Friday, September 4, 2015

তালাক তালাক তালাক

কেন মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আলাদা করে মুসলিম ল বোর্ডের অধীনে থাকবে এটা আমার মাথায় ঢোকেনা। কেন সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের মতো উভয়পক্ষীয় হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবেনা। একবিংশ শতকেও মুসলিম মেয়েদের অনেক ছোটবেলায় বিয়ে হয়। এখনও তাদের বোরখা পড়ে থাকতে হয়।

মুসলিম সমাজে প্রকৃত শিক্ষার অভাব এর মূল কারণ। ধর্মান্ধতার জন্ম দেয় প্রকৃত শিক্ষার অভাব। আর তার শিকার হয় নারী সমাজ।

পশ্চিমী দুনিয়ায় কালো মেয়েদের অবস্থা এবং অবস্থানের মতোই আমাদের সমাজে মুসলিম মেয়েদের অবস্থা এবং অবস্থান। একে নারী, তাই সে পুরুষ শাসিত সমাজের শিকার, তায় মুসলিম, তাই সে হিন্দু বিদ্বেষের শিকার, এবং সর্বোপরি সে মুসলিম নারী, তাই মুসলিম সমাজের শিকার।

আমেরিকান সাহিত্য পড়তে গিয়ে দেখেছি কালো মেয়েরা সাদা এবং কালো উভয় সমাজের পুরুষদের বিরুদ্ধে যেভাবে কলম ধরেছে, তা পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়। মুসলিম নারীদেরও নিজেদের কথা বলতে হবে নিজেদেরই। কিন্তু সেখানেও তারা দুর্ভাগ্যের শিকার। তাদের শিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত, আরও কম কথা বলার।

মাবেয়া খাতুনকে মনে পড়ে আমার। আমাদের সঙ্গে স্কুলে পড়ত। মধ্যমেধার এই মেয়েটি খুব ভালো সেলাই করত। ক্লাস নাইনে বিয়ে হয়ে যায়। আমায় বলেছিল, বিয়ে করার একটুও ইচ্ছে নেই ওর, আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছে। নাহ্‌, স্কুলের চৌহদ্দির মধ্যে আর কোনোদিনই দেখিনি মেয়েটাকে। কোথায় আছে জানিনা, কটা ছেলেমেয়ে সামলাচ্ছে অথবা তালাক, তালাক, তালাক ঘটেছে কিনা।

মুসলিম যে পুরুষরা তুলনায় আধুনিক হয় তাদের কিন্তু এই সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব অনেকটাই বর্তায়। যার মূল আছে নারী শিক্ষা প্রসারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার অর্থ লিটারেসি নয় অবশ্যই, এডুকেশন।

রাজনৈতিক দলগুলি কিছু করবে না। মুসলিম ভোটের ঝোল টানার প্রয়োজন আছে সবারই। করতে হবে মানুষকেই।

2 comments:

