গতকাল
অশোকাদির কাছে গিয়েছিলাম। সেই ছোটবেলার প্রিয় শিক্ষিকা, আদর্শও। সম্পর্কটা যদিও অনেক কাছেরই ছিল। ভীষণ খুশি হলেন।
আনন্দে খাওয়ার সময় একদলা ভাতও খাইয়ে দিলেন। দুপুরবেলায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে
দিতে বললেন, জানিস কিছুদিন ধরেই খুব মনখারাপ
লাগছিল,
তুই ফোন করলি সেদিন, খুব আনন্দ হয়েছিল। ওনাকে নিয়ে লেখা কবিতাটা কাগজে লিখে দিতে বলেছিলেন, সেটাও পড়তে হল। খানিক আবেগ, খানিক ভালোলাগা সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল কিছু মুহূর্ত। হ্যান্ডিক্যাপড দিদিকে
নিয়ে খুব সমস্যাতেই আছেন, বিশেষত তাঁর
নানারকম বাতিক হওয়ায় আর বড় রকমের নিউওমোনিয়া পর্ব থেকে সদ্য উঠে আসার জেরে। নিজেরও
অস্টিওপোরেসিস নিয়ে মাঝে কিছুদিন হাঁটাচলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ চিকিৎসা আর
হরমোন ইঞ্জেকশন নিয়ে এখন কিছুটা ভালো।
বিকেল-সন্ধ্যে
নাগাদ ছাদে বসে গল্প করছিলাম। ফুলবাগান করেছেন মালীর সহায়তায়। রূপনারায়ণপুরের
কাঠচাঁপাও রয়েছে সেখানে। বললেন ছোটবেলায় একবার স্কুল থেকে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ
ওয়ার্কসের কারখানা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। সেবারে পাঁচটা টাকা, তখনকার দিনে অনেকই, হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারপর একটু নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কে জানত আমার অন্ন ওখানেই বাঁধা আছে। পাশের বাড়িটা দেখিয়ে
বললেন,
ওই যে ছাদের চিলেকোঠার ঘর বি এড পড়ার সময় ওখানেই দিনরাত
কাটত। বাবা লিখে দিয়ে গেলেন সৎ দাদাকে। ভাগ্যিস মায়ের এই জমিটা আমাদের দুই বোনের
নামে দানপত্র করেছিলেন। তারপরেও তো এই ফ্ল্যাট করার জন্য কত লড়াই, মামলা করতে হয়েছে...। এইসব সিরিয়াস কথার মাঝেই নানান মজার
কথা বলছিলাম আমি। মাঝে মাঝেই হো হো করে হেসে উঠে বলছিলেন, কতদিন পরে যে হাসলাম দময়ন্তী কে জানে!
অশোকাদি
খুব ঈশ্বরে বিশ্বাসী। বললেন, মন দিয়ে ডাকলে
সত্যি কিছু হয় রে। আমার খুব একা লাগছিল, খুব মনখারাপ লাগছিল আর ঈশ্বর তোকে পাঠিয়ে দিলেন। বললাম, তোমার ঈশ্বরের আক্কেলটা কী বল তো, বেছে বেছে আমার মতো নাস্তিককেই পাঠালেন? লোকটা কিন্তু ভারী গন্ডগোলের।
আমাকে
খালি আদর করেন, আর বলেন, তুই সেই একই রয়ে গেছিস। আমি মাথা চুলকে ভাবি পনেরো-ষোলর পর
সেই পঁচিশ আর সাতাশে দেখা, তারপরে আবার
পনেরো বছর পর। বলি এক থাকি কী করে?
অবশ্য
বয়স যতই বাড়ুক। প্রায় না থাকা পেনসনে জমা টাকা ভেঙে যাওয়ার নিয়ত দুশ্চিন্তায়, এখনও চলতে থাকা মামলার ভারে, নিজের এবং দিদির অসুস্থতায়, অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের আশঙ্কায় চিন্তার যতই ভাঁজ পড়ুক চোখেমুখে, আমার কাছে তিনি তো সেই সাতাশের হার্টথ্রব। বিকেল বেলায়
আমাকে বাসে তুলে দেওয়ার আগে চট করে পড়ে নিলেন তাঁর সেই সিল্কের শাড়ি। ছাত্রী যে
ঢুকেই বলেছিল, ওমা তুমি সাজোনি কেন, বোধহয় তাই।
ওই যে
একদিন লিখেছিলাম না ভালোবাসার হাজার রঙ হয়, অথবা রকমের, হয়তো। বিশ্বাস করলেই হয়।
এভাবে যখন ভালোবাসার কথা বলেন, তখন হিংসা, লড়ালড়ি, আমার চাই-ই ইত্যাদিকে অন্য গ্রহের ভাবনা বলে ঠাহর হয়!!!
ReplyDeleteসেইটা হলেই তো ভালো হত গো
ReplyDelete