Monday, November 14, 2016

গণমাধ্যম!

একজন সাংবাদিক হিসেবে যে বিষয়টা আমাকে আজ সবথেকে ভাবায় তা হল আজকে গণমাধ্যমের অবস্থান।

এ দেশে সংবাদমাধ্যম অর্থাৎ খবরের কাগজ চালু হওয়ার প্রথম দিকে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল দুরকম। বৃটিশ কাগজগুলি ইংরেজ শাসনের পৃষ্ঠপোষকতা করত এবং ভারতীয় কাগজগুলি ইংরেজ বিরোধীতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, আমজনতার বয়ান এবং তাদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরত। এতে যেমন বিচিত্র ভাষা-ধর্মের একটা দেশের মধ্যে প্রতিদিনের জীবনের বঞ্চনা শোষনের একটা যোগসূত্র স্থাপিত হতো ঠিক তেমনি ইংরেজ বিরোধীতার একটা সাধারণ রূপ ধরা পড়ত।

খুব স্বাভাবিকভাবেই উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী এর যেটুকু সুফল পেয়েছিল তা সাধারণ মানুষ পায়নি। আবার এই উচ্চ ও মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশই ছিল শাসক শ্রেণীর দালাল।

এর ব্যতিক্রম বলতে যাঁর নাম বারবারই মনে পড়ে তিনি 'গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা' (১৮৬৩)-র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার। কাঙাল হরিনাথের কাজ ও লেখা আজও প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় আমার।

সংবাদমাধ্যমগুলির পরিবেশনা দেখলে এখন যেটা মনে হয়, খবরের স্লট বা পাতা ভরতে তারা যতটা আগ্রহী ততোটা 'খবর' নিয়ে নয়। কিছু রয়েছে পরিস্কার পৃষ্ঠপোষক গণমাধ্যম যা সরাসরি সরকারের যে কোনও নীতি সমর্থন করে। এটা সবসময় ছিল ও থাকবে। কিছু গণমাধ্যম সব দিক বজায় রেখে চলে যাতে পাশা উলটোলেও তার ক্ষতি হবে না। এরা সবচেয়ে ক্ষতিকর।

আরও ক্ষতিকর যেটা, গণমাধ্যমের শুরুর দিকে 'গণ' তে মাধ্যম চালাতো এখন ওই 'মাধ্যম' চালায় 'গণ' কে। আর তাই রিক্সাওলাও বলে, 'এবারে পাকিস্তান পুরো বুঝবে।' তা তুমি বুঝলে কী করে জানতে চাইলে বলে, 'টিভির ওমুক চ্যানেল বলছিল।'

একটা সময়ে কাগজে প্রতিবাদী চিঠি লেখার একটা বেশ চল ছিল। তখনও সোশাল মিডিয়ার যুগ নয়। অনেকটা জায়গা নিয়েই ছাপা হত কিন্তু বেশিরভাগই এডিটেড ভার্সন। অপছন্দের চিঠিপত্র ওয়েস্ট পেপার বাস্কেট ভরাতো। কাগজে চিঠি লিখেই লেখক হিসেবে খানিক প্রতিষ্ঠাও পেয়ে গেলেন কেউ কেউ। এখনও বেরোয় কিন্তু সেই ব্যাপারটা আর নেই।

সোশাল মিডিয়া এক হিসেবে মানুষের মুখপাত্র হয়ে দাঁড়ালো। আর্থিকভাবে একেবারে নীচুতলার মানুষেরা অবশ্য এর আওতার বাইরেই আছেন এখনও। যদিও এখন রিক্সাওলার পকেটেও মোবাইল। ফুটপাতের মানুষও রেডিওর বদলে মোবাইলে মন দেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়া যাকে বলে। কম টাকায় নেট কানেকশন, ফ্রি ওয়াইফাই-এর পর, বিনাপয়সার সিম অজস্র অফার।

একটা প্রশ্ন জাগে, মানুষ যখন সহজে তার ক্ষোভ বিস্তৃত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে তখন তার প্রয়োগ করার ইচ্ছে বা ক্ষমতা আর কতখানি থাকবে?


তবে মিডিয়া যখন আঁটঘাট বেঁধেই নোট বাতিলের পরেরদিন পেটিএম এর বিজ্ঞাপন ছাপে, তখন মনে হয় যারা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করছেন তাঁদের আর্তনাদের অন্তত একটা উপায় বা মাধ্যম থাকুক। এখনও যাকে গণমাধ্যম বলতে পারি।

No comments:

Post a Comment