Wednesday, August 31, 2016

রইল গাঁথা মোর জীবনের হারে

অনেকদিনপর একটা সকাল কুড়িয়ে পেলাম। একেবারে যে ঘুম পাচ্ছে না তা নয়। কিন্তু বসে আছি, কাজ করছি, আর জানলা-দরজা উপচে সকালটা আমার ঘর ভরে আছে। ইদানীংকালে বেড়াতে গিয়েও ভোর দেখিনি মন ভরে। অথচ বাড়িতে ঘুম কাতুরে হলেও বেড়াতে গিয়ে চিরকাল আমার ভোরে ওঠা অভ্যেস।

পাহাড়ের ঠান্ডা ভোর অদ্ভুত একটা শান্ত রকমের হয়। আবার সমুদ্রের গন্ধ মেখে যে ভোর হয় তার স্বাদটা একটু নোনা। জঙ্গলের ভোর একটু ভেজা ভেজা বুনো গন্ধ আর পাখির ডাকে মিস্টি। কত জায়গার ভোর যে কতরকম! বেনারসকা সুবা ঔর লখনৌ কা সাম বলে তো কথাই আছে। কাশীর ঘাটের সকাল যেন অনন্তকাল ধরে একইরকম রয়েছে। কেউ স্নান করছে, কেউ মন্ত্রপাঠ, কেউবা পায়রাকে খাওয়াতে ব্যস্ত, পেল্লাই সাইজের ষাঁড়েরা ফুল-মালার সন্ধানে এদিক-ওদিক মাথা ঘোরাচ্ছে, পাথরের মালা কী ফুল-প্রদীপের পসরা নিয়ে বসে আছে বা ঘুরে বেড়াচ্ছে হেঁকে হেঁকে দোকানিরা, মাঝিরা নৌকো থেকে ডাকাডাকি করছে গঙ্গায় ভেসে পড়ার জন্য, বিদেশি পুরুষ-নারী ভারতীয় পোষাকে ঝোলা কাঁধে গল্প করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর দূরে পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে মগনলালের সাজানো বজরা। এমন আরও কত চিত্র! আর ওই যে কুয়াশামাখা আগ্রার ভোর কুয়াশায় মুখ মুছে একটু একটু করে জাগছে শ্বেতপাথরের তাজমহল। তার মাথার ওপর এসে পড়ছে সূর্যের প্রথম আলোর মুগ্ধতা।

বেড়াতে গিয়ে শেষ ভোর দেখেছিলাম দার্জিলিং-এ। কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরে যখন একটু একটু করে লালের ছোঁয়া লাগছিল। লাদাখে রোজ ভাবতাম আগামীকাল ঠিক ভোর দেখবই। পরেরদিন যখন ঘুম ভাঙতো ঘরজোড়া দেওয়াল দিয়ে তখন সকাল ঢুকে এসেছে। তা সকালই সই। এবার পুরীতেও তাই। চোখ মেলতেই রোদ্দুর।

এখন তো রোজ সকালে হয় খুব ব্যথা থাকে নড়তে পারিনা অথবা খুব ঘুম পায় হয়ত ওষুধের জন্য, তাকাতেই পারিনা। তাই ভোর না হোক, আজকের এই সকালটুকু হঠাৎ পেয়ে রেখে দিলাম আঁজলা ভরে।


কখন আসে একটি সকাল, সে যেন মোর চিরদিনের চাওয়া। সেইটুকুতেই জাগায় দখিন হাওয়া...

নাহ্‌, দখিন হাওয়ার সময় তো আসেনি, বৃষ্টি এলো ঝেঁপে।

No comments:

Post a Comment