Monday, December 21, 2015

ইয়ে তেরা ঘর ইয়ে মেরা ঘর, ইয়ে ঘর বহত হাসিন হ্যায়

গতকাল সকাল অবধি একটা ঘরে ছিলাম। আজ সকালে আরেকটা ঘরে ফিরলাম। ইংরেজিতে হোম শব্দটা যে নৈকট্যভাব বহন করে বাংলা ‘ঘর’ শব্দটা দিয়ে কি সেটা বোঝানো যায়? ভাবছিলাম। বাসা-র সঙ্গে আসলে ভালোবাসার একটা খাসা সম্বন্ধ আছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত যে ঘরে অথবা বাসায় অথবা বাড়িতে ছিলাম সেখানে আজান, সুজান, ইন্দ্রনীল, এবং আরও আরও সকলের সঙ্গে একরাত্তির-সকাল গল্প-আড্ডা-ঘুমে কেটে গেল। রাতে আমাদের সকলের জন্য বারবার করে উঠে দরজা খোলা-বন্ধ করছিলেন নুরুল হুদা, বাড়িটি যাঁর। সকালবেলায় থালায় থালায় মুড়ি এল, গরম চা আর বিস্কুট। ভিড় সরতে মায়ের সঙ্গে ভাব জমাতে বাড়ির বউটি হাজির হল। মাকে তার বোনের বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যাবে, এই ইচ্ছে। গাড়ি এসে গিয়েছিল, তাই রীতিমতো খিদে আর খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মাছের ঝোলভাতটা খাওয়া হলনা অনেক অনুরোধেও। ভাবছিলাম, ইস্‌, ঘন্টাখানেক আগে বলত যদি...। আগের রাত্তিরে মাঠে পাতা পেড়ে গরম ভাত-ডাল আর ঘ্যাঁট তরকারি দিব্য লাগল। গান কতটা প্রাণে গেল জানিনা, তবে মানুষ দেখলাম। ওইজন্যই তো ভ্রমণ – নিজেকে জানা আর অন্যকে দেখা। “আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না, এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা...”।

বাড়ি ফিরতেই শঙ্করীদির হাতের গরম পরটা আর গরমাগরম চা মিলল আর সেধে খাওয়ালো মিস্টি। ভারী খুশি মনে জানালো, ‘টিফিনের জন্য কালকে ভাইকে ফোন করে বললাম মিস্টি আনতে’। বাড়িতে না থাকলে আমি সাধারণত কী রান্না হবে, কী টিফিন হবে সব আগাম না-থাকার দিনগুলোর জন্য বলে রাখি। এবারে শঙ্করীদি বলল, তোমায় কিচ্ছু চিন্তা করতে হবে না। আর আমিও দিব্যি নিশ্চিন্তে চলে গেলাম। মাঝে একদিন কী কাজে নিজের ভাড়া বাড়ি যাওয়ার ছিল, তাও ভাই আর বুইয়ের অসুবিধা হবে বলে গেল না। আসলে মেয়েদের মধ্যে সংসার করার বা বাসা বাঁধার একটা সাধ বোধহয় রয়েই যায়। অল্পবয়সে স্বামী ছেড়ে চলে গেছে আর এখন ছেলে-মেয়েরা যোগাযোগ রাখে, আপদে-বিপদে আসে, ওই পর্যন্তই। তাতে আর যাই হোক সংসার করার সুখটা জমে না। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে সেই বাসা বাঁধার আনন্দ পেয়েছে হয়ত এখানেই। এইতো এক্ষুনি আমায় বলে গেল, দুধ এনেছে, পাটালি এনেছে, চাল এনেছে, পঁচিশে ডিসেম্বর পায়েস খাওয়াবে বলে, আমি যেন রাগ না করি। বললাম, কী মুশকিল, বিনা পরিশ্রমে গুড়ের পায়েস খেতে পাব, রাগ করব কোন দুঃখে!

ভালোই হয়েছে আমারও, স্বভাবতঃ ঊড়নচণ্ডী।

ওই রে, শঙ্করীদি বকুনি দিচ্ছে, খেয়ে আসি।


ইয়ে তেরা ঘর, ইয়ে মেরা ঘর, ইয়ে ঘর বহত হাসিন হ্যায়...

No comments:

Post a Comment