Tuesday, December 8, 2015

বাঘের ল্যাজ অথবা বেড়ালের মাথা

এই গল্পটা আমি আগে করেছি। লিখেছি কিনা মনে নেই। বড্ড ভুলে যাচ্ছি তো আজকাল। সে যাইহোক কিছু কিছু গল্প আবার করে বলতেও ভালোলাগে, কেউ শুনুক ছাই না।

আমার কাগজে লেখালেখির শুরু ধনঞ্জয়ের ঘটনা দিয়ে। সে তো আগেই বলেছি। যদিও লেখাকে পেশা করবটা ভাবিনি, হয়ত সে অর্থে করতে পারিও নি। এর আরও একটা কারণ, যেটা আমার সহজে আসে সেটার থেকে কঠিন কাজ আমায় টানে বেশি।

সরকারি চাকরির বিস্তর চেষ্টা করে এমন কী টাইপ মেশিন আটকে গিয়ে পর্যন্ত আমার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। কী করে যেন একদিন একটা হলেও হতে পারে কাগজের সঙ্গে জুটে গেলাম। মানে তখনও প্রকাশিত হয়নি সেটা। একেবারে শূন্য থেকে শুরু যাকে বলে আর কী। আর সেটা সব দিক থেকেই – পদমর্যাদা আছে, কিন্তু বেতন নাই। যদিও তখন নতুন কাজের নেশায় বুঁদ হয়ে আছি।

আমি সাংবাদিকতা করতে পারব এটা কেউ কোনোদিনও বিশ্বাস করেনি। সে বাবা হোক বা দেবেশমামা। আমি অলস বলে না রুগ্ন তা জানিনা। যেখানেই ইন্টারভিউ দিতে গেছি, তাদের হরেক প্রশ্নের মধ্যে থাকে, আপনি পারবেন তো? বলি পারব পারব। কী জানি বাবা, আমাকে কী না পারার মতো দেখতে? সাংবাদিক হলে বুঝি খুব রাফ আর টাফ হতে হবে? মোটাসোটা, গোলগাল, হাসিখুশি সাংবাদিক হয়না নাকি? চিরকাল তো আমার কোমর-পিঠ ব্যথা ছিলনা। তবে চিরকালই খামখেয়ালি। তাতে আর সাংবাদিকতায় কী যায় আসে!

যাইহোক সাংবাদিক হতে পারি ছাই না পারি, রোজ নিয়ম করে অফিস যেতাম, খবর লিখতাম আর একটা বা গোটা দুয়েক ইয়াব্বড়ো পোস্ট এডিটোরিয়াল। তাতে কী বিষয় নেই – চা বাগানের শ্রমিক দুর্দশা থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা কী বাংলা ভাষা চর্চা। জানি বা না জানি কোনো টপিকেই আমি পিছপা নই। আসলে পরীক্ষা হলে বসে প্রথমবার রচনা লিখতে আমি বেশ অভ্যস্ত। আসলে সবসময়েই আমার ধারণা, সাংবাদিকের ডিকশনারিতে কোনো বিষয়ে লিখতে পারব না, এটা থাকতে নেই। মানে সাংবাদিক মানেই সবজান্তা হতে হবে, আসলে হোক বা না।

প্রায় বছরখানেক কখনও চালু, কখনও বন্ধ থেকে অফিসের জায়গা বদল করতে করতে অবশেষে একদিন কাগজ বেরোলো। শুরু হয়েছিল, বৌবাজার চত্ত্বরে, বেরোলো যাদবপুর এইট বি-তে। তখন শহরের এপার থেকে ওপার রোজ যাই। অমনিই যাই। দারুণ উত্তেজিত, প্রায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আনন্দ তখন আমাদের।

কিছুদিন চললে মাইনে পাওয়া যাবে আশা আছে। যদিও আমার তখন পেলেই বা কী আর না পেলেই বা। জীবনে কখনও নিজের বা অন্যের খাওয়া-পড়া নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি, সেদিক দিয়ে ভাগ্যবান অবশ্যই। কারণ সে দায়িত্ব থাকলে না খেয়ে থাকার এবং এক বা একাধিকজনকে থাকানোর মতো ঘটনা হতেই পারত। কে জানে!

যাইহোক দিন সাতেক কাগজ চলার পর নতুন একদল ছেলে জয়েন করল। তাদের একজনকে দেখিয়ে কাগজের মালিক কাম এডিটর বললেন, এ হল নিউজ এডিটর। এর কথামতো আপনারা চলবেন। আমরা দলে চারপাঁচজন ছিলাম। এরমধ্যে আমি আর গৌতম বলে একটি হাসিখুশি প্রাণবন্ত ছেলে – দুজনে ঠিক করতাম কী খবর যাবে, কে কোনটা লিখবে ইত্যাদি। প্রধান পরিশ্রমটাও আমরাই করতাম। আমাদেরই হাতে গড়া কাগজে যখন দুদিনের বৈরাগী জুড়ে বসল তখন ওই মতো মানাটা বেশ শক্ত হল। বিরক্ত হয়ে কাজটা ছেড়ে দিলাম। তারপর ‘কালান্তর’ খায় না মাথায় দেয় তার খোঁজে সোজা ঝাউতলার অফিসে হানা দিলাম। কী আছে কালান্তর ফেরত হওয়ার বাড়তি মহিমা? যাইহোক নানাবিধ প্রশ্নের পর মাস ছয়েক পরে জয়েন করার ডাক এল।

সে তো অন্য গল্প। কিন্তু ওই গৌতমকে আমার মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে এখনও। বিশেষতঃ ওর একটা কথার জন্য। একদিন বলেছিল, বাঘের ল্যাজ হওয়ার থেকে বেড়ালের মাথা হওয়া ভালো। এরপরে ও কাজ ছেড়ে দিয়ে আজকাল-এ জয়েন করে। এখনও সেখানেই আছে বলেই জানি। জীবন ওকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে গেলেও ওর কথাটা আমার মাথায় গেঁথে দিয়ে গেছে। আর তাই বোধহয় কোনোদিন বাঘের ল্যাজ হতে পারিনি।


বেড়ালের মাথা না হোক তালব্য শ হলেও চলে যাবে।

2 comments: