Monday, March 14, 2016

আবারও শব্দকল্পদ্রুম!



শব্দের একটা ভারী মজার ক্ষমতা আছে। শব্দ আঘাত করতে পারে। মাঝে মাঝে তা ইট-পাটকেলের থেকেও জোরে। শব্দ আঘাত করতে পারে সর্বত্র মানুষের মন থেকে সমাজের কোন। বিশেষভাবে কোনও শব্দ বা অক্ষরাবলী ব্যবহার করার জন্য আজ পর্যন্ত কত মানুষের বিচার হয়েছে বা বিচারহীন শাস্তি হয়েছে আমার তার পরিসংখ্যান জানা নেই। তেমনই জানা নেই শব্দের জন্য কত বিপ্লব হয়েছে অথবা কত সম্পর্ক ভেঙেছে গড়েছে। যদিও খিদে শব্দটার মতো আর কোনো শব্দ এত ধাক্কা মারে কিনা তাও আমার জানা নেই। আসলে আমার জানা নেই কিছুই - এই শব্দের মণ্ডলে এলোমেলো ধুলোমাখা শব্দেরা ছড়াতে ছড়াতে কিছু ভেসে আসে মুঠোয়, কিছুবা হারিয়ে যায় শেষ বিকেলের মায়াময় রোদের কণার মতো। ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটার মানে যারা কোনওভাবে বোঝেনি তাদের ঘরে ধর্ম কোন আলাদা ধ্বনি জাগায় না। ধর্ম অথবা দেশপ্রেমিক শব্দের চেয়ে খিদে শব্দটা ভারী, আরও ভারী হয়ে শরীরের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে যায়। খিদে শব্দের কোনও রঙিন পতাকাও হয় না। একেবারে রঙহীন ফ্যাকাসে একটা শব্দ সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে দেশ-কাল-পাত্র ভুলিয়ে দিয়ে শুধু কড়া নাড়ে। আর সব শব্দরা চাপা পড়ে যায় সেই সর্বগ্রাসকারী শব্দের ব্যঞ্জনায়। মাঝে মাঝে শব্দের টুকরোরা মাথার ভেতরে আঘাত করে। অনেক অনেক কন্ঠস্বর মিলেমিশে মাথার ভেতর একটা শব্দের লড়াই তৈরি করে, যে লড়াইয়ে শব্দরা কেউ জেতে না, আকন্ঠ ডুবে যেতে যেতে শ্বাস নেওয়ার জন্য নিঃশব্দ হাতড়ে বেড়াই। কখনও বাইরের শব্দেরা এসে মনের শব্দের সঙ্গে বিষম সংঘাত বাধায়। মনের শব্দগুলো জোড়া থেকে খুলে গিয়ে আলগা হাওয়ায় হারিয়ে যায় কোথায়। আবার শব্দ জুড়ে জুড়ে তৈরি হওয়া মায়াময় পৃথিবীতে শব্দরা ভেসে বেড়ায় নিঃশব্দে। কী আশ্চর্য, শব্দ না থাকলে নিঃশব্দের কোনও আলাদা অর্থ থাকত না। নিঃশব্দের গভীরে ডুব দিয়ে তুলে আনা যেত না শব্দের মণিমানিক। নিঃশব্দ তার শব্দবিহীনতা নিয়ে নিবিড়ভাবে কাছে টেনে নিতো না বা দূরে, আরও দূরে সরে যেতে যেতে ভূমণ্ডলের অপর প্রান্তে পৌঁছে দিত না। 

No comments:

Post a Comment