  1. দময়ন্তী দেবী ঐভাবে তালাক ইসলামের নির্দেশ নয় । কোন মুসলমান কী করলো সেটা দেখে ইসলামকে বিচার করা ঠিক নয় যেমন ঠিক নয় কোন হিন্দুকে দেখে হিন্দুধর্মকে বিচার করা । হিন্দুধর্মকে বুঝতে হলে গীতা পুরাণ কী বলে দেখতে হবে ঠিক তেমনই মুসলমান ধর্মকে বুঝতে হলে কোরান ও হাদিস কী বলে সেটা দেখতে হবে । চৌদ্দশ বছর আগে মুসলমান নারীদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে । গৌরকিশোর ঘোষ একস্থানে লিখেছেন "আয়েশা সিদ্দিকার (মুহাম্মদ-- তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) জ্ঞান সেযুগে কোন পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না । তালাকের পদ্ধতি একবার তালাক বলার পর এক মাসিককাল অবধি তার সাথে এক ঘরে ভিন্ন বিছানায় শয়ন করে তার সাথে কোন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে চলবে না । তারপর দ্বিতীয় তালাক দিয়ে একই ভাবে জীবনযাপন করতে হবে ।এভাবে তিন মাসিককাল অবধি এই শর্ত মানলে তালাক সিদ্ধ হবে । তাছাড়া তালাক দেওয়াকে ইসলামধর্মে সবচেয়ে ঘৃন্য কাজ বলে বিবেচিত হয় । হাদিস ও কোরানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আছে । দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথমা স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে সিদ্ধ নয় । এবং এক্ষেত্রেও বলা আছে "যদি তুমি সকল স্ত্রীর প্রতি সম-ব্যবহার করতে পার" । আর শিক্ষা ? সে ব্যাপারেও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই । অতি প্রাচীন কাল থেকে মুসলিম মেয়েরা শিক্ষা গ্রহন করে আসছে । আশাপূর্না দেবী তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন " আমাদের পরিবারে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিত না বলে বাবা আমাকে বাড়িতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন । ফলে আমার যা কিছু শিক্ষা তা সব বাড়িতে । " অথচ গুলবদন সেই যুগে "হুমায়ুন নামা" লিখেছেন ।
    আমি বিতর্ক সৃষ্টি করতে মন্তব্য করছি নে । আসলে অনেকেরই এসম্পর্কে সম্যক ধারনা নেই । একবার কয়েকজন আলোচনা করছিলেন "জানিস এক এক মুসলমানের চারটে করে বৌ আর একেক বৌয়ের চারপাঁচটা করে বাচ্চা "-- আমি বললাম আমি তো মুসলমান , আমার একটাই স্ত্রী , দুটি সন্তান "--আরো বললাম অজস্র অশিক্ষিত মুসলমানের অনেক সন্তান আছে যেমন আছে অশিক্ষিত পিছিয়ে-পড়া হিন্দুর ( ব্যতিক্রম লালু প্রসাদের মতো কয়েকজনের) অনেক সন্তান । আসলে এসব জ্ঞান আসে শিক্ষা ও সচেতনা থেকে । আমাদের দেশ , বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বেশির ভাগ মুসলমান অন্ত্যজ হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত । অশিক্ষা কুশিক্ষায় মগজ ঠাসা ।
    স্বামী বিবেকানন্দের " দ্য এসেন্স অব ইসলাম" গ্রন্থে ইসলামে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে লেখা আছে । শরত চন্দ্রের "নারীর মূল্য" বইতেও এ বিষয়ে পরিষ্কার লেখা আছে বিস্তারিত ।
    সুলতানা রাজিয়া শিক্ষিতা ও জ্ঞানবতী মহিলা ছিলেন । সেই যুগে ধর্মান্ধ মৌলানাদের দৌরাত্ম থাকা সত্ত্বেও রাজিয়া অল্পদিনের জন্য হলেও পারদর্শিতার ও দক্ষতার সাথে তৎকালীন ভারতবর্ষের এক অংশ শাসন করেছিলেন ।
    আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিমানছিনতারী (যদিও ঘৃন্য) প্রথম মহিলা ছিলেন একজন মুসলিম মহিলা ।
    বর্তমানে অশিক্ষিত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মুসলিম ল বোর্ড ঐ ফতোয়া দিয়েছে ।
    যারা শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত তারা এরকম করে কি ?
    ভাষা সম্পর্কেও এরকম একটা ভুল ধারনা আছে । আমার বন্ধুদের কাছে শুনেছি "মুসলমানদের কথায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রাধান্য থাকে " । আমি বলেছিলাম , যেমন ?
    সে বললো , তোরা বাবাকে আব্বা , কাকাকে চাচা , জলকে পানি বলিস ।
    আমার উত্তর ছিল " বাবা কাকা দাদা এসবও বিদেশি শব্দ । " আরো বলেছিলাম " জামা জুতো মোজা জমি এরকম হাজার হাজার ফারসি শব্দ আছে যেগুলো সবাই বলে "।
    ওসব প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আসি ।
    ইসলামে কোন ক্ষেত্রেই মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের বেশি অধিকার দেওয়া হয়নি । কোরানে যেখানে পুরষের কথা এসেছে সেখানেই মেয়েদের কথা এসেছে --- সত্যবাদী পুরুষ সত্যবাদী নারী , সতীত্বরক্ষাকারী নারীর সাথেই এসেছে ব্যভিচারী পুরুষের শাস্তি বা পুরস্কারের কথা , ধৈর্যশালী পুরুষের পাশাপাশি ধৈর্যশালিনী নারীর কথা এসেছে ।
    হাদিসেও বলা আছে যে পুরুষ তার স্ত্রীর নিকট প্রিয় সে আল্লাহর কাছেও প্রিয় ।
    স্ত্রীকে দৈহিক নিগ্রহ করাও গর্হিত । স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থায় স্বামীকে পূর্ণোদ্যমে করার কথা বলা হয়েছে । গৃহের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও স্ত্রীর সাথে পরামর্শের কথা বলা হয়েছে ।
    আসলে দময়ন্তী দেবী এসব পারিপার্শিক ঘটনাবলি দেখে ভুল ধারনা জন্মায় ।
    প্রাথমিক দিকে বলেছি কোন ধর্মকে জানতে হলে সেই ধর্মের ধর্মগ্রন্থ কী বলে সেটা দেখতে হবে ।
    দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না ।
    ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন ।

    ReplyDelete