Thursday, March 31, 2016

আমড়াতলার মোড়ে!


কলেজ স্ট্রিটে যাব বলে বাসে উঠেছি। তাড়া ছিল, তাই আগে সেন্ট্রাল এভিনিউয়ের বাস আসায় তাতেই। ওই চত্ত্বরটা একসময়ে আমার খুব চষা হলেও এখন কমই যাই।

ভাড়া দেওয়ার সময় কন্ডাক্টরকে বলি, দাদা, কলেজ স্ট্রিট যাব, যেখানটায় সুবিধা নামিয়ে দেবেন।
টিকিটটা হাতে গুঁজে দিয়ে কন্ডাক্টর বলেন, আমি কলুটোলা বলে চিল্লাব, আপনারা উঠে আসবেন।

মাথা নেড়ে ফিসফিস করে মেয়ের কানে বলি, মানে ওর কানে গোঁজা কর্ডটা সরিয়ে, ওরে গানটা একটু পরে শোন, নাহলে চিল্লালে কিচ্ছু শুনতে পাবি না।

এই আজকাল এক মুশকিল, রাস্তায় যে গল্প করতে করতে যাব, তার উপায় নেই মেয়ের আমার কানে কর্ড আর প্রাণে গান। কিছু বলতে গেলে আমাকেই চিল্লাতে হয় আর কি।

মেয়ে নিশ্চিন্ত গলায় বলে, তুমি তো শুনতে পাবে। সে গান শোনে।

দেখতে দেখতে গিরীশ পার্ক আসে, কন্ডাক্টর চিল্লান, গিরীশ পার্ক, গিরীশ পার্ক...। মেয়ের কানের কর্ডে আবার টান দিয়ে বলি, এবারে বন্ধ কর, গিরীশ পার্ক এসে গেছে। এর পরের স্টেশনই মহাত্মা গান্ধী রোড।

গান শোনা না থামিয়েই সে হাসিমুখে জবাব দেয়, তাহলে তো কন্ডাক্টর গিরীশ পার্ক, প্ল্যাটফর্ম বাঁদিকে বলেই চিল্লাতে পারত।

অতএব রামমন্দির পেরোয়। মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশন আসছে দেখে আমি এবং আমরা উঠে নামার তোরজোড় করি। ভাবি এখানে নেমে গলি দিয়ে চলে যাব।

কন্ডাক্টর কিছুতেই নামতে দেননা। বলেন, এখানে না, এখানে না, ওই বইয়ের দোকান যেখানে আছে, সেখানে যাবেন তো, আমি কলুটোলায় নামিয়ে দেব, ওখান থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট।

বাস এগোয়, কলেজ স্ট্রিট মোড়ের প্যারালাল ক্রসিংও আমার চোখের সামনে দিয়ে পেরিয়ে যায়। আমি ওই মোড়ের মাথাতেই যাব। কিন্তু কন্ডাক্টর তাঁর কর্ত্তব্যে অটল, কিছুতেই আমাদের নামতে দেবেন না।

অবশেষে কলুটোলা আসে। কন্ডাক্টর চিল্লান, কলুটোলা, কলুটোলা...। আমরাও নেমে পড়ি।

এই রাস্তাটাও আমার চেনাই। সত্যি মিনিট পাঁচেক হেঁটেই কলেজ স্ট্রিট চত্ত্বরে পৌঁছাই। তারপরে মোড়ের দিকে হাঁটা দিই। মানে হাঁটতেই থাকি, হাঁটতেই থাকি, মোড় আর আসেনা।

শেষপর্যন্ত মোড়ে পৌঁছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েকে বলি, আর কখনও কাউকে কলেজ স্ট্রিটে নামিয়ে দিতে বলব না, তা সে যতই চেল্লাক।


No comments:

Post a Comment