Friday, March 10, 2017

রমাসুন্দরী ঘোষ

১৮৬৪ সাল। কাশী বেড়িয়ে এসে দাদাকে চিঠি লিখেছিল ছোট বোন। কবিতায় লেখা সেই চিঠি পেয়ে মুগ্ধ দাদা হাজির সোজা বামাবোধিনী-র দপ্তরে। সম্পাদকমণ্ডলীও চমৎকৃত লেখাটি পড়ে। প্রায় অচেনা এই লেখিকার কবিতাটির মুখবন্ধ স্বরূপ সম্পাদক লিখলেন, আমাদের দেশে বিদ্যাবতী ও জ্ঞানবতী স্ত্রীলোক অতি অল্প, তথাপি তাঁহাদের হইতেই সমস্ত স্ত্রী-সমাজের অজ্ঞান-তিমির নষ্ট হইতে পারিবে। বামাবোধিনীকেও কুর্ণিশ এমন একটি কবিতা প্রকাশ করার জন্য যেখানে কবি কাশীর বিশ্বনাথ দেখে লিখছেন, কেবল মুর্খেতে ওহে ভক্তির কারণ, সাক্ষাৎ ঈশ্বর যেন করে দরশন। কবিতাতেই তাঁরা কবির পরিচয় দিলেন। কোথাও জানালেন না, যে দাদা বোনের কবিতাটি এনে তাঁদের দপ্তরে দিয়েছিলেন তিনি সত্যপ্রিয় দেব। ব্রাহ্ম সমাজের একজন অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব শিবচন্দ্র দেবের চার কন্যার মধ্যে কনিষ্ঠ রমাসুন্দরী। শিবচন্দ্রের পুত্র সত্যপ্রিয় দেবের ব্রাহ্ম বিবাহ ঘিরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রায় ইতিহাস তৈরি হয়েছিল।


বাড়িতে বাবার কাছেই পড়াশোনা শেখা রমাসুন্দরীর। ছোট থেকেই লেখালেখির ঝোঁক। বিয়ে হয়েছিল সেইসময়ের নামকরা ডাক্তার ও শল্য চিকিৎসক দুকড়ি ঘোষের সঙ্গে। বামাবোধিনীতে দীর্ঘসময় ধরে নিয়মিতই কবিতা ও গদ্য লিখতেন রমাসুন্দরী। কাশী দর্শন বাঙালি মেয়ের লেখা প্রথম ভ্রমণ কাব্য। পরবর্তীকালে বামাবোধিনী থেকে তাঁর একটি বইও বেরিয়েছিল। সংসার ও লেখালেখির পাশাপাশি বঙ্গ মহিলা সমাজ, সখি সমিতি-র সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মহিলা শিল্পমেলাতেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন।

এক পুত্র ও এক কন্যা রেখে স্বামীর মৃত্যুর পরেরদিনই চৌষট্টি বছর বয়সে মারা যান রমাসুন্দরী।

রমাসুন্দরীর পরিচয় জানা সত্ত্বেও এক গবেষক কিছুতেই রাজি হননি তা জানাতে। জেদ চেপে গিয়েছিল। কয়েকশো পুরোনো পত্রিকার প্রত্যেকটা পাতা খুঁটিয়ে পড়ে ফেললে জানা যেতেই পারে নিজে নিজে। যাঁরা আমার বই থেকে রমাসুন্দরীর পরিচয় টুকবেন তাঁদের একথা সবিনয়ে জানিয়ে রাখি।

জীবনে অনেক অনেক গবেষণা অন্যের আহৃত তথ্য টুকে টুকে না করে একটিও যদি সার্থক গবেষণা করা যায় তাতেই সত্যিকারের আনন্দ পাওয়া যায়। এই অনুভূতি যাঁরা নাম, খ্যাতি, অর্থের জন্য কাজ করেন তাঁরা বুঝবেন না।

No comments:

Post a Comment