Friday, September 11, 2015

আত্মহননের সাতকাহন

যেকোনো হত্যাই ঠিক নয়, এমন কী নিজেকেও, এই কথা তীব্রভাবে মানি। তবে আত্মহত্যাকে অপরাধ বলা না হোক। বরং কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে উঠলে তার পাশে দাঁড়াক অন্যেরা।

আমার মনে হয় একধরণের মানুষ থাকেই যারা আত্মহত্যাপ্রবণ। যারা ব্যর্থ প্রেম বা জীবনের অন্য কোনো ব্যর্থতায় বা যেকোনো কারণে বা বিনা কারণে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার কথা মনে করলেই আমার অন্যতম একজন প্রিয় কবি সিলভিয়া প্ল্যাথের কথা মনে পড়ে। সিলভিয়া দশ বছর বয়স থেকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা শুরু করেছে, শেষপর্যন্ত সফল হয় বোধহয় তিরিশের কোঠায়। খুব বেশি সৃষ্টিশীলতার আকাঙ্খাও অনেকসময় আত্মহননের কারণ হয়ে ওঠে বৈকি। এও নিজের আবেগ প্রকাশের একটা অংশ।

আত্মহত্যার অনেকটাই থাকে সামাজিক কারণ। তাই ধর্ষিতা অথবা পণ দিতে না পারা মেয়ে দিনের পর দিন হুমকিতে অথবা অপমানে আত্মহনন করে। খিদের জ্বালা অথবা স্ত্রী-সন্তানদের মুখের অন্ন না জোটাতে পেরে আত্মহত্যা করে কত শ্রমিক, কৃষক তার ক'টা আর খবরে প্রকাশ হয়? ঋণের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কতজন একা বা সপরিবারে আত্মহত্যা করে।

আত্মহত্যার কারণ যেখানে সামাজিক, সেখানে আশপাশের মানুষের অথবা সমাজের একটা বড় ভূমিকা থেকেই যায়।

অল্পবয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটা কিন্তু বাড়ছে উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের মধ্যে। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের জীবনে অল্পবয়স থেকে না পাওয়া এবং লড়াইটা অনেক বেশি থাকে তাই আত্মহত্যার চেয়ে তারা বেঁচে কিছু পেতে চায়। যেমন, সেই মেয়েটি যাকে পড়াশোনা করার অপরাধে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল নিজের বাবাই। তারপরেও বেঁচে উঠে পিসির বাড়ি চলে গিয়ে আবার পড়াশোনাই করছে সে। এই কাহিনির পরবর্তী কী হল মাঝে মাঝেই জানতে ইচ্ছে করে।

উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের অভাববোধ নেই কিন্তু তৈরি হয়েছে একটা বিস্তীর্ণ একাকীত্ব। এই একাকীত্বকে যারা সৃষ্টিশীলতায় কাজে লাগাতে পারে তারা ভাগ্যবান। বাকিদের কাউকে কাউকে ভিন্ন পথ খুঁজতে হয়। কেউ আন্তর্জালে বন্ধুত্ব খুঁজে পায়, কেউবা আত্মহননে মুক্তি। ছেলেমেয়েদের সাফল্যের চাকায় জড়িয়ে দেওয়াটাও একটা বড় কারণ বৈকি, কতজন আর নিজের মতো করে বাঁচতে পারে? কিছু বেহিসাবী বাবা-মায়ের সন্তানেরা ছাড়া।

দীর্ঘ অসুস্থতা অথবা লাগাতার ডিপ্রেশন অনেকসময়ই আত্মহত্যার খুব স্বাভাবিক কারণ হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রেও আশেপাশের মানুষরা যদি সমালোচনার বদলে তাদের বুঝতে চেষ্টা করে তাহলে হয়তো বেঁচে থাকাটা সম্ভব হয়ে ওঠে।

আমার মনে হয় একবারই তো মানুষ বাঁচে তাই যতদিন সম্ভব বেঁচে থাকাটা জরুরি। বেঁচে থাকার সবসময়েই কিছু না কিছু ইতিবাচক দিক থেকেই যায়।

তবে অনেকসময় মানুষ জেনে বুঝে অন্যের জন্যে বা সমাজের জন্যেও আত্মহত্যা করে। যেমন প্রতিবাদ করলে নিশ্চিত মরব জেনেও অনেকে প্রতিবাদ করে যায়। দেশের সেনাবাহিনীতে যারা নাম লেখায় তারাও নিশ্চিত জানে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে প্রাণ যাবে তাদের মতো উলুখাগড়ারই। এগুলোও একধরণের আত্মহত্যা বৈকি।

অনেক ঘটনাতেই মনে হয় যেন ঠান্ডা মাথায় আত্মহত্যা। আমার তো মনে হয় সুস্থ মস্তিস্কে কেউ কাউকে এমন কী নিজেকেও হত্যা করতে পারে না। অন্ততঃ কয়েক মুহূর্তের জন্যে হলেও হয়তো সে সুস্থ মস্তিষ্কে থাকে না। তবে এটা ঠিক বলতে পারব না।

কেউ আত্মহত্যা করেই ফেললে তারপরে সেই ঘটনায় কে খুশি হল, কেই বা দুঃখিত, তা ব্যক্তি মানুষটির কাছে তখন অপ্রয়োজনীয়। বরং যতদিন মানুষ বেঁচে আছে, তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করাটা ভালো।


ব্যক্তিগতভাবে ইউথ্যানাসিয়া আমি সমর্থন করি। কিন্তু সে তো অন্য প্রসঙ্গ।

4 comments:

  1. বোঝ, হঠাৎ এরকম একটা প্রসঙ্গ কেন? আমার কিন্ত মনে হয় বেশীরভাগ আত্মহত্যাই একপ্রকার খুন, কারণ তার পিছনে কারো না কারো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বক্তব্য, অন্যায় সমালোচনা, অতিরিক্ত আশা, অতিরিক্ত ও অন্যায় চাহিদা, মানসিক বা শারীরিক বা উভয় রকম অত্যাচার কাজ করে। এছাড়া আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষতো আছেই। এটা একটা মানসিক রোগ, ঠিকমতো চিকিৎসায় হয়তো ঠেকানো সম্ভব, তবে সেটা সময়, খরচ ও সুযোগ সাপেক্ষ। আর বর্তমানে বড়লোকের কিছু আদরের দুলাল-দুললির ক্ষেত্রে এর কারণ কী ঠিক জানা নেই। বাবা-মা হয়তো বুঝেও সময় থাকতে বোঝেন না, বা বুঝতে চান না।

    ReplyDelete
  2. যাইহোক না কেন মানুষকে আরও বেশি মানুষের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে এটাই মনে হয় আমার, ব্যক্তিগত বা সামাজিক ভাবে।

    ReplyDelete
  3. আমার মতটাও এখানে রাখছি। আমার মতে 'সদুত্তর না-থাকা' কিংবা 'মুখের মতো জবাব দিতে চাওয়া' ---- মাত্র এই দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যাবতিয় আত্মহনন। বিষয়টা যদি উত্তরহীনতা বা অসহায় মানুষের 'জবাব দিতে চাওয়ার' শেষতম পরিণতি / হাতিয়ার হয়, তবে তো ডিডি'র দেখানো উপায় একমাত্র পথ পরিত্রাণের। উত্তরহীন মানুষটির পাশে বা অসিহায় ভাবে রেগে যাওয়া অভিমানি দুর্বলচিত্তের পাশে দাঁড়াও...বন্ধুর মতো দাঁড়াও

    ReplyDelete
  4. আমার তাই মনে হয়েছে - মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।

    ReplyDelete