Friday, April 29, 2016

গ্রেভইয়ার্ড

অনেকদিনের পুরোনো লাইব্রেরি, যেখানে নিয়মিত বিশেষ কেউ যায় না, টিমটিম করে আলো জ্বলে, একজন লাইব্রেরিয়ান একা বসে খবরের কাগজের পাতা ওলটান আর তার মাথার ওপর অনেকদিনের পুরোনো পাখাটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে ঘুরতে থাকে, কেমন একটা কবরখানার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। চতুর্দিকে বড় বড় পুরোনো কাঠ আর কাঁচের আলমারি, কাঁচগুলো একটু ঘসা ঘসা হয়ে এসেছে, তার ভেতরে অজস্র বই, পুরোনো নথিপত্র ঠাসাঠাসি করে রাখা, যেন সামথিং বারিড ইনসাইড এমনই অনুভূতি হয়। অনেক অনেক মৃত কাগজ, মৃত শব্দের ভারে চেপে নিথর বসে রয়েছে। পুরোনো, খুব পুরোনো একটা গন্ধ লেগে রয়েছে বাতাসের গায়ে।

সেইখানে কাগজ-কলম নিয়ে বসে পুরোনো বই, নথিপত্রের পাতা ঘেঁটে একটা-দুটো করে শব্দ লিখছি কাগজে, খাতায়। শব্দগুলো প্রাণ পেয়ে যেন নড়েচড়ে উঠছে। আরও লিখে যাচ্ছি, প্রাচীন কাহিনি নতুন করে, প্রাচীন সব লেখকের নাম উঠে আসছে জীবন্ত শব্দে...।

অতীতের সঙ্গে, মৃতের সঙ্গে জীবিতের যোগসূত্র স্থাপিত হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া নামেরা বেঁচে উঠছে শব্দ আঁকড়ে ধরে। প্রাচীন আলমারির ভেতর থেকে ভেসে আসা দীর্ঘশ্বাস যেন বলছে অনাগত দিনের মানুষ তোমার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। ছেলেবেলায় পড়া বিভূতিভূষণের ডায়েরির পাতা মনে পড়ছে।

একশো বছর পর আমিও অমনি কোথাও মৃত শব্দের আখরে চাপা পড়ে যাব। তখনও হয়ত কেউ আসবে মৃত আর জীবিতের যোগসূত্র স্থাপন করতে...। প্রাচীন গন্ধ মাখা ঘরে ধুলো সরিয়ে ভেঙে ভেঙে আসা পাতা ওলটাবে...


আর আমি নিঃশব্দে অপেক্ষা করব আর একবার বেঁচে ওঠার জন্য...

No comments:

Post a Comment