষ দেশ নয়। ঈশ্বরে বিশ্বাস নয়, ঈশ্বর ব্যবসাই যার মূল ভিত।
এ দেশের একটা বড় অংশের মানুষই জানেন ঈশ্বর
মানার বিষয় নয়, অন্যকে মানানোর বিষয়। ধর্ম এখানে ব্যবসা এবং রাজনীতির একটা বড় হাতিয়ার
মাত্র। রামদেব অথবা লোকনাথের মতো জীবিত এবং মৃত বিরিঞ্চিবাবা ও তাদের অনুগামীরা হল
সবথেকে বেশি যুক্তিবাদী মানুষ যারা ধর্ম নিয়ে জমিয়ে ব্যবসা করে। বিজেপি এবং তার সহকারি
দলগুলো আদৌ হিন্দুত্ববাদী নয়, তারা ধর্মকে ক্ষমতা এবং রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে খুব ঠাণ্ডা
মাথায় ব্যবহার করে। তর্কের বিষয় হলেও ধর্ম এবং জাতবিভেদ পরস্পরের হাত ধরে হাঁটে এই
অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক খেলায়। আমরা জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে প্রতিনিয়ত তার শিকার হই।
রোহিত ভামুলা-র মতো কেউ কেউ সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক
এবং দেশীয় রাজনীতির শিকার হয়। বাকি অধিকাংশ যারা ধর্ম নামক ব্যবসার মস্তিস্ক প্রক্ষালণের
শিকার তারা টের পাইনা, যেমন করে জলের তলায় হাঙরে পা কেটে নিলেও টের পাওয়া যায় না। আসলে
সংরক্ষণ তো হওয়া উচিত অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপর। সেখানে কোনও রাজনৈতিক দলই, সে দক্ষিণ-বাম,
হিন্দুত্ববাদী-অবাদী কেউই কিন্তু এই পদক্ষেপ নিতে সাহস করবে না। কারণ মানুষ নয়, সকলেরই
নজর একটাই – ভোটব্যাঙ্ক – সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু উভয়ের মন রাখাই তাই তাদের ধর্ম।
সেই সেপারেট অ্যান্ড রুল থিয়োরি অব্যাহত আজও।
রোহিত ভামুলার আত্মহত্যা বা কালবুর্গীর
হত্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, নিয়মিত ঘটনাক্রমের একটি আলোচিত অংশমাত্র। কিছুদিন পরেই
বাসী খবর হয়ে যাবে, কিছু বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের পর। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি একই থাকবে
যতদিন এদেশে-ওদেশে সর্বত্র ধর্ম আর জাতের ব্যবসা চলবে। সাধারণ মানুষ যতদিন না ধর্ম
বিশ্বাস এবং জাত-পাতের ভেদ থেকে নিজেকে বার করে আনতে না পারছে ততোদিন এই মৃত্যুমিছিল
চলবেই সর্বত্র। আসলে ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ পারতপক্ষে বোকা। তারা বোঝেই না তাদের এই
বোকামিকেই হাতিয়ার করে একেবারে অবিশ্বাসী কিছু মানুষ, যারা তাদের হিন্দু-মুসলিম কী
দলিত-ব্রাহ্মণ বানিয়ে তুলেছে।
কাল থেকেই মাথায় ঘুরছে গানটা – ‘কী আমাদের
জাত আর ধর্মই বা কী?/ ফুলের ডালা যখন তোমার সামনে সাজাচ্ছি/ তোমাদেরই জন্যে যখন কাগজ
বানালাম/তার উপরে লিখবে বলে রাম রাম রাম’…।
সত্যিই তো, কী আমাদের জাত আর ধর্মই বা
কী, এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানোর আমাদের সময় হয়েছে আজ।
No comments:
Post a Comment