Monday, December 5, 2016

পথে চলে যেতে যেতে

এক কাঁধের ওপরে গামছার ভার। লাল, নীল, সবুজ নানা রঙ, নানান রকমের ডোরাকাটা। শান্তিপুরী, বাঁকুড়া কত জায়গার নাম তার। গামছার রঙ পেরিয়ে দৃষ্টি আটকায় মানুষটির মুখে। অন্ধ!

রাত বেড়েছে। রেলগাড়ির কামরায় যাত্রীর সংখ্যা শেষ গন্তব্য ক্রমশ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমছে। বিক্রেতার ভিড়ও তেমন নেই। এক যাত্রী গামছা দেখে। নানা রঙের ছোট ছোট চৌখুপী গামছা সরিয়ে একটা নীল গামছায় নজর আটকেছে তার। রঙটি ভালো লেগেছে, নেড়েচেড়ে দেখে। বিক্রেতাও যেন আপন দৃষ্টিতে দেখতে পান বিক্রেয় পণ্যটিকে ভালোলেগে যাওয়া সেই মুখটি। তাঁর মুখেও ছড়িয়ে পড়ে পরিতৃপ্তির ঈষৎ রেশ। ওপাশ থেকে আরেকজন দাম জানতে চান। কাঁধের ওপর রাখা নির্দিষ্ট গামছায় হাত রাখলেই বিক্রেতা গামছার নাম আর দাম বলতে থাকেন। আশি টাকা, একশো টাকা, দুশো টাকা আরও দামীও রয়েছে। কোনটা মেলে দেখান। জোড়া লাগান রয়েছে লম্বা করে ছড়িয়ে ধরেন দুহাতে। আমি দেখতে থাকি চলমান জীবনের গল্পের এক চরিত্রকে।

প্রথম ও একমাত্র ক্রেতাটি ইতিমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছেন। একশো দশ টাকার গামছা রফা হয়েছে একশো টাকায়। নিপুণ দক্ষতায় জোড়া গামছা হাতের টানে দুভাগ করে একটা গামছা ক্রেতার হাতে তুলে দেন বিক্রেতা। যাত্রীটিও দাম মিটিয়ে ভারী খুশি হয়ে ভাঁজ করতে থাকেন ব্যাগে ঢুকিয়ে নেবেন বলে। গামছাওলা এগিয়ে গেলে পিছনের যাত্রীটিকে নিজের পুরোনো আর নতুন গামছা পাশাপাশি রেখে কেমন সস্তায় ভালো গামছা পাওয়া গেছে, কেমন সুন্দর রঙ বোঝাতে উদ্যোগী হয়েও তাঁর উৎসাহের অভাবে দুটিকেই ব্যাগে ভরে প্রসন্নমুখে সিটে বসে পড়েন।


আমার সম্বিত ভাঙে। গামছাওলা এগিয়ে গিয়েছেন অনেকটা। আমার গামছার কোনও প্রয়োজন ছিলনা সত্যি। কিন্তু একটা কিনলে কি এমন ক্ষতি হত?

No comments:

Post a Comment