Tuesday, December 22, 2015

সংশোধনাগার

আমি সততই মৃত্যুদণ্ড বিরোধী। কারণ যে কেউ এমন কী রাষ্ট্রও কাউকে হত্যা করতে পারে এমনটা আমি মনে করি না। মৃত্যুদণ্ড একটি দোষী অথবা নির্দোষ মানুষের প্রাণ নিলেও মূল সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারে না। এমন কী সমস্যাটাকে কমাতেও পারে না। খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি যে সমস্ত অপরাধের বিচারে অনেকসময় মৃত্যুদণ্ড হয়ে থাকে সেই সমস্যাগুলো মোটামুটি রক্তবীজের ঝাড়ের মতন। কোনো দৃষ্টান্তেই তা পালটে যাওয়ার নয়। আসলে পালটাতে হবে মানসিকতা। মানুষের মধ্যে অন্যের প্রতি অত্যাচারের যে মানসিকতা তা আসে আর্থ-সামাজিক এবং নৈতিক অবদমনের থেকে। এর শিকার হয় তুলনায় যে কম শক্তিশালী – সাধারণত নারী এবং শিশু। যে অত্যাচার মিডিয়ায় আসে তা চর্চিত হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তি হয় বা হয় না। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বৃহত্তররূপে অত্যাচারের ধারাবাহিক ইতিহাস মানব সমাজে রয়েছে, যা আলোচিত নয় অথবা আড়াল করে রাখা হয়। দু’এক জনকে মেরে ফেলাটা এই সমস্যার কোনো সমাধান নয়। এমন কী ওই মেরে ফেলার ভেতর দিয়ে আমরা যারা কোনভাবেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নই, যে তৃপ্তি পাচ্ছি, তাও ওই অবদমনের বহিঃপ্রকাশ কিনা তা ভাবার আছে। আসলে আমরা যতটা সরল অঙ্ক কষে কোনো ব্যাপার আপাত মিটিয়ে ফেলতে চাই, বিষয়টা ততটা সরলও নয়, আর মিটিয়ে ফেলারও নয়। সমস্যার মূল নিয়ে না ভাবলে বা সমাধানের চেষ্টা না করলে চিরকাল কোনো কোনো ধনঞ্জয় সত্যি সত্যি খুন এবং ধর্ষণ করে ফাঁসি যাবে, কোনো কোনো ধনঞ্জয় এর কোনোটাই না করেও ফাঁসি যাবে, আবার কোনো কোনো ধনঞ্জয় দুটো করেই ফাঁসি যাবে না। এর যেকোনোটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঘটতে থাকবে। অর্থাৎ ধর্ষণ, খুন এবং রাষ্ট্র কর্তৃক বিপরীত খুন এই প্রথা চলতে থাকবে। কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে না কোথাও। আমার মনে হয় এই কোনোমতে সমাধান না করে বিষয়টা নিয়ে সোসিও-সাইকোলজিকাল আসপেক্টে ভাবা এবং তা নিয়ে বড় আকারে কাজ করাটা ক্রমশঃ ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সবার জন্যই সংশোধনাগার দরকার। এমন কী আমাদের জন্যও।

No comments:

Post a Comment