Wednesday, December 28, 2016

আ মরি বাংলাভাষা!

মেয়ের সামনে আই এস সি পরীক্ষা। বাংলার আগে ছুটি নেই একদিনও।

দুবছর আগে বাংলায় স্কুল টপারের নম্বরটা সে পেয়েছে না তার মা, সেই নিয়ে দুজনের মধ্যে যথেষ্ট মতদ্বৈধ আছে। মেয়ে যথারীতি সারা বছর পড়তে না এসে কেবল হুমকি দিয়েছে এবারে - নতুন সিলেবাস কিচ্ছু কমন ফেলতে পারবে না তুমি। মাও বলেছে, এবারে আর শেষে এসে দ্যাখ কোনও চেষ্টাই করব না।

এতৎ সত্ত্বেও আই সি এস সি-র মতোই শেষ মুহূর্তে মায়ের দরবারে বাংলা বইখাতা সহ হাজির সে। গত কয়েকদিন ধরেই বাংলা প্রশ্নোত্তর বই এডিট করতে করতে মায়ের মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেছে।

তেমনই এক সকালে -

বহুবার বলার পর স্কুলে বাংলায় পাঠ্য ব্যাকরণ বই ভাষাসোপান খুলে বসেছে মেয়ে
মা, ও মা, ২১৩ নম্বর এককথায় প্রকাশটা দেখ, যারা ডাইনিকে পেটায় ডানপিটে।
কী বললি!  - হতবাক মায়ের হাঁ বন্ধ হওয়ার আগেই আবার উড়ে আসে, যার কর্ম করার শক্তি নেই তাকে কর্মক্ষম বলে? তাহলে কর্ম করতে অক্ষম লিখলেই তো পারত!
খাবি খাওয়া মা এবার হাঁ হাঁ করে ওঠে, ওরে কর্ম করতে সক্ষম মানে পারে যারা তাদের কর্মক্ষম বলে রে।
পাতা উলটে সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক অর্থে পৌঁছেচে কন্যা। ওমা, জানো, খরা মানে প্রখর রৌদ্র (গলায় এবার ফিচেল হাসির সুর)।
মা এবার হাল ছেড়ে দিয়ে - এ যে ডোডো-তাতাই-এর চেয়েও ভয়ঙ্কর। বাবা বলেছে না, তুই বামনদেব পড় মা। ভাষাসোপান বন্ধ কর।

মেয়েকে নির্দেশ দিয়ে এবারে মা তার স্কুলের বাংলা নোটস নিয়ে বসে। পাশ থেকে মেয়ের উক্তি, ম্যাম বেশ ভালো লেখায় মা, আগে সাউথ পয়েন্টে ছিলেন, গত বছর থেকে আমাদের স্কুলে।
লাল পেন দিয়ে লাইনের পর লাইন ম্যামের নোট কাটতে কাটতে আর সংশোধন করতে করতে মায়ের উত্তর, তোর ম্যামও বোধহয় ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে। (স্বগতোক্তি) সাধে কী আর স্কুলের বাংলা পরীক্ষায় এত নম্বর পাস!
অর্ধেক নোট কারেকশন-এর পর খাতা নামিয়ে রেখে উদাস গলায় মায়ের গান আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু...।


No comments:

Post a Comment