Monday, December 14, 2015

চাঁদা

গতকাল শনিপুজোর চাঁদা চাইতে এসেছিল, আর ঠিক ওইসময়ে আমার অসহ্য দাঁত ব্যথা করছিল। অতএব ...।

সে যাইহোক পরে ভাবছিলাম, চাঁদা কয়প্রকার ও কি কি, এবং চাঁদা কেন দেব?

ভেবে দেখলাম চাঁদা মূলতঃ দুই প্রকার – মানবস্বার্থে চাঁদা এবং ঈশ্বরস্বার্থে চাঁদা। মানবস্বার্থে চাঁদা আবার দুই প্রকার – জনস্বার্থে এবং ব্যক্তিগতস্বার্থে।

ব্যক্তিগতস্বার্থে মানে, কারখানা বন্ধ, বাবার ক্যানসার ইত্যাদি। জনস্বার্থে মানে মূলতঃ বন্যা এবং কখনও কখনও ভূমিকম্প।

ব্যক্তিস্বার্থে আরও একরকম অলিখিত চাঁদা হয়, তা হল, দরকার না থাকলেও নিয়মিত কোনো সেলসম্যানের কাছ থেকে জিনিসপত্র কেনা।

ঈশ্বরস্বার্থে মানে প্রধানতঃ বার্ষিক দুর্গাপুজো, কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতী পুজো ইত্যাদি। এই ইত্যাদির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শনি এবং লোকনাথ। তারমধ্যে লোকনাথ আবার মানব ভেকধারী দেবতা। তবে তেত্রিশ কোটির তুলনায় যৎসামান্য তা স্বীকার করতেই হয়।

এবার প্রশ্ন আসে চাঁদা কেন দেব, এবং দিলেও কাকে দেব?

ব্যক্তিস্বার্থে আমার মতে তুলনায় সেলসম্যান ভালো, যদি সে চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে না আসে। কারণ এরা সরাসরি ভিক্ষা চায় না। কারখানা বন্ধ বা বাবার ক্যানসার গোছের একটা বড় অংশ সত্যি হয় না, বানানো হয়। তবু সিমপ্যাথেটিক গ্রাউন্ডে কখনো দেওয়া চলে। বন্যা বা ভূমিকম্প ত্রাণ আমার মতে পরিচিত কোনো সংস্থার মাধ্যমে দেওয়া ভালো। সেক্ষেত্রে টাকাটা যথাস্থানে পৌঁছনোর সম্ভাবনা তুলনায় বেশি থাকে।

এইসব চাঁদা তাও মধ্যবিত্তের পক্ষে দেওয়া সম্ভব, সামর্থ্য অনুযায়ী। কিন্তু ঈশ্বরস্বার্থে যে টাকা চাঁদা হিসেবে দাবী করা হয়, তা যারা চাঁদা চায় তারাই ঠিক করে অঙ্কটা ঠিক কত হবে। আমি কী দিতে পারব তা বিবেচ্য নয়। অনেকক্ষেত্রেই মদ বা ফূর্তিতেও এই টাকার অধিকাংশটা ব্যয় হয়, বেচারা ঈশ্বরকে সামনে রেখে। অনেক জায়গায় এটা জুলুমের আকার নেয়। এখন প্রশ্ন যাঁরা ঈশ্বর মানেন, তাঁরা নাহয় ভক্তির থেকে চাঁদা দিলেন। আমার মতো কাঠ নাস্তিকেরা কেন চাঁদা দেব? সবচেয়ে বড় কথা ধরে নিলাম কিছু মানুষ বিশ্বাস থেকেই হোক আর ফূর্তি করার জন্যই হোক জনৈক ঈশ্বরকে খাড়া করেন। তা করুন। আমি বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতে যাচ্ছি না। কিন্তু তাঁদের বিশ্বাসের জন্যই হোক অথবা ফূর্তির জন্য, খামোখা আমাকে কেন টাকা দিতে হবে?

সাধারণতঃ অপরিচিত হলে চাঁদার লোককে আমি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিই। বিশেষ করে দাঁতে যন্ত্রণা থাকলে আরোই। মুশকিল পাড়ার লোকজনকে নিয়ে। খুব বিরক্ত লাগলেও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয়।

এতো ভিক্ষা চাওয়ারই রকমফের, লোকে বোঝে না কেন, বিশেষ করে যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তারাও যখন বেচারা ভগবানের নাম করে চাঁদা চায় তখন মানুষ হিসেবে নিজেরই কেমন লজ্জা লাগে। ওই যে লোকগুলো চা বাগানেই হোক কী আলূর ক্ষেতে মরে যাচ্ছে, ওদের জন্যও তো চাইতে পারত। পারত তো নিজে দিয়ে সেই কাজটা শুরু করতে?


আমি বাপু বেকার মানুষ, চাঁদা কিম্বা দাঁতের ডাক্তারের ভিজিট সবেতেই পরস্মৈপদী। তাই ফ্ল্যাটের সামনে “পথের কুকুর মারিবেন না”, পোস্টারটা তুলে “চাঁদা চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, অবশ্য এখানে দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী, শনি, ইতু, ঘেঁটু ইত্যাদি যাবতীয় দেবতা এবং অপদেবতা, অধিদেবতার প্রসাদ হাসিমুখে গ্রহণ করা হইয়া থাকে” – এমন পোস্টার একখানা মারব ঠিক করেছি। 

No comments:

Post a Comment