Tuesday, December 22, 2015

লালন বলে জেতের কী রূপ দেখলেম না এই নজরে...

মায়ের কাছে আমন্ত্রণ এসেছিল বাংলায় বর্তমান বাউল-ফকির গোষ্ঠীকে সসম্মানে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যিনি প্রায় নিঃশব্দে লড়ে যাচ্ছেন, সেই শক্তিনাথ ঝা-এর কাছ থেকে, বাউল-ফকির সম্মেলনে যাওয়ার জন্য। এদের নিয়ে আমার পড়াশোনা একেবারে শূন্য, মানে সব দাদা জানে আর কী। দুই ভাই-বোনে মা-কে নিয়ে যাব ওইটেই তো মজা। আর বাকি সব উপরি পাওনা।

শক্তিবাবুর এবং অন্য কয়েকজন বক্তার কিছু কথা বেশ লাগল। মনে যে ছায়া রয়ে গেল তার থেকেই লিখছি। বাউল এবং ফকির এই দুই গোষ্ঠীকে আমরা সাধারণত আলাদা বলেই ধরে নিই। অর্থাৎ কী না বাউল হল হিন্দু এবং ফকির মানে মুসলমান। অথচ বাউল-ফকিরদের জীবন এবং যাপনের মূল কথা কিন্তু মানুষ এবং ভালোবাসা। যে সব কিছু ত্যাগ করেছে, সেই হল ফকির। লালন যেমন নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় ফকির বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে যারা কার্যক্ষেত্রে নিজেকে বাউল বা ফকির যে কোনো একটা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে কিছু সুবিধা পেতে চান, তারা আসলে কোনোটাই নন। জাতিভেদ, ধর্মভেদ এই সবের বিরুদ্ধেই এই বাউল-ফকির আন্দোলন। যা আজকের পরিপ্রেক্ষিতে আরও-ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শক্তিবাবু বললেন, তাঁদের সামর্থ্য কম, রান্নার আয়োজন সামান্য। রান্না করেছেন ওখানকারই এক গ্রামের মানুষজন। মুসলিম এই গ্রামের মানুষেরা বংশানুক্রমে নিরামিষ খান। মাছ, মাংস, ডিমের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। অথচ অনেক বৈষ্ণব আছেন যাঁরা গান শুনতে এসে এঁদের হাতে রান্না বলে খান না।

আরেক জনের একটা কথাও বেশ লাগল। তিনি বললেন, বাউল বা ফকির আসলে একটা জীবন-যাপন।

গান তো কত জনেই গাইল। যে গানটা সবচেয়ে প্রাণে গেল সেটা যিনি গাইলেন তিনি আপাত বাউল-ফকির নন, কলকাতা থেকে গিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা, লেখালেখি করেন, গানটা তাঁর নিজেরই লেখা। নিজেকে খোঁজার কথা বললেন তাঁর গানে।


যাঁরা এই বাউল-ফকির গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন তাঁরা কতটা সেইভাবে আত্মস্থ করেছেন বা ভাবেন তাতে সন্দেহ আছে। তবু তাঁদের হাত ধরেই বয়ে চলুক মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টার এই গানের এবং প্রাণের পরম্পরা। ধর্ম এবং সন্ত্রাসের দিনে কিছু মানুষ তবু ভালোবাসার কথা শোনাক।

No comments:

Post a Comment