Wednesday, November 4, 2015

কণা কণা কুড়িয়ে পেলেম তারে

ছেলেবেলায় আমাকে এক মিনিবাসের কন্ডাক্টর ভারী স্নেহ করত। বাসে উঠলেই মামনির জন্য জানলার ধারের সিটের ব্যবস্থা করা চাই। একবার তো কোনো এক জানলা নিয়ে এক সহযাত্রীর সঙ্গে ভারী গোলমাল হয়েছিল। আমি বায়না ধরেছিলাম, ওই জানলাতেই বসব। আর যে লোকটা বসেছিল, সেও উঠবে না। শেষে কী হল, তা মনে নেই অবশ্য।

গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি আমাদের পাড়ার এক রিক্সাওলা আমাকে খুব স্নেহের চোখে দেখে। স্নেহ পাওয়ার বয়স পেরিয়ে চুল পাকলেও। আজকে ভাবতে ভাবতে আসছিলাম যে আমাকে হয় ওর মেয়ের মতো দেখতে, নাহলে ঠাকুমার মতো। নইলে এত বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও লোকটা আমায় এত কেন পছন্দ করে? আসলে পাড়ার রিক্সাওলাদের রিক্সায় চড়িনা সেও প্রায় বছরখানেকের বেশি। এ বলে ও নিয়ে যাবে, ও বলে আমি যাব না, এসব করে বিরক্ত হয়ে ধুর যাবনা হয়ে গেছে। যদিও এই লোকটির সঙ্গে কোনোদিনই কিছু হয়নি। রিক্সায় উঠি না বলে কিছু রিক্সাওলার রাগ হয়। ফলে আর কারোর রিক্সাতেই চড়িনে। আগে কিন্তু রাস্তায়ঘাটে দেখলে পাড়ার রিক্সাওলারা এগিয়ে আসত নিয়ে যাবে বলে, কী যে হয়েছে ওদের কে জানে! এখন বরঞ্চ একটু এগিয়ে সামনে যে রিক্সাস্ট্যান্ড থেকে উঠি সেইসব জায়গার রিক্সাওলারা রাস্তায় তুলে নেয় অনেকসময়। সে যাইহোক, এর রিক্সায় যখন চড়তাম আমি, দিব্য গল্প করতে করতে যেতাম। এখনও যাই কখনও অন্য রিক্সায়। এই রিক্সাওলা আমার সঙ্গে কথা বলবে কী বলবে না তা কিছুদিন বুঝতে পারছিল না, আমারও একই অবস্থা। দু'জনেই দেখা হলে হাসব কী হাসব না মুখ করছিলাম। কিছুদিন হল আবার কথা শুরু হয়েছে। বাকীদের থেকে দূরে কোথাও দেখা হলেই একগাল হাসি - কেমন আছেন? মেয়ে কেমন আছে? আরও নানা কথা। নিদেনপক্ষে হাসি।


আজ সকালে ফিজিওথেরাপি করতে যাওয়ার সময় দেখা হল। খুব একগাল হেসে আমার দিকে হাত নাড়িয়ে টা টা করে চলে গেল। তারপর থেকেই ভাবছি, আমাকে নিশ্চয় ওর মেয়ের মতো দেখতে অথবা ঠাকুমা-দিদিমা। অকারণে এত ভালোবাসা নইলে...

No comments:

Post a Comment