Monday, September 21, 2015

জলপ্রপাত

অসুখ করলে সবচেয়ে কষ্ট লিখতে না পারাটা। কারণ বিছানার থেকে মাথা তোলা যায় না, কেবল ঘুম পায়। অসুখ করলে ভাবনাগুলো কেমন অগোছালো হয়ে যায়। আগে খাতা বা ডায়েরিতে শুয়ে শুয়েও লিখতাম। তারপর যখন ল্যাপটপ এল প্রথম প্রথম কী বোর্ডে লিখলে শব্দগুলো আপন লাগত না। এখন সেটাই অভ্যেস হয়ে গেছে। জ্বরের মধ্যেও তাই মোবাইলে লিখি, লিখে যাই, অর্থহীন কবিতা আর নিরর্থক চিঠি।

তবু লিখতে হয়, লিখে যেতেই হয়, নাহলে ভারী কষ্ট হয়। সন্ধ্যাবেলায় পিঠে বালিশ নিয়ে উঠে বসি। মাথাটা মাঝে মাঝে ঢুলে পড়ে, ভীষণ কাশি ওঠে...। কার জন্য লিখি, কেন লিখি কিছুই আর মাথায় ঢোকে না তখন।

কবিতা লেখাটা ভীষণ ব্যক্তিগত। গদ্য দূর থেকেও লেখা যায়। গদ্যে যখন কবিতা উঠে আসে তাতে ঘামের গন্ধ লেগে যায় আবার, মনখারাপেরও। মানুষের প্রতি মানুষের অনুভূতি লেখার জন্ম দেয়, লেখার মৃত্যু ঘটায়। কোথাও কেউ থেকে যায় যে সব পাঠ পড়ে। তার জন্যই কি লিখতে হয়? লিখলেই কি সব শব্দের মানে বোঝা যায়? সব শব্দ কি আদৌ আভিধানিক অর্থ বহন করে? শব্দ কি আদৌ কোথাও পৌঁছায়?

এই লেখাটা আসলে কোনো লেখা নয়, আসলে এর কোনো শুরু বা শেষ নেই। যে নদী হঠাৎ করে জলপ্রপাতে বদলে আবার আছড়ে পড়ে নদী হয়ে যায় তার কোনো শুরু বা শেষ থাকে না। অনেক সম্পর্কেরও থাকে না। দিগন্তহীনতা খুঁজে যাচ্ছি। আবার দিগন্ত না থাকলে কি রামধনু ওঠে?

সুমনের গান মানুষকে পথে নামাল না কেন? তুমি গান গাইলে, যা ছিল আগের মতো রয়ে গেল কেন?

এখনো বিভূতিভূষণ কেন এত মনকেমন করায়? লীলাকে নিয়ে কোনো লেখা পড়িনি। লীলাকে সবাই ভুলে গেল কী করে? সত্যজিত রাখেনি বলে?

আমাদের জীবনে ইছামতীর বহমানতা নেই, গঙ্গার পাঁকে আটকে আছি।

অপু, আমার চিঠি না পেলেও তুই চলে যাস না, তোর সঙ্গে পোর্তোপ্লাতার সমুদ্রতীরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। ভুলে যাস না যেন। ওদিকে ভৃগু বলছে,  পদ্মার ওই পাড়ে আমার বাড়ি,  ওই পাড়ে যেখানে ধর্মের নামে আজ মানুষ মানুষকে খুন করছে। আর কে যেন চিৎকার করছে, আমরা কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম, এ রাজ্যে, ও রাজ্যে, এ দেশে, ও দেশে।
আসলে আমার মাথার মধ্যে বোধহয় ট্রেন যাচ্ছিল। মুখটা বিস্বাদ হয়ে আছে। আর মাথার মধ্যে ঝমঝম করে ট্রেন যাচ্ছে।

পৃথিবীটাই কেমন বিষাক্ত লাগে মাঝে মাঝে, দমবন্ধ হয়ে আসে। পিঁপড়ের মত মানুষ মরছে আবার চারদিকে বিজ্ঞাপনের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। বিভূতিভূষণের দেখার মৃত্যু হয়েছে, শুধু এন্টারটেনমেন্ট। আমরা সবাই অন্ধ হয়ে যাচ্ছি।


অপু, আমায় একবার পোর্তোপ্লাতার সমুদ্রতীরে নিয়ে যাবি?

2 comments:

  1. দেখ্‌ বাবাজি দেখ্‌‌বি নাকি দেখ্‌‌রে খেলা দেখ্‌ চালাকি,
    ভোজের বাজি ভেল্কি ফাঁকি পড়্‌ পড়্‌ পড়্‌ পড়্‌‌বি পাখি- ধপ্‌ !

    লাফ দিয়ে তাই তালটি ঠুকে তাক ক'রে যাই তীর ধনুকে,
    ছাড়্‌ব সটান উর্ধ্বমুখে হুশ্‌ ক'রে তোর লাগবে বুকে- খপ্‌ !

    গুড়্‌ গুড়্‌ গুড়্‌ গুড়িয়ে হামা খাপ্‌ পেতেছেন গোষ্ঠো মামা
    এগিয়ে আছেন বাগিয়ে ধামা এইবার বাণ চিড়িয়া নামা- চট্‌ !

    এই যা ! গেল ফস্কে ফেঁসে- হেঁই মামা তুই ক্ষেপলি শেষে ?
    ঘ্যাঁচ্‌ ক'রে তোর পাঁজর ঘেঁষে লাগ্‌ল কি বাণ ছট্‌‌কে এসে- ফট্‌ ?
    - See more at: http://sukumarray.freehostia.com/view.php?cat_id=1&article_id=41#sthash.K3XsQKI9.dpuf

    ReplyDelete
  2. উঁহু, ওটা হবে -

    আজকে দাদা যাওয়ার আগে
    বলব যা মোর চিত্তে লাগে।
    নাইবা তাহার অর্থ হোক
    নাইবা বুঝুক বেবাক লোক।

    ReplyDelete