Wednesday, November 9, 2016

কাক্কেশ্বর উবাচ

কাক বলল, 'দুশো দুগুণে কত হয়?'
আমি বললাম, চারশো।
কাক মাথা নেড়ে বললো, 'হলো না, হলো না পাঁচশো।'
আমি রেগে গিয়ে বললাম, বললেই হলো, সবাই জানে দুই দুগুণে চার।
কাক বলল, 'সেটা নির্ভর করছে পাঁচশো টাকাটা নতুন না পুরোনো?'
আমি বললাম, সে আবার কি?
কাক বলল, 'ধরো কালোবাজারি আর জাল টাকার কারবার রোখার কথা বুঝিয়ে সরকার পুরোনো পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট রাতারাতি অচল করে দিলো...'
রেগে গিয়ে বললাম, দিলো তো দিলো, তাতে কি অঙ্ক বদলে যাবে?
কাক বলল, 'যেতেই পারে। ধরো তুমি একজন সাধারণ মানুষ, ধরো তোমার বাড়িতে এবার মাইনের টাকায় সব পাঁচশো আর হাজার টাকা এসেছে, ধরো তুমি রাত এগারটা থেকে এটিএম এ লাইন দিয়ে একটা-দুটোর বেশি একশো টাকা তুলতে পারলে না, ধরো তোমার পৌঁছনোর আগেই এটিএম মেশিন বসে গেল, ধরো কাল তোমার বাজারের টাকা নেই, ধরো তুমি বেড়াতে গেছো আর সঙ্গে পাঁচশো আর হাজার টাকার নোটই আছে, ধরো তোমার মেয়ের বিয়ে...' - কাক তো সমানে ধরো এই ধরো ওই বলেই যেতে লাগল।
আমি শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম, তাতেই বা কি?
কাক বলল, 'এও বুঝলে না!'
বললাম, না।
কাক বলল, 'তোমার যখন খুব দরকার তখন দেখবে পাঁচশো টাকা নিয়ে কেউ তোমাকে দুশো, আড়াইশো, তিনশো, চারশো টাকা দিচ্ছে আর তুমিও প্রয়োজনে তাইই নিয়ে নিচ্ছ। তাহলে দুশো দুগুণে পাঁচশো হল কিনা বল? দুশো এক্কে পাঁচশো হলেই বা ঠেকাচ্ছে কে?'
এই বলে পেন্সিলটা ঠুকতে ঠুকতে বলল, 'বিরক্ত কোরো না তো, কালো টাকা আর সাদা টাকার হিসেব মেলাতে দাও। হাতে একদম সময় নেই মাত্র বাহাত্তর ঘন্টা।'
আমার তো ততক্ষণে অঙ্কটঙ্ক সব মাথার মধ্যে গুলিয়ে গেছে।
রেগে গিয়ে বললাম, ধুত, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
কাক বলল, 'এ আবার না বোঝার কী আছে? ধরো তোমার কাছে অনেক কালো টাকা আছে। সে আর কি তুমি দেশে রাখবে? বিদেশের ব্যাঙ্কে, সোনায়, শেয়ারে খাটিয়ে রাখবে। তুমি যদি মাঝারি মানের কালো টাকা রাখো বালিশে আর কমোডে, তাহলে ওই বালিশেই মাথা দিয়ে আর ওই কমোডেই ইয়ে করে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। আর তুমি যদি সাধারণ মানুষ হও আর তোমার যদি কালো টাকা না থাকে তাহলে তো আরওই কেলেঙ্কারি। এমন তো নয় যে গত দু-এক দিনও এটিএম থেকে শুধু একশো টাকার নোট বেরিয়েছে তাহলে এই যে এবার দুদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ এটিএম বন্ধ ঠেলা সামলাও।'
আমি বললাম, নাহয় পেটে পাঁচশ-হাজার টাকা বেঁধে বাহাত্তর ঘন্টা কষ্ট করা গেল, দেশ থেকে কালো টাকা আর জাল টাকা তো কমবে?
কাক বলল, 'সে বলা আরও কঠিন। সে একমাত্র বলতে পারে আমাদের মোদী দাদা।'
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কিরকম?
কাক বলল, 'প্রশ্ন হচ্ছে যাদের ভোটে জিতে সরকার ক্ষমতায় এলো, তাদের কালো টাকা গেলো কোথায়? সেটা স্কুপের আগে বদলালো না পরে? কারণ নতুন পাঁচশো-দুহাজার টাকা তো ছাপানো হয়ে গেছে ঘোষণার আগেই। তারপরেও প্রশ্ন হচ্ছে, এক হাজারের বদলে দু হাজার টাকা করা হল কেন? টাকার অঙ্কটা যত বেশি হবে ততোই যারা জাল টাকার কারবার করে তাদের পক্ষেও সুবিধা আর যারা কালো টাকার লেনদেন করে তাদের পক্ষেও।'
আমার আরওই সব গুলিয়ে গেল। কাককে আবার প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলাম তো কাকটা ভারী রেগে গিয়ে বলল, 'বড় যে বকবক করেই যাচ্ছ, আমার বুঝি সময়ের দাম নেই? সময় ভারী মাগগিগণ্ডা এখন আর সব আমি খুচরোয় নিচ্ছি আগামী বাহাত্তর ঘন্টা।'
আমি দুহাতে চাপড়ে দেখলাম জন্মদিনে পাওয়া একটা পাঁচশো আর একটা হাজার টাকা ছাড়া আর কিচ্ছু পকেটে নেই।

কী আর করি ওই দুটো হাতে নিয়ে মোবাইল তাক করে কাক্কেশ্বরের সঙ্গে সেল্ফি তুলতে গেলাম। কিন্তু ছবিটা ক্লিক করার আগেই সে 'কী সব্বোনাশ কী সব্বোনাশ সব হিসেব-বেহিসেব ফেসবুকে আপলোড করে দেবে রে, কী কেলেঙ্কারি' এই বলতে বলতে উড়ে গেল।

No comments:

Post a Comment