Monday, August 31, 2015

ভালোমানুষ আর রাজনীতি

রাজনীতি নিয়ে আমার ধারণা খুব কম। আরো কম অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার কথা বললেই মনে পড়ে 'কালান্তর' কাগজে কাজ করার দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে চন্দনদা আর কল্যাণদার কথা। আচ্ছা, বিবাহিত মহিলা হলেই সব জায়গায় কেন জিজ্ঞাসা করে দ্বিতীয় সন্তানের ইচ্ছা রয়েছে কী না? জানিনা, অন্যদেরকে করে কী না, আমায় তো কালান্তর আর স্বর্ণাক্ষরে দুজায়গাতেই করেছিল। কী উত্তর দিয়েছিলাম মনে নেই, তবে স্বর্ণাক্ষরে পরে মহাশ্বেতা বলেছিল, আমি নাকি অমরেন্দ্রবাবুর এই প্রশ্নের উত্তরে স্বতস্ফূর্তভাবে বলেছিলাম, পাগল নাকি? কালান্তরে চন্দনদা না কল্যাণদা কে এই প্রশ্নটা করেছিল মনে নেই। হাজার কী বারোশো টাকার মতো পেতাম মাস গেলে, তাই তার নাম ছিল স্টাইপেন্ড। কিন্তু কাজ করতে বেশ লাগত। এমনকী রোজ ছা্রপোকা মারতে মারতে আর কামড় খেতে খেতেও। কালান্তরের চেয়ার-টেবিলগুলোই আসলে বিপ্লবী ছারপোকাদের দখলে ছিল। কিম্বা ছারপোকা মারাটাই হয়ত বিপ্লবের প্রথম পর্যায়।
চন্দনবাবু, কল্যাণবাবু ডাকায় দুজনেই আঁতকে উঠে বললেন, হয় কমরেড বলো, নয় দাদা। দেখলাম কমরেড বলার মতো বিপ্লবী হতে পারিনি, দাদা-ই ভালো। এখানেই আমার সাংবাদিকতার ঠিকঠাক হাতেখড়ি। কাজ করার ভীষণ স্বাধীনতা ছিল। তর্ক হত নানা বিষয়ে, এমনকী ওনাদের সঙ্গে মতবিরোধও। কিন্তু কাজের পরিবেশ প্রথমদিকে বেশ চমৎকার ছিল। আমি দেখেছি কোথাও কাজ করতে গেলেই আমার কাজের ঠেলায় কিছু মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, কিছু লোকের বিরাগভাজন হই। তেমনই কিছু সমস্যা হল মূলতঃ নিউজ এডিটরের সঙ্গে। আমার তো আবার ভয়ানক রাগ। ব্যাগপত্র গুটিয়ে বললাম, চললাম। চন্দনদা, কল্যাণদা ডেকে বিস্তর বোঝালেন। শেষে চন্দনদা বললেন, আমি তোমার বাবার মতো, আমি প্রবীরবাবুর হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। তুমি এত ভালো কাজ শিখেছ, ভালো কোনো জায়গায় সুযোগ পাও, যেও, সেদিন বারণ করব না, কিন্তু এভাবে যেও না। তারপরে স্বর্ণাক্ষরে চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত কাজ করেছি। হ্যাঁ, নিউজ এডিটরের সঙ্গে একটাও কথা না বলেই দীর্ঘদিন কাজ করেছি তারপর। এটা চন্দনদা, কল্যাণদা আমাকে মাথায় করে রাখত বলেই।
একবারই শুধু কল্যাণদার কাছে বকুনি খেয়েছিলাম, আমি হিতেন ঘোষের মেয়ে সেটা বলিনি বলে। উত্তরে বলেছিলাম, আপনারা তাঁকে আদৌ মনে রেখেছেন কিনা তাতো বুঝিনি, তাছাড়া আমি নিজের পরিচয়েই কাজ করতে চেয়েছি। অবশ্য মায়ের কথা জানতেন, কারণ কালান্তরে মায়ের বেশ কয়েকটা উপন্যাস বেরিয়েছিল শারদীয় সংখ্যায়।
কাগজে পড়েছিলাম গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে চন্দনদার আত্মহত্যার কথা। খুব মনখারাপ হয়েছিল। কেন যে এ কাজ করলেন অমন নিরীহ নিপাট ভালোমানুষ লোকটা।

আজকের এই নোংরা রাজনীতি দেখতে দেখতে পিতৃপ্রতিম মানুষটিকে মনে পড়ে খুব। আর কল্যাণদা আজও নিশ্চয় হাত নেড়ে সেই টিপিকাল ভঙ্গীতে নিউজের গুরুত্ব, কোনটা কোথায় কেন যাবে বোঝাচ্ছেন। আচ্ছা নতুন ছেলে মেয়েরা আমাদের মতো এঁড়ে তক্ক করে তো?
কাজ শুরু করার প্রথমদিনেই দুজনের কেউ একজন বলেছিলেন মনে আছে, আমাদের 'পুলিশ' কিন্তু তালব্য শ।
চারদিকে দেখছি পুলিশে অথবা পুলিসে মানুষের ওপর লাঠি চালাচ্ছে অথবা পার্টির গুঁতোয় টেবিলের তলায় ঢুকছে, আর আমি কেবল ভেবেই যাচ্ছি যে এই পুলিশ তালব্য শ না দন্ত স!!

No comments:

Post a Comment