সেদিন সহ
সম্পাদক মেল খুলে কাজের তাড়নায় ফোন করেছেন, তো সম্পাদক চিঁ চিঁ করে জানালেন, ‘আমি বিছানায়, তুমি ওদিকে যা
পার কর’। সহ সম্পাদক উদবিগ্ন গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আবার কি হল?’ উত্তরে সম্পাদক রীতিমতো হাহাকার
করে উঠলেন, ‘কী আর হবে, নেমতন্ন, বুঝেছ, আমি আর নেমতন্নে যাচ্ছিনা’।
ভ্যাবাচ্যাকা
খেয়ে সহ সম্পাদক জানতে চান, ‘মানে?’ ‘আর বোলো না’, সম্পাদক বলতে থাকেন, ‘গতকাল রাতে একটা বিয়েবাড়ির
নেমতন্ন ছিল। একে তো জামাকাপড় পরাটাই ইদানীং প্রায় যুদ্ধ করার মতো লাগে। যাইহোক
সেজেগুজে হাঁপাতে হাঁপাতে তো গিয়ে পৌঁছালাম। খুব কাছেই ছিল বিয়েবাড়ি, বাসে এই গোটা
দু-তিন স্টপেজ। বিশেষ চেনা-পরিচিত কেউ তেমন ছিলনা, গিফট দিয়ে খেতে গেছি।
প্লেট নিয়ে সামান্য দু-এক পদ নিয়ে কিছুটা খেতেই বুঝতে পারলাম প্লেট ধরায় হাতের
পাতায় খুব ব্যথা করছে, মানে একেবারে ভেঙে আসছে আর কী। আচ্ছা, তুমিই বলো, একজন
মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা সেজেগুজে নেমতন্ন খেতে গিয়ে যদি অন্যের হাতে ধরা প্লেট থেকে
খান, কেমন বিশ্রী লাগে! তাই তাতে রাজি না হয়ে কোনওমতে নম নম করে খাওয়াটা শেষ করে
ফেললাম। ফের হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরে একেবারে শয্যাশায়ী। আর বোলো না, তখন তো
বুঝিনি, বাড়ি ফিরে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, হ্যাঁ, একেবারে হাড়ে হাড়েই, যে বাঁ
কাঁধটায় অসহ্য যন্ত্রণা করছে। ওই যে প্লেটটা ধরেছিলাম বাঁ হাতে। সারারাত ধরে
বুঝলে, টের পেলাম নেমতন্ন কারে কয়! পেনকিলারেও কিচ্ছু হলনা, ঘুমোতেই
পারলামনা। যে পাশই ফিরি ব্যথা ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেলে জেগে ওঠে, মানে জেগেই থাকে আর
আমাকেও জাগিয়ে রাখে’। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খুব সিরিয়াস গলায় সহ সম্পাদক পরামর্শ
দেন, ‘সব গেছে, খুলে অয়েল করতে হবে’। ...
বেশিক্ষণ
কথা বললেও হাত-কাঁধ আবার নতুন করে ব্যথা বাড়তে পারে। ফোন নামিয়ে রেখে সম্পাদক
ভাবেন, কত ডাক্তার দেখালাম, এ চিকিচ্ছে কী আর সহজ কথা, ওমন তেল-মোবিলের কম্ম নয়,
চামড়াটা কেটে ভেতরের খোলনলচে শুদ্ধু বদলিয়ে যদি আবার নতুন করে হাড়-মাংস পোরা যেত,
তাহলে হলেও হতে পারত। সেতো আর হওয়ার নয়, এই বলে ফের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁধে সেঁকটা
লাগিয়ে অন্য পাশ ফিরে শুলেন।
No comments:
Post a Comment