Wednesday, October 19, 2016

জটায়ু উবাচ

'ঘেন্না ধরে গেল মশাই, দেশের যেখানেই যাই, কোথাও আমাদের মতন এমন শহরজুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনা।' - এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বাসে করে বেঙ্গালুরু শহরের দিকে আসতে আসতে মন্তব্যটা করলেন লালমোহনবাবু। 'এই তো গত পুজোর সময় লাদাখ গেসলাম, আর এই পুজোয় বেঙ্গালুরু - দেখুন তো কেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর, গাড়ি, বাস, অটো দিব্য চলছে সাঁ সাঁ করে।'

'কেন ওড়িশা তো একদম ঘরের পাশেই। কদিন আগেই তো পুরী ঘুরে এলেন' - চারমিনার থুড়ি গোল্ডফ্লেক-এ একটা টান দিয়ে ধোঁয়ার রিঙটা ছেড়ে মন্তব্য করল ফেলুদা। গোল্ড ফ্লেকে ঠিক চারমিনারের মতো আমেজ নেই, ফেলুদা বলে। তবে পরিবর্তন তো মেনে নিতেই হয়। এটাও অবশ্য ওরই মন্তব্য।

মোবাইলে টেম্পল রান টু খেলার ফাঁকে ফেলুদার সিগারেটের মিলিয়ে যাওয়া রিঙগুলো দেখতে দেখতে ফুট কাটলাম, আর গ্যাংটকের কথা ভুলে গেলে ফেলুদা?

গড়পাড় থেকে রজনীসেন রোড আসতে গিয়ে ষষ্ঠীর দিন বিকেলেই জ্যামে ঝাড়া আড়াই ঘন্টা আটকে ভয়ানক চটেছেন লালমোহনবাবু। তারপর গড়িয়াহাট থেকে নাকি গাড়ি আবার ঘুরিয়ে দিয়েছিল পুজোর উদ্বোধনের জন্য। অমন ঠান্ডা মেজাজের হরিপদবাবু শুদ্ধু দেখি আপনমনে গজগজ করছেন।
'ধুর মশাই 'কলকাতায় কুরুক্ষেত্র' ছাড়া আর কোনও লেখাই মাথায় আসছে না। নার্ভগুলো সব গেছে।' অনেকদিনধরেই অবশ্য ডাক্তার দেখাতে বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা বলছিলেন। পরামর্শটা ফেলুদারই। ইদানীং যেরকম ব্যথা-বেদনা হয়ে মেজাজ খারাপ করছেন, তাতে একবার নিমহানস-এ না দেখিয়ে এলে সত্যিই কী কুরুক্ষেত্র করবেন কে জানে! কলকাতার কোনও ডাক্তারেই নাকি কিছু করতে পারছেনা।

তবে আমাদের কোনও মন্তব্যই অবশ্য গায়ে মাখেননা তিনি - 'আরে মশাই, দু-দুবার স্বয়ং মগনলাল পর্যন্ত কিস্যু করতে পারলনা আর রোগ-বালাই!' বেশ জোর গলাতেই বললেন।

পুজোর কদিন আমারও ছুটি। অতএব ষষ্ঠীর দিন যখন জেট এয়ারের তিনটে টিকিট পকেট থেকে বার করে সোফায় ধপ করে বসে পড়লেন বুঝলাম, একেবারে বেঙ্গল থেকে বেঙ্গালুরু যাত্রাটা পাকা করেই বেরিয়েছেন।


অতএব...।

No comments:

Post a Comment