Thursday, April 28, 2016

ভোট

কারা যেন রাস্তা দিয়ে ফেরিওলার মতো জোরগলায় হেঁকে গেল
সব বদলে যাবে, সবকিছু... শুধু বেছে নিতে হবে আমাদেরই।

সব বদলে যাবে? সবকিছু!

কারখানার কলে বাপটার পা কাটা পড়েছিল, ছেলেটা চাকরি পেল তো কারখানাই গেল বন্ধ হয়ে।
ওই যে মাথার ওপর ভাঙা চালের ফুটোফাটা দিয়ে ঘরে জল নামছে...

এইসব বদলে যাবে?

সব বদলে যাবে! পাকা ঘর, ঘরে খাট-পালঙ্ক, দুবেলা সাদা জুঁইয়ের মতো পেটভরা ভাত, ছেলেটার লেখাপড়া, চাকরি, মেয়েটাকেও ইস্কুলে পাঠাবো তাহলে...

সব বদলে যাবে?

পাশের বাড়ির জোয়ান মানুষটাকে মাঝরাত্তিরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলে পড়াত। আজও ফিরে আসেনি।
বউটার একঘেয়ে কান্নার আওয়াজ রাত হলেই যেন বাড়তে থাকে।

এইসব নাকি বদলে যাবে!

কারা রোজ চিৎকার করে বলে, বলে যায় সরুমোটা নানারকম আওয়াজে, সব বদলে যাবে, সব...। শুধু আমাদেরই বেছে নিতে হবে...।

ওবাড়ির মেয়েটা গায়ে আগুন দিয়ে মরেছিল, সাত জন একে একে ধর্ষণ করেছিল তাকে।
বাবা নাকি বিরোধী পক্ষের লোক, এমনটাই জনশ্রুতি। মুচলেকা দিয়ে এসেছে সে, ব্যাপারটা নিতান্তই পারিবারিক। মরে যাওয়া মেয়ের থেকে নিজের বেঁচে থাকার প্রয়োজনটা ঢের বেশি তার কাছে।

এইসব বদলে যাবে!

রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া লাসের মিছিল, ঘরে ও মাঠে চাপ চাপ রক্ত মুছে যাবে। মুছে যাবে দাগ বারুদের কারখানায় ঝলসে যাওয়া শিশুটির দেহ থেকেও!
মুছে যাবে খিদে বা নগ্নতার মতো আরও কিছু তুচ্ছতা। এমনই প্রতিশ্রুতি আছে।

অতএব পা টেনে টেনে আরেকবার লাইনে দাঁড়াই লাইনে দাঁড়ানোই যখন আমাদের এক এবং একমাত্র গণতান্ত্রিক অধিকার।

একমাত্র গণতান্ত্রিক অধিকার, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার বা আমার ঘরে ঢুকে নবজাতকের গলা টিপে ধরে কোনও ফেরিওলার দল ক্ষমতার জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলছে, খবরদার বাড়ি থেকে এক পা বেরিয়েছ কী...।

যতক্ষন পর্যন্ত না দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তুমি বা আমি অন্তত কেউ একজন অথবা দুজনেই ঘুরে দাঁড়াব।


ততোদিন প্রতিশ্রুতির ফেরিওলার ডাক আর আমাদের দীর্ঘ লাইন চলতেই থাকুক।

No comments:

Post a Comment