আজকের
দিনে কোন সাধারণ মেয়ে অথবা নিরুপমাদের কী কাহিনি লিখতেন রবি ঠাকুর জানিনা।
একশো-দেড়শো বছরে আমরা যতই বলিনা কেন সমাজে মেয়েদের অবস্থা এবং অবস্থান বদলেছে,
সত্যিটা কিন্তু ভিন্ন। মুষ্টিমেয় তথাকথিত শিক্ষিত কিছু মহিলা খানিক সুযোগ-সুবিধা
ভোগ করলেও সামগ্রিক চিত্রে এবং সর্বোপরি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীতে কিছুই বদলায়নি।
কন্যা ভ্রূণ হত্যা থেকে ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান হার তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এখন
মরিয়া অথবা ধর্ষিতা হইয়াও তা প্রমাণ করা বড় সহজ নয়। লোকলজ্জা, সমাজের অনুশাসন তো
রয়েইছে, এসব থেকে বেরিয়ে এসে কোনো মেয়ে যদি সাহস করে লড়াই করে তাহলে আইন আর
রাজনীতি তাকে বাঁচতে দেবে না। প্রমাণ করা বা শাস্তি তো অনেক দূরের কথা। আগেকারদিনে
জমিদাররা ধর্ষণ ও খুন করে হয় লাস জলে ভাসিয়ে দিত নাহলে বিষ দিয়ে আত্মহত্যার নাটক
সাজাত। সেখানে তাও সমাজের ভয়ে কিছুটা গোপনীয়তা থাকত। এখন এই মানসিকতা রয়েই গেছে,
বরং ছড়িয়ে গেছে সমাজের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত এবং সবই ঘটছে সর্বসমক্ষে। যার সঙ্গেই
রাজনৈতিক ক্ষমতার আঁতাত সেই নির্ভয়। অতএব আইন তার হাতে। রবি ঠাকুরের সাধারণ মেয়েরা
এখন প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভোগে হত্যা এবং ধর্ষণের, নিজের এবং কন্যা সন্তানদের, কারণ সে
বলিয়াছিল, মরি নাই, ধর্ষিত হইয়াছি। তার কন্যা সনাক্ত করেছিল ধর্ষণকারীদের - ন্যায়বিচারে
যারা মুক্ত!
সমাজের
বিচারে আজও সেই দোষী – কেন সে ধর্ষিত হয়েছে? নিশ্চয় পুরুষটিকে লোভ দেখিয়েছিল।
নাহলে তার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে এমন কাজ করবে? আর যদি ভুল করে করেই থাকে, তাহলেই
বা এত বলার কী আছে? তুমি মেয়েমানু্ষ, এ তোমার লজ্জার বিষয়, কোথায় গোপন করবে, তা
নয়, আবার নালিশ জানাচ্ছ? আস্পর্ধা তো কম নয়!! এবার বোঝ ঠেলা। তখন বাপু আমাদের দোষ
দিতে এসো না।
এরপরে তো
আরও অনেক ব্যাপার আছে, একে তো মেয়েমানুষ, তারপরে তুমি কোন দলে? তুমি যদি কোনো দলে
না হও তাহলে বহু বছর আগে মরে যাওয়া তোমার স্বামী নিশ্চয় বর্তমান শাসক বিরোধী দলে
ছিল, মানে ছিলই। নাহলে খামোখা তুমি ধর্ষিত হবে কেন? তুমি যদি জল না খেয়েও থাক,
তোমার ঠাকুরদাদা তো এই ঘাটে জল খেয়েছিল। তাও তো ভাগ্যিস হিন্দু পাড়ায় তুমি
মুসলমানের ঘরের বউ হয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে নালিশ করনি, কিম্বা উল্টোটা।
মোদ্দা
কথা, তুমি মেয়েমানুষ, চুপচাপ থাকবে। তোমার কিছু প্রমাণ করার নেই।
No comments:
Post a Comment