Monday, September 7, 2015

ঋণ

মায়ের ঋণ শোধ করা যায় না এটা একটা খুব প্রচলিত সত্য। কিন্তু আমি দেখেছি জীবনে কারোর ঋণ শোধ করা যায় না।

সেই যে ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে খেলা কিম্বা ঝগড়ার ঋণ
, মহুয়া কিম্বা কামিনী গাছের গন্ধের ঋণ, কল্কে ফুলের মধুর ঋণ, স্টেশনের কাকা-কাকিমার ভালোবাসার ঋণ, অশোকাদি আর মৈত্রেয়ীদির ঋণ, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো কিছু মধুর স্মৃতির ঋণ - রুমিয়ার ভালোবাসার আচার খাওয়ানো, দেবীর সঙ্গে ছাতে, ধানের ক্ষেতে ঘুরে বেড়ানো, দুই বন্ধুতে সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে দোল খেলা, প্রজ্ঞাজিতের সঙ্গে কলকাতার পথে পথে হাঁটা, মৌসুমীদির সঙ্গে একটা জ্যোৎস্না রাত, নেড়ুর সঙ্গে গোপন কথা, অসুখের সময় ঈপ্সিতার ছোটাছুটি, হস্টেলে বন্ধুদের আমার লেকচার ধৈর্য্য ধরে শোনা, পুজো দিয়ে প্রথমেই প্রসাদটা ঘোরতর অবিশ্বাসী আমার মাথায় ছুঁয়ে হাতে দিয়ে গ্ল্যাক্সোর নিশ্চিন্ত মুখ, দিনের পর দিন রাতে খাওয়া নিয়ে ঘুমন্ত আমার সঙ্গে লড়ে যাওয়া নিবু, বন্ধুদের চিঠির ঋণ, আমার সঙ্গে দীর্ঘ বন্ধুত্ব রাখার মত সাহসের ঋণ মানসের কাছে। আরও আরও কতজনের কথাই তো মনে পড়ে যায় নিত্যদিন।

আমাকে দিনের পর দিন সহ্য করে (এর থেকে ভালো কোনো শব্দ বোধহয় নেই) যারা ভালোবেসে
, বিশ্বাস করে দিন কাটায় তাদের ঋণ তো শুধুই বেড়ে চলে।

ছেলেবেলায় মায়ের মুখে শোনা গান
, বাবার রাজনৈতিক তর্ক, অমিতাভ কাকার মন্দ্রস্বরে কবিতা, কত বই আর সিনেমার চরিত্রেরা সবার কাছেই ঋদ্ধ হয়েছি আমি। রবি ঠাকুর আর বিভূতিভূষনের কাছে ঋণের তো অন্ত নেই আমার।

কেউ সুখ দিয়ে ঋণ বাড়িয়েছে
, কেউবা দুঃখ দিয়ে। দুঃখের ঋণের বোঝা আরও ভারী হয়, সুখের থেকেও।

কত ভোরের কাছে ঋণ রয়ে গেল, কত শেষ বিকেলের কাছে। কত পাহাড়, সাগর, অরণ্যের কাছে হাত পেতে নেওয়া ভালোলাগা আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি কোনোদিন। পাহাড়ের গায়ে আনমনে যে ফুলটা ফুটেছিল সে যে বিস্ময় দিয়েছিল আমার ঝুলিতে। এইসব মুঠোভরা ভালোবাসা ফেরানো হয়নি তো কাউকেই। ঋণ রয়ে গেছে আকাশ, বাতাস, মেঘ আর বৃষ্টির কাছে। কত রোদ্দুরের কাছে আনন্দের ঋণ রয়ে গেল তার খবর কে রাখে?

আমার অবস্থাটা অনেকটা শিবরামের মতো। হর্ষবর্ধনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গোবর্ধনকে শোধ করি আর গোবর্ধনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হর্ষবর্ধনকে।


একদিন বলে যাব এবারে নিজেরা বুঝে নাও তোমরা।

2 comments: