Tuesday, September 15, 2015

নারীশিক্ষা

শুধুমাত্র লেখাপড়া শিখে কিছু ডিগ্রি অর্জন করে, এমন কী চাকরি করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেও মেয়েরা মানসিক দিক থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে যাচ্ছে। ঊনবিংশ শতকে স্বর্ণকুমারী, সরলা, অবলা এদের মধ্যে যে স্বাধীন মনন তৈরি হয়েছিল তা আজকের অধিকাংশ তথাকথিত শিক্ষিত মেয়েদের মধ্যে অনুপস্থিত। কয়েকজন আছেন যাঁরা নারীবাদী, তাঁদের একটা বড় অংশই উচ্চবিত্ত সুবিধাবাদী শ্রেণীর।

শিক্ষিত মেয়েদের সংখ্যা বাড়াতে হবে, যাঁরা অন্য মেয়েদের শিক্ষার ভার গ্রহণ করবে। এই প্রসঙ্গে নারী শিক্ষা সমিতির রীতা ব্যানার্জির কথা মনে হয়। জীবনটাই দিয়েছেন নারী শিক্ষার পেছনে। অবলা প্রচার চাইতেন না, সেই বিশ্বাসে অবিচল। এমন রীতাদের কথা কিন্তু জানার প্রয়োজন আছে। কারণ এরাই সত্যিকারের নারীবাদী।

মেয়েদের জীবনের প্রধান বাধা দুটো - ধর্ম এবং চাপিয়ে দেওয়া সামাজিক নিয়ম। সেদিনই মেয়েরা প্রকৃত শিক্ষিত হবে যেদিন এই দুটোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

নতুন করে নারী শিক্ষা নিয়ে ভাবনা এবং তার প্রয়োগ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে, যখন মেয়েদের ওপর অত্যাচার এবং চাপিয়ে দেওয়ার বা ব্রেন ওয়াশের মতো ব্যাপারগুলো ক্রমেই বেড়ে চলেছে সমাজে।

মেয়েরা প্রকৃত শিক্ষিত হলে তবে যদি বাংলা সিরিয়াল দেখাটা কমে। এছাড়া স্টার জলসার টি আর পি কমানোর উপায় নেই।

আমার মনে হয় মেয়েদের যাবতীয় সমস্যার পেছনে রয়েছে প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং বহুযুগ ধরে সমাজের চাপিয়ে দেওয়া ভার যা শিশুকাল থেকে লালনের সঙ্গে রক্তে-মজ্জায় ঢুকে যায়। কিছু মেয়ে তার থেকে মুক্ত হয়ে ভাবতে পারে, যেমন আমার মাকে দেখেছি অনেকক্ষেত্রে। সবচেয়ে ক্ষতিকর তারাই যারা মুক্তচিন্তার মহিলা বলে নিজেদের প্রচার করেন। আগে মানুষ হতে হবে, মেয়েমানুষ হওয়ার আগে। এর প্রতিফলন ঘটে সমাজে, রাজনীতিতে। একজন অশিক্ষিত মহিলা যখন কোনো রাজ্য চালায়, তার যত বড় সর্বনাশ করতে পারে, একশোটা অশিক্ষিত পুরুষও তা পারে না। তার সবচেয়ে বড় কারণ সে নিজেকে শিক্ষিত ভাবে।


এটা একেবারে ছোট থেকে করতে হবে এবং সাধারণ ঘরের মেয়েদের মধ্যে। উচ্চবিত্তদের মধ্যে করাটা শক্ত, তারা বেশি জানে বলে। তবে পরিবারের ভেতর থেকে করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। মুসলিম মা যদি জোর গলায় বলতে পারে আমার মেয়েকে বোরখা পড়াব না, বা হিন্দু মা বিয়ের সময় মেয়েকে শাঁখা-সিঁদুর না পড়তে উৎসাহিত করে। যদি ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় ভয় থেকে ভগবানের জন্ম সত্যি কিছু নেই, পুরোটাই মানুষের কল্পনা এবং ক্ষমতা দখলের অস্ত্রমাত্র তাহলে অনেক উপকার হয়। তবে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই শেখাতে হবে। তারজন্য বাবা-মা উভয়কেই এটা ঠিক বলে জানতে এবং মানতে হবে। আমার মেয়ে তো কোনো সামাজিক সংস্কার বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। শিশুকে প্রকৃত শিক্ষা দিলে তবে তো সমাজ বদলাবে। কারণ বড় হলে মানুষ বড় ‘হোৎকা’ হয়ে যায়, তখন আর কোনো শিক্ষাই নেওয়ার মতো মানসিকতা তার থাকে না।

No comments:

Post a Comment